Skip to content

 

অসিলা দিয়ে দোয়া করা জায়েজ আছে কি না? অসিলা দিয়ে দোয়া করার নিয়ম/পদ্ধতি। (অসিলা তালাশ)

অসিলা দিয়ে দোয়া করা জায়েজ আছে কি না_ অসিলা দিয়ে দোয়া করার নিয়ম_পদ্ধতি। (অসিলা তালাশ)

আজকে আমরা আলোচনা করবঃ

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : 

হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর কাছে অসিলা তালাশ কর (অর্থাৎ তার নৈকট্যের অনুসন্ধান কর)। (সূরা মায়িদা : আয়াত ৩৫)। 

এ আয়াতের তাফসিরে কাতাদাহ রহ. বলেছেন: তাঁর আনুগত্য ও সে সব আমলের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য অর্জন কর যে সব আমল তিনি পছন্দ করেন এবং সন্তুষ্ট হন। শরীয়ত সম্মত অসিলা তালাশ করার ব্যাপারে আল কোরআন আমাদেরকে হুকুম করেছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাগিদ দিয়েছেন। সাহাবায়ে কিরাম রা. সে নির্দেশ মোতাবেক আমল করেছেন। অসিলা তালাশের বিষয়টি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। বিশেষ কয়টি এখানে উল্লেখ করা হলঃ 

১। ঈমানকে অসিলা বানান

অর্থাৎ ঈমানের অসিলা দিয়ে কিছু প্রার্থনা করা।  বান্দারা ঈমানের সাহায্যে কিভাবে অসিলা তালাশ করবে- সে সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন :

 ‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমরা শুনেছিলাম একজন আহ্বানকারীকে, যে ঈমানের দিকে আহবান করে যে, ‘তোমরা তোমাদের রবের প্রতি ঈমান আন’। তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং বিদূরিত করুন আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি, আর আমাদেরকে মৃত্যু দিন নেককারদের সাথে। (সূরা আল ইমরান: আয়াত ১৯৩)

২। আল্লাহর একত্ববাদকে অসিলা বানান

যেমন ইউনুস আ.-কে যখন মাছে গিলে ফেলেছিল তিনি দোয়া করেছিলেন, সে প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলেন : 

তারপর সে অন্ধকার থেকে ডেকে বলেছিল, ‘আপনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই’। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম’ ।অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং দুশ্চিন্তা থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৭ ও ৮৮)

৩। আল্লাহর পবিত্র নাম দ্বারা অসিলা খোঁজা

আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে। সুতরাং এর দ্বারা তোমরা তাঁকে ডাকো। (সূরা আরাফ : আয়াত ১০০)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নামের মাধ্যমে তাঁর নিকট সাহায্য চাইতেন : বলতেন, 

আমি তোমার কাছে তোমার সমস্ত নামের অসিলায় প্রার্থনা করছি…। (তিরমিযি, হাসান, সহিহ) 

৪। আল্লাহ তাআলার গুণাবলির দ্বারা অসিলা তালাশ করা 

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন :

হে চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী! তোমার দয়া (র অসিলা)য় সাহায্য প্রার্থনা করছি। (তিরমিযি) 

৫। নেক আমলের দ্বারা অসিলা খোঁজা  

যেমন, সালাত, মাতা-পিতার খেদমত, অন্যের হক আদায়, আমানত দারী ও অন্যান্য নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করা। 

সহিহ মুসলিমে পাহাড়ী গুহায় আটকে পড়া তিন ব্যক্তির কথা বর্ণিত হয়েছে, যারা নিজ নিজ নেক আমলের অসিলায় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাদেরকে সেখান থেকে নাজাত দান করেন। তারা মাতা-পিতার খিদমত, শ্রমিকের হক ও আল্লাহর তাকওয়া-র অসিলায় দোয়া করেছিল, ফলে আল্লাহ তাদের হিফাযত করেন।

৬।  পাপকার্য ত্যাগ করার দ্বারা অসিলা তালাশ করাঃ 

যেমন আল্লাহ তাআলার নিষিদ্ধকৃত যিনা, মদ ও এরূপ অন্যান্য হারাম কাজ। উপরোল্লেখিত হাদীসে তিন ব্যক্তির একজন আপন চাচাত বোনের সাথে যিনা করার সুযোগ পেয়েও আল্লাহর ভয়ে তা ত্যাগ করেন, পরবর্তীতে গুহায় আটকে পড়লে সে যিনা ত্যাগের অসিলায় আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, আর আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দিয়ে তাকে হেফাযত করেন। 

৭। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ

তিনি ও তাঁর সাহাবাদের প্রতি ভালবাসাকে অসিলা বানান। এগুলো সেই সব নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত যা সম্পাদনকারীকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।

৮। যাকাত আদায়, দান-সদকা, ভাল ভাল কথা

যিকর-আযকার, কোরআন তিলাওয়াত, একত্ববাদীদের প্রতি ভালবাসা ও মুশরিকদের সাথে শত্রুতা পোষণকে অসিলা বানানো।

৯। জীবিত নেককার লোকদের কাছে দোয়া চাওয়া 

যেমন জনৈক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাহাবি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে দোয়া চেয়েছিলেন, যাতে আল্লাহ তার চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে দেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দোয়া করেন এবং তাকেও তাঁর সাথে দোয়া করতে বলেন। ফলে আল্লাহ তার চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে দেন। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দোয়া কবুল হবে এবং সেটা তাঁর মুজিযা। জনৈক ব্যক্তি যাতে ব্যক্তি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফায়াত পান, তার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেন আর আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। 


১। মৃত ব্যক্তির মাধ্যমে অসিলা খোঁজা

মৃতদের কাছে প্রয়োজনীয় কোনো জিনিস প্রার্থনা করা কিংবা তাদের নিকট সাহায্য চাওয়া। কতিপয় মানুষ একে অসিলা মনে করে, মূলে কিন্তু তা নয়। কারণ, অসিলার অর্থ হল আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া (বা অনুমোদিত পন্থায় তাঁর নৈকট্য অর্জন করা); যা কেবল ঈমান ও নেক আমলের দ্বারা সম্ভব। আর মৃত্যুদের কাছে দোয়া করা, তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা প্রকারান্তরে আল্লাহ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। যা বড় শিরকের অন্তর্ভূক্ত। কারণ আল্লাহ বলেন :

আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না, যা তোমার উপকার করতে পারে না  এবং তোমার ক্ষতিও করতে পারে না। আর যদি তা কর তাহলে নিশ্চয়ই তুমি যালিম (মুশরিক)-দের অন্তর্ভূক্ত হবে। (সূরা ইউনুস: আয়াত ১০৬) 

২। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জাত বা সম্মানের অসিলা খোঁজা

যেমন বলা, হে আমার রব! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসিলায় আমাকে রোগমুক্ত কর। এটা নিষিদ্ধ ও দীন বহির্ভূত বিদআত। কারণ, সাহাবিদের কেউ এমনটি কখনো করেননি।

খলীফা উমর রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুহতারাম চাচা আব্বাস রা.-এর জীবিত অবস্থায় তাঁর অসিলায় বৃষ্টির জন্য দোয়া করিয়েছিলেন। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসিলায় দোয়া করতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি, কারণ নবীজী তখন জীবিত ছিলেন না।

আমাকে অসিলা করে দোয়া কর- মর্মে যে হাদিসটি উদ্ধৃত করা হয়, সেটি আসলে কোনো হাদিসই নয়। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. সে হাদিসকে জাল হিসাবে প্রমাণ করেছেন। এই নিষিদ্ধ ও বিদআতী অসিলা সংশ্লিষ্ট মানুষকে শিরক পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। কারণ এসব অসিলা গ্রহণকারীরা কখনো কখনো এমন ধারণা করে বসে যে, আল্লাহ কোনো মাধ্যম ছাড়া করতে পারেন না। এর মাধ্যমে আল্লাহকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করা হয়। তাইতো এ প্রসঙ্গে ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেছেন : আমি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে অসিলা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করাকে অপছন্দ করি। 

৩। রাসূলকে বলা, হে রাসূল ! আমার জন্য দোয়া করুন

৩। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পর তাঁকে সম্বোধন করে বলা যে, হে রাসূল ! আমার জন্য দোয়া করুন। এটা জায়েয নয়। কারণ, সাহাবিরা কেউ এমনটি করেননি। তাছাড়া নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

 মানুষ মারা গেলে তিনটি ব্যতীত তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়, (সে তিনটি আমল হচ্ছে) সদকায়ে জারিয়া, এমন ইলম যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়, এবং নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম)। 

এ আমলগুলোর সাওয়াব সম্পাদনকারী ব্যক্তিরা কবরেও পেতে থাকে।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!