অস্থিসংক্রান্ত রোগ
(a) অস্টিওপোরোসিস (Osteoporosis)
অস্থির গঠন এবং দৃঢ়তার জন্য ক্যালসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অস্থির বৃদ্ধির জন্য চাই ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য। অস্টিওপোরোসিস ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত একটি রোগ।
বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের সাধারণত এ রোগটি হয়। যেসব বয়স্ক পুরুষ বহুদিন যাবৎ স্টেরওয়েডযুক্ত ঔষধ সেবন করেন, তাদের ও নারীদের মেনোপজ (রজ-নিবৃত্তি, অর্থাৎ মাসিক চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া) হওয়ার পর এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। যারা অলস জীবন যাপন করেন কিংবা কায়িক পরিশ্রম কম করেন, তাদেরও এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া অনেক দিন ধরে আর্থ্রাইটিসে (অস্থিসন্ধির প্রদাহ) ভুগলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি হয়।
অস্টিওপোরোসিস রোগের কারণ:
দেহে খনিজ লবণ বিশেষ করে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে এ রোগটি হয়। নারীদের মেনোপজ হওয়ার পর অস্থির ঘনত্ব এবং পুরুত্ব কমতে থাকে।
অস্টিওপোরোসিস রোগের লক্ষণ:
- অস্থি ভঙ্গুর হয়ে যায়, ঘনত্ব কমতে থাকে,
- পেশির শক্তি কমতে থাকে,
- পিঠের পিছন দিকে ব্যথা অনুভব হয়,
- অস্থিতে ব্যথা অনুভব হয়।
অস্টিওপোরোসিস রোগ নির্ণয়:
ঘনত্বমাপক যন্ত্রের সাহায্যে অস্থির খনিজ পদার্থের এ রোগ নির্ণয় করা হয়। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় তেমন কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। হঠাৎ করেই সামান্য আঘাতে কোমর বা দেহের অন্যান্য কোনো অঙ্গের হাড় ভেঙ্গে যায়।
অস্টিওপোরোসিস রোগের প্রতিকার:
- পঞ্চাশোর্ধ পুরুষ ও নারীদের দৈনিক 1200 মিলিগ্রাম (বা চিকিৎসক নির্দেশিত অন্য কোনো পরিমাণ) ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা।
- ননিতোলা দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য গ্রহণ করা।
- কমলার রস, সবুজ শাকসবজি, সয়াদ্রব্য ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।
অস্টিওপোরোসিস রোগের প্রতিরোধ:
- যথেষ্ট পরিমাণে সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসা।
- ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা (যদি কেউ ইতোমধ্যে অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হয় তাহলে ব্যায়াম করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে)।
- সুষম ও আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা।
(b) রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটেবাত (Rheumatoid Arthritis)
শতাধিক প্রকারের বাতরোগের মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস অন্যতম। সাধারণত বয়স্করা এ রোগে আক্রান্ত হয়। কম বয়সী ছেলেমেয়েদের বেলায় গিঁটে ব্যথা বা যন্ত্রণা হওয়া রিউমেটিক ফিভার বা বাতজ্বর (rheumatic fever) জাতীয় অন্য রোগের লক্ষণ হতে পারে।
অস্থিসন্ধির অসুখের প্রকারভেদ অনুসারে চিকিৎসার পার্থক্য হয়। দুইজন ব্যক্তি দুটি ভিন্ন প্রকারের অস্থিসন্ধির অসুখে আক্রান্ত হলেও তাদের লক্ষণ আপাতদৃষ্টিতে একইরকম হতে পারে। সেক্ষেত্রে দুজনের ভিন্ন প্রকারের চিকিৎসা প্রয়োজন। এজন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ ছাড়া বাতের চিকিৎসা করা উচিত নয়। এতে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হতে পারে।
গেঁটেবাত রোগের লক্ষণ:
- অস্থিসন্ধি বা গিঁটে প্রদাহ বা ব্যথা হয়।
- অস্থিসন্ধিগুলো শক্ত হয়ে যায়
- অস্থিসন্ধি নাড়াতে কষ্ট হয়
- গিঁট ফুলে যায়।
গেঁটেবাত রোগের প্রতিকার:
বয়স্কদের বেলায় এ রোগ পুরোপুরি সারানো যায় না। তবে নিচের ব্যবস্থাগুলো নিলে কিছুটা উপশম হয়।
- অত্যধিক পরিশ্রম আর ভারী কাজ থেকে বিরত থাকা।
- যন্ত্রণাদায়ক গিঁটের উপর কুসুম গরম স্যাঁক নেওয়া।
- অস্থিসন্ধির নড়াচড়া ঠিক রাখতে হালকা ব্যায়াম করা।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বেদনা উপশমকারী ঔষধ সেবন ও সঠিক চিকিৎসা দিয়ে এ রোগের কষ্ট থেকে আংশিক পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
গেঁটেবাত রোগের প্রতিরোধ:
- চিকিৎসক নির্দেশিত পদ্ধতিতে নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- সুষম ও আঁশযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা।