আকিকা সম্পর্কে আলোচনা:
আকিকা অর্থ কি?
আকিকা একটি আরবী শব্দ। শব্দটির অর্থ হলো কর্তন করা।
আকিকা কাকে বলে?
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় নবজাতক ছেলে-মেয়ের জন্মের সপ্তম দিন পশুর যে রক্ত প্রবাহিত করা হয় তাকে আকিকা বলা হয়।
আকিকার হুকুম কি?
আকিকা করা একটি সুন্নাত বা মুস্তাহাব আমল। নবজাতক সন্তানের পিতা বা অভিভাবকের পক্ষে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় পূর্বক কৃতজ্ঞতার নিদর্শনস্বরূপ আকিকা করা মুস্তাহাব। সহীহ নিয়ময় করলে সওয়াব আছে। না করলে কোনো গুনাহ নেই।
আকিকার গুরুত্ব ও ফজিলত কি?
আকিকর বিষয়টি স্বয়ং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকে সহীহ ও মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন নাতি হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুমার আকিকা করেছেন।
আকীকার মাসায়েল:
* আকীকা করা সুন্নাত।
* ছেলে বা মেয়ে জন্মের পর সপ্তম দিবসে আকীকা করা মোস্তাহাব। সপ্তম দিবসে না করতে পারলে যখনই করুক না কেন যে বারে সন্তান জন্ম নিয়েছে তার আগের দিন করবে। যেমন শনিবার সন্তান হয়ে থাকলে শুক্রবার আকীকা করবে, তাহলেও এক রকম সপ্তম দিবসে আকীকা করা হবে; এটাই উত্তম। এ ছাড়াও যে কোন দিন ইচ্ছা আকীকা করা যায়।
* সন্তান বালেগ হওয়ার পরও আকীকা করা দুরস্ত আছে, তবে মৃত্যুর পর আকীকা নেই।
* আকীকা করা দ্বারা সন্তানের বালা-মুসীবত দূর হয় এবং সন্তান যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকে।
* ছেলে হলে আকীকায় দুইটি বকরী বা ভেড়া উত্তম, আর মেয়ে হলে একটি বকরী বা ভেড়া। কিংবা কুরবানীর গরু ইত্যাদি বড় পশুর মধ্যে ছেলের জন্য দুই অংশ নেয়া উত্তম আর মেয়ের জন্য এক অংশ। ছেলের পক্ষ থেকে একটি বকরী বা কুরবানী-র এক অংশ দ্বারা আকীকা করলেও চলবে। আর আকীকা না করলেও কোন দোষ নেই। তবে আকীকা করা সুন্নাত।
* যে জন্তু দ্বারা কুরবানী দুরস্ত তার দ্বারাই আকীকা দুরস্ত।
* সন্তানের মাথা মুণ্ডানোর জন্য মাথায় খুর/ব্লেড রাখার সাথে সাথে আকীকার পশু জবেহ করতে হবে- এরূপ ধারণা ভুল এবং এটা বেহুদা রছম ৷
* আকীকার প্রাণী জবেহ করার সময় (জবেহ করার পূর্বে) এই দোয়া পড়বে।
আকিকার দোয়া আরবিতেঃ আলা-হুম্মা মিনকা ওয়া লাকা, আক্বীক্বাতা ফুলান। বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লাহু আকবার। (সময় ‘ফুলান’-এর স্থলে বাচ্চার নাম বলা যাবে।)
আকিকার দোয়া বাংলাতেঃ হে আল্লাহ! এই আকীকা অমুকের সন্তান অমুকের, তুমি তা কবূল কর, সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে শুরু করছি। (আর পিতা নিজে জবেহ করলে বলবে এটা আমার অমুক সন্তানের আকীকা।)
* আকীকার গোশত মাতা, পিতা, দাদা, দাদী, নানা, নানী সহ সকলেই ভক্ষণ করতে পারে।
* আকীকার গোশত কাঁচা ভাগ করে দেয়া বা রান্না করে ভাগ করে দেয়া বা দাওয়াত করে খাওয়ানো সবই দুরস্ত আছে।
* কোন কোন ফকীহ বলেছেন আকীকার পশুর চামড়া বিক্রি করলে তার মূল্য দান করেই দেয়া উচিত। যদিও এ ব্যাপারে কুরবানীর চামড়ার অর্থের ন্যায় অত কড়াকড়ি নেই।
আকীকার দোয়া আরবি উচ্চারণ ও বাংলা সহ:

আকিকার নিয়ম কানুন:
সন্তানের জন্মের সপ্তম দিন মা-বাবার যে কাজ করতে হয়
সন্তান জন্মের সপ্তম দিন মুসলিম পিতা-মাতার যে চারটি কাজ করতে হয় সে কাজ গুলো হলো:
- সন্তানের সুন্দর একটি নাম রাখা ৷ যা শুনলেই মনে হবে সে মুসলিম সন্তান৷
- মাথা কামানো৷
- মাথার চুলের ওজন পরিমান সোনা বা রুপা দান করা৷
- আকিকা করা৷
আকিকা করার দিন/তারিখ
আকিকা সন্তানের কল্যান ও ভালোর জন্য সন্তান জন্মের ৭ম দিন করা উওম তবে ১৪, ২১,ভঅথবা ২৮তম দিনেও করা যায়। আকিকা আদায়ের জন্য নিম্নে লিখিত আকিকার নিয়ম কানুন গুলো জেনে রাখা ভালো
আকিকার পশুর ধরন
যেসব পশু দিয়ে কুরবানি সুদ্ধ হয় না সেই সব পশু দিয়ে আকিকা হয়না তাই আকিকার ক্ষেত্রে পশু বয়স ও ধরনের দিকথেকে কুরবানির পশুর গুন পাওয়া যাই এমন পশু নির্বাচন করতে হবে।
ছেলের সন্তানের জন্য আকিকার নিয়ম কানুন
ছাগল/ভেড়া /দুম্বা আকিকা দিলে ছেলে সন্তানের জন্য যেকোনো দুটি দিতে হবে। অথবা গরু/মহিষ বা উট আকিকা দিলে ছেলে সন্তানের জন্য গরু/মহিষ অথবা উটের দুই অংশ আকিকা দিতে হবে।
মেয়ে সন্তানের জন্য আকিকার নিয়ম কানুন
ছাগল /ভেড়া/অথবা দুম্বা আকিকা দিলে মেয়ে সন্তানের জন্য ছাগল/ভেড়া অথবা দুম্বার যে কোনো একটি। অথবা গরু/মহিষ /বা উট আকিকা দিলে মেয়ে সন্তানের জন্য গরু/মহিষ /বা উটের এক অংশ আকিকা দিলেই যথেষ্ট হবে।
“ছেলে সন্তানের জন্য দুটি ছাগল ও মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল জবেহ করাই যতেষ্ট” (আবু দাউদ ও নাসায়ি)
কোরবানির সাথে আকিকার অংশীদার
কোরবানির পশুর সাথে আকিকার অংশীদার হওয়া যাবে। কোরবানির শরিক ৩টি হলে সেখানে আর ২টি শরিক আকিকার দেওয়া যাবে কোরবানির মতো একই পশুতে একাদিক শরিক হয়ে আকিকা আদায় করা যাবে। (দাররুল হাক্কাম) আবার গরু /মহিষ /উট এরকম বড় পশুতে ছেলের জন্য এক শরিক আকিকা দিলেও আদাই হয়ে যাবে।
আকিকার গোশত বন্টন
কুরবানির সাথে আকিকার অংশীদার হওয়া যাবে তেমনি এটি কাচা ও রান্না দুটিই বন্টন করা যাবে আকিকার গোশতও কুরবানির গোশতর মতো বন্টন করা উওম৷ আকিকার গুশত সবাই খেতে পারবে ধনি /গরিব /ফকির /মিসকিন সকল শ্রেনির মানুষ মিলে এই গুশত খেতে পারবে এমনকি নিজের বাবা-মা নানা নানি আত্নিয় সজন মিলে খেতে পারবে।
মৃত সন্তানের আকিকা
যেহেতু তার মৃত্যু হয়েছে সেহেতু শরীয়তের সকল প্রকার বিধান তার ওপর থেকে উঠে গেছে। সুতরাং, মৃত্যুর পরে তার আর আকিকা করার প্রয়োজন নেই।
আকিকায় কুসংস্কার
অনেকেই মনে করে যে, আকিকার গোশত দাদা-দাদি ও নানা-নানি খেতে পারে না। এ ধারণা ভিত্তিহীন। এজন্যই সকনকে আকিকার নিয়ম কানুন সম্পর্কে জ্ঞান তাকা উচিত আকিকার নিয়ম কানুন জানা তাকলে এসব কুসংস্কার বিশ্বাস করবেনা আবার অনেকে মনে করে সঅন্তানের মাথার চুল মুণ্ডানোর জন্য যখন মাথার উপরের ক্ষুর টানা হবে, ঠিক সেই মুহূর্তে আকিকার জন্তু জবাই করতে হবে, এটাও ভিত্তিহীন। মাথা মুণ্ডানোর আগে-পরে যেকোনো সময় আকিকার পশু জবাই করা যাবে। হজরত আতা (রহ.)-এর এক বর্ণনা মতে, আকিকার পশু জবাই করার আগে মাথা মুণ্ডিয়ে নেওয়া উত্তম। (আল মুকাদ্দামাতুল মুমাহহাদাত: ১/৪৪৯)
শেষ কথা:
আকিকা করতে হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। আকিকা করা সুন্নত আকিকা করলে যেমন সওয়াব পাওয়া যায় তেমনি আল্লার রহমতে সনন্তা বিপদ- আপদ থেকে নিরাপদ থাকে।
তাই আমাদের অবশ্যই আকিকার দোয়া ও নিয়ম কানুন জানতে হবে। আকিকার দোয়া ও নিয়ম কানুন জেনে আকিকা আদায় করলে অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যাবে। হাদিসে আছে প্রতিটি নবজাতক সন্তান আকিকার সাথে বন্দি। তার জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে পশু জবাই করতে হবে, তার নাম রাখতে হবে এবং তার মাতা মুন্ডন করতে হবে। (তিরমিজি) রাসুল (সাঃ) নিজের আকিকা নিজেই করেছিলেন। তিনি অন্যকেও আকিকা করতে বলতেন।
আল্লাহ আমাদের সুন্দরভাবে সস্তানের আকিকা সম্পন্ন করার তৈফিক দান করুন। আমিন।