বিষয়: আখেরী চাহার সোম্বা কি? আখেরী চাহার সোম্বা কেন? আখেরী চাহার সোম্বা করণীয়? আখেরী চাহার সোম্বা কি জায়েজ? আখেরী চাহার সোম্বা ইতিহাস।
আখেরী চাহার সোম্বা কি?
আখেরী চাহার শোববাহ’ কথাটি ফার্সী। এর অর্থ শেষ বুধবার। সাধারণ পরিভাষায় আখেরী চাহার শোমবাহ বলে ছফর মাসের শেষ বুধবারকে বোঝানো হয়ে থাকে। বলা হয়- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অসুস্থতার মধ্যে রবিউল আউয়াল মাসের শুরু ভাগে ইন্তেকাল করেন সে অসুস্থতা থেকে ছফর মাসের শেষ বুধবারে অর্থাৎ, আখেরী চাহার শোমবায় কিছুটা সুস্থতা বোধ করেছিলেন, তাই এ দিবসটিকে খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করা হয়। অথচ এ তথ্য সহীহ নয়। বরং সহীহ ও বিশুদ্ধ তথ্য হল এ বুধবারেই তাঁর অসুস্থতা বেড়ে যায়। কাজেই যে দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসুস্থতা বেড়ে যায় সেদিন ইয়াহুদী প্রমুখদের জন্য খুশির দিন হতে পারে- মুসলমানদের জন্য নয়। অতএব ছফর মাসের শেষ বুধবার অর্থাৎ, আখেরী চাহার শোমবাহ-কে খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করা এবং এ হিসেবে ঐ দিন ছুটি পালন করা জায়েয হবে না।
আখেরী চাহার সোম্বা কেন পালন করা হয়?
বলা হয়- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অসুস্থতার মধ্যে রবিউল আউয়াল মাসের শুরু ভাগে ইন্তেকাল করেন সে অসুস্থতা থেকে ছফর মাসের শেষ বুধবারে অর্থাৎ, আখেরী চাহার শোমবায় কিছুটা সুস্থতা বোধ করেছিলেন, তাই এ দিবসটিকে খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করা হয়। অথচ এ তথ্য সহীহ নয়। বরং সহীহ ও বিশুদ্ধ তথ্য হল এ বুধবারেই তাঁর অসুস্থতা বেড়ে যায়। কাজেই যে দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসুস্থতা বেড়ে যায় সেদিন ইয়াহুদী প্রমুখদের জন্য খুশির দিন হতে পারে- মুসলমানদের জন্য নয়। অতএব ছফর মাসের শেষ বুধবার অর্থাৎ, আখেরী চাহার শোমবাহ-কে খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করা এবং এ হিসেবে ঐ দিন ছুটি পালন করা জায়েয হবে না।
আখেরী চাহার সোম্বা কি জায়েজ?
না, এটি জায়েজ নয়। কারণ সফর মাসের শেষ বুধবারের কোন প্রকার বিশেষত্ব হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয়। এই দিনে ইবাদত, বন্দেগী, সালাত, সিয়াম, জিকির, দোয়া, দান, সদকা ইত্যাদি পালন করলে অন্য দিনের চেয়ে বেশী বা বিশেষ কোন সওয়াব বা বরকত লাভ করা যাবে বলে ধারনা করা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অসুস্থতার মধ্যে রবিউল আউয়াল মাসের শুরু ভাগে ইন্তেকাল করেন সে অসুস্থতা থেকে ছফর মাসের শেষ বুধবারে অর্থাৎ, আখেরী চাহার শোমবায় কিছুটা সুস্থতা বোধ করেছিলেন, তাই এ দিবসটিকে খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করা হয়। অথচ এ তথ্য সহীহ নয়। বরং সহীহ ও বিশুদ্ধ তথ্য হল এ বুধবারেই তাঁর অসুস্থতা বেড়ে যায়। কাজেই যে দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসুস্থতা বেড়ে যায় সেদিন ইয়াহুদী প্রমুখদের জন্য খুশির দিন হতে পারে- মুসলমানদের জন্য নয়। অতএব ছফর মাসের শেষ বুধবার অর্থাৎ, আখেরী চাহার শোমবাহ-কে খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করা এবং এ হিসেবে ঐ দিন ছুটি পালন করা জায়েয হবে না।
আখেরী চাহার সোম্বা ইতিহাস
প্রচলিত আছে: ১১ হিজরির শুরুতে রসূলুল্লাহ (স) গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্রমেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে, নামাজের ইমামতি পর্যন্ত করতে পারছিলেন না। ২৮ সফর বুধবার মহানবী (স) সুস্থ হয়ে ওঠেন। দিনটি ছিল সফর মাসের শেষ বুধবার।
এই দিন কিছুটা সুস্থবোধ করায় রসূলুল্লাহ (স) গোসল করেন এবং শেষবারের মত নামাজে ইমামতি করেন। মদীনাবাসী এই খবরে আনন্দ-খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন এবং দলে দলে এসে নবী (স) কে একনজর দেখে গেলেন। সকলে তাদের সাধ্যমতো দান-সাদকা করলেন, শুকরিয়া নামাজ আদায় ও দোয়া করলেন। নবীর রোগমুক্তিতে তার অনুসারীরা এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে, তাদের কেউ দাস মুক্ত করে দিলেন, কেউবা অর্থ বা উট দান করলেন; যেমনঃ আবু বকর সিদ্দিক (রা) ৫ হাজার দিরহাম, উমর (রা) ৭ হাজার দিরহাম, ওসমান ১০ হাজার দিরহাম, আলী (রা) ৩ হাজার দিরহাম, আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা) ১০০ উট দান করেন।
উল্লেখ্য যে, ২৯ সফর তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তার মাত্র কয়েক দিন পর ১২ই রবিউল আউয়াল ইহকাল ত্যাগ করেন মানবতার মুক্তিদূত হযরত মোহাম্মদ (সঃ)।
আখেরী চাহার সোম্বা ইতিহাস এর সত্যতা যাচাই
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সফর বা রবিউল আউয়াল মাসের কত তারিখ থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কত তারিখে ইন্তিকাল করেন সে বিষয়ে হাদীস শরীফে কোনরূপ উল্লেখ বা ইঙ্গিত নেই। অগনিত হাদিসে তাঁর অসুস্থতা, অসুস্থতাকালীন অবস্থা, কর্ম, উপদেশ, তাঁর ইন্তিকাল ইত্যাদির ঘটনা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোন ভাবে কোন দিন, তারিখ বা সময় বলা হয়নি। কবে তাঁর অসুস্থতা শুরু হয়, কতদিন অসুস্থ ছিলেন, কত তারিখে ইন্তেকাল করেন সে বিষয়ে কোন হাদীসেই কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
২য় হিজরী শতক থেকে তাবিয়ী ও তাবি-তাবিয়ী আলিমগন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবনের ঘটনাবলী ঐতিহাসিক দিন তারিখ সহকারে সাজাতে চেষ্টা করেন। তখন থেকে মুসলিম আলিমগণ এ বিষয়ে বিভিন্ন মোট পেশ করেছেন।
তাঁর অসুস্থতা সম্পর্কে অনেক মোট রয়েছে। কেউ বলেছেন সফর মাসের শেষ দিকে তাঁর অসুস্থতার শুরু। কেউ বলেছেন রবিউল আউওয়াল মাসের শুরু থেকে তাঁর অসুস্থতার শুরু। দ্বিতীয় হিজরী শতকের প্রখ্যাত তাবিয়ী ঐতিহাসিক ইবনু ইসহাক (১৫১হি/৭৬৮ খ্রি) বলেনঃ “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যে অসুস্থতায় ইন্তিকাল করেন, সেই অসুস্থতার শুরু হয়েছিল সফর মাসের শেষ কয়েক রাত থাকতে, অথবা রবিউল আউয়াল মাসের শুরু থেকে।” [ইবনু হিশাম, আস-সীরাহ আন- নববিয়্যাহ ৪/২৮৯]
কি বার থেকে তাঁর অসুস্থতার শুরু হয়েছিল, সে বিষয়েও মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন শনিবার, কেউ বলেছেন বুধবার এবং কেউ বলেছেন সোমবার তাঁর অসুস্থতার শুরু হয়।
কয়দিনের অসুস্থতার পরে তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, ১০ দিন, কেউ বলেছেন ১২ দিন, কেউ ১৩ দিন, কেউ বলেছেন ১৪ দিন অসুস্থ থাকার পর রাসুল (সাঃ) ইন্তিকাল করেন। তিনি কোন তারিখে ইন্তকাল করেছেন সে বিষয়েও মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছনে ১লা রবিউল আউয়াল, কেউ ২রা রবিউল আউয়াল, এবং কেউ বলেছেন ১২ই রবিউল আউয়াল তিনি ইন্তেকাল করেন।
সর্বাবস্থায় কেউ কোনভাবে বলছেননা যে, অসুস্থতা শুরু হওয়ার পরে মাঝে কোনদিন তিনি সুস্থ হয়েছিলেন। অসুস্থ অবস্থাতেই, ইন্তিকালের কয়েকদিন আগে তিনি গোসল করেছিলেন বলে সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। বুখারী সংকলিত হাদিসে আয়েশা (রাঃ) বলেন: “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন আমার গৃহে প্রবেশ করলেন এবং তাঁর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার উপরে ৭ মশক পানি ঢাল…; যেন আমি আরাম বোধ করে লোকদের নির্দেশনা দিতে পারি। তখন আমরা এভাবে তাঁর দেহে পানি ঢাললাম…। এরপর তিনি মানুষদের নিকট বেরিয়ে যেয়ে তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন এবং তাদেরকে খুৎবা প্রদান করলেন বা ওয়াজ করলেন।” [সহীহ বুখারী ১/৮৩, ৪/১৬১৪, ৫/২১৬০]
এখানে স্পষ্ট যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর অসুস্থতার মধ্যেই অসুস্থতা ও জ্বরের প্রকোপ কমানর জন্য এভাবে গোসল করেন, যেন কিছুটা আরাম বোধ করেন এবং মসজিদে যেয়ে সবাইকে প্রয়োজনীয় নসীহত করতে পারেন।
এই গোসল করার ঘটনাটি কত তারিখে বা কি বারে ঘটেছিল তা হাদীসের কোন বর্ণনায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে আল্লামা ইবনু হাযার আসকালানী সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অন্যান্য হাদীসের সাথে এই হাদীসের সমন্বয় করে উল্লেখ করেছেন যে, এই গোসলের ঘটনাটি ঘটেছিল ইন্তিকালের আগের বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ ইন্তিকালের ৫ দিন আগে (ইবনু হাযার, ফাতহুল বারী ৮/১৪২)। ১২ই রবিউল আউয়াল ইন্তিকাল হলে তা ঘটেছিল ৮ই রবিউল আউয়াল।
উপরের আলোচনা থেকে আমাদের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, সফর মাসের শেষ বুধবার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সুস্থ হওয়া, গোসল করা এবং এ জন্য সাহাবীগনের আনন্দিত হওয়া ও দান-সদকা করার এ সকল কাহিনীর কোনরূপ ভিত্তি নেই। আল্লাহই ভাল জানেন।
যেহেতু মূল ঘটনাটিই প্রমানিত নয়, সেহেতু সেই ঘটনা উদযাপন করা বা পালন করার প্রশ্ন উঠে না। এরপরও আমাদের বুঝতে হবে যে, কোন আনন্দের বা দুঃখের ঘটনায় আনন্দিত ও দুঃখিত হওয়া এক কথা, আর প্রতি বছর সেই দিনে আনন্দ বা দুঃখ প্রকাশ করা বা ‘আনন্দ দিবস’ আ ‘শোক দিবস’ উদযাপন করা সম্পূর্ণ অন্য কথা। উভয়ের মধ্যে আসমান যমীনের পার্থক্য।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবনে অনেক আনন্দের দিন আ মুহূর্ত এসেছে, যখন তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন, শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য আল্লাহর দরবারে সাজদাবনত হয়েছেন। কোন কোন ঘটনায় তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণও আনন্দিত হয়েছেন ও বিভিন্নভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পরের বছর বা পরবর্তী কোন সময়ে সেই দিন বা মুহূর্তকে তারা বাৎসরিক ‘আনন্দ দিবস’ হিসেবে উদযাপন করেননি। এজন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নির্দেশ বা সাহাবীদের কর্ম ছাড়া এইরূপ কোন দিন বা মুহূর্ত পালন করা বা এইগুলিতে বিশেষ ইবাদতকে বিশেষ সওয়াবের কারণ বলে মনে করার কোন সুযোগ নেই।
আখেরী চাহার সোম্বা করণীয়
উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, সফর মাসের শেষ বুধবারের কোন প্রকার বিশেষত্ব হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয়। এই দিনে ইবাদত, বন্দেগী, সালাত, সিয়াম, জিকির, দোয়া, দান, সদকা ইত্যাদি পালন করলে অন্য দিনের চেয়ে বেশী বা বিশেষ কোন সওয়াব বা বরকত লাভ করা যাবে বলে ধারনা করা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অসুস্থতার মধ্যে রবিউল আউয়াল মাসের শুরু ভাগে ইন্তেকাল করেন সে অসুস্থতা থেকে ছফর মাসের শেষ বুধবারে অর্থাৎ, আখেরী চাহার শোমবায় কিছুটা সুস্থতা বোধ করেছিলেন, তাই এ দিবসটিকে খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করা হয়। অথচ এ তথ্য সহীহ নয়। বরং সহীহ ও বিশুদ্ধ তথ্য হল এ বুধবারেই তাঁর অসুস্থতা বেড়ে যায়। কাজেই যে দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসুস্থতা বেড়ে যায় সেদিন ইয়াহুদী প্রমুখদের জন্য খুশির দিন হতে পারে- মুসলমানদের জন্য নয়। অতএব ছফর মাসের শেষ বুধবার অর্থাৎ, আখেরী চাহার শোমবাহ-কে খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করা এবং এ হিসেবে ঐ দিন ছুটি পালন করা জায়েয হবে না।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সর্ব প্রকার বিদ’আত থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সমাপ্ত: আখেরী চাহার সোম্বা কি? আখেরী চাহার সোম্বা কেন? আখেরী চাহার সোম্বা করণীয়? আখেরী চাহার সোম্বা কি জায়েজ? আখেরী চাহার সোম্বা ইতিহাস।