Skip to content

 

Wait...❤😘 Show love? ⬇⬇⬇

প্রশ্ন: আদমকে না হয় পথভ্রষ্ট করলো ইবলিশ, তাহলে ইবলিশকে পথভ্রষ্ট করলো কে? সৃষ্টিকর্তা?

প্রশ্ন: আদমকে না হয় পথভ্রষ্ট করলো ইবলিশ, তাহলে ইবলিশকে পথভ্রষ্ট করলো কে? সৃষ্টিকর্তা?

🛑”আদমকে না হয় পথভ্রষ্ট করলো ইবলিশ, তাহলে ইবলিশকে পথভ্রষ্ট করলো কে? সৃষ্টিকর্তা?”

🔷উত্তর : প্রথমেই আসা যাক, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের দিকে। ইবনু আব্বাস (রাঃ), ইবনু মাসউদ(রাঃ), বিভিন্ন প্রসিদ্ধ তাফসীর বিশারদগণ এবং ইসরাইলী রেওয়াতের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, মানুষের পূর্বে এই পৃথিবীতে জ্বিনদের বসবাস ছিল। এবং তাদের উপর আল্লাহ’র নির্দেশ ছিল আল্লাহ’র ইবাদাত করা এবং তাদের জন্য দেয়া হুকুম-আহকাম মেনে চলা। কেননা আল্লাহ বলেন,

“আমি জ্বিন এবং মানব জাতিকে শুধুমাত্র ইবাদাতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।” [সূরা আয-যারিয়াতঃ ৫৬]

কিন্তু এই জ্বিনজাতি কালের পরিক্রমায় পথভ্রষ্ট হয়ে পড়লো এবং পৃথিবীতে হানাহানি-রক্তপাত করতে শুরু করলো। ফলে, তাদের উপর আল্লাহ’র শাস্তি নেমে এলো। তাহলে, ইবলিশকে কে পথভ্রষ্ট করলো এই প্রশ্নের উত্তরের চেয়ে উক্ত জ্বিনদের কে পথভ্রষ্ট করলো সেটা অধিক জানা প্রয়োজন, তাই না? প্রকৃতপক্ষে, উক্ত জ্বিনজাতির পদস্খলনের কারণ থেকেই সহজেই ইবলিশের পথভ্রষ্টতার হেতু জানা সম্ভব।

এই আলোচনায় যাবার জন্য আসুন আমরা একটি সহজ বিষয় বোঝার চেষ্টা করি। কোন বান্দা বা সৃষ্টি পথভ্রষ্ট হবার জন্য কি আসলেই কোন ‘প্রভাবক’ থাকা প্রয়োজন? উত্তর হলো, ‘না’। আল্লাহ তা’আলা যখন কোন বান্দাকে জ্ঞান দান করেন, তার মধ্যে চিন্তা করার শক্তি দান করেন, তাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দান করেন তখন সে নিজের সিদ্ধান্ত ও কর্মের জন্য নিজেই দায়ী। সেখানে ভুল করার জন্য বাইরে থেক ‘প্রভাবক’ এর প্রয়োজন হয় না।

ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেন, “বোধ-বুদ্ধি ক্ষমতা সম্পন্ন সৃষ্টির মধ্যে সবসময় দুটি বিপরীতধর্মী চিন্তাধারা প্রবহমান। হয় সে কোন কিছু মেনে নিবে অথবা সেটার বিরুদ্ধাচারণ করবে, এবং তা নিজের মধ্যে সবসময় বিরজমান। সেজন্য নিজের ‘মন্দ মনোভাব’ কে সর্বদাই দমন করে রাখতে হয়।”

ঠিক, এই কারণেই মানবজাতির পূর্বে পৃথিবীতে বিচরণকারী জ্বিন’রা ভুলের মধ্যে পতিত হয়েছে, নিজেদের অন্তরের মধ্যে চলা ‘পজিটিভ’ ও ‘নেগেটিভ’ দুই বিপরীত ধারার মধ্যে সমতাবিধানে ব্যর্থ হয়েই তারা ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ঠিক এমনিভাবে ‘ইবলিশ’ও পথভ্রষ্ট হয়েছে, এবং এমন পথভ্রষ্টতার জন্য নিজে ব্যতীত আর কেউই দায়ী নয়। এমন ঘটনা আমাদের জীবনে কতবারই না ঘটেছে, যেখানে মনে হয়েছে এইটা হচ্ছে আমার বেস্ট ডিসিশন কিন্তু শেষে যেয়ে দেখা গেছে, আমি কি ভুল সিদ্ধান্তটাই না নিয়েছি। এমন সিদ্ধান্তের জন্য নিজে ব্যতীত আর কেউ দায়ী থাকে কি?

এরপর আসুন, আমরা সৃষ্টির মূলে চলে আসি। প্রতিটি সৃষ্ট বস্তুর একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নির্ভর করে তার সৃষ্টির উপাদানের উপর। উপাদানের ভিন্নতার দরুন তাদের আচরণে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। তবে, সৃষ্টির উপাদানের ভিন্নতা সত্ত্বেও প্রতিটি সৃষ্ট বস্তুর স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য (ফিতরাহ) হলো সৃষ্টিকর্তার প্রতি নিজেকে ফিরিয়ে নেয়া বা অনুগত থাকা। এবং এই বৈশিষ্ট্যের উপর থেকে প্রত্যেকের জীবন শুরু হয়, যতক্ষণ না সে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান, চিন্তা শক্তি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে ‘মিসইউজ’ করে নিজেকে সৃষ্টিকর্তা (আল্লাহ) হতে নিজেকে বিমুখ করে নিচ্ছে। কেননা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“প্রতিটি নবজাত শিশুই ফিতরাহ এর উপর (স্বভাব জাত ধর্ম তথা আল্লাহর একত্ববাদ এর উপর) জন্ম গ্রহণ করে; পরে তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী বানিয়ে দেয়, নাসারা বানিয়ে দেয় অথবা পৌত্তলিক বানিয়ে দেয়।” [বুখারী ও মুসলিম]

এখন, আল-কুরআন এবং হাদিস থেকে আমরা জানি, ‘ফেরশতাকূলকে ‘নূর’ থেকে; জ্বিনজাতিকে ধোঁয়াবিহীন অগ্নিশিখা থেকে এবং আদম আলাইহিস সালাম-কে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

এবং সৃষ্টির উপাদানের তারতম্যের জন্য এই সৃষ্টির আচরণের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। উপরন্তু আল্লাহ জ্বিন ও মানব জাতিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দান করেছেন। অপরপক্ষে, ফেরেশতাগণ আল্লাহ’র অনুগত বান্দা যারা নিজেরা আল্লাহ’র হুকুমের বিরুদ্ধাচারণের কথা চিন্তাও করতে পারে না।

সৃষ্টির উপাদানের বৈশিষ্ট্য সৃষ্ট বস্তু (বান্দার) মধ্যে সঞ্চারণের ব্যাপারে ইবনু কাসির রহিমাহুল্লাহ বলেন, “আগুনের সৃষ্ট বলে জ্বিনদের মধ্যে আগুনের বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ অস্থিরতা, অধীরতা, ঝোঁকপ্রবণতা, দহনপ্রবনতা বিদ্যমান” কিন্তু তা সত্ত্বেও ইহা যে, তার ফিতরাহ-কে পরিবর্তন করে না তা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে।

ইবলিশসহ সকল জ্বিনের মধ্যে এই প্রবনতাগুলো ছিল এবং তারা এসব প্রবনতার বশবর্তী হয়ে, নিজের জ্ঞান ও ইচ্ছাশক্তির সেচ্ছাচারিতার দরুণ পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হয়েছে।

আলোচনার এই পর্যায়ে, পুরো বিষয়টি পাঠকরা যেন সম্যকভাবে বুঝতে সক্ষম হোন সেজন্য ইবলিশের ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর দিকে আলোকপাত করা যাক।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, ইবলিশ ছিল জ্বিনদের একজন। পথভ্রষ্ট হবার পূর্বে সে ছিলো সর্বনিম্ন আসমানের ফেরেশতাদের সর্দার এবং জ্ঞান ও অধ্যবসায়ের দিক থেকে সে ছিল ফেরেশতাদের চেয়েও সেরা। সে সকল ফেরেশতা অপেক্ষা অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানিত ছিল। তার মর্যাদাস্বরূপ উপাধি ছিল ‘আযাযীল’। ইবলিশ ও তার অধিনস্ত ফেরেশতাগণ জান্নাতের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করত। এক পর্যায়ে ইবলিশের মনে এরূপ ভাবের উদয় হলো যে, ফেরেশতাদের উপর আমার শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে বলেই তো আল্লাহ আমাকে এমন ক্ষমতা দান করেছেন। তার মধ্যে আত্ম-অহংকার বোধ জাগ্রত হতে শুরু করলো।

কিন্তু, আল্লাহ তা’আলা ইবলিশের এই অহংকারবোধ সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন। এজন্য আল্লাহ বলেছেন, ‘… এবং তোমরা যা ব্যক্ত করো বা গোপন রাখো, আমি তাও জানি…” [সূরা আল-বাক্বারাহঃ ৩৩]

এরপর, একসময় আল্লাহ তা’আলা পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি (মানুষ) সৃষ্টি করার ইচ্ছাটি ফেরেশতাদেরকে অবিহিত করলেন। তখন ফেরেশতাগণ বললেন, “আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে অশান্তি ঘটাবে ও রক্তপাত করবে? আমরাই তো আপনার প্রশংসা-স্তুতি ও পবিত্রতা ঘোষণা করি।” [সূরা বাক্বারাহঃ ৩০]

প্রথমত, ফেরেশতাগণ সম্ভাব্য নতুন সৃষ্টি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন এই জন্য যে, তারা মানুষের পূর্বের সৃষ্ট জাতি জ্বিনদের অবাধ্যতা, রক্তপাত-হানাহানি অবলোকন করেছেন এবং তারা তদের পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার আলোকে এরূপ মন্তব্য করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, কেউ যখন কোন ব্যাপারে মন্তব্য প্রদান করে তখন সে দু’টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তা বলে, এক, তার জ্ঞান এবং দুই, তার পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বজ্ঞানী। এজন্যই তাদের জবাবে আল্লাহ বলেছেন “আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না।”

হাসান বসরি রহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন, ফেরেশতাগণ আল্লাহ’র কাছ থেকে আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার কথা জেনে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলো যে, ‘আমাদের রব যাকেই সৃষ্টি করুন না কেন আমরাই তার চাইতে বেশি জ্ঞানী প্রতিপন্ন হবো।’

অপরদিকে, নবসৃষ্টির ব্যাপারে ইবলিশের মনোভাব বর্ণনায় ইবনু জারির রহিমাহুল্লাহ বলেন, নিজ অহমিকায় অবিভূত ইবলিশ যখন আদম আলাইহিস সালামের দেহায়ব দেখল (রূহ ফুঁকে দেবার পূর্বের অবস্থায়), তখন সে উক্ত দেহায়বের চারদিকে ঘুরতে শুরু করল ও আশ্চার্যান্বিত হলো এবং বললো, নিশ্চয়ই তোমাকে বড় কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়ছে। এরপর সে দেহায়বকে পরীক্ষা করল এবং দেখলো যে, এটা ঠনঠনে, ভেতরে শূন্য এবং সে আঁচ করলো যে, এই সৃষ্টির আত্মসংযম থাকবে না। সে বললো, ‘যদি তোমার উপর আমাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাকে ধ্বংস করব আর যদি আমার উপর তোমাকে ক্ষমতা দেয়া হয়, তাহলে আমি অবশ্যই তোমার অবাধ্যতা করবো।’

এরপর আল্লাহ তা’আলা আদম আলাইহিস সালামের দেহায়বে প্রাণের সঞ্চার করলেন এবং জ্ঞান শিক্ষা দিলেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

“আর আল্লাহ তা’আলা শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম। তারপর সে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাকো।” [সূরা বাক্বারাহঃ ৩১]

এমন প্রশ্নে ফেরেশতাগণ নিজেদের অনুমানের ভ্রান্তি বুঝতে পারলেন এবং সৃষ্টির ব্যাপারে নিজেদের জ্ঞানের স্বল্পতা ও অজ্ঞতা অনুধাবন করে বিনয়ের সহিত বললেন,

“আপনি মহান, পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের তো কোন জ্ঞানই নেই। বস্তুত আপনি জ্ঞানময় ও প্রজ্ঞাময়।” [সূরা বাক্বারাহঃ ৩১-৩২]

এরপর আল্লাহ তা’আলা আদম আলাইহিস সালামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণার্থে উনাকে উক্ত বস্তু সামগ্রীর নাম বলতে বললেন। এ প্রসংগে আল্লাহ বলেন,

“তিনি বললেন, হে আদম, ফেরেশতাদেরকে বলে দাও এসবের নাম। তারপর যখন তিনি(আদম) বলে দিলেন সে সবের নাম, তখন তিনি(আল্লাহ) বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত রয়েছি? এবং সেসব বিষয়ও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন কর! [সূরা বাক্বারাহঃ ৩৩]

এরপর আল্লাহ তা’আলা আদম আলাইহিস সালামকে সম্মানিত করলেন এবং অহংকারী ইবলিশের অহংকার প্রকাশিত হয়ে গেল এবং সে আল্লাহ’র অবাধ্য হয়ে গেল,

“এবং যখন আমি আদম-কে সিজদাহ করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদাহ করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল।” [সূরা বাক্বারাহঃ ৩৪]

ইবলিশের অহংকার প্রকাশের ধরন বর্ণনায় কুর-আনে এসেছে,

আল্লাহ তাকে(ইবলিশকে) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম তখন সিজদাহ করা থেকে কিসে তোমাকে বারণ করলো? ইবলিশ বললো, ‘আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ, আমাকে আপনি আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদা মাটি দিয়ে।” আল্লাহ বললেন, “এখান থেকে তুমি নেমে যাও, এখানে থেকে তুমি অহংকার করবে, তা হতে পারে না”। [সূরা আল আ’রাফঃ ১২-১৩]

অপর আয়াতে এসেছে,

ইবলিশ বলল, ‘বলুন- তাকে যে আপনি আমার উপর মর্যাদা দান করলেন কেন? কিয়ামতের দিন পর্যন্ত যদি আমাকে অবকাশ দেন তাহলে আমি অল্প কয়েকজন ব্যতীত তার বংশধরকে কতৃত্বাধীন করে ফেলবো।’ [সূরা সূরা বনী ঈসরাইল:৬৫]

এখানে, ইবলিশ এবং ফেরেশতাদের বক্তব্যের তুলনামূলক আলোচনাই ইবলিশের পথভ্রষ্টতাকে ও তার অন্তরের ঔদ্ধত্যকে উন্মোচন করে। সকলের সামনে আনিত বস্তুগুলোর নাম বলতে না পারায় লজ্জিত ফেরশতাগণ যেখানে বিনয়ের সাথে বললেন, “আপনি মহান, পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের তো কোন জ্ঞানই নেই। বস্তুত আপনি জ্ঞানময় ও প্রজ্ঞাময়” এবং আল্লাহ’র আদেশ মেনে নিয়ে আদম আলাইহিস সালামকে সিজদাহ করলেন সেখানে ইবলিশ সারা জাহানের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা’আলা’র সামনে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে বললো- ‘বলুন- তাকে যে আপনি আমার উপর মর্যাদা দান করলেন কেন?’!!!

নিজের অহমিকায় আক্রান্ত হয়ে নিজের ফিতরাহ-কে এতটাই পথভ্রষ্ট করলো যে, আল্লাহ’র সামনে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলো, আল্লাহ’র থেকে কৈফিয়ত দাবী করলো!!! আবার, সেই সৃষ্টিকর্তার সামনেই [যিনি তাকে(ইবলিশকে) এত্ত এত্ত মর্যাদা ও সম্মান দান করেছিলেন] নিজের অহংকার প্রকাশ করে বললো, ‘আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ, আমাকে আপনি আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদা মাটি দিয়ে।’ অথচ সে ভুলে গেল আল্লাহ বলেছেন, “আমি আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত রয়েছি।”

প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ-ই কি তাঁর সৃষ্টি জগত সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত (সর্বজ্ঞ) নন? আল্লাহ তা’আলা সকলের সামনে আদম আলাইহিস সালামের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেখিয়েছেন এবং ফেরেশতাগণ তা কি মেনে নেয় নি? তারা কি সিজদাহ করে নি?

ইবলিশ নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে ধরে নিয়েছিলো এবং তার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আর কিছু হতে পারে না বা আল্লাহ বানাতে পারেন না (আউযুবিল্লাহ) বলে নিজে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলো যা সুস্পষ্টরূপে মহান আল্লাহ’র বড়ত্বের খেলাফ। নিশ্চয়ই আল্লাহ অনেক শ্রেয়তর বস্তু (বান্দা) সৃষ্টি করতে সক্ষম।

পূর্বেই উল্লেখ করেছি, কেউ যখন কোন মন্তব্য প্রদান করে তখন সেটা তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে দিয়ে থাকে। এখানে, আল্লাহ’র তুলনায় ইবলিশের জ্ঞান কি তুচ্ছ নয়? এছাড়া, আদম আলাইহিস সালাম সৃষ্টির পূর্বে ফেরেশতারাও নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করেছিলো কিন্তু আল্লাহ যখন তাদের ভুল সামনাসামনি ধরিয়ে দিলেন, তাদের জ্ঞানের লিমিটকে তুলে ধরলেন এবং প্রমাণ উপস্থাপন করলেন, তখন তারা বিনয়ের সহিত নিজেদের ভুল স্বীকার করলো এবং আল্লাহ’র নির্দেশ বাস্তবায়ন করলো। অপরপক্ষে, ইবলিশ ছিল তার বিপরীত, আল্লাহ’র সামনে যুক্তি উপস্থাপনকারী। প্রকৃতপক্ষে, সেই-ই প্রথম যুক্তিবাদী, বর্ণবাদী, গোত্রপ্রিয়, সাম্প্রদায়িক মত উত্থাপনকারী। আল্লাহ যদি কাউকে অপরজনের উপর কতৃত্ব ও মর্যাদা দান করেন তাতে কি ই বা এসে যায়। ইবলিশকেও কি আল্লাহ ফেরেশতাদের উপর কতৃত্বদান করেছিলেন না? ফেরেশতাগণ কি তাঁর বিরুদ্ধাচারণ করেছিলো? তারা কি ইবলিশের সেই শ্রেষ্ঠত্বের বিরোধীতা করেছিলো? তাহলে, ইবলিশ যদি অনুরূপভাবে আদম আলাইহিস সালামের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিতে না পারে, নিজের ঠুনকো অহমিকার দরুণ নিজেকে ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত করে, তাহলে সেই দায়টা কার?

অবশ্যই একমাত্র এবং শুধুমাত্র ইবলিশের।

আশা করি উপরের আলোচনায় উপরোক্ত কপট প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন এবং আল্লাহ’র বিরুদ্ধে এরূপ ক্লেইমগুলোর অসাড়তা বুঝতে পেরেছেন।

নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। জাযাকুমুল্লাহু খইরন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!