ট্যাগসমূহঃ আলু চাষ, আধুনিক পদ্ধতিতে আলু চাষ, কার্ডিনাল আলু চাষ পদ্ধতি, দেশি আলু চাষ পদ্ধতি, মেটে আলু চাষ পদ্ধতি, লাল আলু চাষ, মাটি ছাড়া আলু চাষ, আলু চাষের আধুনিক পদ্ধতি, আলু চাষের নিয়ম, আলু চাষের সঠিক পদ্ধতি, আলু চাষের জন্য কোন মাটি উপযোগী, আলু চাষে সার প্রয়োগ, আলু চাষের পদ্ধতি, আলু চাষে কীটনাশক, আলু চাষের পরিচর্যা, আলু চাষের উপযোগী মাটি, আলু চাষের জমি তৈরি, আলু চাষের উপযুক্ত সময়, আলু চাষের উপযোগী মাটি কোনটি, আলু উৎপাদন, আলু চাষ করার পদ্ধতি, আলু চাষ কিভাবে করতে হয়, আলু চাষ কিভাবে হয়, আলু চাষ করে, আলু চাষে করণীয়, আলু চাষ কিভাবে করা হয়, আলু গাছ চাষ, গোল আলু চাষ পদ্ধতি, গাছ আলু চাষ পদ্ধতি, গোল আলু চাষ নিয়ম, আলু গাছ, আলু গাছের পরিচর্যা, আলু চাষের জন্য, আলু চাষের জন্য জমি কিভাবে প্রস্তুত করা হয়, ডায়মন্ড আলু চাষ পদ্ধতি, আলু চাষ দেখাও, আলু চাষের পদ্ধতি দেখাও, দেশি আলু চাষ, আলু চাষ পদ্ধতি, আলু চাষ পদ্ধতি pdf, আলু চাষের ফর্মুলা, আলু চাষ বাম্পার ফলন, আলু চাষ বাংলাদেশ, আলু চাষে মাটির ph মাত্রা কত থাকা ভালো, আলু চাষ রচনা, আলু চাষ সম্পর্কে, আলু চাষের সময়, আলু চাষে সারের পরিমান, আগাম আলু চাষের সময়, হাইব্রিড আলু চাষ পদ্ধতি।
আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
আলু উৎপাদন চাষ প্রযুক্তিঃ
বাংলাদেশে সব জেলাতেই কমবেশি আলুর আবাদ হয়, তবে উত্তরাঞ্চলের জেলা, যেমন- জয়পুরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, রাজশাহীসহ যশোর ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় আলু চাষ বেশি হয়। বর্তমানে সরকারি সুষ্ঠু পরিকল্পনায় আলুর জমির পরিমাণ ও মোট উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আলুর ফলন বর্তমানে প্রায় ২০ টন/হে (২০১৪-২০১৫)। আলু এক ধরনের কাণ্ড যা মানুষের প্রধান খাদ্য হিসেবে পরিচিত।
আলু চাষে জাত নির্বাচনঃ
- এলাকা ও চাষের উদ্দেশ্যের উপর জাত নির্বাচন করতে হবে। আগাম চাষের জন্য বারি আলু-১৩ (গ্রানোলা), বারি আলু-৩১ (সাগিটা), বারি আলু ২৯ (কারেজ)। খাবার আলু হিসেবে বারি আলু-৭ (ডায়মন্ড), বারি আলু-৮ (কার্ডিনাল), বারি আলু ২৫ (এসটেরিক্স), বারি আলু- ৩৫, বারি আলু-৩৬, বারি আলু-৩৭, বারি আলু-৪০, বারি আলু-৪১।
- প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য বারি আলু-২৮ (লেডিরোসেটা), বারি আলু-২৯ (কারেজ) এবং রপ্তানির জন্য বারি আলু-১৩ (গ্রানোলা), বারি আলু-৪৩ (এ্যাটলাস)। মড়ক রোগ প্রতিরোধী জাত হলো বারি আলু-৪৬ ও বারি আলু-৫৩। বারি আলু-৪৮ ও বারি আলু-৬২ সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ উপযোগী।

চিত্রঃ বারি আপু-৭ (ডায়মন্ড)

চিত্রঃ আলুর কন্দ

চিত্রঃ বারি আলু-৮ (কার্ডিনাল)
আলু চাষে জমি নির্বাচনঃ
বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি আলু চাষের জন্য উত্তম।
আলু চাষে জমি তৈরিঃ
গরুর লাঙল, পাওয়ারটিলার/ ট্রাক্টর দ্বারা আড়াআড়িভাবে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে প্রস্তুত করতে হবে।
আলু চাষে রোপণ সময়ঃ
নভেম্বর মাস আলু লাগানোর উপযুক্ত সময়। বীজ আলুর জন্য ১৫ই নভেম্বর এর মধ্যে বীজ রোপণ করা উত্তম। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চলে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আগাম আলু লাগানো যেতে পারে এবং মধ্যাঞ্চলসহ দক্ষিণাঞ্চলে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত আলু লাগানো যাবে।
আলু চাষে বীজের পরিমাণঃ
বিঘায় ২০০-২৫০ কেজি বীজ আলু প্রয়োজন।
আলু চাষে বীজ তৈরিঃ
- আলু ফসলের জন্য ৩০-৪০ গ্রাম ওজনের আস্ত আলু বীজ হিসেবে ব্যবহার করা উত্তম। কেটেওবীজ লাগানো যেতে পারে।
- প্রতিটি অংশে কমপক্ষে ২টি চোখ থাকতে হবে।
- বীজ লাগানোর ২ দিন পূর্বে আলু কেটে ছায়া স্থানে রেখে দিলে কাটা অংশের উপর একটা প্রলেপ পড়ে। পরিষ্কার ছাই মেখেও কাজটি করা যেতে পারে। এতে আলু পচন রোধ করা সম্ভব। আগাম আলুর ক্ষেত্রে অবশ্যই একটু ছোট আকারের আস্ত আলু লাগানো উত্তম।

চিত্রঃ অঙ্কুরিত আলু + চিত্রঃ সঠিকভাবে আলু কেটে বীজ তৈরি + চিত্রঃ এভাবে আলু কেটে বীজ তৈরি করা যাবে না
আলু চাষে রোপণ পদ্ধতিঃ
৬০×২৫ সে.মি. দূরত্বে আস্ত আলু এবং ৬০×১৫/১০ সে.মি. দূরত্বে কাটা আলু রোপণ করে আলুর উপর মাটি তুলে ভেলি বেঁধে দিতে হবে।

চিত্রঃ লাইনে গোটা আলু স্থাপন + চিত্রঃ লাইনে গোটা আলু স্থাপনের পর সারের নালা তৈরি করা + চিত্রঃ লাইনে গোটা আলু স্থাপন ও সারের নালায় সার প্রয়োগের পর মাটি তুলে পিলি তৈরি করা
আলু চাষে সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
আলু চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
- গোবর ও জিংক সালফেট শেষ চাষের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। অর্ধেক ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও বোরন সার রোপণের সময় বীজ রোপণ লাইনের উভয় পাশে ১০-১২ লাইন টেনে ব্যান্ড পদ্ধতিতে সার দিতে দূরে সে.মি. হবে।
- বাকি ইউরিয়া রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর অর্থাৎ দ্বিতীয়বার মাটি তোলার সময় প্রয়োগ করতে হবে। এতে সারের সঠিক প্রয়োগ হয়। সার প্রয়োগের পর সাথে সাথে সার ও বীজ মাটি দিয়ে ভেলি তুলে ঢেকে দিতে হবে।
সারের নাম | সারের পরিমান (হেক্টরে) |
ইউরিয়া | ৩৪০ কেজি |
টিএসপি | ২১০ কেজি |
এমপি | ২৩৫ কেজি |
জিপসাম | ১১০ কেজি |
জিংক সালফেট | ৯ কেজি |
বোরন (প্রয়োজনবোধে) | ৭ কেজি |
গোবর | ১০ টন |
আলু চাষে নালা এবং বীজ আলু রোপণের সারিঃ
সার প্রয়োগের নালা এবং বীজ আলু রোপণের সারির নকশা নিচে দেখানো হলো-

চিত্রঃ সার প্রয়োগের নালা এবং বীজ আলু রোপণের সারির নকশা
আলু চাষে সেচ প্রয়োগঃ
- বীজ রোপণের ২-৩ সপ্তাহ পর সেচ দেওয়া উত্তম।
- মোট ২-৩টি সেচ প্রয়োগ করা প্রয়োজন হতে পারে (২০-২৫ দিনের মধ্যে স্টোলন বের হওয়ার সময়।
- ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে গুটি বের হওয়া পর্যন্ত এবং পরে আলু বৃদ্ধির সময়)।
- জমি থেকে আলু উঠানোর ৭-১০ দিন পূর্বে মাটি ভেদে সেচ প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।

চিত্রঃ সারিতে আলুবীজ স্থাপন + চিত্রঃ আলু রোপণের পর মাটি তুলে ভেলি তৈরি + চিত্রঃ ভেলির মাঝখানে তিনের দুই অংশে সেচ প্রদান
আলু চাষে অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যাঃ
আলু লাগানোর ৩০-৩৫ এবং যদি আলু মাটি থেকে বেরিয়ে আসে তবে ৫৫-৬০ দিন পর গোড়ায় মাটি তুলে দেওয়া প্রয়োজন। মাটি তুলে দেওয়ার পূর্বে আগাছা নিড়িয়ে দিতে হবে।
আলু চাষে রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনঃ
রোগ: নিম্ন তাপমাত্রা, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া ও মেঘলা আকাশ আলুর জন্য ক্ষতিকর। এতে আলুর নাবি ধসা রোগ আক্রমণের আশঙ্কা দেখা যায়।
প্রতিকার: আলু ফসলকে আলুর নাবি ধসা রোগ প্রতিরোধ করার জন্য স্পর্শক (কন্ট্রাক্ট) ছত্রাকনাশক, যেমন- ইন্ডোফিল, ডায়থেন এম ৪৫/ম্যানকোজেব/ইন্ডোফিল/মেলোডি ডুও/সিকিউর (২ গ্রাম/প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে) ৭ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে। জাবপোকার আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এডমায়ার ২০০ এসএল, ইমিটাফ ২০ এসএল এবং কনফিডেন্ট ২০০ এসএল ব্যবহার করতে হবে।
রোগ: কাটুই পোকা আলুর কচি গাছ কেটে ফেলে এবং আলু ছিদ্র করে আলুর মান নষ্ট করে ফেলে।
প্রতিকার: এই পোকার আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সকালে জমিতে গিয়ে কর্তিত চারার গোড়া ছুঁড়ে কিড়াগুলো মেরে ফেলতে হবে। আক্রমণ তীব্র হলে প্রতি লিটার পানির সাথে ৫ মিলি ডারসবান ২০ ইসি জাতীয় কীটনাশক মিশিয়ে চারাগাছগুলির গোড়ায় মাটি ভিজিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করে কাটুই পোকা দমন করা যায়।
আলু চাষে ফসল সংগ্রহঃ
জাতভেদে আলু লাগানোর ৮০-১০০ দিনের মধ্যে উত্তোলন করা যায়। আলু উত্তোলনের পর পরই বাড়িতে নিয়ে আসা উত্তম।
আলু চাষে ফলনঃ
জাতভেদে আলুর বিঘাপ্রতি ২.৫-৩.০ টন ফলন পাওয়া যায়।
আলু চাষে আলু সংরক্ষণঃ
আলু সংগ্রহের সাথে সাথে কাটা ও পচা আলু বাদ দিয়ে ঠাণ্ডা জায়গায় সাত দিন কিউরিং করতে হবে। পরে বস্তায় ভরে আলু সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া ঠাণ্ডা জায়গায় ঢেলে রেখে দুই তিন মাস পর্যন্ত কৃষক নিজের প্রয়োজন মেটাতে পারে।
সমাপ্ত।