Skip to content

 

রুই, মৃগেল, কাতলা ও কালবাউস মাছের পোনা চেনার উপায় + মৃগেল, কালবাউস, কাতলা ও রুই মাছ চাষ এর পোনা সংগ্রহ ও পরিবহনের নিয়ম + পোনা ওজন ও গণনার নিয়ম আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ#মাছ চাষের পদ্ধতি#মাছ চাষ করার সহজ উপায়#মাছ চাষ কিভাবে করা যায়#আধুনিক পদ্ধতিতে মাছের পোনা পরিচর্যা

পোনা আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ মাছ চাষের পদ্ধতি মাছ চাষ কিভাবে করা যায়

বিষয়: রুই, মৃগেল, কাতলা ও কালবাউস মাছের পোনা চেনার উপায় এবং মৃগেল, কালবাউস, কাতলা ও রুই মাছ চাষ এর পোনা সংগ্রহ ও পরিবহনের নিয়ম, পোনা ওজন ও গণনার নিয়ম, আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ, মাছ চাষের পদ্ধতি, মাছ চাষ করার সহজ উপায়, মাছ চাষ কিভাবে করা যায, আধুনিক পদ্ধতিতে মাছের পোনা পরিচর্যা।
হ্যাশট্যাগ:#রুই, মৃগেল, কাতলা ও কালবাউস মাছের পোনা চেনার উপায়#মৃগেল, কালবাউস, কাতলা ও রুই মাছ চাষ এর পোনা সংগ্রহ ও পরিবহনের নিয়ম, পোনা ওজন ও গণনার নিয়ম#আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ#মাছ চাষের পদ্ধতি#মাছ চাষ করার সহজ উপায়#মাছ চাষ কিভাবে করা যায#আধুনিক পদ্ধতিতে মাছের পোনা পরিচর্যা

পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউস মাছের চাষ করার পদ্ধতিকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: ১. পোনা মাছ সংগ্রহ ও পরিবহন। ২. পুকুর প্রস্তুতি ও পোনা পালন। ৩. পালিত মাছের পরিচর্যা। ৪. সার প্রয়োগ ও মাছের খাবার প্রদান।

পোনা মাছ সংগ্রহ

  • রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউস মাছগুলো পুকুর ও নদীতে ডিম দেয় না। পুকুর ও দীঘিতে এদের আবাদ করতে হলে সময় মতো পোনামাছ সংগ্রহ করা প্রয়োজন।
  • চট্টগ্রাম জেলার হাল্দা নদী থেকে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ডিম পোনা সংগ্রহ করা হয়। এ সময়ের ভারী বর্ষায় পরিপক্ক মেয়ে ও পুরুষ মাছগুলো স্রোতের বিপরীত দিক থেকে ছোটাছুটি করতে করতে নদী বাঁকের স্রোতবিহীন উচ্চাঞ্চলে চলে যায়।
  • স্রোতের ধাক্কা, জলস্রোতে প্রবাহমান বালি বা কঙ্কর খণ্ড ও বারিধারা— সবই এদের শরীরে এক প্রকার যৌন শিহরণের সৃষ্টি করে। পুরুষ ও মেয়ে মাছগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে চলাফেরা ছোটাছুটি প্রভৃতি যৌন খেলায় লিপ্ত হয়। রকম ছোটাছুটির মাঝেই মেয়ে মাছ ডিম ছেড়ে দেয় এবং সংগে সংগে পুরুষ মাছ ও বীর্য স্খলন করে এ অবস্থাতেই ডিমগুলো পুরুষ বীর্য কর্তৃক নিষিক্ত হয় এবং মা ডিমের প্রতি কোনো লক্ষ্য নেয় না। রুই জাতীয় মাছগুলোর প্রজনন ক্ষমতাও যথেষ্ট।
  • নিষিক্ত ডিমগুলো ক্রমে ক্রমে পানির নিচে স্থির হয়ে বসে যায় এবং ১৩-১৪ ঘণ্টার মধ্যে ডিম পোনায় রূপান্তরিত হয়।
  • এ অবস্থায় জেলেরা নৌকার সাহায্যে মশারি বা কাপড়ের জাল দিয়ে ডিম পোনা ধরে এবং নৌকার এক পাশে গাঁদার ঘেরের মধ্যে সামান্য পানিতে ডিমগুলো রাখে। তারপর সেখান থেকে ডিম সরিয়ে নদীর পাড়ে গর্ত করে হাপার তৈরি করা হয় এবং উক্ত হাপার মধ্যে ডিম ফোটানো হয়। এ অবস্থায় সামান্য কিছু ডিম ফোটে। কিন্তু বেশির ভাগ ডিমই গাদাগাদিতে শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায়।
  • একটি বাঁশের কাঠামোর সঙ্গে মশারির কাপড়ের জাল বেঁধে কাঠামোটি পানির মধ্যে রেখে এর মধ্যে ডিমগুলো রাখতে হয়। এ সময় উক্ত জালের মধ্য দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হতে থাকে। এভাবে জালের মধ্যে ডিম রাখলে ডিম পোনার কোনো ক্ষতি হয় না।
  • ডিমগুলো ফোটানোর জন্য পাতলা কাপড়ের একটি কৃত্রিম পুকুর বানিয়ে তার মধ্যে পূর্বোক্ত পুকুরের চেয়ে কিছু ছোট ঘন ফাশের জালের তৈরি অথবা পাতলা মশারির কাপড়ের তৈরি আর একটা পুকুর বসিয়ে তার মধ্যে ডিম ফোটানো দরকার।
  • বাইরের পুকুরের চারকোণ ভিতরের পুকুরের চারকোণের সাথে বেঁধে সমস্ত জিনিসটি চারটি খুঁটির সাথে এমনভাবে বাঁধা দরকার যাতে জালটি বেশ টান টান অবস্থায় থাকে। এভাবে রাখলে ডিমগুলো হাপার মধ্যে সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
  • তা দেওয়ার জন্য উপরের জালের পুকুরে যে ডিম ছাড়া হয়, বাচ্চা ফোটার সংগে সংগে তা নিচের কাপড়ের পুকুরের পড়ে। সেখান থেকে ডিম পোনা খুব সহজেই বের করে নেওয়া যায়। যদি এ কৃত্রিম জালের পুকুরের মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহিত করা যায়, তাহলে ডিম ফোটানোর জন্য চিরাচরিত প্রথার মতো বারে বারে গর্ত পরিবর্তনের আর কোনো প্রয়োজন হয় না।
  • ডিম পোনা থেকে আরম্ভ করে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত রুই মাছের জীবনের বিভিন্ন স্তর বা কাল আছে। এগুলোকে যথাক্রমে রেণু, ধাণী, ছোট, চারা, অঙুলী, নলা, গর্মা, শলতা ও রুই প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। সাধারণত বয়স ও আকারের উপর ভিত্তি করে এ ধরণের নামকরণ করা হয়েছে।
See also  মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতি (কার্প জাতীয় মাছ)

১. ডিম পোনা:

মাছের ডিমের খোলসের ভিতরের জীবিত ভ্রুণকে ‘ডিম পোনা’ বলা হয়। ডিমের খোলস থেকে বাচ্চা ফুটে বেরিয়ে আসার পরও পোনা মাছের পেটে ছোট একটি থলি আটকানো থাকে। পোনা মাছের এ অবস্থাকেও মৎস্য বিশেষজ্ঞদের অনেকে ‘ডিম পোনা’ বলে চিহ্নিত করে থাকেন। এ অবস্থায় পোনা মাছ ডিম থলি থেকেই আহার করে থাকে।

২. রেণু পোনা:

পোনা মাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ছোট থলিটি দেহের সাথে মিশে যায় এবং পোনাকে সরু বা লম্বাটে দেখায়। পোনার এ অবস্থাকে ‘রেণু পোনা’ বলে ৷ রেণু অবস্থায় পোনা মাছ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবাণু খেতে শুরু করে।

৩. ধানী পোনা:

  • বয়সের সাথে রেণু পোনা আকারে আরো বড় হলে এবং সাধারণ চলতি কথায় একটি ধানের মতো বড় হলে তাকে ‘ধানী পোনা’ বলা হয়। এ অবস্থায় পোনা বড় মাছের অবয়ব প্রাপ্ত হয় এবং প্ল্যাঙ্কটন্ খেতে শুরু করে।
  • একমাত্র হালদা নদী ব্যতীত আর কোথাও ডিম পোনা পাওয়া যায় না। তবে গড়াই, যমুনা, পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ প্রভৃতি নদীতে ধানী পোনা পাওয়া যায়। ধানী পোনাগুলো ডিম পোনার চেয়ে বড়।
  • হাল্দার ১ সের ডিম পোনায় অন্ততপক্ষে ৮০ হাজার পোনা পাওয়া যায়। আবার পদ্মা, গড়াই বা যমুনার ১ সের ধানী পোনার ২৫ থেকে ৩০ হাজারের বেশি পোনা পাওয়া যায় না।
  • হাড়িতে প্রচুর পরিমাণ ডিম পোনা বহন করা যায়। ধানী পোনা পরিবহন করা ডিম পোনার চেয়ে ব্যয় বহুল।
  • চট্টগ্রামের হাল্দা নদী, সিরাজগঞ্জ, বাহাদুরাবাদ, ফুলছড়ি মাঠের নিকটবর্তী যমুনা নদী, ফরিদপুরের কবিরাজপুরের আড়িয়াল খাঁ নদী ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদ, কুষ্টিয়ার গড়াই নদী ও রায়টা ঘাটের নিকট পদ্মা নদী রুই জাতীয় মাছের পোনা সংগ্রহের জন্য বিখ্যাত।

পোনা সনাক্ত

রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউস, ইত্যাদি মাছের সাথে রাক্ষুসে মাছের পোনাও ধরা পড়ে। তাই কচি অবস্থায় রুই, কাতলা মাছের পোনা সনাক্ত করতে হলে মাথার আকার, লেজের ফোটা, কান্কোর রং পিঠের পাখনা ইত্যাদি পরীক্ষা করতে হয়।

১. রুই পোনা:

১ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের পোনার ঠোঁটের উপরে অংশ সামনের দিকে অল্প পরিসর বাড়ানো এবং কিঞ্চিৎ, লেজের গোড়ার ৩-৪টি কালো ফোঁটা আছে। পাখনার রঙ লাল।

২. কাতলা পোনা:

আধ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের পোনার মাথাটি দেহের তুলনায় বেশ বড় ও চওড়া। ঠোঁটের নিচের অংশ সামনের দিকে সামান্য বাড়ানো, কান্কোর উজ্জ্বল লাল রঙ বাহির হতে দৃশ্যমান।

৩. কালবাউস পোনা:

অর্ধ থেকে পৌনে ১ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের পোনার ঠোঁটের উপরের অংশ সামনের দিকে অপেক্ষাকৃত বাড়ানো, দেহের রঙ ধূসর। গোঁফ এবং লেজের গোড়ার দিকে একটি সাদা বিন্দুক কেন্দ্র করে কয়েকটি কালো দাগ দেখা যায়।

৪. মৃগেল পোনা:

পৌনে ১ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের পোনার ঠোঁটের উপর ও নিচের অংশ সমান। দেহের উপর লম্বালম্বিভাবে কয়েকটি ফিতা আকৃতির দাগ এবং ঠোঁটের ধারগুলো সাদা ধরনের থাকে। লেজের গোড়ায় চৌকা আকারের দাগ থাকে।

পোনা ওজন ও গণনা

একটা একটা করে পোনা গণনা করা সম্ভব নয়। তাই পোনা গণনা ও ওজনের জন্য ১ পোয়া অথবা আধাসের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পাত্রের মধ্যে পোনা ভর্তি করে (প্রায় পানি বিহীন) তাকে একটি ট্রে-র মধ্যে ঢেলে একটি কাঠির সাহায্যে সবগুলো পোনা একটি একটি করে গুণে নিতে হবে। যদি এরূপ হয় যে, ১ পোয়ার মধ্যে ২০ হাজার পোনা আছে, তাহলে ঐ পাত্রটিকে একটি মাপের পরিমাপ ধরে ঐ পাত্রের সাহায্যে যে কোনো পরিমাণ পোনা ওজন ও সঙ্গে সঙ্গে গণনা করা যেতে পারে। পোনার আকার অনুযায়ী পোনা বিক্রি করা হবে সে আকারের জন্য একটি মাপের পরিমাপ স্থির করে নিতে হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন পোনা ওজন ও গণনার সময় অতিরিক্ত হাতাহাতিতে পোনার গায়ে ঘষা লেগে গায়ের পিচ্ছিল ক্লেদ নষ্ট না হয়।

See also  আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ এর জন্য মাটিতে যেসব পরিপুষ্টি পদার্থ বিদ্যমান থাকতে হয় + পুকুরের মাটির প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য, মাছ চাষে নাইট্রেজেন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, জৈব পদার্থ, দ্রবীভূত অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, পানির তাপ, জলজ গাছ-গাছড়া, পটাশ এর ব্যবহার#মাছ চাষে উন্নত ব্যবস্থাপনা#মাছ চাষের উপায়#মাছ চাষ কিভাবে করা যায়

পোনা পরিবহণ

  • দূর-দূরান্তে পোনা পরিবহণ একটি কষ্টসাধ্য প্রকল্প। কারণ, পোনা চালান দেওয়ার সময় ধাক্কাধাক্কি, যানবাহনের অসুবিধা, হাড়ি ভেঙে যাওয়া, পানি বদলের অসুবিধা, প্রভৃতি কারণে বহু পোনা মারা যায়। তাই পোনা পরিবহণকালে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করার প্রয়োজনীয়তা আছে।
  • এ জন্য প্রথমেই পোনামাছ স্থানান্তরিত করার পূর্বে টেকসই করে নেওয়া দরকার এবং এর জন্য পোনাগুলোকে ১২ ঘণ্টা অভুক্ত অবস্থায় রাখা উচিত। এতে পোনাগুলোর পেটে খালি হয় এবং পরিবহণকালে ঝাঁকিতে বা ধাক্কায় বা মলত্যাগ না করার ফলে পাতিলের পানি কলূষিত হতে পারে না।
  • টেকসই তরান্বিত করার জন্য পোনাগুলোকে কয়েক ঘণ্টা হাপাতে রাখা প্রয়োজন। ফলে পোনা মাছের উদর তাড়াতাড়ি খালি হয়ে যায়।
  • মাটির পাতিল বা হাঁড়ি দ্বারা আমাদের দেশে সাধারণত পোনা মাছ পরিবহণ করা হয়ে থাকে। এর অভ্যন্তর ভাগ মসৃণ থাকা দরকার। কারণ, এটা খখসে হলে পোনা মাছের কোমল চামড়ায় আঘাত পায় এবং চামড়া ছিঁড়ে গিয়ে আহত হতে পারে। সেজন্য হাঁড়ির অভ্যন্তরীণ অংশ সাজি মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়। সাজি মাটির মধ্যে কিঞ্চিৎ খারত্বের গুণাবলি আছে। এটি পোনার জন্য খুব উপকারী।
  • পাতিল বা হাঁড়ির মধ্যে ঠাসাঠাসি করে পোনা ভর্তি করা ভালো নয়। কারণ, তাতে স্থানাভাবে ও অম্লজানের অভাব হেতু কার্বন ডাই-অক্সাইড ও এ্যামোনিয়া বেড়ে যায়। এর ফলে মড়কের হার বৃদ্ধি পায়।
  • সাধারণত এদেশে যে সব হাড়ি ব্যবহার করা হয় তাতে আধা ইঞ্চি আকারের ১,৫০০ পোনা পরিবহন করা বাঞ্ছনীয়। পোনা বহনকালে হাঁড়িতে বেশি বেশি ঝাকানি দেওয়া ঠিক নয়। কারণ, তাতে অনেক পোনা হাড়ির গায়ের সংগে বাড়ি খেয়ে আঘাত প্রাপ্ত হতে পারে। হাঁড়ির পানিকে বাতাসের সংস্পর্শে এনে বাতাসের অক্সিজেন পানিতে দ্রবীভূত হয়ে হাড়িতে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি হতে পারে। সেজন্যে হাঁড়িটাকে আস্তে আস্তে নাড়া দেওয়াই উচিত।
  • অন্যদিকে খোলা গাড়িতে অথবা ধাতব পাত্রে যদি পোনা মাছ পরিবহণ করা হয় তা হলে ধাতব পাত্রের উপর একটি ভিজে কাপড় জড়িয়ে দেওয়া দরকার। তারপর ঐ কাপড়ের উপর আস্তে আস্তে পানি ছিটিয়ে দিতে হয়। তাহলে একদিকে যেমন ধাতব পাত্রটি গরম হবে না, অন্যদিকে তেমনি ধাতব পাত্রটিতে অম্লজানেরও অভাব হবে না।
  • এছাড়া মাছগুলো উপরের দিকে লাফালাফি করলেও শক্ত জিনিসের আঘাত পাবে না। এ প্রসঙ্গে এটা বলা প্রয়োজন যে, পোনা পরিবহনকালে পানি পরিবর্তনের জন্য বালতি, মগ ও গামছা প্রভৃতি সরঞ্জাম সঙ্গে রাখা দরকার। ধাতব পাত্র শক্ত পদার্থের তৈরি। এ পাত্রে পোনা পরিবহন করলে মাছের লাফালাফি ও হুড়োহুড়িতে কিছু পোনা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা মাটির হাঁড়ির চেয়ে বেশি।
  • পোনা পরিবহনের সময় যদি দেখা যায় যে, পোনা ভেসে গিয়েছে এবং সবই উপরের দিকে উঠে গিয়েছে, তখন বুঝতে হবে যে, পরিবহন পাত্রে অক্সিজেনের অভাব ঘটেছে এবং তখনই পানি বদল করা দরকার।
  • পানি পরিবর্তনের সময় হাঁড়ির চারদিকে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে অথবা সুবিধে থাকলে হাঁড়ির তিন-চতুর্থাংশ পানিতে ডুবলে সিকি অংশ পানি ফেলে সমপরিমাণ পানি হাঁড়িতে নেওয়া দরকার। এভাবে ৪-৫ বার পানি পরিবর্তন করলে সমগ্র পানি পরিবর্তিত হয়ে যাবে।
  • নদী, পুকুর বা নলকূপের ঠাণ্ডা পানির দ্বারা হাঁড়ির পানি বদল করতে হবে। শহরের টেপ বা কলের পানি দিয়ে হাঁড়ির পানি বদলানো উচিত নয়। কারণ, তাতে ক্লোরিন গ্যাস থাকে এবং পোনা মারা যায়। পানি সর্বদাই ধীরে সুস্থে বদলানো উচিত।
  • হাঁড়ির পানির তাপ ও নতুন পানির তাপের বিভিন্নতা পোনা সহ্য করতে পারে না। তাই নতুন পানি ভরার আগে যতদূর সম্ভব দুই পানির তারতম্য লক্ষ্য করে নেওয়া উচিত।
  • মাছের শীতল রক্তের প্রাণী। তাই পরিবহণ পাত্রটি ঠাণ্ডা রাখা একান্তই প্রয়োজন। কাজেই সূর্যের প্রখরতাহেতু যদি পাত্রগুলো গরম হয় তাহলে হাঁড়ির চারধারে ঠাণ্ডা পানি ছিটিয়ে দিতে হয়। অথবা, ভেজা কাপড় বা গামছা দিয়ে হাঁড়িগুলো মুড়িয়ে দিতে হয়। তাহলে সূর্যতাপে কাপড়ের পানি বাষ্পাকারে উড়ে যাবে এবং হাঁড়ির পানি গরম হয় না।
  • পরিবহনকালে যদি কোনো পোনার দেহে ক্ষত দেখা যায়, বা পোনা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তা হলে সাথে সাথেই সে পোনা হাঁড়ি হতে উঠিয়ে ফেলতে হবে। কারণ, মাছের ক্ষত স্থানের ছত্রাক ও রোগ-জীবাণু ধরে মাছকে মেরে ফেলে এবং সংক্রামক ব্যাধির সৃষ্টি করবে।
  • নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে পোনা মাছকে আতুড়ে পুকুরে ছাড়ার পূর্বে প্রায় সোয়া সের পানিতে ১ এক তোলা পরিমাণ লবণ দ্রবীভূত করে প্রায় ১ মিনিট ডুবিয়ে নেওয়া দরকার। ছত্রাক ও রোগ-জীবাণুর কবল হতে আঘাতপ্রাপ্ত পোনাকে এভাবে রক্ষা করা যায়। পরিবহণকালে একই বয়সের পোনা একই পাত্রে নেওয়া দরকার।
  • অনেক দূরবর্তী স্থানে পোনা পরিবহণকালে অনেক সময় পোনা ক্ষুধার্ত হয়ে মারা যায়। ক্ষুধার্ত পোনাকে দুর্বল দেখাবে, তুলনামূলকভাবে নড়াচড়াও কম করবে। এ অবস্থায় অর্ধ হতে ১ ইঞ্চি আকারের প্রতি ১০ হাজার পোনার জন্য ৪টি সিদ্ধ ডিমের হলুদ অংশ গুঁড়া করে পোনাকে খাওয়ানো যেতে পারে।
  • কিন্তু অতিরিক্ত খাদ্য (যা পোনা খাবে না) হাঁড়ি থেকে সঙ্গে সঙ্গে ছোট ভেজা গামছা বা রুমাল দিয়ে তুলে ফেলতে হবে, যাতে পানি দূষিত না হয়।
  • হাঁড়ি পাতিল ছাড়া পলিথিনের থলিতে বা কেরোসিনের টিনে উৎপাদক জলাশয়ের পানি ও অম্লজান পূর্ণ করে পোনা মাছ স্থানান্তরিত করা যায়। এ পদ্ধতিতে আকাশ পথেও পোনা মাছ পরিবহণ করা হয়ে থাকে।
  • পলিথিনের থলি বা কেরোসিনের টিনের মুখের ছিপির সাথে দুটি কাঁচের নল ঠুকিয়ে কাঁচের নলসহ ছিপিটি তুলে নিয়ে উক্ত আঁকারের তিন চতুর্থাংশ উৎপাদক জলাশয়ের পানি দ্বারা পূর্ণ করে পরিমাণ অনুযায়ী পোনা ভর্তি করার পর ছিপিটি এঁটে দিতে হবে। যাতে বাতাস বাহির হতে ভিতরে ঢুকতে না পারে। এরপর কাঁচের নল রাবারের নলের সাহায্যে ধীরে ধীরে অম্লজান দিয়ে আঁকারের খালি অংশটুকু পূরণ করে ফেলতে হবে এবং চাষ ছিপি ভালোভাবে আটকে দিতে হবে। নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে পোনা মাছ রক্ষিত আঁধারের চাপ ছিপিটি খোলার সময় অতি সতর্কতার সাথে ধীরে ধীরে খুলতে হবে। কারণ, অম্লজানের চাপ ধীরে ধীরে না কমিয়ে হঠাৎ করে ছিপিটি খুলে পরিবেশের আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে পোনা মাছগুলোর অনিষ্ট হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!