Skip to content

 

Wait...❤😘 Show love? ⬇⬇⬇

আধুনিক পদ্ধতিতে মৌমাছি পালনে মৌমাছিদের কি কি পরিচর্যা করতে হয়? মৌমাছি পালনের পরিবেশ, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীতকালের পরিচর্যাঃ মৌমাছি ও মধু চাষের মৌমাছি খামারে মৌমাছি পালনের পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত?

আধুনিক পদ্ধতিতে মৌমাছি পালনে মৌমাছিদের কি কি পরিচর্যা করতে হয়? মৌমাছি পালনের পরিবেশ, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীতকালের পরিচর্যাঃ মৌমাছি ও মধু চাষের মৌমাছি খামারে মৌমাছি পালনের পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত?

✅ এই পাঠ শেষে আমরা জানব- আধুনিক পদ্ধতিতে মৌমাছি পালনে মৌমাছিদের কি কি পরিচর্যা করতে হয়? মৌমাছি পালনের পরিবেশ, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীতকালের পরিচর্যা সমূহ কি? মৌমাছি ও মধু চাষের মৌমাছি খামারে মৌমাছি পালনের পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত?

ভূমিকাঃ

বহু যুগ আগে থেকে ভারতবর্ষে মৌমাছি পালন চলে আসছে। মৌমাছি পালনের ইতিহাস সুপ্রাচীন একথা বললে বাড়িয়ে বলা হয় না। আতিহাসের ধারা সেই প্রাচীনকাল থেকে অব্যাহত থাকলেও বিঞ্জানের অগ্রগতির সাথেপরিচালন ও পালন পদ্ধতির হেরেফের ঘটে যথেস্ট।

বিজ্ঞান সম্মতভাবে মৌমাছি পালনের ব্যবস্থা আমাদের দেশে খুব স্বল্প দিন থেকেই অনুসৃত হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে মৌমাছি পালনের মধ্যেনিষ্টুরতা নই, অপচয় নেই বরং প্রাকৃতিক এক অমূল্য সম্মদকে মানুষের ব্যবহারের জন্য সহজসাধ্য করে তোলা হয়েছে।

তাছাড়া কৃষি সম্পদের বৃদ্ধি জন্য মৌমাছি পালন খুবই প্রয়োজন। পরাগ মিলনে অর্থৎ পরাগ মিলনকারী (as a pollinating agents) হিসেবে মৌমাছিদের ভূমিকা অনন্য।

আধুনিক পদ্ধতিতে মৌমাছি পালনে মৌমাছিদের কি কি পরিচর্যা করতে হয়? মৌমাছি পালনের পরিবেশ, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীতকালের পরিচর্যাঃ মৌমাছি ও মধু চাষের মৌমাছি খামারে মৌমাছি পালনের পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত?

মৌমাছি পালনের পরিবেশঃ

→ যে কোনও কাজ শুরু করা হোক না কেন প্রথমে প্রয়োজন হলো, সেই কাজের উপযোগী পরিবেশ নির্ধারিত স্থানটিতে আছে কিনা সেটা ভালোভাবে দেখে নেওয়া।

→ আমরা বিভিন্ন ধরনের কাজের ক্ষেত্রে পরিবেশ সম্পর্কে ভলভাবে খোঁজ খবর নিলেও মৌমছি পালন করবার সময় পরিবেশ নিয়ে মোটেই চিন্তা ভাবনা করি না। ফলে বহু উৎসাহী মৌপালকের একমাত্র উপযুক্ত পরিবেশে মৌমাছি পালন করতে না পারার জন্য অর্থ এবং পরিশ্রম এই দুটোই অপচয় হয়। শেষে ব্যর্থতা ও হতাশায় মৌমাছি পাণমনিজের থেধকেই বন্ধ হয়ে যায়।

→ কাজেই মৌমাছি পালনের জন্য কোনও আদর্শ পরিবেশের প্রয়োজন আছে কিন বা যে কোনও পরিবেশেই মৌমাছি পালন করা চলে কিনা সে সম্পর্কে মৌমাছি পালনকারীদের অবশ্যই ভালো জ্ঞানা থাকা দরকার।

বিষয়টি সম্পর্কে আরও একটু ভালোভাবে আলোচনা করা হচ্ছে-

→ আমরা কি সব পরিবেশেই বিদ্যালয়, মহবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, সিনেমা হল এমন কি নিজের জন্য নতুন বাড়ি তৈরি কারি কী? এর উত্তর হবে, না।

→ কোনও বাজে অথবা নোয়রা পরিবেশে আমরা কেউই নতুন বাড়ি তৈরি করতে চাইবো না। মদের দোকান অথবা সিনেমা হলের কাছে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠন নিশ্চয় তৈরি করা হবে না। এ ছাড়াও যেখানে যাতায়াতের কোনও সু ব্যবস্থা নোই এমন কোনও জায়গায় একটি বিদ্যালয় অথবা কলেজ কিংবা হাসপাতাল স্থাপন করলে তার কি কোনও বাস্তব উপযোগিতা অনুভূত হবে? এর উত্তর হবে, না।

→ তেমনি যদি মৌমাছি হাইভে রেখে মরুভূমি অঞ্চলে পালন কলন করার চেষ্টা করা হয় তবেপালন করা যাবে কি? এ ক্ষেত্রেও সেইএকই জবাব আসবে, যাবে না। কারণ প্রশ্ন এবটাই, বিভিন্ন কাজের জন্য চাই উপযুক্ত পরিবেশ। তাহলে মৌমাছি পালনের জন্য কী ধরনের পরিবেশকে আদর্শ পরিবেশ আমরা বলবো?

→ আমাদের মধ্যে অনেকেরএরুপ ধ্যণা আছে, যে কোনও পরিবেশে মৌমাছি রাখলেই মধু পাওয়া যাবে। আবার অনেকেভাবেন যেহেতু মৌমাছি ফুল থেকে মধু সয়গ্রহ করেতাই যে কোনও ফুলের বাগানে কিছু ফুলই মৌমাছিদের পক্ষে যথস্ট হবে। কিন্তু আসলে তা নয়।

→ মৌমাছি থাকলেই মধু তৈরি করে। মৌমাছির নিজের বাঁচ্চার যথস্ট পরিমাণ ওই খাদ্যের প্রয়োজন হয়। কারণ সব ধরনের মৌমাছি পরাগ ও অমৃত ছাড়া অন্যকোরও খাদ্য গ্রহণ করে না। তাই ওদের জন্য প্রয়োজন হলে প্রচুর পরিমাণ অমৃত ও পরাগ প্রদারকারী গাছের ও চারা গাছের পর্যাপ্ত পরিবেশ।

→ শখ করে অনেকে ২–৩ টি মৌচাক যে কোনও জায়ড়ায় রাখতে পারেন। যেমন দেখা যায় লন্ডন, নিউইয়র্ক প্যারিস এবং কলকাতা শহলে। এ ছাড়াও অন্যান্য ছোট শহরে অনেকে শখ করে দু চারটে বাক্স রেখা মৌমাছি পালন করে থাকবের। কিন্তু অভাবে মৌমাছি পালনে প্রচুর খরচের বিনিময়ে একমাত্র মানসিক আনন্দ লাভ ছাড়া মধু পাবার সম্ভাবনা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে না।

→ সেই কারণে মৌমাছি পালন করার আগে প্রত্যেক পালনকারীর মৌমাছি সম্বন্ধে সাধারণ জ্ঞান অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন। চিনির রস দিয়ে হয়তো মৌমাছিকে সাময়িকভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় কিন্তু এভবে কোরও কলোডনিীকে স্থায়ীভাবে টিকিয়ে রাখা, মৌমাছিদের বংশ বৃদ্ধি করা এসব মোটেই সম্ভব হয়না। কারণ মৌমাছিদের জীবনে বিভিন্ন পর্যায়ে পরাগ ও জলের প্রয়োজনীতা পুষ্প রস অপেক্ষা অনেক বেশি দরকার। তাই সারা বছর ধরে পর্যায়ক্রমে পরাগ ও পুষ্পরস পাওয়া যায়। এমন ধরনের বৃক্ষের সমাবেশই মৌমাছি পালনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। জানা থাকা দরকার এক ফোঁটা মধু তৈরি করতে মৌমাছিকে প্রায় ৪০০টি ফুলের কাছে যেতে হয়।

See also  মধুর ব্যবহার ও উপকারিতা, আধুনিক বিজ্ঞানে মধু, অমৃতের উপাদান, মধুর পুষ্টি উপাদান, শরীরের মধু ব্যবহারের উপকার, মধুর তাপশক্তি উৎপাদন ক্ষমতা, মধুর জীবাণুনাশক শক্তি ও মধুর শ্রেষ্ঠত্ব

এ ছাড়া আবহাওয়া ও অন্যান্য কয়েকটি দিকও দেখা দরকার-

→ মৌমাছির ডিম একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ফোটে এবং ধাত্রী মাছিরা সেই প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা বজায় রাখার কাজে সাহায্য করে থাকে সাধারণভাবে দেখা গেছে, ৭০ ফাঃ থেকে ৯৫ ফাঃ বা ২০ সেঃ থেকে ৩৫ সেঃ তাপমাত্রায় মৌমাছিদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু ৭০ ফাঃ এর কম অথবা ৯৫ ফা- এর বেশি তাপ মাত্রায় মৌমাছিরা বেঁচে থাকে বটে, তবে হাইভের মধ্যকার তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য মৌমাছিদের খুবই কষ্ট করতে হয়। কারণ মৌমাছিরা সব ঋতুতেই তাদের হাইভের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখে।

→ যদি তাপমাত্রা খুব বেশি বেড়ে যায় তবে মৌমাছিরা তাদের পাখনার সাহায্যে বাতাস করে তাপ কমিয়ে ফেলে। আবার খুব ঠান্ডা পড়লে অর্থাৎ প্রচণ্ড শীতের সময় চাকের ওপর বিশেষভাবে জড় হয়ে ও মধু খেয়ে ভেতরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে।

→ দেখা গেছে ৬০ ফাঃ তাপমাত্রায় বয়স্ক মৌমাছিদের পক্ষে উড়ে বেড়ানো কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আবার ১০৫ ফাঃ তাপমাত্রায় মৌচাক ফ্রেম থেকে ছিঁড়ে যেতে পারে। কারণ গরম আবহাওয়াতে চাক নরম হয়ে যায়। তাছাড়া এলাকার বৃষ্টিপাত এবং সমুদ্র তল থেকে তার উচ্চতা লক্ষণীয়। কারণ বৃষ্টিপাতের ওপরই সারা বছর গাছের পরাগ ও অমৃত প্রদান নির্ভর করে আর যে জায়গা যত বেশি উঁচু হবে সেই জায়গায় উৎপন্ন মধু তত ভালো হবে।

→ তবে আমাদের দেশে যে সব অঞ্চলে আম, লিচু, জাম, নিম সজনে, তেঁতুল ইত্যাদি গাছ এবং তৈলবীজের মধ্যে সরষে, তিল ইত্যাদি ব্যাপক হারে চাষ হয় এবং সেই সাথে রবি শস্যের চাষাবাদ প্রচলিত থাকে সেই সব অঞ্চলে মৌমাছি পালন করা খুবই যুক্তিযুক্ত।

→ এবার কেমন জায়গায় মক্ষীশালা হওয়া দরকার সেই প্রসঙ্গে আলোচনা করা যাক। রাতে আমরা যে স্থানে গবাদি পশুদের রাখি তাকে বলা হয় গোয়াল অর্থাৎ গোশালা। কামার যে স্থানে কাজ করে সেই জায়গাকে বলা হয় কামারশালা। ঠিক একইভাবে অনেকগুলো হাইভে মৌমাছি ধরে একসাথে যে স্থানে রাখা হয় তাকে বলা হয় মক্ষীশালা বা ইংরেজিতে অ্যাপীয়রি।

আধুনিক পদ্ধতিতে মৌমাছি পালনে মৌমাছিদের কি কি পরিচর্যা করতে হয়? মৌমাছি পালনের পরিবেশ, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীতকালের পরিচর্যাঃ মৌমাছি ও মধু চাষের মৌমাছি খামারে মৌমাছি পালনের পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত?

গ্রীষ্মকালের পরিচর্যাঃ

→ মধু সংগ্রহের কাল বসন্ত শেষ হওয়ার পর আসে গ্রীষ্ম। এ সময় যদি কলোনী থেকে সমস্ত মধু নিষ্কাশন করে নিঃশেষ করে দেয়া হয় তখন মৌমাছিদের কলোনীতে বাচ্চা সংকট দেখা দেয়। অন্যদিকে বসন্তকালে মধু সংগ্রহের জন্য একটানা খাটুনির কারণে বয়স্ক মৌমাছিরা অকালে মারা যায়। তাই এসময় মো-বাক্স শূন্য হয়ে যেতে বসে।

→ গ্রীষ্মকালে মৌমাছিদের শত্রু সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। শত্রু লুন্ঠনকারী মৌমাছিদের থেকে কলোনীকে রক্ষা করাই তখন মৌমাছিদের মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। এই সময়টায় প্রচণ্ড গরম থাকে। কলোনীকে তাপের হাত থেকে রক্ষা করতে যথাযথ চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হয়।

→ গ্রীষ্মকালে মৌমাছিদের কলোনীর প্রতি বিশেষ নজর না দিলে শ্রমিক মৌমাছিরা বাইরে যায় না। বাচ্চাদের বড় হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। রাণীও আর ডিম পাড়ে না। ডিম পাড়লেও সেই ডিমের তেমন কোনও পরিচর্যা হয় না। বাচ্চারা বড় হয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখে মধুকক্ষে পর্যাপ্ত মধু নেই তখন তারা দলে দলে পালিয়ে যায়। এইভাবে পালিয়ে গেলে কলোনী তখন বিশেষ দুরাবস্থার মধ্যে পড়ে।

→ মৌমাছিরা পুরনো কলোনী ত্যাগ করার মুহূর্তে প্রথমে শূন্যে গোল হয়ে ঘুরতে থাকে। এই অবস্থায় মৌমাছি পালনকারীদের সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে Broodlessness রোধ করা। এ ছাড়া শ্রমি মৌমাছির সংখ্যা বাড়ানো এবং মৌমাছিদের পলায়ন রোধ করা।

→ যেসব কলোনীতে প্রজনন কাজ চলতে থাকে অর্থাৎ রাণী মৌমাছি ডিম পাড়ে ডিম থেকে শূককীট পর্যায় অতিক্রম করে মৌমাছি বেরিয়ে আসে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে সেখানে কিন্তু মথপোকা কালো পিঁপড়ে প্রভৃতি শত্রুরা কলোনীর তেমন ক্ষতি করতে পারে না। দস্যু মৌমাছিরাও মধু লুন্ঠন করতে আসে না।

See also  কিভাবে মৌমাছি চাষ করা যায়? (মৌমাছি চাষের উপকরণ সহ বর্ণনা) আধুনিক পদ্ধতিতে মৌমাছি পালন ও বাংলাদেশ মৌমাছি চাষ পদ্ধতি #মৌমাছি খামার

→ দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার সবক্ষেত্রেই দেখা যায়। তাই মৌমাছির কোনও কলোনী দুর্বল হলেই শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়। আর দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারলে কেউ তাদের অত্যাচার করতে সাহস করে না। তাই দুর্বল কলোনীতে প্রথম কাজ হচ্ছে নতুন রাণী সৃষ্টি করে কলোনীকে সবল করে তুলতে হবে।

→ মধুকক্ষে সবসময় কিছু মধু সঞ্চয় করে রাখতে হবে। তিনি গোলা পানি খাদ্যপাত্রের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হবে। এভাবে মৌমাছির জন্য দুর্যোগকাল গ্রীষ্মকালে মৌমাছিদেরকে কলোনীতে ধরে রাখার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বর্ষাকালীন পরিচর্যাঃ

→ গ্রীষ্মের উত্তপ্ত দিন শেষ হওয়ার পরই আর বর্ষাকাল। কোনও কোনও এলাকায় বর্ষাকালে তারা একদম বাইরে বেরুতে পারে না। যদি মধু সংগ্রহের জন্য বাইরে যায় তবে অনেক সময় হঠাৎ করে ঝড় তুফান আসার কারণে তারা মারা যায়, কলোনীতে আর ফিরতে পারে না। এ কারণে বর্ষকালে কলোনীতে মৌমাছির সংখ্যা কমে যায়।

→ বর্ষাকালটাই একটু স্যাঁতস্যাঁতে ধরনের থাকায় মৌমাছিদের জন্য পরিবেশটা প্রতিকূর হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় মৌমাছিরা অলস হয়ে পড়ে। অস্থির হয়ে যায। আমাশয় রোগে আক্রান্ত হয়। এ সময় মধুকোষের মধু তরল হয়ে যায়। পরাগ কোষের পরাগগুলোও নষ্ট হয়ে যায়। গ্রীষ্মকালের মতো বর্ষাকালেও কলোনীতে মৌমাছিদের শত্রু বৃদ্ধি পায়। এ সময় মৌ-বাক্সের মধু না থাকলে চিনি গোলা পানি আর পরাগের অভাব হলে সয়াবিনের ময়দা খাওয়াতে হবে।

→ ফাঁকা কোষওয়ালা একটা ফ্রেম বাক্স থেকে তুলে শূন্য কোষ সয়াবিনের ময়দা দ্বারা পূরণ করে দিয়ে পুনরায় ফ্রেমটি যথাস্থানে বসিয়ে দিতে হবে। এই মাসে কোনও কোনও সময় দেখা যায় রাণী মারা পড়ে এবং রাণী শূন্য কলোনীতে শ্রমিক মৌমাছিরাই ডিম পাড়তে শুরু করে। তবে সেই ডিমগুলো হয় অনুর্বর। যে কলোনীতে শ্রমিক মৌমাছিরা ডিম পাড়তে শুরু করে সেই কলোনীতে নতুন রাণী স্থাপন করেও লাভ হয় না। কারণ তখন শ্রমিক মৌমাছিরা নতুন রাণীকে মেনে নিতে চায় না। এই অবস্থায় কলোনী বিলুপ্ত করে দেয়াই উত্তম।

শরৎকালের পরিচর্যাঃ

→ পার্বত্য অঞ্চলে বসন্তের পর শরৎই হচ্ছে দ্বিতীয় মধু সংগ্রহের কাল। তাই এসময় মৌমাছি পালনকারীগণকে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে কোনও কারণে যেন মৌমাছিরা ঝাঁক ত্যাগ না করে।

→ এই মধু ঋতুতে মৌমাছিদের খুবই সতর্কতার সাথে নাড়াচাড়া করতে হবে। এই সময়ে কোনও কোনও কলোনীতে নতুন রাণীর জন্ম হয়। যার ফলে পুরনো রাণীর আধিপত্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুরনো এবং নতুন রাণী পরস্পর কোনও বিবাদ না করে দুজনে বিভিন্ন কোষে ডিম পাড়ে। এ অবস্থা কিন্তু বেশিদিন স্থায়ী হয় না। পুরনো রাণী কিছুদিন পর এক ঝাঁক মৌমাছিসহ কলোনী ত্যাগ করে চলে যায়।

→ পর্যাপ্ত মধু সংগ্রহের সময় দুই রাণীর উদ্ভব হলে মৌমাছিদের দলের মধ্যে রাণীসহ ঝাঁক ত্যাগ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তারা কলোনী ত্যাগ করে, অথচ তখন প্রচুর মধু সংগ্রহের জন্য অধিক সংখ্যক মৌমাছির প্রয়োজন। তাই কলোনীতে দুই রাণীর আবির্ভাব ঘটলেই কলোনীকে ভাগ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

→ যদি নতুন রাণীসহ মৌমাছির একটা ঝাঁক বেরিয়ে যায় তবে নতুন রাণীকে তার দলবলসহ পুরনো বাক্সের স্ট্যাণ্ডের ওপর একটা নতুন বাক্সে স্থাপন করতে হবে। আর পুরনো কলোনীকে দূরে সরিয়ে নিয়ে অন্য একটা স্ট্যান্ডের উপর স্থাপন করতে হবে। সমতল অঞ্চলে শরৎকাল মোটেই মধু সংগ্রহের কাল নয়। যদি গ্রীষ্মকাল বা বর্ষাকালের পরিবেশ দীর্ঘদিন থাকে তবে শরৎকালেও সমতল অঞ্চলে বর্ষকালের মতো পরিচালন ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে।

শীতকালের পরিচর্যাঃ

→ মৌমাছিরা নিজেরাই তাদের কলোনীর মধ্যে শীতাতপ অবস্থা বজায় রাখে। ৯০ থেকে ৯৫ ফারেনহাইট তাপমাত্রা তাদের জন্য সহনীয়। গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ওরা মধু খায় আর ডানা নাড়ায় তাতে বাতাস হয়। আর শীতকালে চাকের ওপর (Insulating) এক ধরনের প্রলেপের ব্যবস্থা করে।

See also  মৌমাছির জীবন বৃত্তান্ত ও মৌমাছি সম্পর্কে অজানা তথ্যঃ মৌমাছির কাজ কি? মৌমাছি কি কাজ করে? মৌমাছির আয়ু কত দিন? মৌমাছি কত দিন বাঁচে? মৌমাছি কোথায় যায়? মৌমাছি কয় প্রকার ও কি কি? মৌমাছি এর বৈশিষ্ট্য, মৌমাছির জীবন চক্র

→ যেসব এলাকায় প্রবল শীত পড়ে, বরফ পড়ে সেই সকল এলাকার সাধারণ মৌ-বাক্সের ভেতরের মৌমাছিদের কলোনী প্রচণ্ড ঠান্ডা থেকে রক্ষা পায় না। যেসব এলাকায় দিন এবং রাতের তাপমাত্রার হেরফের ঘটে বা শীত দীর্ঘস্থায়ী সেইসব অঞ্চলের মৌমাছি পালকগণকেও অতিরিক্ত ইন্সুলেশন এর ব্যবস্থা করতে হয়। বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা বিভিন্ন রকমের হওয়ায় ইন্সুলেশনের ব্যবস্থাকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে।

আধুনিক পদ্ধতিতে মৌমাছি পালনে মৌমাছিদের কি কি পরিচর্যা করতে হয়? মৌমাছি পালনের পরিবেশ, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীতকালের পরিচর্যাঃ মৌমাছি ও মধু চাষের মৌমাছি খামারে মৌমাছি পালনের পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত?

মক্ষীশালার জন্য কয়েকটি ব্যবস্থাঃ

১. মক্ষীশালার কাছাকাছি ভালো পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকা খুবই প্রয়োজন। কারণ এই জল মৌমাছির নিত্য ব্যবহারের জন্য অপরিহার্য।

২. মক্ষীশালা এমন জায়গায় করতে হবে যেখানে ভোরের সূর্যের আলো যেন হাইভের প্রবেশ পথে লাগে। ভোরের আলো মৌমাছিদের বাইরে কাজে যেতে উৎসাহ দান করে।

৩. মৌচাকের মধ্যে দুপুরের রোদ যাতে না লাগে তার জন্য ছায়ার ব্যবস্থা থাকা খুবই জরুরী।

৪. মানুষের যাতায়াতের পথের ধারে হাইভ না রাখাই ভালো। কারণ এতে মৌমাছি বাধা পাবার দরুণ যদি কাউকে হুল বিঁধিয়ে দেয় তবে প্রতিবেশীর সাথে অকারণে বিবাদ বা অশান্তির সৃষ্টি হবে। ফলে শত্রুতার বশে মৌচাকে তারা ক্ষতি করতে পারে এমন একটা আশংকা প্রতি রাতেই থেকে যাবে।

৫. কলকারখানা অথবা গৃহস্থ বাড়ির কয়লার উনানের ধোঁয়া চাকে লাগে এমন জায়গায় কোনও ক্ষেত্রেই মক্ষীশালা করা উচিত নয়। এতে মৌমাছিরা হাইভ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

৬. মক্ষীশালার বর্ষকালে যাতে জল না জমে তার ব্যবস্থা আগাম করে রাখা দরকার। তা না হলে স্যাৎসেঁতে জায়গায় পিঁপড়ে, উঁইপোকা, নানা ধরনের কীট পতঙ্গ ইত্যাদি মক্ষীগৃহে আক্রমণ চালালে মৌমাছিরা দল বেঁধে চাক ছেড়ে পালিয়ে যাবে। মৌমাছি পালকের তখন বেশ ক্ষতি হয়ে যাবে।

৭. যে সমস্ত অঞ্চলে কোলাহল বেশি এমন কি রেল স্টেশনের অথবা রেল লাইনের পাশে কোনও স্থানে মক্ষীশালা স্থাপন করা মোটেই উচিত নয়। কারণ রেল লাইন থাকলে ট্রে যাতায়াতের বিকট শব্দ হয়। এসব মৌমাছিদের মোটেই পছন্দ নয়। ওরা নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে বেশি পছন্দ করে।

৮. মক্ষীশালা এবং মক্ষীগৃহের মুখ দক্ষিণ পূর্ব কোণের দিকে রাখা উচিত। এইভাবে রাখলে চাক যেমন সকালের রোদ পাবে তেমনি দুপুরে সূর্যের তেজ বাড়লে রোদ সরাসরি চাকে পড়বে না।

উপসংহারঃ

→ মৌমাছি যারা পালন করবে, তারা যেমন মৌ-বাক্স থেকে মধু আহরণ করবেন তেমনি মাঝে মাঝেই মৌ-বাক্সর প্রতিটি চাক পর্যবেক্ষণ করবেন। সময় মতো পর্যবেক্ষণ এবং সময় মতো যথাযথ ব্যবস্থা অবলম্বন করলে-মৌমাছি পালন একটি অত্যন্ত লাভজনক উদ্যোগ হিসেবে গ্রামীণ অর্থনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে—এ বিষয়ে আজ আর কোনও সংশয়ের অবকাশ নেই। খুব আশার কথা গ্রাম বাংলার অনেকেই বর্তমানে মৌমাছি পালনে উদ্যোগী হচ্ছে।

→ তবে অভিজ্ঞতা তথা সুষ্ঠু পরিচালন ব্যবস্থা অভাবের ফলে লক্ষ লক্ষ টাকার মধু হয় আহরিত হচ্ছে না অথবা নিস্ট হচ্ছে। অথচো গ্রাম বাংলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে মোমাছি পালন অনায়াসে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করথে পারে। বেজ্ঞান সম্মতভাবে মৌমাছি পালন করে যে কেউ নিজেকে দেশেকে সেবায় নিয়োজিত করতে পারে। স্বল্প মূলধন বিনিয়োগে মৌমাছি পালন একটি লাভজনক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্বল্প পরিশ্রমেই পর্যাপ্ত পরিমাণ মধু সংগ্রহ করে-দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!