আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) প্রতি ভালোবাসাঃ
১।
আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :
বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ( সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৩১)
এ আয়াত আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে যে, আল্লাহ তাআলার মহববতের সত্যায়ন একমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য-অনুসরণের মাধ্যমে হবে। তিনি যা হুকুম করেছেন তা মান্য করা এবং যা করতে নিষেধ করেছেন তা ত্যাগের মাধ্যমেই সে মুহাব্বত প্রকৃত মুহাব্বত বলে স্বীকৃতি পাবে। তাঁর নির্দেশ মান্য করণ, নিষেধ পরিহার ও তাঁর সার্বিক আদর্শের অনুবর্তন ব্যতীত কেবল মুখের দাবি ভালবাসার সত্যতা প্রমাণে যথেষ্ট নয়।
২।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
لاَ يُؤْمِنُ أحَدُكُمْ حَتَّى أكُونَ أحَبَّ إلَيْهِ مِنْ وِالِدِهِ وَوَلَدِِِهِ وَ النَّاسِ أجْمَعِيْنَ . (رواه البخاري)
অর্থাৎ, তেমাদের কেউ মুমিন বলে বিবেচিত হবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও অপরাপর সকল মানুষ অপেক্ষা অধিক প্রিয় হব। (বুখারি)
উল্লেখিত সহিহ হাদিসটি আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে যে, একজন মুসলিমের ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ না সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিজ সন্তান, মাতা-পিতা ও অন্যান্য সকল মানুষ হতে বেশী ভালবাসবে। এমনকি -অন্য একটি হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী- নিজ জীবনের চেয়েও বেশী ভালবাসবে।
অন্য সকলের চেয়ে তাঁকে বেশী ভালবাসা হচ্ছে কি না তার প্রমাণ পাওয়া যাবে, যখন তাঁর আদেশ-নিষেধ আর নিজ নফসের চাহিদা পরস্পর বিরোধী হয় এবং সে তাঁর আদেশ-নিষেধের কাছে নিজ চাহিদাকে কোরবানি করতে পারছে, তাহলে প্রমাণ হবে যে সত্যিই সে নবীজীকে নিজ থেকেও অধিক ভালবাসে। অনুরূপভাবে স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতা, অপরাপর সকল মানুষের চাহিদার বিপক্ষে যদি সে নবীজীর আদর্শের অনুবর্তনের উপর অবিচল থাকতে পারে প্রমাণ হবে সে অন্য সকলের চেয়ে নবীজীকেই অধিক ভালবেসেছে। এর মাধ্যমেই প্রকৃত আশেকে নবীর পরিচয় পাওয়া যাবে। যে ব্যক্তি সকল প্রতিকুলতা ডিঙ্গিয়ে নবীজীর আদেশ-নিষেধকে অগ্রাধিকার দিবে সেই প্রকৃত নবী প্রেমী। অন্যথা হলে প্রেমের নামে ভন্ডামী করছে বলেই প্রমাণিত হবে।
৩।
কোনো মুসলিমকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তুমি কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাস? সাথে সাথে বলবে : হ্যাঁ,অবশ্যই, তাঁর জন্য আমার জান ও মাল কুরবান হোক। তখন যদি বলা হয় : তাহলে দাঁড়ি কাটো কেন? তাঁর হুকুমের বাইরে চল কেন? তোমার বাহ্যিক অবস্থাকে তাঁর অবস্থার সাথে মিলিয়ে নাওনা কেন? উত্তর দিবে: আরে… ভালবাসা হচ্ছে অন্তরের মধ্যে। আলহামদু লিল্লাহ আমার অন্তর অত্যান্ত পাক পবিত্র। এসব লোকদের প্রতি আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, তোমার অন্তর সত্যই যদি পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হয়, তাহলে অবশ্যই তা তোমার চেহারা ও পোষাকে প্রকাশ পাবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
ألاَ وَ إنَّ فيِ الْجَسَدِ مُضْغَةً إذا صَلُحَتْ صَلُحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ وَإذا فسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ ألاَ وَهِىَ القَلْبُ . (رواه البخاري و مسلم)
শোন, শরীরের ভেতরে একটি গোশত পিন্ড আছে, যদি তা শুদ্ধ হয়ে যায় তাহলে পূর্ণ শরীর শুদ্ধ হয়ে যায়। আর যদি তা নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে পূর্ণ শরীরই নষ্ট হয়ে যায়। শোন, সে গোশত পিন্ড হচ্ছে কলব। ( বুখারি ও মুসলিম)।
৪।
আমি একবার জনৈক মুসলিম ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করে দেয়ালে পুরুষ ও মেয়েদের ছবি সাটানো দেখতে পেলাম। তাকে বললাম: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছবি ঝুলাতে নিষেধ করেছেন।
তখন সে আমাকে প্রত্যাখ্যান করল এ যুক্তি দেখিয়ে, এরা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথী । অথচ তার অবশ্যই জানা ছিল যে, এদের অধিকাংশই অমুসলিম-কাফের। সেসব ছবিতে এমন সব নারীর ছবিও ছিল, যাদের চুল ছিল উন্মুক্ত ও ছড়ানো। নিজ রূপ-লাবণ্যকে তারা প্রকাশ করে রেখেছিল। এবং তারা প্রত্যেকেই কম্যুনিষ্ট দেশের নাগরিক।
এই ডাক্তার দাড়ি কাটতো। আমি তাকে উপদেশ দিয়ে বললামঃ এতে গুনাহ হয়।
সে বলল : মৃত্যু পর্যন্তও আমি দাঁড়ি রাখব না।
তবে বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, সে ডাক্তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালবাসার দাবী করে বলছে, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সীমার মধ্যে প্রবেস করেছি।
মনে মনে বললাম : তুমি তাঁর হুকুম অমান্য করছ তারপর বলছ তাঁর সীমার মধ্যে প্রবেশ করেছ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি এ জাতীয় শিরকে খুশি হন?
আমরা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর হিফাযতে।
৬।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালবাসার বহি:প্রকাশ মিলাদ এবং শরিয়তের চেতনা বিরোধী বাড়াবাড়ি ও মিথ্যা সর্বস্ব না’ত পড়ার মধ্যেই সীমিত নয়। বরং ভালবাসার প্রকৃত প্রমাণ হচ্ছে তাঁর দিক নির্দেশনা মত চলা, তাঁল সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা এবং তাঁর শিক্ষা জীবনের সর্ব অংশে ফুটিয়ে তোলা।