🛑প্রশ্ন: আল্লাহ কি নিরাকার?
🔷উত্তর: ” আল্লাহ নিরাকার নন বরং তাঁর আকার রয়েছে ”।
আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত ধারণা হচ্ছে মহান আল্লাহ নিরাকার, তাঁর কোন আকার নেই। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা।
✅মহান আল্লাহ নিরাকার নন। তাঁর আকার রয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর আকার আল্লাহর মতই। আল্লাহর আকার-আকৃতির সাথে কোন সৃষ্টির আকার-আকৃতির সাদৃশ্য বা মিল নেই।
🔽বিস্তারিত/প্রমাণ:
পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদিসে আল্লাহ তায়ালার হাত, পা, চেহারা, আঙ্গুল, চোখ ইত্যাদি সম্পর্কে সুস্পষ্ট আলোচনা পাওয়া যায়। নিম্নে সে সমস্ত কুরআনের আয়াত, হাদিস এবং ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ এর বক্তব্য উল্লেখ করা হলঃ
১) মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইহুদীদের একটি বক্তব্য এভাবে তুলে ধরেছেনঃ “আর ইহুদীরা বলে, আল্লাহর হাত বাঁধা। তাদের হাতই বেঁধে দেয়া হয়েছে। তাদের এ উক্তির দরুণ তাদের প্রতি অভিশাপ করা হয়েছে। বরং তাঁর (আল্লাহর) উভয় হাত প্রসারিত”। [সূরা মায়িদাহ, আয়াত ৬৪]
২) আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তারা আল্লাহর যথোচিত সম্মান করে না। ক্বিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোতে এবং আকাশ সমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে”। [সূরা যুমার, আয়াত ৬৭]
এ আয়াতের তাফসীরে সহীহ বুখারীতে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, ইহুদীদের একজন বড় আলেম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললঃ হে মুহাম্মাদ, আমরা (তাওরাতে) এটা লিখিত পাচ্ছি যে, আল্লাহ তায়ালা সপ্ত আকাশ রাখবেন এক আঙ্গুলের উপর এবং যমীনগুলো রাখবেন এক আঙ্গুলের উপর, বৃক্ষরাজিকে রাখবেন এক আঙ্গুলের উপর এবং পানি ও মাটি রাখবেন এক আঙ্গুলের উপর আর সমস্ত মাখলুককে রাখবেন এক আঙ্গুলের উপর। অতঃপর তিনি বলবেন, আমিই সব কিছুর মালিক ও বাদশা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহুদী আলেমের কথার সত্যতায় হেসে ফেলেন, এমনকি তার মাড়ির দাঁত প্রকাশিত হয়ে পড়ে। অতঃপর তিনি উপরোক্ত আয়াতটি পাঠ করেন। [সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৪৮১১, তাফসীর অধ্যায়]
৩) ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবীকে তাঁর মুঠোতে ধারণ করবেন এবং সমস্ত আকাশকে স্বীয় ডান হাতে গুটিয়ে নিয়ে বলবেন, আমিই একমাত্র বাদশাহ”। [সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৭৪১২]
৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তায়ালা পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতে তাঁর হাত প্রসারিত করতে থাকবেন, যাতে করে দিনের গুনাহগার তওবা করে। আর তিনি দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করতে থাকবেন, যাতে করে রাতের গুনাহগার তওবা করে”। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৭৫৯, তওবা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ৫]
৫) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “নিশ্চয়ই সকল আদম সন্তানের অন্তর সমূহ একটি অন্তরের ন্যায় আল্লাহ তায়ালার আঙ্গুল সমূহের দুটি আঙ্গুলের মাঝে অবস্থিত। তিনি যেমন ইচ্ছা তা পরিচালনা করেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৫৪, ভাগ্য অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ৩]
৬) আল্লাহ তায়ালার পা মুবারক সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “জাহান্নামে (জাহান্নামীদের) নিক্ষেপ করা হতে থাকবে আর সে (জাহান্নাম) বলবে, আরো আছে কি? শেষ পর্যন্ত বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক তাতে পা রাখবেন। তাতে জাহান্নামের একাংশের সাথে আরেকাংশ মিশে যাবে। অতঃপর জাহান্নাম বলবে, তোমার প্রতিপত্তি ও মর্যাদার শপথ, যথেষ্ট হয়েছে যথেষ্ট হয়েছে”। [সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৭৩৮৪, তাওহীদ অধ্যায়]
৭) আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (কিয়ামতের দিন) আমাদের প্রভু পায়ের নলা উন্মুক্ত করে দিবেন। অতঃপর সকল মুমিন পুরুষ ও নারী তাকে সিজদা করবে। কিন্তু বাকী থাকবে ঐসব লোক, যারা দুনিয়ায় সিজদা করতো লোক দেখানো ও প্রচারের জন্য। তারা সিজদা করার জন্য যাবে কিন্তু তাদের পৃষ্ঠদেশ একখন্ড তক্তার মত শক্ত হয়ে যাবে। [সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৪৯১৯, তাফসীর অধ্যায়]
৮) আল্লাহ তায়ালার চেহারা মুবারক সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “ভূপৃষ্ঠের সব কিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র আপনার মহিমাময় ও মহানুভব পালনকর্তার চেহারা ব্যতীত”। [সূরা আর রহমান, আয়াত ২৬-২৭]
৯) আল্লাহ তায়ালার চোখ মুবারক সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “আর আমি আমার পক্ষ থেকে তোমার প্রতি ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম যেন তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও”। [সূরা ত্ব-হা, আয়াত ৩৯]
১০) সাধারণত নিরাকার কোন কিছু দেখা যায় না। কিন্তু কিয়ামতের দিন প্রত্যেক জান্নাতবাসী আল্লাহ তায়ালাকে স্বীয় আকৃতিতে দেখতে পাবে। সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তায়ালা নিরাকার নন। সহীহ বুখারীর একটি বর্ণনা পাওয়া যায় যে, লোকেরা জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল, কিয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবো? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেনঃ পূর্ণিমা রাতে চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোন কষ্ট হয়? তারা বললঃ না, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি আরো বললেনঃ যখন আকাশ মেঘশূন্য ও সম্পূর্ণ পরিষ্কার থাকে তখন সূর্য দেখতে তোমাদের কোন কষ্ট হয় কি? উত্তরে তারা বললেনঃ জ্বী না। তখন তিনি বললেনঃ এভাবেই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে। [সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৭৪৩৭, তাওহীদ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ২৪]
১১) আল্লাহ তায়ালার আকার সম্পর্কে ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ “তাঁর (আল্লাহর) হাত, মুখমন্ডল এবং নফস রয়েছে। যেমনভাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেছেন। কুরআনে আল্লাহ তাঁর মুখমন্ডল, হাত ও নফসের যে কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলো তাঁর গুণ। কিন্তু কারো সাথে সেগুলোর সাদৃশ্য নেই। আর একথা বলা যাবে না যে, তাঁর হাত অর্থ তাঁর কুদরত বা নিয়ামত। কেননা এতে আল্লাহর গুণকে বাতিল সাব্যস্ত করা হয়। আর এটা ক্বাদারিয়া ও মু’তাযিলাদের মত। বরং তাঁর হাত তাঁর গুণ, কারো হাতের সাথে সাদৃশ্য ব্যতীত। আর তাঁর রাগ ও সন্তুষ্টি কারো রাগ ও সন্তুষ্টির সাথে সাদৃশ্য ব্যতীত আল্লাহর দুটি সিফাত”। [আল ফিকহুল আকবার, পৃষ্ঠা ৩০২]
১২) ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ আরো বলেনঃ “আল্লাহর সত্তার ব্যাপারে কারো কথা বলা উচিত হবে না। বরং তাঁর সিফাতকে ঐভাবে বর্ণনা করতে হবে যেভাবে তিনি নিজের জন্য বর্ণনা করেছেন এবং আল্লাহর ব্যাপারে নিজের পক্ষ থেকে কোন কিছু বানিয়ে বাড়িয়ে বলা যাবে না। কেননা তিনি হচ্ছেন বারাকাতময় সবার ঊর্ধ্বে বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক”। [শরহে আক্বীদাহ আত ত্বহাবী, ২/৪৭২৭, তাহক্বীকঃ ড. তুরকী; জালাউল আইমাইন, পৃষ্ঠা ৩৬৮]