🛑আল্লাহ যদি জানতেনই আদম ভুল করবে, তাহলে কী দরকার ছিল এত বড় নাটক করার? বাগানে সেই গাছটা না দিলেই তো আদমের এত বড় সর্বনাশ হতো না, আর আমরা আজকে পৃথিবীতে আসতাম না, এত অন্যায়, কষ্ট সহ্য করতে হতো না।
🔷উত্তর : এই প্রশ্ন করার অধিকার যদি কারও থাকে, তাহলে সেটা ছিল আদম (আ)-এর। তিনি কিন্তু আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন, “কেন আমাকে এরকম একটা পরিস্থিতিতে ফেলা হলো? এই গাছটা কেন দেওয়া হলো আমাকে? আমি মানব না!” কিন্তু তিনি করেননি। বরং তিনি বলেছিলেন,
হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তাহলে আমরা নিশ্চয়ই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো। [আল-আ’রাফ ৭:২৩]
এই হচ্ছে সেই বিখ্যাত দু’আ – রাব্বানা যালামনা আনফুসানা…। আদম (আ) যখন তার ভুল বুঝতে পারলেন, এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন, তখন আল্লাহ তাকে এই দু’আটির মাধ্যমে শিখিয়ে দিয়েছিলেন কীভাবে তাঁর কাছে সঠিক ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে।
বাগানের ঘটনাটি ছিল মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা ব্যবহার করার প্রথম সুযোগ। যদি বাগানে সবই ভালো হতো, নিষিদ্ধ কিছু করার কোনো সুযোগই না থাকত, তাহলে মানুষ কোনোদিন তার চিন্তার স্বাধীনতা ব্যবহার করার সুযোগ পেত না, মানুষের আল্লাহর প্রতি আনুগত্য পরীক্ষা করার কোনো উপায় থাকত না। মানুষ হতো আর দশটা প্রাণীর মত একটি প্রাণী, যার নিষিদ্ধ কিছু করার কোনো সুযোগ নেই। বাগানটি ছিল পৃথিবীতে মানুষের খালিফা হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য একটি ট্রেইনিং এবং শয়তানের প্রকৃতিকে মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেওয়ার একটি উপলক্ষ্য। আর এই ট্রেইনিং-এর জন্য মাত্র একটা গাছকে নিষিদ্ধ করাই ছিল যথেষ্ট। বাগানের এই ঘটনার মধ্য দিয়ে মানুষের ভেতরের লোভ, লালসা, কামনাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মানুষের সুপ্ত মানসিক ক্ষমতাকে জাগিয়ে দেওয়া হলো। মানুষকে শেখানো হলো: শয়তান কীভাবে তাকে প্রতি পদে পদে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সবসময় চেষ্টা করবে ভুল পথে নেওয়ার, আল্লাহর অবাধ্যতা করানোর। সেটা করতে গিয়ে শয়তান কী ধরনের মিথ্যা কথা বলতে পারে, সে কত নিচে নামতে পারে–সেটাও তাকে দেখিয়ে দেওয়া হলো।
এই যে নিষিদ্ধ বস্তু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, শয়তানের প্ররোচনা, আল্লাহর স্পষ্ট আদেশের প্রতি অবাধ্যতা, যা থেকে মানুষের পতন, তারপর তার অনুশোচনা, নিজেকে সংশোধনের জন্য আল্লাহর কাছে আকুল আবেদন—এগুলো মানুষের ইতিহাসের প্রথম থেকে শুরু হয়ে এখনও মানুষের জীবনে পুনরাবৃত্তি হয়ে আসছে এবং হতে থাকবে।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে এই ঘটনার মাধ্যমে আরো দেখিয়ে দিলেন–মানুষের দুর্বলতার প্রতি তিনি কত সহনশীল। আদমের (আ) এত বড় গুনাহ–সেটাও তিনি মাফ করে দিয়েছিলেন। এই আয়াতটি আমাদেরকে এটাই শেখায় যে, আমাদের কখনই আল্লাহর ক্ষমার উপর আশা হারিয়ে ফেলা উচিত না। কারণ তিনি যদি আদমের (আ) গুনাহের মতো এত বড় একটা গুনাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন, তাহলে আমাদের অনেক বড় বড় গুনাহও তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন। আমাদের পক্ষ থেকে শুধুই দরকার আদমের (আ) মতো গভীর অনুতাপের সাথে, আকুল হয়ে, সঠিক পদ্ধতিতে তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং সেই ভুল জীবনে আর কখনও না করার জন্য শপথ করা।