আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
ইউরিয়া মোলাসেস বা ইউ এম এস খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তা :
আমাদের দেশের প্রাণি খাদ্যে আমিষের পরিমাণ খুব কম। কিন্তু দ্রুত বৃদ্ধিতে আমিষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। ইউ এম এস খাওয়ার নিয়ম জানা ও খাওয়ানো প্রয়োজন। প্রাণিকে যে খড় আমরা খাওয়াই তাতে খুব সামান্য পরিমাণ আমিষ জাতীয় খাদ্য আছে। পক্ষান্তরে ইউরিয়া এক ধরনের রাসায়নিক সার হলেও সেখানে ২৪৫% অপরিশোধিত আমিষ আছে। স্বল্পমূল্যে খড়ে ইউরিয়া মিশিয়ে খড়ে আমিষের পরিমাণ অনেকাংশে বাড়ানো যায়। এ ধরনের ইউরিয়া প্রক্রিয়াজাত খড় প্রাণি খেলে শরীর বৃদ্ধি হয়। এই জন্য গরু মোটাতাজাকরার জন্য ইউরিয়া ব্যবহার অত্যাবশ্যক। কারণ ইউরিয়া দ্রুত মাংস বাড়ায়।
ইউ এম এস বা ইউরিয়া মোলাসেস তৈরী ও উহার ব্যবহার :
(০১) ইউ.এম.এস তৈরীর প্রথম শর্ত হল এর উপাদানগুলির অনুপাত সর্বদা সঠিক রাখতে হবে অর্থাৎ ১০০ ভাগ ইউ.এম.এস এর শুষ্ক পদার্থের মধ্যে ৮২ ভাগ খড়।
(০২) ১৫ ভাগ মোলাসেস (চিটাগুড়) এবং ৩ ভাগ ইউরিয়া থাকতে হবে। এ হিসাব মতে ১০০ কেজি শুকনা খড়।
(০৩) ঘনত্বের উপর নির্ভর করে ১৫-২০ কেজি মোলাসেস (চিটাগুড়) ও ৩ কেজি ইউরিয়া মিশালেই চলবে।
(০৪) খড় ভিজা বা মোলাসেস পাতলা হলে উভয়ের পরিমাণই বাড়িয়ে দিতে হবে।
(০৫) প্রথমে খড়, মোলাসেস ও ইউরিয়ার পরিমাণ মেপে নিতে হবে। এর পর পানিতে ইউরিয়া ও চিটাগুড় মিশিয়ে উহা ভালভাবে খড়ের সাথে মিশাতে হবে।
(০৬) পানি বেশী হলে দ্রবণটুকু খড় চুষে নিতে পারবে না আবার কম হলে দ্রবণ ছিটানো সমস্যা হবে।
(০৭) শুকনো খড়কে পলিথিন বিছানো বা পাকা মেঝেতে সমভাবে বিছিয়ে ইউরিয়া মোলাসেস দ্রবণটি আস্তে অস্তে ঝরণা বা হাত দিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবেএবং সাথে সাথে খড়কে উল্টিয়ে দিতে হবে যাতে খড় দ্রবণ চুষে নেয়।
(০৮) এভাবে স্তরে স্তরে খড় সাজাতে হবে এবং ইউরিয়া মোলাসেস দ্রবণ সমভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
(০৯) ওজন করা খড়ের সাথে পুরো দ্রবণ মিশিয়ে নিলেই ইউ.এম.এস প্রাণিকে খাওয়ানোর উপযুক্ত হয়ে যাবে।
(১০) প্রস্তুতকৃত ইউরিয়া মোলাসেস খড় সঙ্গে সঙ্গে গরুকে খাওয়ানো যায় অথবা একবারে ২/৩ দিনের তৈরীখড় সংর‣ণ করে আস্তে আস্তে খাওয়ানো যায়। তবে কোন অবস্থাতেই খড় বানিয়ে তিন দিনের বেশী রাখা উচিৎ নয়। কারণ তাতে খড়ে ইউরিয়া এবং মোলাসেস এর পরিমাণ কমতে থাকবে।
ইউরিয়া মোলাসেস এর উপকারিতা :
(০১) ইউ.এম.এস ৬ মাসের উর্দ্ধে বাছুর গরু থেকে শুরু করে সকল বয়সের গরুকে তাদের চাহিদা মত খাওয়ানো যায়।
(০২) শুধু ইউ.এম.এস খাওয়ালেও গরুর ওজন বৃদ্ধি পায়।
(০৩) ইউ.এম.এস তৈরীর পদ্ধতি সহজ। একজন শ্রমিক প্রায় ৫০০-৬০০ কেজি খড় তৈরী করতে পারেন। ∙ গবেষণা করে দেখা গাছে যে। এ পদ্ধতিতে খড়ের সঙ্গে ১.০০ টাকার মোলাসেস খাইয়ে প্রায় ৫.০০ থেকে ৭.০০ টাকার গরুর মাংস উৎপাদন সম্ভব।
(০৪) যেহেতু ইউরিয়া ও মোলাসেস খড়ের সাথে ধীরে ধীরে খাচ্ছে। তাই প্রাণির বিষক্রিয়া হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
(০৫) কৃষক তার দৈনিক চাহিদা মত খড় প্র¯দত করে প্রতিদিন খাওয়াতে পারেন। তবে প্রক্রিয়াজাত খড় তিন দিনের বেশী সংর‣ণ করে রাখা যাবে না। কেননা তিন দিনের বেশী সংরক্ষণ করলে এর গুণগত মান কমে যাবে।
ইউ.এম.এস বা ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানোর সাবধনতা অবলম্বন :
ইউ.এম.এস তৈরী করার সময় অবশ্যই ইউরিয়া-মোলাসেস-খড় ও পানির অনুপাত ঠিক রাখতে হবে। ইউরিয়ার মাত্রা কোন অবস্থাতেই বাড়ানো যাবে না। ইউ.এম.এস এর গঠন পরিবর্তন করলে কাংখিত ফল পাওয়া যাবে না।
কোন কোন অবস্থায় ইউরিয়া মোলাসেস বা ইউ এম এস খাওয়ানো যাবে না :
(০১) ৬ মাসের কম বয়সের বাছুর গরুকে।
(০২) অসুস্থ গবাদিপ্রাণিকে।
(০৩) প্রণিকে সালফার জাতীয় ঔষধ খাওয়ানোর পর অন্ততঃ পরবর্তী ১৫-৩০ দিন।
(০৪) গর্ভবতী গাভীর গর্ভকালীন অবস্থার শেষের দিকে।
(০৫) যে সকল প্রাণি ইউ.এম.এসখাওয়ালে প্রায়ই অসুবিধা বোধ করে বা এলার্জি দেখা দেয়।
মোটাতাজাকরণ পশুকে খাবার খাওয়ানোর নিয়ম :
(০১) খাদ্য পরিবেশনার উপরও খাদ্য গ্রহণের তারতম্য হয়। তাই নিম্নের নির্দেশাবলী পালন করতে হবে :
(০২) নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন প্রাণিকে পরিষ্কার ও সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে।
(০৩) দৈহিক ওজন অনুসারে প্রয়োজনীয় খাবার একবারে না দিয়ে ২৪ ঘন্টায় ৫-৬ বারে দিলে প্রাণির হজম ক্রিয়া ভাল হয়।
(০৪) খাদ্য সরবরাহের আগে অবশ্যই পাত্র পরিষ্কার করা।
(০৫) দানাদার খাদ্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ মেপে ২ বারে (সকালে ও বিকালে) পরিবেশন করা।
(০৬) দানাদার খাদ্য আধা ভাঙ্গা অবস্থায় ভিজিয়ে খেতে অভ্যস্ত হলে সেভাবেই দিতে হবে।
(০৭) শুকনা দানাদার খাদ্য দিলে খাদ্য গ্রহণের পরপরই পানি পান করাতে হবে।
(০৮) গরু গরু মোটাতাজা করার জন্য সরিষার খৈল বেশি উপকারী।
(০৯) প্রাণির বদ-হজম, পেট-ফাপা ও পাতলা পায়খানা হলে দানাদার খাদ্য খাবার দেওয়া যাবে না।
(১০) প্রাণিদেহে শতকরা ৬০-৭০ ভাগ পানি তাই ১০-১৫ ভাগ পানি সরবরাহ করতে হবে।
(১১) খাদ্যে দানাদার, খড়, কাঁচা ঘাস ও পানির অনুপাত ১ : ৩ : ৫ : ১০-১৫ হতে হবে।
(১২) আশঁযুক্ত খাবার (খড়) ২-৩ ইি টুকরা করে কেটে ভিজিয়ে পরিবেশন করলে কম নষ্ট হয় এবং খাদ্যের গ্রহণ হারও বাড়ে।
(১৩) খড় খাওয়ানোর পূর্বের ২-৩ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে খাদ্যের মান বাড়ে।
(১৪) শুধুমাত্র খড় না দিয়ে এর সাথে দানাদার খাবার, ইউরিয়া, মোলাসেস, পানি ও কাঁচাঘাস মিশিয়ে খাওয়ালে খাদ্যের মান বৃদ্ধি হয়।
(১৫) খাদ্য অবশ্যই মাটি/বালি মুক্ত থাকা, খাদ্য পঁচা, বাসি, অতি পুরাতন না হওয়া।