বিষয়ঃ মসজিদের ইমাম নিযুক্ত/নিয়োগ করার নীতি ও মাসায়েল, যাদেরকে ইমাম বানানো মাকরূহ (অনুচিত)
মসজিদের ইমাম নিযুক্ত/নিয়োগ/নির্বাচন করার নীতি ও মাসায়েল
১। যোগ্য ও উপযুক্ত লোককে ইমাম নিযুক্ত করা মুসল্লীদের দায়িত্ব। যোগ্য লোক থাকতে অযোগ্যকে ইমাম নিয়োগ করলে গোনাহ হবে। একাধিক যোগ্য লোক থাকলে সর্বাপেক্ষা যোগ্য ব্যক্তিকে ইমাম নিয়োগ করা কর্তব্য।
২। সর্বাপেক্ষা যোগ্যকে বাদ দিয়ে অন্যকে নিযুক্ত করা সুন্নাতের খেলাফ।
৩। যদি একই পর্যায়ের গুণ ও যোগ্যতা বিশিষ্ট দুই বা ততোধিক ব্যক্তি থাকেন, তাহলোে অধিক সংখ্যক মুসল্লী যাকে মনোনীত করবে তিনিই ইমাম নিযুক্ত হবেন।
৪। ইমাম নিযুক্ত হওয়ার সবচেয়ে অগ্রগণ্য ব্যক্তি হলোেন আলেম অর্থাৎ, যিনি নামাযের মাসায়েল ভাল জানেন, যদি তিনি ফাসেক না হন, কুরআন অশুদ্ধ না পড়েন এবং সুন্নাত পরিমাণ কিরাত তার মুখস্ত থাকে।
৫। উপরোক্ত গুণে সমান থাকলে তারপর যার কিরাত ভাল অর্থাৎ, তাজবীদের নিয়ম অনুযায়ী যে কুরআন পড়তে সক্ষম।
৬। তারপর যার তাকওয়া বেশী অর্থাৎ, যিনি হারাম হালাল বেছে চলায় অধিক অভ্যস্ত ৷
৭। তারপর বয়সে যে বড়।
৮। তারপর যার আখলাক-চরিত্র অধিক উত্তম।
৯। তারপর যার চেহারা অধিক সুন্দর।।
১০। তারপর যে বংশের দিক থেকে শরীফ।
১১। তারপর যার আওয়াজ অধিক ভাল।
১২। তারপর যার লেবাস-পোশাক ভাল।
১৩। যার মধ্যে একাধিক গুণ থাকবে সে এক গুণের অধিকারী অপেক্ষা অগ্রগণ্য হবে।
১৪। একজন যদি বড় আলেম হন কিন্তু তার আমল ঠিক না হয় বা কিরাত অশুদ্ধ পড়েন এবং অন্য একজন বড় আলেম নন কিন্তু কিরাত শুদ্ধ পড়েন এবং আমল ভাল, তাহলোে এই দ্বিতীয় জনই অগ্রগণ্য হবে।
১৫। কারও বাড়িতে জামা’আত হলোে বাড়িওয়ালাই ইমামতের জন্য অগ্রগণ্য। তারপর বাড়িওয়ালা যাকে বলবে সে অগ্রগণ্য। অবশ্য যদি বাড়িওয়ালা একেবারে অযোগ্য হয়, তাহলোে অন্য যোগ্য ব্যক্তি অগ্রগণ্য হবে। একই স্থানে বাড়ির মালিক এবং উক্ত বাড়ির ভাড়াটিয়া উপস্থিত থাকলে ভাড়াটিয়াই মালিকের হুকুমে আসবে।
১৬। নির্ধারিত ইমাম থাকলে সে-ই অগ্রগণ্য, তার অমতে অন্য কারও ইমামতী করার অধিকার নেই।
১৭। ইসলামী রাষ্ট্র হলোে মুসলমান বাদশাহ বা তার নির্বাচিত প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে অন্য কারও ইমামতের হক নেই।
১৮। যার শাহওয়াত (যৌন উত্তেজনা) প্রবল, চিন্তা বিক্ষিপ্ত থাকার সম্ভাবনা-এরূপ অবিবাহিত লোকের চেয়ে যার বিবি আছে এরকম লোককে ইমাম নিয়োগ করা উত্তম।
যাদেরকে ইমাম বানানো মাকরূহ (অনুচিত)
যাদেরকে ইমাম বানানো এবং যাদের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তারা হলোঃ
১। ফাসেক, অর্থাৎ, যে প্রকাশ্যে গোনাহ করে বেড়ায়। এরূপ লোককে ইমাম নিযুক্ত করা মাকরূহ তাহরীমী।
২। বেদআতীকে ইমাম বানানো মাকরূহ তাহরীমী। অবশ্য ফাসেক ও বেদআতী ব্যতীত উপস্থিত লোকদের মধ্যে যদি অন্য কোন উপযুক্ত ব্যক্তি না থাকে অথবা তাকে ইমাম নিযুক্ত না করলে বা পূর্বে নিযুক্ত হয়ে রয়েছে এখন তাকে বরখাস্ত করতে গেলে ফ্যাসাদ ও কলহ সৃষ্টির আশংকা থাকে তাহলোে তার পিছনে নামায পড়া যাবে- এতে মুসল্লীদের গোনাহ হবে না। তবে যাদের কারণে এ ধরনের নিয়োগ দিতে হলো বা বরখাস্ত করা গেল না তারা দায়ী হবে।
৩। অন্ধ বা রাতকানাকে ইমাম বানানো মাকরূহ তানযীহী। তবে এরূপ লোক যোগ্য হলোে এবং পাক নাপাক সম্বন্ধে সতর্ক হয়ে থাকলে এবং তার ইমামতিতে কারও আপত্তি না থাকলে তার ইমামতী মাকরূহ নয়।
৪। ওলাদযিনা (যেনার সন্তান)-কে ইমাম বানানো মাকরূহ তানযীহী। অবশ্য এরূপ ব্যক্তি ইলম ও তাকওয়ার অধিকারী হয়ে থাকলে এবং তার ইমামতীতে মুসল্লীদের আপত্তি না থাকলে তাকে ইমাম বানানো মাকরূহ হবে না।
৫। যে সুশ্রী নব্য যুবকের এখনও দাড়ি ভালমত ওঠেনি, তাকে ইমাম বানানো মাকরূহ (তানযীহী) যদি ফেতনার আশংকা থাকে। ফেতনার আশংকা না থাকলে মাকরূহ নয়।
সূত্র: আহকামে যিন্দেগী।
সমাপ্তঃ মসজিদের ইমাম নিযুক্ত/নিয়োগ/নির্বাচন করার নীতি ও মাসায়েল, যাদেরকে ইমাম বানানো মাকরূহ (অনুচিত)।