হুকুম-আহকাম শুধু আল্লাহ হতেঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ জগতকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। আর এ ইবাদত শিক্ষা দেয়ার জন্য পাঠিয়েছেন অসংখ্য নবী-রাসূল। তাঁদের উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন সত্য ও ন্যায়ানুগ পন্থায় মানুষদের মধ্যে বিচার করার জন্য । সুতরাং ইনসাফ ও ন্যায় বিচার পাওয়া যায় একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হুকুমের মধ্যে। আর তাদের এ হুকুম ইবাদত, আকিদা, রাজনীতি, লেন-দেন, বেচা-কেনা, এক কথায় মানবীয় যাবতীয় কাজের ক্ষেত্রেই বিদ্যমান।
১। আকিদার ক্ষেত্রে হুকুম :
পৃথিবীতে আগত সমস্ত নবী-রাসূল সর্বপ্রথম আকিদা শুদ্ধকরণ ও মানুষদের তাওহিদের প্রতি আহ্বান কর্মসূচী দিয়ে তাদের কাজ শুরু করেছেন। লক্ষ্য করুন, ইউসুফ আ.কে যখন তাঁর জেলখানার সঙ্গীদ্বয় স্বপ্নের ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করেছিলেন তখন তিনি তাদের প্রথমে তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন। এরপর তাদের প্রার্থিত বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি তাদের বললেন:
হে আমার কারা সঙ্গীদ্বয়, বহু সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন রব ভাল নাকি মহাপরাক্রমশালী এক আল্লাহ ? তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে নিছক কতগুলো নামের ইবাদত করছ, যাদের নামকরণ তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা করেছ, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ প্রমাণ নাযিল করেননি। বিধান একমাত্র আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘তাঁকে ছাড়া আর করো ইবাদাত করো না। এটিই সঠিক দীন, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। ( সূরা ইউসুফ: আয়াত ৩৯ও ৪০)
২। ইবাদতের ক্ষেত্রে হুকুম:
ইবাদতের যাবতীয় বিধি-বিধান কোরআন-সুন্নাহ হতে গ্রহণ করা আমাদের সকলের উপর ওয়াজিব। যেমন, সালাত, যাকাত, হজ ও অন্যান্য ইবাদত। সবই আমাদের সম্পাদন করতে হবে কোরআনের নির্দেশ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুবর্তিতায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
তোমরা সেভাবেই সালাত আদায় কর যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ। (বুখারি ও মুসলিম)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন :
তোমরা হজের নিয়মাবলী আমার নিকট হতে গ্রহণ কর। (মুসলিম)
চার মাজহাবের সকল ইমামই বলেছেন, হাদিস সহিহ হলে সেটিই আমার মাজহাব।
সুতরাং কোনো মাসআলায় তাদের মধ্যে মতভিন্নতা দেখা দিলে তাদের নির্দিষ্ট একজনের কথাই গ্রহণ করব, এমনটি নয়। বরং যার কথার পেছনে কোরআন কিংবা সহিহ হাদিসের সমর্থন পাওয়া যাবে তারটাই গ্রহণ করব।
৩। বেচা-কেনার ক্ষেত্রে হুকুম:
প্রতিটি মুসলিমের বৈষয়িক কারবার, লেন-দেন, বেচা-কনা, কর্জ দান ও গ্রহণ, ভাড়া দেয়া-নেয়া ইত্যাদি কর্ম এক আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা-এর বিধান মত চলবে। সব ক্ষেত্রে তাদের হুকুম কার্যকর হবে।
কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোনো দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।
(সূরা নিসা : আয়াত ৬৫)
তাফসিরকারকগণ এই আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ সম্বন্ধে বলেছেন : দুই সাহাবির মধ্যে জমিতে পানি সেচ দেয়া নিয়ে মতবিরোধ ঘটে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোবাইর রা. কে সেচের হুকুম দেন। তখন অন্য ব্যক্তি বলল: তার পক্ষে আপনি রায় দিয়েছেন কারণ, সে আপনার ফুফুর ছেলে। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (বুখারি)
৪। বিচার ও কিসাসের ক্ষেত্রে হুকুম :
আল্লাহ তাআলা বলেন :
আর আমি এতে তাদের উপর অবধারিত করেছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চোখের বিনিময়ে চোখ, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান ও দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমের বিনিময়ে সমপরিমাণ জখম। অত:পর যে তা ক্ষমা করে দেবে, তার জন্য তা কাফফারা হবে। আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করবে না,তারাই যালিম। (সূরা মায়েদা: আয়াত ৪৫)
৫। শরিয়তের ক্ষেত্রে এক আল্লাহর হুকুম :
আল্লাহ তাআলা বলেন :
তিনি তোমাদের জন্য দীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন; যে বিষয়ে তিনি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর আমি তোমার কাছে যে ওহী পাঠিয়েছি… ( সূরা শরা: আয়াত ১৩)
মুশরিকদের বক্তব্য, আল্লাহ বিচারের ভার আল্লাহ ছাড়া অন্যের হাতে দিয়েছেন। তিনি তার বিরোধিতা করে বলেন :
তাদের জন্য কি এমন কিছু শরিক আছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? ( সূরা শুরা: আয়াত ২১)
মূল কথাঃ
১। প্রতিটি মুসলিমের উপর ওয়াজিব হচ্ছে কোরআন ও সহিহ সুন্নত মুতাবেক আমল করা। পরস্পরের মাঝে কোরআন-সুন্নাহ দ্বারাই বিচার-ফয়সালা সম্পাদন কর। এক কথায় সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর কথার উপর আমল করা।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
তাদের মধ্যে আল্লাহ হতে অবতীর্ণ কথায় বিচার কর। (সূরা মায়িদা: আয়াত ৪৯) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
তাদের ইমামরা আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নাযিলকৃত বিধানাবলী দ্বারা যতক্ষণা না বিচার করবে আল্লাহ তাদের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে আযাব দিবেন। । (ইবনে মাজাহ, হাসান )
২। উপনিবেশিক অমুসলিম শাসকরা কোরআন সুন্নাহ বিরোধী যে সব আইন করে গিয়েছিল মুসলিমরা সেসব আইন বাতিল করে কোরআন সুন্নাহর আইন প্রবর্তণ করবে এবং সে অনুযায়ী শাসন কর্ম পরিচালনা করবে। যেমন, ইংরেজ ও ফ্রান্সের শাসকরা বহু বছর যাবত আফ্রীকার বিভিন্ন দেশ শাসন করেছে এবং সে সব দেশে কোরআন সুন্নাহ বিরোধী অনেক আইনের প্রবর্তণ করেছে এখন সে সব দেশের মুসলিমদের কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহ বিরোধী আইনগুলো পরিবর্তন করে কোরআনি আইনের প্রবর্তন করা এবং সে মতে সকল কার্য পরিচালনা করা।
৩। অমুসলিম শাসক কর্তৃক প্রবর্তিত শরিয়ত বিরোধী এ সব নোংরা ও অন্যায় আইন পরিবর্তন করে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা করা অবধি মুসলিমদের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে না এবং তারা কোনো প্রকার সাহায্যও পাবে না। তাদের প্রতি আল্লাহর সাহায্য তখনই আসবে জীবনের প্রতিটি পর্বে যখন তারা আল্লাহর দেয়া শরিয়তকে পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা করবে। আল্লাহ প্রদত্ত ন্যায়-নায্য বিচারকে গ্রহণ করবে। এবং আল্লাহর বান্দাদের জন্য ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে।