বিষয়: ইসলামে জিহাদের বিধান।
হ্যাশট্যাগ: #ইসলামে জিহাদের বিধান।
জেহাদের সংজ্ঞাঃ
কাফেরদেরকে সত্য দ্বীনের দিকে আহবান করতে হবে, না মানলে তাদেরকে জিজিয়া কর দিতে সম্মত করতে হবে। যদি তারা এতে অসম্মত হয় এবং তাদের সাথে শান্তি চুক্তি না থাকে, তাহলে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরপদ্রুব ইসলামী কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে লড়ায়ী করে তাদেরকে অবদমিত করতে হবে ৷ সাধারণ ভাবে একে বলা হয় ‘জেহাদ’।
জেহাদের উদ্দেশ্যঃ
জেহাদের উদ্দেশ্য এ’লায়ে কালিমাতুল্লাহ্ অর্থাৎ, আল্লাহ্র দ্বীনকে বুলন্দ করা তথা ইসলাম ধর্মের পক্ষে বাঁধাকে অপসারণ করা।
কাদের বিরুদ্ধে জেহাদ হয়ঃ
১. কাফের শক্তির বিরুদ্ধে জেহাদ হবে; যদি তারা মুসলমানদের বশ্যতা স্বীকার করে জিয়া কর দিতে প্রস্তুত না হয়। তবে কোন কাফের শক্তি বা কোন কাফের রাষ্ট্রের সাথে শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হলে চুক্তির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বা প্রতিপক্ষ কর্তৃক চুক্তি লংঘন না করা পর্যন্ত জেহাদ মুলতবি থাকবে। কোন কাফের ব্যক্তি/গোষ্ঠি মুসলিম রাষ্ট্রের নিয়মতান্ত্রিক নাগরিক হলে বা ভিসা গহণ পূর্বক কোন মুসলিম রাষ্ট্রে অবস্থান করলে তাদের বিরুদ্ধে জেহাদ চলবে না।
২. কোন মুসলমান গোষ্ঠি সম্মিলিতভাবে নামায পড়তে বা যাকাত দিতে অস্বীকার করলে তাদের বিরুদ্ধে জেহাদ হবে।
৩. কোন মুসলমান গোষ্ঠি ইসলামের কোন শেআর (বৈশিষ্ট্য) সম্মিলিত ভাবে বর্জন করলে তাদের বিরুদ্ধে জেহাদ হবে। যেমন কোন গোষ্ঠি সম্মিলিত ভাবে আযান প্রদান বন্ধ করলে তাদের বিরুদ্ধে জেহাদ হবে।
৪. ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাগাওয়াত বা বিদ্রোহ করলে বিদ্রোহকারীদের বিরুদ্ধে জেহাদ হবে।
জেহাদের হুকুমঃ
সাধারণভাবে জেহাদ করা ফরযে কেফায়া। অর্থাৎ, কিছু লোক জেহাদের দায়িত্ব পালন করলে সকলে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করবে। তবে কখনও (বহিঃশক্তি কর্তৃক মুসলিম রাষ্ট্র আক্রান্ত হলে বা আক্রান্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিলে খলীফা তথা ইসলামী রাষ্ট্র প্রধান কর্তৃক) জেহাদের সাধারণ ডাক দেয়া হলে তখন জেহাদ ফরযে আইন হয়ে দাঁড়ায়। তখন সকল আকেল বালেগ সক্ষম পুরুষদের উপর জেহাদের আহবানে সাড়া দেয়া ফরযে আইন হয়ে দাঁড়ায়।
জেহাদের শর্তঃ
১. পরিবার সন্তানাদি ও মাতা-পিতার খেদমতের প্রয়োজন থেকে ফারেগ না হলে জেহাদে বের হবেনা।
২. (প্রতিপক্ষ অমুসলিম হলে তাদেরকে) ইসলামের দিকে আহবান না জানিয়ে জেহাদ শুরু করবেনা।
জেহাদের সুন্নাত ও আদবসমূহঃ
১. প্রথমে ইবাদত-বন্দেগীতে নিজের নসের সাথে মুজাহাদা করা তারপর শত্রুর সাথে ময়দানে অবতীর্ণ হওয়া।
২. তীরন্দাজী শিক্ষা করা (অর্থাৎ, অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা)।
৩. বৃহস্পতিবার জেহাদে বের হওয়া মোস্তাহাব।
৪. জেহাদে বের হওয়ার পর যাবতীয় কষ্ট-ক্লেষকে ছওয়াবের মনে করা।
৫. যুদ্ধ তথা হত্যা হত্যির ব্যাপারে অত্যধিক আগ্রহী না থাকা। বরং আল্লাহর কাছে শান্তি কামনা করা। কেননা যুদ্ধ বিপদজনক। তবে শত্রু মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে গেলে অবিচলতার সাথে মোকাবেলা চালিয়ে যাওয়া এবং শাহাদাতের তামান্না (আকাংখা) রাখা।
৬. শত্রুর মোকাবেলায় স্থিরপদ থাকা ও সক্রর বিরুদ্ধে সাহায্য পাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ্র কাছে দুআ করা।
৭. যুদ্ধের সময় বেশী বেশী যিকির করতে থাকা।
৮. যুদ্ধের সময় স্ত্রী পুত্র পরিজন, ধন-সম্পদ ও বাড়ি ঘরের কথা স্মরণ করা থেকে বিরত থাকা।
৯. মনের মধ্যে এই চিন্তা জাগরুক রাখা যে, নির্ধারিত সময়ের পূর্বে কারও মৃত্যু বা অন্য কোন বিপদ ঘটেনা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
قل لن يصيبنا إلا ما كتب الله لنا۔
অর্থাৎ, হে নবী! তুমি বলে দাও, আল্লাহ আমাদের জন্য যা নির্ধারিত করে রেখেছেন, তার বাইরে আমাদের আদৌ কোন কোন বিপদ ঘটবেনা। (সূরা তাওবাঃ ৫০)
১০. জেহাদের ইমাম (সেনাপতি/আমীর) মুজাহিদদেরকে বিভিন্ন অনুমোদিত কৌশলে জেহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে।
সমাপ্ত: ইসলামে জিহাদের বিধান।