মারাত্মক ভুল ধারণা :-
🛑ইসলাম নারীদের প্রতি অত্যাচার করে!
🔷উত্তর :- ‘ইসলাম নারীদের প্রতি অত্যাচার করে’ ইসলামের প্রতি এ জাতীয় অপবাদ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট। বরং ইসলাম এসেছে নারীদেরকে অত্যাচারের শিকল থেকে মুক্ত করার জন্য। ইসলাম এসেছে নারীর মর্যাদা এবং সম্ভ্রমকে রক্ষা করার জন্য।
পর্দা করার নাম অত্যাচার নয়। বরং পর্দা হচ্ছে নারীর মর্যাদা এবং সম্ভ্রম রক্ষার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
নারী ও পুরুষের প্রকৃতি এবং স্বভাবকে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। নারী ও পুরুষের স্বভাব ও প্রকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে প্রত্যেককে প্রদান করা হয়েছে আলাদা আলাদা দায়িত্ব। সন্তান গর্ভে ধারণ, প্রসব, দুগ্ধদান, প্রতিপালন ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করতে হয় নারীকে। প্রতিমাসে নির্দিষ্ট দিনে ঋতুস্রাব, রক্তস্রাব ইত্যাদি শুধু মহিলাদের হয়। পক্ষান্তরে পুরুষ এসব থেকে মুক্ত। ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে নারী ও পুরুষের কর্ম ক্ষেত্র এবং দায়িত্ব আলাদা করা হয়েছে। সুতরাং নারী বাড়িতে থেকে বাড়ির যাবতীয় দায়িত্ব পালন, সন্তান প্রতিপালন ইত্যাদি করার নাম মহিলাদেরকে ‘জেলখানায় বন্দি’ রাখা নয়। বরং এটা তার স্বভাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এক বিশাল দায়িত্ব। তাছাড়া পুরুষ থেকে পৃথক শুধু নারী অঙ্গনে নারীরা কাজ করবে, অর্থ উপার্জন করবে তাতে ইসলাম বাঁধা প্রদান করেনি।
ইসলাম নারী-পুরুষের অধিকারকে সমানভাবে সংরক্ষণ করেছে। যা কুরআন ও হাদীসে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। ইসলাম বলেছে, একজন নারী চাই বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক তার রয়েছে ব্যক্তিগত অধিকার। সে তার নিজস্ব সম্পদকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে। তার রয়েছে ব্যক্তিগত মতামত, ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রকাশের অধিকার।
একজন মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে বিবাহের আগে অবশ্যই তার অনুমতি নিতে হবে। তার অনুমতি ব্যতিরেকে বিবাহ বৈধ হবে না। তবে অপ্রাপ্ত অবস্থায় মেয়ের অভিভাবক মেয়ের বিয়ে দিলে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর বিয়ে রাখা না রাখা তার ইচ্ছাধীন। ইচ্ছে করলে সে বিয়ে অটুট রাখতে পারে ইচ্ছে করলে তা ভঙ্গ ও করতে পারে।
বিবাহের পর মিলমিশ না হলে স্বামীর সাথে ঘর-সংসার করার বা না করাও তার ইচ্ছাধীন। সে ইচ্ছা করলে ‘খোলা তালাক’ নিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে।
বিবাহের সময় স্বামীর পক্ষ থেকে সে ‘মোহর’ পাওয়ার হকদার। এ মোহর সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিয়ের পর স্ত্রীর সাথে সর্বোত্তম আচরণ করার জন্য স্বামীকে নির্দেশ প্রদান করেছে ইসলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।” তিনি আরও বলেছেন, “তোমরা স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ কর।”
মা হিসেবে ইসলাম নারীর যে মর্যাদা দিয়েছে তা নজির বিহীন। ইসলাম বলেছে, “মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল,
আমার সদাচরণ পাওয়ার সবচেয়ে বেশী হকদারকে?
তিনি বললেন: “তোমার মা।”
প্রশ্ন করা হল: তার পর কে?
তিনি বললেন: “তোমার মা।”
আবার প্রশ্ন করা হল: তারপর কে?
তিনি বললেন, “তোমার মা। এরপর তোমার পিতা।”
পিতার তুলনায় এখানে মাকে তিনগুণ অধিকার দেয়া হয়েছে।
ইসলামে উত্তরাধিকার সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে যে নীতিমালা প্রদান করেছে তা অত্যন্ত ন্যায় ও যুক্তি সংগত।
যে বিষয়টি নিয়ে তথাকথিত নারীবাদীরা বুঝে-না বুঝে চেঁচামেচি করছে তা হল, ইসলাম বলেছে, ‘উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে পুরুষ নারীর দ্বিগুণ সম্পদের অধিকারী হবে।’
দেখা যাক ইসলাম কি এ আইনের মাধ্যমে সত্যি কি নারীদের প্রতি অত্যাচার করেছে? দেখা যাবে, না, বরং এটি একটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত আইন। তা কয়েকটি কারণে। যেমনঃ
১) ইসলামী আইনে মেয়ে একদিকে পিতা মৃত্যু বরণ করার পর ছেলের তুলনায় অর্ধেক সম্পদের অধিকারী হবে।
২) অন্যদিকে স্বামী মৃত্যু বরণ করলে স্ত্রী তার পরিত্যক্ত সম্পদের অধিকারী হবে। (সন্তান থাকলে ৮ ভাগের ১ ভাগ আর সন্তান না থাকলে ৪ ভাগের ১ ভাগ)।
৩) বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে মোহরানা দেয়া অপরিহার্য করেছে ইসলাম। এ মোহরানা তার অধিকার।
৪) স্ত্রীর ভরণ-পোষণ সহ পরিবারের যাবতীয় খরচ পুরুষের জন্য আবশ্যক। মহিলাকে কোন খরচ দিতে বাধ্য করা হয় নি।
৫) তাছাড়া, স্বামীর বাড়িতে কোন সমস্যা হলে পিতা যদি মারা যাওয়ার পর সাধারণত বোন তার ভাইয়ের বাড়িতেই আশ্রয় নেয়। ভাইকে অনেক সময় বোনের সমস্যায় এগিয়ে আসতে হয় এবং ঝামেলা পোহাতে হয়। ইত্যাদি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে প্রতিভাত হবে, একজন নারীর তুলনায় পুরুষের সম্পদের প্রয়োজন অনেক বেশী। তাই ইসলাম সম্পদ বণ্টনের যে আইন প্রণয়ন করেছে তা অত্যন্ত বিবেক সঙ্গত এবং যুক্তি যোগ্য।
৬) সবচেয়ে বড় কথা হল, যে মহান আল্লাহ এই বিশাল ভূমণ্ডল-নভোমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং তা পরিচালনা করছেন তার দেয়া আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করা তো মুসলিম হিসেবে সকলের জন্য জরুরী। আর যে সকল বিধর্মী ইসলামকেই মানে না, আল্লাহ ও রাসূলকে বিশ্বাস করে না তাদের তো শুধু এ একটি আইনই নয় বরং গোটা ইসলামই তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য।
মোটকথা, যে ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করতে চায় সে আল্লাহর আইনকে অবশ্যই ন্যায় সঙ্গত মনে করবে। এবং তাঁর দেয়া আইন কানুনের কাছে মাথা নত করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর নির্দেশ মেনে চলবে তাহলেই এ দুনিয়াতে পাবে শান্তি এবং পরকালে পাবে জাহান্নাম থেকে মুক্তি। আল্লাহ যেন আমাদেরকে সে পথেরই অনুসারী বানান। আমীন॥