আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
ঈমানের শাখাসমূহঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
الايمَانُ بضْعُ وَّ سِتُّونَ شُعْبَةً فَاَفْضَلُهَا قَوْلُ لا إلَهَ إلا اللهُ وَأدْنَاهَا إمَاطَةُ الأذى عَنِ الطَّرِيْقِ. (رواه مسلم)
অর্থাৎ, ঈমানের ৬৩ হতে ৬৯ শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বোত্তম হল কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা। আর সর্বনিম্ন হল, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলা। (সহিহ মুসলিম)
ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ফতহুল বারী গ্রন্থে বলেছেন : ইবনে হিব্বান যা বলেছেন তার সারমর্ম হল-
এই শাখাগুলোর শ্রেণীবিভাগ মানুষের অন্তর, জিহ্বা ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আমল।
১। অন্তরের আমল হল বিশ্বাস ও নিয়ত : এটি ২৪ ভাগে বিভক্ত।
- আল্লাহর উপর ঈমান (এর মধ্যে রয়েছে, তাঁর জাত, সিফাত ও তাওহীদের উপর ঈমান। তিনি ছাড়া আর যা কিছু আছে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং তাদের ইবাদত না করা। যেমন : দোয়া, সাহয্য প্রার্থনা ও এ জাতীয় অন্যান্য কাজ)।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُঅর্থাৎ, তাঁর মত কিছু নেই। আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। ( সূরা শুরা : আয়াত ১১)
- তাঁর ফেরেশতাবৃন্দ, কিতাবসমূহ, রাসূলবৃন্দ, তাকদিরের ভাল-মন্দ, এবং আখিরাতের উপর ঈমান আনা।
- আখিরাতের উপর ঈমানের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, কবরের সওয়াল জওয়াব, পূনরুত্থান, কবর থেকে উঠানো, হিসাব-নিকাশ, মীযান, পুলছিরাত, ও জান্নাত-জাহান্নাম।
- আল্লাহর জন্য ভালবাসা এবং শত্রুতা তাঁর কারণেই।
- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মহব্বত এবং তাঁকে সম্মান করা (এর মধ্যে রয়েছে তাঁর উপর দরূদ পাঠ করা এবং তাঁর সুন্নতের অনুসরণ করা)।
- ইখলাস (এর মধ্যে রয়েছে, রিয়া ও নিফাক ত্যাগ করা। তাওবা করা। ভয় ও আশা করা। শুকরিয়া আদায় করা, সততা, সবর, আল্লাহর বিচারে সন্তুষ্ট থাকা এবং তাওয়াক্কুল।)
- রহমত ও বিনয় নম্রতা (এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হল বড়দের সম্মান করা, ছোটদেরকে ভালবাসা, অহংকার ও আত্মগর্ব ত্যাগ করা, হিংসা-বিদ্বেষ ও ক্রোধ ত্যাগ করা)।
২। জিহবার আমল : এর মধ্যে ৭ টি ভাগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
- কালেমা শাহদাত পাঠ করা।
- কুরআন তেলাওয়াত করা।
- ইলম শেখা ও অন্যকে শেখানো।
- দোয়া, যিকর, এর মধ্যে আছে ইস্তেগফার করা।
- মন্দ কথা থেকে বিরত থাকা।
৩। শরীরের আমল : এতে ৩৮ টি ভাগ রয়েছে।
ক) এর কতগুলি চোখের সাথে জড়িত – তা মোট ১৫ টি ।
- পবিত্রতা।
- অন্যকে খাওয়ানো।
- মেহমানদের একরাম করা।
- ফরজ ও নফল সিয়াম পালন করা।
- ইতিকাফ করা।
- লাইলাতুল কদর তালাশ করা।
- হজ উমরা পালন করা।
- বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করা।
- দীনকে জিন্দা রাখার জন্য অন্যত্র হিজরত করা, এর মধ্যে রয়েছে ঈমান বাঁচানোর তাগিদে শিরকাচ্ছন্ন দেশ থেকে হিজরত করা।
- নযর ও মান্নত পূর্ণ করা।
- কসম পূর্ণ করা, এর মধ্যে রয়েছে আল্লাহর নামে সত্য কসম করা।
- কাফফারা আদায় করা, যেমন প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হলে কিংবা রমযান মাসে রোজা অবস্থায় সহবাস করলে শরিয়ত নির্ধারিত কাফফারা আদায় করা ইত্যাদি।
খ) এর মধ্যে যা অনুসরনের সাথে জড়িত – তা ৬ টি ।
- বিবাহ-শাদির মাধ্যমে নিজের পবিত্রতা রক্ষা করা ও পরিবারের হক আদায় করা।
- মাতা-পিতার খিদমত করা। ( এর মধ্যে রয়েছে তাদের কষ্ট না দেয়া এবং বাচ্চাদের ইসলামি বিধি মত প্রতিপালন করা)।
- আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
- (আল্লাহর অবাধ্যতা ও পাপের কাজ ব্যতীত) নেতৃবর্গ ও শাসকদের মান্য করা।
- দাস-দাসী ও অধিনস্তদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।
গ) আরো কিছু আছে যা সাধারণভাবে সকলের সাথে জড়িত – এর মধ্যে ১৭ টি ভাগ আছে।
- ন্যায় বিচারের সাথে আমিরের দায়িত্ব পালন করা ।
- মুসলিমদের দলের সাথে একিভূত থাকা।
- হাকিমদের (রাজাদের) মান্য করা। (তবে তারা আল্লাহর অবাধ্যতা বা পাপের হুকুম দিলে তা মান্য করা জরুরি নয়)।
- মানুষের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্বের মীমাংসা করে মিলমিশ ঘটানো, (তার মধ্যে রয়েছে খারিজি ও বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ করা)।
- নেক ও তাকওয়ার কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা করা, (এর মধ্যে সৎ কাজের প্রতি আদেশ ও অন্যায় কাজে বাধা প্রদান অন্তর্ভুক্ত)।
- হজ পালন করা।
- জিহাদ করা ( এর মধ্যে যুদ্ধের জন্য তৈরী হওয়াও অন্তর্ভুক্ত)।
- আমানত আদায় করা (তার মধ্যে গণিমতের এক পঞ্চমাংশ বাইতুল মালে জমা দেয়াও অন্তর্ভুক্ত)।
- কর্জ আদায় করা।
- প্রতিবেশীর হক আদায় করা, তাকে সম্মান করা।
- সৎ ভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করা (হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জন এর অন্তর্ভুক্ত)।
- উপার্জিত অর্থ সৎ ও বৈধ পথে ব্যয় করা (বাহুল্য পথে খরচ না করা)।
- সালামের উত্তর দেয়া ।
- হাঁচির জবাব দেয়া।
- মানুষদের কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা ।
- খেল-তামাশা হতে বিরত থাকা।
- রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলা।
শেষকথাঃ
তাওহিদ হচ্ছে ঈমানের সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম স্তর। সুতরাং দীনের দায়ীদের প্রথম ও প্রদান দায়িত্ব হচ্ছে, সর্বোচ্চ আমল দিয়ে দাওয়াত কর্ম শুরু করবে অত:পর তা নিজে আমল করবে। প্রথমে ভিত্তি প্রস্তর, তারপর দেয়াল, এরপর যেটা যত জরুরি। কারণ তাওহিদই আরব ও আজমকে এক করেছে এবং ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের রাস্তা তৈরি করেছে।