আলোচনার বিষয়: ঈমানের শাখা কি? ঈমানের শাখা কয়টি? ঈমানের শাখা প্রশাখা কয়টি? ঈমানের শাখা pdf, ঈমানের শাখা কয়টি ও কি কি? ঈমানের সর্বোচ্চ শাখা কি? ঈমানের সর্বনিম্ন শাখা কি? ঈমানের সর্বোচ্চ শাখা কয়টি? ঈমানের মৌলিক শাখা কয়টি? ঈমানের সংখ্যা কয়টি? ঈমানের শাখা সমূহ, ঈমানের শাখা কতটি? ঈমানের সর্বোৎকৃষ্ট শাখা কোনটি? ঈমানের ৭৭ টি শাখা কি কি? ঈমানের অংগ, ঈমানের সবচেয়ে ছোট শাখা কোনটি? ঈমানের ৭৭ টি শাখা বই, ঈমানের ৭৭ টি শাখা, ঈমানের শাখা প্রশাখা।
ঈমানের শাখা প্রশাখা বা ঈমানের অংগ সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন
প্রশ্ন: ঈমান কি? ঈমানের শাখা কি?
উত্তর: ঈমানের পরিচয়ের মধ্যে বলা হয়েছে কতকগুলো বিষয়কে অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং আমলে পরিণত করার সমষ্টি হলো ঈমান। শরীয়তের পরিভাষায় ঈমান বলা হয়, নবী করিম (সা.) থেকে যেসব বিষয় অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে, সেসব বিষয় দিলের দ্বারা বিশ্বাস করা ও মান্য করা।
এ থেকে বোঝা গেল- ঈমানের কিছু বিষয় দেলের দ্বারা সম্পন্ন হয়, কিছু জবানের দ্বারা এবং কিছু হাত, পা ইত্যাদি বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা। এ সবগুলোকে ঈমানের শাখা বলা হয়।
প্রশ্ন: ঈমানের শাখা কতটি? ঈমানের সংখ্যা কয়টি? ঈমানের মৌলিক শাখা কয়টি? ঈমানের শাখা কয়টি? ঈমানের শাখা প্রশাখা কয়টি?
উত্তর: বড় বড় ইমামগণ হাদীসের ইঙ্গিত পেয়ে গবেষণা করে কুরআন-হাদীস থেকে ঈমানের ৭৭টি শাখা নির্ণয় করেছেন।
প্রশ্ন: ঈমানের সর্বোচ্চ শাখা কি?
উত্তর: ঈমানের সত্তরটিরও বেশি শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম শাখা হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলা। [মনে মননে এ কথায় বিশ্বাস স্থাপন করা]
প্রশ্ন: ঈমানের সর্বনিম্ন শাখা কি? ঈমানের সবচেয়ে ছোট শাখা কোনটি?
উত্তর: ঈমানের সর্বনিন্ম শাখা হচ্ছে ‘(চলাচলের) পথের মধ্য হতে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করে দেয়া (কাঁটা, পাথর ইত্যাদি) এবং লজ্জা হলোো ঈমানের একটি (গুরুত্বপূর্ণ) শাখা বিশেষ।
প্রশ্ন: ঈমানের ৭৭ টি শাখা কি কি?
উত্তর: ঈমানের ৭৭ টি শাখা এর মধ্যে দেলের দ্বারা সম্পন্ন হয় ৩০টি। জবানের দ্বারা সম্পন্ন হয় ৭টি আর বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা সম্পন্ন হয় ৪০টি। নিম্নে আমলের সুবিধার জন্য সংক্ষেপে সবগুলোর বর্ণনা পেশ করা হলোো:
এই ৭৭ প্রকার কাজ সম্পূর্ণ করতে পারলে ইনশাআল্লাহ ঈমান পূর্ণ হবে। আর একটি বাকি থাকলে ঈমান অসম্পূর্ণ থাকবে; আখেরাতে এর জন্য বড় রকমের খেসারত দিতে হবে।
আমরা দৈনিক একবার,নইলে সপ্তাহে একবার,নইলে মাসে একবার,হলোেও পড়ি আর যাচাই করি আমার মধ্যে এর কয়টি আছে আর কয়টি নেই।
৩০ টি ঈমানের শাখা দেলের দ্বারা যেগুলো সম্পন্ন হয়ঃ
১. আল্লাহর উপর ঈমান আনা।
২. আল্লাহ চিরন্তন ও চিরস্থায়ী, তিনি ব্যতীত সবকিছু তাঁর মালূক-একথা বিশ্বাস করা।
৩. ফেরেশ্তাদের প্রতি ঈমান আনা।
৪. আসমানী কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনা।
৫. আল্লাহর প্রেরিত পয়গম্বরদের প্রতি ঈমান আনা।
৬. তাকদীরের উপর ঈমান আনা।
৭. কিয়ামতের উপর ঈমান আনা।
৮. বেহেশতের উপর ঈমান আনা।
৯. দোযখের উপর ঈমান আনা।
১০ আল্লাহর সঙ্গে মহব্বত রাখা।
১১. কারও সাথে আল্লাহর জন্যই মহব্বত রাখা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারও সাথে দুশমনী রাখা।
১২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মহব্বত রাখা।
১৩. এখলাস। (অর্থাৎ, সব কিছু আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করা।)
১৪. তওবা অর্থাৎ, কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তা পরিত্যাগ করা এবং ভবিষ্যতে তা না করার জন্য সংকল্প করা। (তওবা সম্পর্কে বিস্তারিত অঅলাদা পোষ্ট রয়েছে)।
১৫. আল্লাহ্কে ভয় করা।
১৬. আল্লাহর রহমতের আশা রাখা।
১৭. আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়া।
১৮. হায়া বা লজ্জা।
১৯. শোকর।
২০. অঙ্গীকার রক্ষা করা।
২১. ছবর।
২২. বিনয় নম্রতা ও বড়দের প্রতি সম্মানবোধ।
২৩. স্নেহ-মমতা ও জীবের প্রতি দয়া।
২৪. তাকদীরের উপর তথা আল্লাহর ফয়সালার উপর রাজী থাকা।
২৫. তাওয়াক্কুল করা।
২৬. নিজেকে বড় এবং ভাল মনে না করা।
২৭. হিংসা বিদ্বেষ না রাখা
২৮. রাগ না করা।
২৯. কারও অহিত চিন্তা না করা, কারও প্রতি কু-ধারণা না করা।
৩০. দুনিয়ার মহব্বত ত্যাগ করা।
বিঃ দ্রঃ ১১ নং থেকে ৩০ নং পর্যন্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে আলাদা পেষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
৭ টি ঈমানের শাখা জবানের দ্বারা যেগুলো সম্পন্ন হয়ঃ
১. কালিমায়ে তাইয়্যেবা পড়া।
২. কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করা।
৩. ইল্মে দ্বীন শিক্ষা করা।
৪. ইল্মে দ্বীন শিক্ষা দেয়া।
৫. দোয়া বা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা।
৬. আল্লাহর যিকির।
৭. বেহুদা কথা থেকে জবানকে হেফাযত করা।
৪০ টি ঈমানের শাখা বহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা যেগুলো সম্পন্ন হয়ঃ
১. পবিত্রতা হাছিল করা।
২. নামাযের পাবন্দী করা।
৩. ছদকা, যাকাত, ফিত্রা, দান-খয়রাত, মেহমানদারী ইত্যাদি।
৪. রোযা।
৫. হজ্জ।
৬. এ’তেকাফ (শবে কদর তালাশ করা এর অন্তর্ভুক্ত)।
৭. হিজরত করা অর্থাৎ, দ্বীন ও ঈমান রক্ষার্থে দেশ-বাড়ি ত্যাগ করা।
৮. মান্নত পুরা করা।
৯. কছম করলে তা পূরণ করা আর কছম ভঙ্গ করলে তার কাফ্ফারা দেয়া।
১০. কোন কাফ্ফারা থাকলে তা আদায় করা।
১১. ছতর ঢেকে রাখা।
১২. কুরবানী করা।
১৩. জানাজা ও তার যাবতীয় আনুষঙ্গিক কাজের ব্যবস্থা করা।
১৪. ঋণ পরিশোধ করা।
১৫. লেন-দেন ও কায়-কারবার সততার সাথে এবং জায়েয নিয়ম মোতাবেক করা।
১৬. সত্য সাক্ষ্য প্রদান করা। সত্য জানলে তা গোপন না করা।
১৭. বিবাহের দ্বারা হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা।
১৮. পরিবার-পরিজনের হক আদায় ও চাকর-নওকরদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।
১৯. মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করা।
২০. ছেলে-মেয়েদের লালন-পালন ও সুশিক্ষার ব্যবস্থা করা।
২১. আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করা।
২২. উপর ওয়ালার অনুগত হওয়া, যেমন চাকরের প্রভূভক্ত হওয়া।
২৩. ন্যায় ও নিরপেক্ষভাবে বিচার করা।
২৪. মুসলমানদের জামা’আতের সাথে থাকা ও হক্কানী জামা’আতের সহযোগিতা করা, তাদের মত পথ ছেড়ে অন্যভাবে না চলা।
২৫. শরী‘আত বিরোধী না হলোে শাসনকর্তাদের অনুসরণ করা।
২৬. লোকদের মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদ হলোে তা মিটিয়ে দেয়া।
২৭. সৎ কাজে সাহায্য করা।
২৮. আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার করা তথা সৎ কাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজে বাধা দেয়া।
২৯. জিহাদ করা। সীমান্ত রক্ষা করাও এর অন্তর্ভুক্ত।
৩০. হদ তথা শরী‘আত নির্ধারিত শাস্তি কায়েম করা।
৩১. আমানত আদায় করা। গনীমতের এক পঞ্চমাংশ বায়তুল মালে জমা করা এর অন্তর্ভুক্ত।
৩২. অভাবগ্রস্তকে কৰ্জ দেয়া।
৩৩. প্রতিবেশীর হক আদায় করা ও তাদেরকে সম্মান করা।
৩৪. লোকদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।
৩৫. অর্থের সদ্ব্যবহার করা।
৩৬. সালামের জবাব দেয়া ও সালাম প্রদান করা।
৩৭. যে হাঁচি দিয়ে ‘আল হামদুলিল্লাহ’ পড়ে তাকে ‘ইয়ারহামুকালাল্লাহ’ বলা।
৩৮. পরের ক্ষতি না করা। কাউকে কোন রূপ কষ্ট না দেয়া।
৩৯. খেল-তামাশা, ক্রীড়া-কৌতুক ও নাচ গান থেকে দূরে থাকা।
৪০. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা। নিম্নে কুফ্র, শির্ক, বিদআত রছম ও গোনাহের বিষয়াদি সম্পর্কে বিবরণ পেশ করা হলো, যেন এগুলো থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে ঈমানকে রক্ষা করা যায়।
ঈমানের ৭৭ টি শাখা বই, ঈমানের শাখা pdf ডাইনলোড
শেষকথাঃ
ঈমান বা বিশ্বাসের মূল্য আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে দামি। তাইতো মুসলমানের কাছেও ঈমানের চেয়ে মহামূল্যবান আর কিছুই নেই। ঈমানের উপর ভিত্তি করে মানুষের দুনিয়া ও পরকালের সকল হিসাব-নিকাষ চূড়ান্ত হবে।
দ্বীনের মূল হলো ঈমান। এ ঈমানের ফজিলতের ওয়াজ সর্বদাই চলছে। অথচ কিসে ঈমান আনতে হবে তা অনেকেরই জানা নেই, শুধু ফাযায়েলের বয়ানেই ঈমান পরিপূর্ণ হবে না। এ ঈমানের শাখা প্রশাখা পবিত্র কোরআন হাদীসের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে।
সীমাহীন চেষ্টার মাধ্যমে মুহাদ্দিছীনে কেরাম সেগুলো একত্রিত করেছেন। তাদের হিসেব মতো এর শাখা প্রশাখার সংখ্যা ৭৭।
সহী হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, ঈমানের সমস্ত শাখাগুলো যার মধ্যে পাওয়া যাবে তিনিই পূর্ণ ঈমানদার হবেন। আর যার মধ্যে এক বা একাধিক শাখা থাকবে না, সে পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। তার ঈমান অপূর্ণ রয়ে যাবে।
যার ঈমান আছে –আখেরাতে তিনি হবেন সর্বশ্রেষ্ঠ সফলকাম মানুষ এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মহা দৌলত জান্নাতের অধিকারী। একবিন্দু পরিমাণ ঈমান যদিও কারো থাকে, একদিন না একদিন সে জান্নাতে যাবেই।
বান্দার ওপর সর্ব প্রথম ফরজ হলোো ঈমান আনা। আখেরাতে নাজাত পাওয়ার সর্ব প্রধান এবং সর্বশেষ সম্বল হলোো ঈমান। কাজেই সকলেরই প্রাণপণে চেষ্টা করা দরকার যাতে ঈমানের একটি শাখাও কারো মধ্যে অনুপস্থিত না থাকে; বরং সবগুলো শাখাই তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে।
নিজেকে একজন পূর্ণ ও খাটি মুসলমান হিসেবে গড়ে তুলতে হলোে ঈমানের এসব শাখা সমূহের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আমল থাকতে হবে।
এই পোষ্টটি পড়ে আমরা যা জানলাম: ঈমানের শাখা কি?, ঈমানের শাখা কয়টি? ঈমানের শাখা প্রশাখা কয়টি? ঈমানের শাখা pdf, ঈমানের শাখা কয়টি ও কি কি? ঈমানের সর্বোচ্চ শাখা কি? ঈমানের সর্বনিম্ন শাখা কি? ঈমানের সর্বোচ্চ শাখা কয়টি? ঈমানের মৌলিক শাখা কয়টি? ঈমানের সংখ্যা কয়টি? ঈমানের শাখা সমূহ, ঈমানের শাখা কতটি? ঈমানের সর্বোৎকৃষ্ট শাখা কোনটি? ঈমানের ৭৭ টি শাখা কি কি? ঈমানের অংগ, ঈমানের সবচেয়ে ছোট শাখা কোনটি? ঈমানের ৭৭ টি শাখা বই, ঈমানের ৭৭ টি শাখা, ঈমানের শাখা প্রশাখা।
পোষ্টটি লিখতে নিম্নক্তো বই/লেখকের লিখনী থেকে সাহায্য নেওয়া হয়েছে: আহকামে জিন্দেগী (মাকতাবাতুল আবরার প্রকাশনী) মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন শায়খুল হাদীস, জামেয়া ইসলামিয়া আরার্বিয়া, তাঁতী বাজার, ঢাকা-১১০০ মুহাদ্দিছ, জামিয়া ইসলমিয়া দারুল উূলুম মাদানিয়া, ৩১২, দক্ষীণ যাত্রাবাড়ি, ঢাকা-১২৩৬