Skip to content

 

উট পালন পদ্ধতি বাংলাদেশ

উট পালন পদ্ধতি বাংলাদেশ by khamarian.com blog - খামারিয়ান.কম ব্লগ (3)

উট পালনঃ

▶ উট বা উষ্ট্র কুঁজ-বিশিষ্ট একটি চতুষ্পদ প্রাণী। উট সাধারণত এক লাভজনক পশু হিসাবে গণ্য করা হয়। বিশ্বজুড়ে উট পরিবহণ, দুধ উৎপাদন, মাংস উৎপাদন এবং হুলিংয়ের সামগ্রী হিসাবে ব্যবহৃত হয়। চাষীরা উট পালন করে ব্যাপকভাবে আর্থিক দিক থেকে লাভবান হয়ে থাকেন। আপনার উটগুলিকে আশ্রয় ও বাস করার জন্য এত বেশি জমি দরকার নেই। গবাদি পশুর উটের মতো চারণভূমির জন্য বড় জমি প্রয়োজন হয় না, আপনার খামারের একটি সামান্য অংশই এই কাজ করতে পারে। এবং উট প্রতিপালনে নিতান্তই খরচ অনেক কম হয়ে থাকে ।

▶ উটের পূর্বপুরুষেরা সম্ভবত উত্তর আমেরিকায় আবির্ভূত হয়। পরে একভাগ বেরিং প্রণালি পার হয়ে এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকায় চলে যায়, যাদের উত্তরসূরী হল ড্রোমেডারী ও ব্যাক্ট্রীয়ান উট। মরুভূমিতে বহুযুগ বাস করার ফলে আজ উট মরুভূমির জাহাজ হয়ে সহিঞ্চুতার প্রতীক। অন্য একভাগ চলে যায় দক্ষিণ আমেরিকায় যাদের উত্তরসূরী লামা(llama) ও ভিকুন্যা (Vicugna)। আলপাকা সম্ভবতঃ ভিকুন্যার গৃহপালিত বংশধর। উটের পায়েও গরুর মত চেরা খুর। কিন্তু উটের পায়ের তলায় নরম প্যাড আছে যা গরুর নেই। গরুর মত উটও রোমন্থন করে বা জাবর কাটে। কিন্তু সাধারণ রোমন্থনকারীদের মতো চার কক্ষ-বিশিষ্ট পাকস্থলির বদলে উটের পাকস্থলি তিন কক্ষ-বিশিষ্ট। তাই অনেকে এদের ছদ্ম রোমন্থক বলেন।

▶ ড্রোমেডারী উটের একটা কুঁজ থাকে আর ব্যাকট্রীয়ান উটের থাকে দুটো। যখন উট ভালো করে খেতে পায় তখন এর কুঁজ চর্বিতে ভর্তি হয়ে শক্ত টানটান অবস্থায় থাকে। যখন উট অভুক্ত অবস্থায় অনেকদিন থাকে তখন চর্বির অনেকটাই শক্তি উৎপাদনে ক্ষয় হয়ে যায় আর এর কুঁজ নরম থলথলে হয়ে যায়। মরুভূমিবাসী মানুষরা গরু-ছাগলের বদলে উট পালন করে। উট তাদের মালপত্র বয়, গাড়ি টানে। গৃহপালিত উটের মাংস ও দুধ খাওয়া হয়। ঘোড়ার মত উটের পিঠে দৌড় ও অন্যান্য বিনোদন খুবই উপভোগ্য।

  • ক্যামেল (Camel) নামটি গ্রীক শব্দ ‘ক্যামেলস’ (‘Camelos’), অ্যারাবিক শব্দ ‘জামাল’ (‘Jamal’) অথবা হীব্রু (‘Hebrew) শব্দ ‘গামাল’ (‘Gamal’) থেকে বুৎপত্তি।
  • ব্যাকট্রিয়ান (জোড়া কুঁজ বিশিষ্ট) উট এশিয়ার শিলাময় মরুভূমি এবং বৃক্ষহীন প্রান্তরে যেখানে আবহাওয়া অত্যধিক গরম এবং ঠান্ডা। এসব অঞ্চলে এদের বসবাস।
  • ক্যামেলিডি (‘Camelidae’) গোত্রভুক্ত ছয়টি ক্যামেল-সদৃশ্য পশুর বর্ণনার জন্য ক্যামেল শব্দটি ব্যবহার হয়।
  • জোড়া বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট উট ক্যামেলাস গনভুক্ত (Genus-Camelus) যথা- ড্রমিড্যারি (Dromedary) উট একটি মাত্র কুজবিশিষ্ট এবং ব্যাকট্রিয়ান (Bactrian) উট জোড়া কুঁজ বিশিষ্ট।
  • ড্রমিড্যারি (এক কুঁজ বিশিষ্ট) উটের বসবাস উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্য প্রাচ্যের প্রচন্ড উষ্ণ মরুভূমি অঞ্চল।
  • দু’টি প্রকৃত ক্যামেল এবং চারটি দক্ষিণ অ্যামেরিকার ক্যামেলিডস জন্তু যথা- লামা (Liama), অ্যাল্পাকা (Alpaca), গোয়ানএকা (Guanaco) এবং ভিকিউন্যা (Vicuna)।

উটের উৎপত্তি ও বিস্তৃতিঃ

  • বর্তমান যুগেও আফ্রিকা ও এশিয়ার অনেক অঞ্চলে যেখানে চাকাযুক্ত যানবাহন চলাচল করতে পারেনা সেখানে উট দিয়ে জমি চাষে ও পানির চাকা ঘুরানোর কাজে এবং মানুষের যানবাহন হিসেবে এবং মরুভূমির রাস্তায় মালামাল নেয়ার কাজে ব্যবহার হয়।
  • বিজ্ঞানীগন বিশ্বাস করেন যে, আধুনিক উটের পূর্বপুরুষ কমপক্ষে ৪০ মিলিয়ন বছর পূর্বে উত্তর আমেরিকায় ছিল। উদ্দেশ্যহীন ভ্রমণের মাধ্যমে অ্যালাসকান ল্যান্ড ব্রিজ (‘Land bridge’) পাড়ি দিয়ে উট এশিয়ায় এবং অবশেষে আফ্রিকায় পৌঁছে।
  • হাজার হাজার বছর পূর্বে ফ্যাঙ্কিনসেন্স ট্রেডার্সদের মাধ্যমে উট গৃহপালিত হয় বলে জানা যায়। ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য এসব সম্প্রদায় দক্ষিণস্থ আরব থেকে মধ্য প্রাচ্যের উত্তর অঞ্চল পর্যন্ত দীর্ঘ ও দুস্কর ভ্রমণের জন্য উটকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যবহার করতো। পরে মরুভূমি বাসীদের প্রাথমিক পরিবহনের মাধ্যমে পরিগনিত হয়। অবশেষে উট মরুভূমি বাসীদের পরিবহন, দুধ, মাংস, লোম ও চামড়ার জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় পশুতে পরিণত হয়।
  • বিগত দিনে উৎকৃষ্ট বংশজাত উট দৌড়বাজি পশু হিসেবে অত্যধিক মূল্যবান হয়ে উঠে এবং অতীতের এই আবেগপূর্ণ পশুটি মরুভূমিবাসীদের যোগাযোগের প্রধান অবলম্বন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
  • আধুনিক সভ্যতার সাথে সাথে অধিকাংশ দেশে উটের পরিবর্তে দ্রুত পরিবহনে মোটর যান ব্যবহারের ফলে দিন দিন উটের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।

উটের সংখ্যা ও বিস্তৃতিঃ

  • শেষ দু’দশক সময়ে, শুষ্ক অনুর্বর (arid) এবং অর্ধ-শুষ্ক অঞ্চলে (semi-arid) যন্ত্র চালিত মোটর গাড়ী থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীতে প্রায় ৪০% উটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে (টেবিল)।
  • পৃথিবীর উটের সর্বমোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ রয়েছে সোমালিয়ায় এবং প্রায় ৬০% ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সোমালিয়ায় এবং সুদানের বর্ডার সমূহের ভিতরে।
ক্র.নং.মহাদেশ/অঞ্চল১৯৬১-১৯৬৫ সংখ্যা (%)১৯৮৫ সংখ্যা (%)% বৃদ্ধি/হ্রাস
১।আফ্রিকা৮৪১৩ (৬৮%)১৩২১৮ (৭৬%)+৫৭
২।এশিয়া৩৭৯৩ (৩০%)০৩৯৭১ (২৩%)+০৫
৩।রাশিয়া২৮০ (০২%)২৫০ (%)-১১
৪।পৃথিবী১২৪৮৬ (-)১৭৪৩৯ (-)+৪০
টেবিল : পৃথিবীর উটের সংখ্যা

উটের জাত ও টাইপঃ

  • ব্যাকট্রিয়ান উট অপেক্ষা ড্রমিড্যারি উট আকৃতি বা সাইজ বড়।
  • উট একটি বৃহদাকার স্তন্যপায়ী পশু। আবাস শুষ্ক বা মরু অঞ্চল।
  • প্রধানত দু’টাইপের উট রয়েছে। যথা: এক কুঁজ,বিশিষ্ট উট (আরবের উট-ড্রমিড্যারি) এবং দ্বি-কুঁজ বিশিষ্ট উট (ব্যাকট্রিয়ান উট)।

উটের অ্যানাটমি ও ফিজিওলজিঃ

  • বাদামী, ক্রিম থেকে কালো বর্ণের উট দেখা যায় ।

মুখ (Mouth) :

  • উটের ৩৪টি ধারালো দাঁতযুক্ত বড় মুখ রয়েছে। ফলে উট সহজেই শক্ত কন্টকযুক্ত ঝোপ ঝাড় খেতে পারে।
  • উট খাদ্যকে প্রথমে না চিবিয়ে গোগ্রাসে গিলে এবং পরে অহজমকৃত খাদ্যকে রোমন্থনের মাধ্যমে চর্বন করে হজম করে।
  • প্রয়োজনে ধারালো দাঁত শত্রুর বিরুদ্ধে কামড়ানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

নাক (Nose) :

  • উটের কান কোমল লোম দ্বারা আবৃত। এই লোম কানের ছিদ্রে ধুলাবালি প্রতিরোধের ছাঁকনি হিসেবে ব্যবহার হয় ।

চোখ (Eye) :

  • উটের চোখ বেশ বড় এবং মায়াবী চাহনি।
  • চোখের পাতায় দ্বি-সারি বিশিষ্ট কোঁকড়ানো লোম ধূলোবালি ও প্রখর সূর্যের আলো থেকে চোখকে নিরাপদে রাখে।

পা (Leg) :

  • শক্তিশালী লম্বা ও সরু উটের পা বহুদূর ভারবহন ও পরিবহনের উপযোগী ।
  • একটি উট প্রায় ৪৫০ কেজি ভার বহন করতে সক্ষম।

পদতল (Feet) :

  • যখন উট বালি মাটিতে পা ফেলে তখন প্যাড বিস্তৃত হয় ফলে পা বালিতে দেবে যায় না।
  • উটের পদতল চওড়া ও চেট্টা এবং প্রতিটি পায়ে দু’টি করে খুরবিশিষ্ট লেদারি প্যাড রয়েছে।

লেজ (Tail) :

  • উটের দড়ি সদৃশ ৫০ সেন্টিমিটার বা ১৯ ইঞ্চি লম্বা লেজ থাকে।
  • দৈহিক ওজন (Body weight)
  • প্রাপ্ত বয়স্ক একটি উটের ওজন প্রায় ৭০০ কেজি হয়।

আচরণ (Behaviour) :

  • ছকষ্টসহিষ্ণু, ধৈর্যশীল ও বুদ্দিমান প্রাণী হিসেবে উটের খ্যাতি রয়েছে। তবে একগুয়ে এবং বদমেজাজী স্বাভাবও কখনও কখনও প্রকাশ পায়।

গতি (Speed) :

  • উট স্বাভাবিক গতিতে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার বা তিন মাইল পথ অতিক্রম করতে পারে এবং প্রতিদিন ৪০ কিলোমিটার বা ২৫ মাইল পথ অতিক্রম করতে পারে।
  • দৌড়বাজি উট ঘন্টায় ২০ কিলোমিটার বা ১২ মাইল পথ অতিক্রম করতে পারে।

দৈহিক তাপমাত্রা (Body Temperature) :

  • পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা মানুষের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রার (৩৭° সেন্টিগ্রেড) অধিক হলেই মানুষ ঘামতে আরম্ভ করে কিন্তু উটের দেহে দুর্লভভাবে উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা রয়েছে।
  • দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৬° সেন্ট্রিগ্রেড তাপমাত্রা পর্যন্ত উট সহ্য করতে সক্ষম। উট যেমন দেহে ফ্লুইড সংরক্ষণ করতে পারে তেমনি দেহ থেকে অনাবশ্যক পানিনাশ পরিহার করে। উটের ন্যায় অন্য কোন স্তন্যপায়ী পশুদেহে এরূপ ব্যবস্থা নেই।
  • উট হাপিয়ে যায়না এবং খুব কমই ঘামে।

জীবনকাল (Lifespan / Lifetime) :

  • জন্মগ্রহনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উটের বাচ্চা হাঁটতে সক্ষম। বাচ্চা পূর্ণবয়স্ক (প্রায় ৫ বছর বয়সে) হওয়া পর্যন্ত মায়ের নিকটেই থাকে।
  • স্বাভাবিক অবস্থায় উটের জীবনকাল ৪০ বছর। তবে কর্মে ব্যবহৃত উট ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকে।
  • উটের গর্ভাবস্থাকাল ১৩ মাস, সাধারণত ১টি এবং কখনও কখনও জমজ বাচ্চা হয়।
উট পালন পদ্ধতি বাংলাদেশ by khamarian.com blog খামারিয়ান.কম ব্লগ 4 উট পালন পদ্ধতি বাংলাদেশ কৃষি উট পালন উট পালন ⭐⭐⭐⭐⭐ উট পালন পদ্ধতি বাংলাদেশঃ I. উট পালনঃ II. উটের উৎপত্তি ও বিস্তৃতিঃ III. উটের সংখ্যা ও বিস্তৃতিঃ IV. উটের জাত ও টাইপঃ V. উটের অ্যানাটমি ও ফিজিওলজিঃ VI. উটের খাদ্য ও খাদ্য খাওয়ানোঃ VII. উটের পানিঃ VIII. পুরুষ উটের সংজননঃ IX. স্ত্রী উটের সংজননঃ X. উটের ব্যবহার ও উৎপাদনঃ XI. উট পালনের সুবিধাঃ XII. উট খামারঃ XIII. উটের পরিচর্যা

উটের খাদ্য ও খাদ্য খাওয়ানোঃ

  • ওটস ও শস্য উটের খাদ্যের জন্য অনেক বেশি সমৃদ্ধ, কারণ উটগুলি বেশিরভাগ মরুভূমিতে থাকে। আর এই শস্য জাতীয় খাবারগুলিতে পুষ্টির পরিমান বেশি থাকে।
  • আলফালফা, যা তারা পছন্দ করে এগুলিও অনেক বেশি সমৃদ্ধ । তবে ছোট ছোট আগাছাগুলোও খাবার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। শুকনো ঘাসও খাবার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • যদি উটের ক্ষেতে ঘাস এবং গুল্ম থাকে তবে উটের জন্য প্রধান খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি নিয়মিত খাওয়ানো যেতে পারে।
  • আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে, যে উটের খাদ্যে লবন আছে পর্যাপ্ত। উটের খাদ্যে সোডিয়ামের উপস্থিতি খুব বেশি প্রয়োজন। তারা চিবিয়ে নিতে পারে এমন লবণের কিছু অংশ তাদের খাবার হিসাবে দেওয়া যেতে পারে।
  • প্রতিদিন তাদের টাটকা, পরিষ্কার জল দিন। জল পরিষ্কার না হলে উট পান করতে পারে না। প্রতিদিন জলের পাত্র পরিষ্কার করা উচিত। এবং খেয়াল রাখতে হবে, উট জল পান করার সময় যে পরিষ্কার জলই পান করে, কোনোরকম নোংরা না থাকে।
  • প্রতিদিনের খাবারে উট যাতে পর্যাপ্ত ভিটামিন পায় সেদিকেও নিশ্চিত হতে হবে। গাজর, আপেল খাওয়ানো যেতে পারে।
  • প্রয়োজনে উটকে গো-মহিষাদির শুষ্ক ও দানাদার খাদ্য দিয়ে পালন করা যায়।
  • উটের দেহের প্রয়োজনীয় সব খনিজ পদার্থ (লবণ ছাড়া) ও ভিটামিন স্বাভাবিক খাদ্য থেকেই ব্যবস্থা হয়। অবশ্য প্রত্যহ কর্মে ব্যবহৃত ও দুধ উৎপাদনকারী উটকে ১৪২ গ্রাম করে সাধারণ লবণ খাওয়াতে হবে।
  • অল্প খাদ্য অথবা খাদ্য ও পানি ছাড়া উট ৫ থেকে ৭ দিন চলতে পারে। তবে দুর্বলতা বা ক্ষতি ছাড়া এক-চতুর্থাংশ দৈহিক ওজন হ্রাস পায়।
  • উট চরে (Grazing) খাওয়া অপেক্ষা নিচু বা ঝোপ-ঝাড়ে গাছপালা খাওয়া (Browse) অধিকতর পছন্দ করে। তবে দিনের প্রখর রৌদ্রের সময় উট গাছপালা খেতে যায় না।

উটের পানিঃ

  • পানি পানের ব্যবধান যদি দীর্ঘসময় হয় তবে একটি উট একবার (১০ মিনিটের মধ্যে) প্রায় ১০০ লিটার (২১ গ্যালন) পানি পান করতে পারে। উল্লেখ্য, এই পরিমাণ পানি অন্য যে কোন স্থন্যপায়ী প্রাণী পান করলে মারা যাবে কিন্তু এক মাত্র উটের দেহের মেট্যাবলিজম প্রক্রিয়ায় ভিন্নতর হওয়ায় উট তার রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সঞ্চয় করে রাখতে পারে।
  • যদি স্বাভাবিক খাদ্য আর্দ্রতাযুক্ত হয় তকে উট খুব অল্পই পানি পান করে।
  • যদিও উটকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পানি-বিহীন অবস্থায় ব্যবহার করা যায় তবে সাধ্য অনুযায়ী পানি খাওয়ানো প্রয়োজন।

পুরুষ উটের সংজননঃ

  • পুরুষ উটের যৌন ক্ষমতা বা শক্তি ১৮ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে।
  • পুরুষ উটকে সুষম খাদ্য সরবরাহ করলে এক ঋতুতে ৫০ থেকে ৭০টি স্ত্রী প্রজনন করা যেতে পারে। পুরুষ উট তিন বছর বয়সে প্রজননে ব্যবহার করা যায়। যদিও ৫ থেকে ৬ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত তাদের পরিপূর্ণ প্রজননের ক্ষমতা হয়না

স্ত্রী উটের সংজননঃ

▶ স্ত্রী উটের জরায়ু ‘T’ আকৃতির কিন্তু অন্যান্য পশুর (Y) আকৃতির এবং ডান অপেক্ষা বাম পার্শ্বের জরায়ু হর্ন অপেক্ষাকৃত বড়। তাই সাধারণত উটের বাম হর্নে গর্ভধারণ করে। ড্রমিড্যারি উটের গর্ভাবস্থাকাল ৩৩০ থেকে ৪০০ দিন এবং ব্যাকট্রিন উটে গর্ভাবস্থাকাল ৩৮০ থেকে ৪২০ দিন।

▶ মূলত যৌন মিলনের উত্তেজনা হাইপোথ্যালামাস থেকে গোনাডোট্রফিন সৃষ্টি করে যা ডিম্বক্ষরণের জন্য প্রয়োজন। তাই উটের ডিম্বাশয় পরিপক্ক ফলিকুল হলে নিম্নোক্ত বাহ্যিক লক্ষণ প্রকাশ পায়।

  1. গরম হওয়া উট পুরুষ উটের সাহচর্য খুঁজে এবং পার্শ্বে দাঁড়িয়ে থাকে ।
  2. অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয়।
  3. যোনিমুখ কিছুটা স্ফীত থাকে এবং কিছু মিউকাস নির্গত হয়।
  4. অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় পুরুষ উট স্ত্রী উটের যোনিমুখের গন্ধ শুকেনা। বরং ঘাড় বরাবর গন্ধ শুকে স্ত্রী উটের গরম হওয়া নির্ধারণ করে।
  5. লেজ এদিক-ওদিক নাড়ায় এবং যৌন মিলনের জন্য প্রস্তুত থাকে।
  • সাধারণত দু’বছরে উট একবার একটি বাচ্চা দেয়।
  • স্ত্রী উটের যৌন পরিপক্কতা আসে তিন বছর বয়সে কিন্তু তাদের চার বছর বয়সের পূর্বে প্রজনন করা হয়না। তবে প্রায় ২০ বছর বয়স পর্যন্ত উট বাচ্চা উৎপাদন করতে পারে।
  • ব্যাকট্রিন উটের ডিম্বক্ষরণ (Ovulation) সংগমের মাধ্যমে ঘটে অর্থাৎ স্বতঃস্ফুর্তভাবে হয়না। যদি উটকে পাল দেয়া না হয় তবে ডিম্বক্ষরণ হয়না এবং ফলিকুল ২ থেকে ১২ দিনের মধ্যে দেহে শোষিত হয়ে যায়।
উট পালন পদ্ধতি বাংলাদেশ by khamarian.com blog খামারিয়ান.কম ব্লগ উট পালন পদ্ধতি বাংলাদেশ কৃষি উট পালন উট পালন ⭐⭐⭐⭐⭐ উট পালন পদ্ধতি বাংলাদেশঃ I. উট পালনঃ II. উটের উৎপত্তি ও বিস্তৃতিঃ III. উটের সংখ্যা ও বিস্তৃতিঃ IV. উটের জাত ও টাইপঃ V. উটের অ্যানাটমি ও ফিজিওলজিঃ VI. উটের খাদ্য ও খাদ্য খাওয়ানোঃ VII. উটের পানিঃ VIII. পুরুষ উটের সংজননঃ IX. স্ত্রী উটের সংজননঃ X. উটের ব্যবহার ও উৎপাদনঃ XI. উট পালনের সুবিধাঃ XII. উট খামারঃ XIII. উটের পরিচর্যা

উটের ব্যবহার ও উৎপাদনঃ

১। উট পালের বৃদ্ধি

  • ট্রপিক্যাল আফ্রিকায় উটের পালের বৃদ্ধির হার ২% এর অধিক কিন্তু অন্যান্য স্থানে কম। বার্ষিক বৃদ্ধির হার ১.৪% একক উটের বৃদ্ধি (Individual growth)

২। একক উটের বৃদ্ধি

  • প্রাপ্ত বয়স্ক অধিকাংশ উটের ওজন ৪৫০ থেকে ৫৫০ কেজি হয়। তবে ভারতীয় ভারী জাতের উটের ওজন ৬৬০ কেজি পর্যন্ত হয়।
  • ড্রমিড্যারি উটের বাচ্চার জন্ম ওজন ৩০ কেজি কিন্তু ব্যাকট্রিন উটের নবজাত বাচ্চার কিছুটা ওজন বেশি হয়।
  • সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনায় উটের বাচ্চার ওজন প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম করে বৃদ্ধি পায়।

৩। মাংস (Meat )

  • ড্রমিড্যারি উটের জবাইকৃত দেহ থেকে ৫০ থেকে ৫৫% মাংস (Dressing precentage) এবং ব্যাকট্রিন উট থেকে ৫৬ থেকে ৭০% মাংস পাওয়া যায়। সম্পূর্ণ মাংসের ২ থেকে ৫% কুঁজে চর্বি থাকে।
  • উটের মাংসে ফাইবার বেশি এবং শক্ত। গুণগত মানে গরুর মাংসের ন্যায় হলেও স্বাদে গরুর মাংসের মত নয়।
  • মাংস উৎপাদনের জন্য উটের কোন সুনির্দিষ্ট জাত নেই। উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মাংসের জন্য উট জবাই করা হয়।
  • বলিষ্ঠ পুরুষ উট থেকে উৎকৃষ্টমানের মাংস হয়।
  • আরববাসীর খাদ্য তালিকায় উটের মাংস একটি ঐতিহ্যবাহী খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া পৃথিবীর শুষ্ক
  • অনুর্বল যেকোন অঞ্চলে ছাগল, মেষ, গরু, মহিষ পালনের উপযোগী নয় সেসব অঞ্চলে উটের মাংস জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

৪। দুধ উৎপাদন (Milk production)

  • ব্যাকট্রিন উটের দুধে ৫.৮ থেকে ৬.৬% বাটার ফ্যাট থাকে যা ড্রমিড্যারি উট অপেক্ষা অধিক ।
  • উটের দুধ সাদা এবং দুধে খুবই অল্প বা কোন ক্যারোটিন থাকে না। সৌদি আরবে দুধ উৎপাদনের জন্য উটের ডেয়রি পাল রয়েছে।
  • ড্রমিড্যারি উটের দুধে ৩.৮% চর্বি, ৩.৫% প্রোটিন এবং ৩.৯% ল্যাকটোস থাকে।
  • গরুর দুধ অপেক্ষা উটের দুধ অধিক পুষ্টিকর। উটের দুধে গরুর দুধ অপেক্ষা চর্বি ও ল্যাকটোস কম থাকে কিন্তু পটাসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন সি অধিক থাকে। ব্যাকট্রিন উট এক বিয়ানে (৬ থেকে ৮ মাস) ৫০০০ কেজি পর্যন্ত দুধ দেয়।
  • ড্রমিড্যারি উট এক বিয়ানে (১৮ মাস) ৮০০ থেকে ৩৬০০ কেজি দুধ দেয়।
  • ভারতীয় উপমহাদেশে মরুভূমি অঞ্চলে ৯ মাস দুগ্ধদান কালে উটের ১১৩৪ থেকে ১৫৮৮ কেজি দুধ উৎপাদনের তথ্য রয়েছে।

৫। চামড়া ও পশম (Hides and Hair)

  • উটের লোমের গুণগত মান বয়স, লিঙ্গ এবং টাইপের উপর নির্ভরশীল। জোয়ান বা তরুণ ব্যাকট্রিন উট থেকে উন্নতমানের চিকন লোক উৎপাদন হয় এবং লোমের গুণগত মান বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হ্রাস পায়।
  • বিশ্বব্যাপী উটের লোম উচ্চমানের কোট, পোষাক-পরিচ্ছদ এবং শিল্পীদের ব্যবহারযোগ্য ব্রাশ, এমনকি বেদুইন ঐতিহ্যবাহী কম্বল ও তাবু (পটাবাস) তৈরিতে ব্যবহার হয়।
  • উটের চামড়ার বাণিজ্যিক মূল্য তেমন উচ্চ নয়।
  • সকল উটের দেহের লোম বসন্ত ঋতুতে খসে পড়ে (Moulting) এবং শরৎকালে নতুন লোম গজায়।
  • ড্রমিড্যারি উট থেকে বছরে ১.০ হতে ১.৫ কেজি লোম উৎপাদন হয়। কিন্তু ব্যাকট্রিন উট থেকে বছরে প্রায় ৪.৫ কেজি লোম উৎপাদন হয়।

৬। পরিশ্রম (Work)

  • দু’জন মানুষ একটি উটে চড়ে যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু সাধারণত একজন মানুষ ৫৫ কেজি পর্যন্ত তার মালামালসহ উটে চড়ে যাতায়াত করে।
  • একজন মানুষ এবং তার ৫৫ কেজি মালামালসহ ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার পথ চলতে পারে এবং প্রতিদিন গড়ে ৪৮ কিলোমিটার পর্যন্ত অতিক্রম করতে পারে। একটি উট ১৬০ থেকে ৩০০ কেজি ওজনের মালামাল বহন করতে পারে।
  • যান্ত্রিক যানবাহন ব্যবহারের কারণে মানুষ ও মালামাল পরিবহনে উটের ব্যবহার হ্রাস পেলেও এখনও অনেক দেশে এ কাজে উট ব্যবহার হয়।

উট পালনের সুবিধাঃ

  • তাদের মূত্র বেশ কয়েকটি রোগ নিরাময়ের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে কাজ করে। তাদের প্রস্রাবে একটি ভাল ব্যাকটেরিয়া সামগ্রী, লবণ যুক্ত ইউরিয়া থাকার কারণ। উটগুলির যেহেতু ভাল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে তারা ভাইরাস, ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়াগুলি সহজেই ধ্বংস করতে পারে।
  • ঘোড়া পালনের থেকে উট প্রতিপালন অনেক লাভজনক। কারণ এদের জন্য খরচ অনেক কম হয় এবং এরা অনেক দূর ভারী বোঝা বহন করে নিয়ে যেতে পারে।
  • উটের মাংসে পুষ্টির পরিমাণ বেশি এবং সারা বিশ্বে এটি বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। অন্যান্য মাংসের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় এটিতে ফ্যাট এবং প্রোটিনের পরিমাণও কম থাকে।
উট পালন পদ্ধতি বাংলাদেশ by khamarian.com blog খামারিয়ান.কম ব্লগ 2 উট পালন পদ্ধতি বাংলাদেশ কৃষি উট পালন উট পালন ⭐⭐⭐⭐⭐ উট পালন পদ্ধতি বাংলাদেশঃ I. উট পালনঃ II. উটের উৎপত্তি ও বিস্তৃতিঃ III. উটের সংখ্যা ও বিস্তৃতিঃ IV. উটের জাত ও টাইপঃ V. উটের অ্যানাটমি ও ফিজিওলজিঃ VI. উটের খাদ্য ও খাদ্য খাওয়ানোঃ VII. উটের পানিঃ VIII. পুরুষ উটের সংজননঃ IX. স্ত্রী উটের সংজননঃ X. উটের ব্যবহার ও উৎপাদনঃ XI. উট পালনের সুবিধাঃ XII. উট খামারঃ XIII. উটের পরিচর্যা

উট খামারঃ

  • উট খামার কিনতেও পারেন এবং বানাতেও পারেন। কোনো ছোট্ট খামার না, বড় খামার বানাতে হবে যেখানে তারা চলতে পারে, ঘুমাতে পারে প্রয়োজনে ঘোড়া ঘুড়ি করতে পারে।
  • উটের চলাফেরা করার জন্য খোলা বিস্তৃত জায়গার প্রয়োজন। ঘাসযুক্ত জায়গা থাকলে তা খুবই ভালো।
  • আপনি আপনার প্রাণীর জন্য যত বেশি ঘর তৈরি করতে পারবেন তত ভাল। সাধারণত, কমপক্ষে দেড়-একর পরিমাণ পর্যাপ্ত হওয়া উচিত। তবে আপনার যদি একাধিক উট থাকে তবে আপনার আরও বেশি ঘর প্রয়োজন যাতে তারা একে অপরের সাথে সমস্যায় না পড়ে।

উটের পরিচর্যা

  • উট খুবই পরিষ্কার প্রাণী, তাই তাদের প্রত্যহ পরিষ্কার রাখা উচিত।
  • উটের পশম আঁচড়ান এবং ব্রাশ করুন এবং তাদের থাকার জায়গাগুলি যথাসম্ভব পরিষ্কার রাখুন।
  • তাদের নখগুলি বড় হলে কেটে পরিষ্কার করতে হবে। নখ বড় থাকলে তাদের হাঁটা-চলা করতে অসুবিধা হয়।
  • সময়মতো টিকাকরণ করতে হবে এবং মুখ দাঁত পরিষ্কার করতে হবে।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!