আলোচ্য বিষয়: উদ্ভিদের প্রজনন অঙ্গ কোনটি, কী, কি, কাকে বলে, পরাগায়ন, উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধি, উদ্ভিদের প্রজনন বিভাগ।
আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
উদ্ভিদের প্রজনন অঙ্গ: ফুলঃ
প্রজননের জন্য রূপান্তরিত বিশেষ ধরনের বিটপ (Shoot) হলো ফুল। ফুল উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদের প্রজনন অঙ্গ। আমরা জানি যে একটি আদর্শ ফুলের পাঁচটি স্তবকের মধ্যে দুটি স্তবক (পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক) প্রজননের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এরা সরাসরি প্রজননে অংশ নেয়, অন্য স্তবকগুলো সরাসরি অংশ না নিলেও প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করে। যে ফুলে এই পাঁচটি স্তবকই উপস্থিত থাকে তাকে সম্পূর্ণ ফুল বলে। যেমন জবা, ধুতুরা। এর যেকোনো একটি স্তবক না থাকলে সে ফুলকে অসম্পূর্ণ ফুল বলে। যেমন- লাউ, কুমড়া। বৃন্তযুক্ত ফুলকে সবৃন্তক যেমন-জবা, কুমড়া এবং বৃত্তহীন ফুলকে অবৃন্তক ফুল বলে যেমন— হাতীশুঁড়। যখন কোনো ফুলে পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক দুটোই উপস্থিত থাকে, তাকে উভলিঙ্গ ফুল (Bisexual flower) যেমন- জবা, ধুতুরা। পুংস্তবক বা স্ত্রীস্তবকের যেকোনো একটি অনুপস্থিত থাকলে তাকে একলিঙ্গ ফুল (Unisexual flower) যেমন লাউ, কুমড়া এবং দুটোই অনুপস্থিত থাকলে ক্লীব ফুল (Neuter flower) বলে।
ফুলের বিভিন্ন অংশঃ
(a) পুষ্পাক্ষ (Thalmus):
পুষ্পাক্ষ সাধারণত গোলাকার এবং ফুলের বৃন্তশীর্ষে অবস্থান করে। এর উপর বাকি চারটি স্তবক পরপর সাজানো থাকে।
(b) বৃত্তি (Calyx):
ফুলের বাইরের স্তবককে বৃত্তি বলে। বৃতি খণ্ডিত না হলে সেটি যুক্তবৃতি, কিন্তু যখন এটি সম্পূর্ণরূপে খণ্ডিত হয়, তখন তাকে বিযুক্তবৃতি বলে। এর প্রতিটি খণ্ডকে বৃত্যাংশ বলে। সবুজ বৃতি খাদ্য প্রস্তুত কাজে অংশ নেয়। এদের প্রধান কাজ ফুলের ভিতরের অংশগুলোকে রোদ, বৃষ্টি এবং পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। তবে যখন বৃতি রং-বেরঙের হয়, তখন তারা পরাগায়নে সাহায্য করে অর্থাৎ পরাগায়নের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এমন পোকামাকড়, পশু, পাখি ইত্যাদিকে আকর্ষণ করে।
(c) দলমণ্ডল (Corolla):
এটি বাইরের দিক থেকে দ্বিতীয় স্তবক। প্রতিটি খণ্ডকে দল বা পাপড়ি বলে। পাপড়িগুলি যুক্ত থাকলে যুক্তদল এবং আলাদা থাকলে বিযুক্তদল বলা হয়। পাপড়ি সাধারণত রঙিন হয়। এরা ফুলের অত্যাবশ্যকীয় অংশগুলোকে রোদ, বৃষ্টি থেকে রক্ষা করে। উজ্জ্বল ঝলমলে রঙের দলমণ্ডল পোকামাকড় ও পশুপাখি আকর্ষণ করে এবং পরাগায়নে সহায়তা করে। অনেক সময় ফুলের পাপড়ি কোনো কোনো পোকামাকড়কে বসে মধু খেতে সাহায্য করে। এসব কার্যক্রম চলাকালীন পরাগায়নের কাজটি হতে থাকে।

চিত্রঃ একটি ফুলের বিভিন্ন অংশ (লম্বচ্ছেদ)।
(d) পুংস্তবক (Androecium):
এটি ফুলের তৃতীয় স্তবক এবং একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ। এই স্তবকের প্রতিটি অংশকে পুংকেশর (stamen) বলে। একটি পুংস্তবকে এক বা একাধিক পুংকেশর থাকতে পারে। প্রতিটি পুংকেশরের দুইটি অংশ যথা- পুংদণ্ড বা পরাগদণ্ড (filament) এবং পরাগধানী বা পরাপথলি (anther)।
পুংকেশরের দণ্ডের মতো অংশকে পুংদণ্ড এবং শীর্ষের থলির মতো অংশকে পরাগধানী খলি বলে। পরাগধানী এবং পুংদণ্ড সংযোগকারী অংশকে যোজনী বলে। পরাগধানীর মধ্যে পরাগ উৎপন্ন হয়। এই পরাগরেণু অঙ্কুরিত হয়ে পরাপনালি (Pollen tube) গঠন করে। এই পরাগ নালিকায় গুঞ্জননকোষ (Male gamete) উৎপন্ন হয়। পুংজননকোষ সরাসরি জনন কাজে অংশগ্রহণ করে। কখনো পুংকের পুংদণ্ডগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হতে পারে। আবার পরাপথলিগুলোও কখনো পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে।
পরাগদণ্ড এক গুচ্ছে থাকলে তাকে একগুচ্ছ (Monadelphous), (যেমন: জবা), দুই গুচ্ছে থাকলে দ্বিগুচ্ছ (Dladelphous), (যেমন: মটর) এবং বহুগুচ্ছে থাকলে তাকে বহুগুচ্ছ (Polyadelphous) পুংস্তবক বলা হয়, (যেমন: শিমুল)। যখন পরাগধানী একপুচ্ছে থাকে, তখন তাকে যুক্তধানী বা সিনজেনেসিয়াস (Syngenesious), মুক্ত অবস্থায় এবং পুংকেশর দলমণ্ডলের সাথে যুক্ত থাকলে তাকে দললগ্ন (Eplpetalous) পুংস্তবক বলে (যেমন: ধুতুরা)।

চিত্রঃ পুংকেশরের বিভিন্ন প্রকার সজ্জা (ক) একগুচ্ছ, (খ) গুচ্ছ, (গ) বহুগুচ্ছ, (ঘ) যুক্তধানী এবং (ঙ) দললগ্ন
(e) খ্ৰীম্ভব (Gynoecium):
স্ত্রীক বা পর্ভকেশরের অবস্থান ফুলটির কেন্দ্রে। এটি ফুলের আর একটি অত্যাবশ্যকীয় স্তবক। দ্বীতবক এক বা একাধিক গর্ভপত্র (Carpel) নিয়ে গঠিত হতে পারে। একটি গর্ভপত্রের তিনটি অংশ, যথা: পর্ভাশয় (Ovary), গর্ভদণ্ড (Style) এবং গর্ভমুণ্ড (stigma)।
যখন কতগুলো গর্ভপত্র নিয়ে একটি গ্রীস্তবক গঠিত হয় এবং এরা সম্পূর্ণভাবে পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে, তখন তাকে যুক্তগর্ভপত্রী (Syncarpous), আর আলাদা থাকলে বিযুক্তপতপত্রী (Polycarpous) বলে। গর্ভাশয়ের ভিতরে এক বা একাধিক ডিম্বক বিশেষ নিয়মে সজ্জিত থাকে। এসব ডিম্বকের মধ্যে স্ত্রীপ্রজননকোষ বা ডিম্বাণু সৃষ্টি হয়। এই ডিম্বাণুই গুবকের মতো সরাসরি জননকাজে অংশগ্রহণ করে।
পুষ্পমঞ্জরিঃ (Inflorescence)
অনেক গাছের ছোট একটি শাখায় ফুলগুলো বিশেষ একটি নিয়মে সাজানো থাকে, ফুলসহ এই শাখাকে পুষ্পমঞ্জরি বলে। যে শাখায় ফুলগুলো সজ্জিত থাকে, তাকে মঞ্জরিদণ্ড বলে। এ শাখার বৃদ্ধি অসীম হলে অনিয়ত (recemose) পুষ্পমঞ্জরি এবং পুষ্প উৎপাদনের ফলে বৃদ্ধি থেমে গেলে তাকে নিয়ত (cymose) পুষ্পমঞ্জরি বলে। পরাগায়নের জন্য পুষ্পমঞ্জরির গুরুত্ব অনেক বেশি।

চিত্ৰঃ (ক) অনিরড পুষ্পমঞ্জরি, (খ) নিয়ত পুষ্পমঞ্জরি
প্রজননের প্রধান দুটি যাপ হচ্ছে যথাক্রমে পরাগায়ন ও নিষেক। নিচে এ দুটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
পরাগায়নঃ (pollination)
পরাপায়নকে পরাগ সংযোগও বলা হয়। পরাগায়ন ফুল এবং বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়ার পূর্বশর্ত। ফুলের পরাগধানী থেকে পরাগরেণুর একই ফুলে অথবা একই জাতের অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়াকে পরাগায়ন বলে।
পরাগায়ন দুধরনের, স্ব-পরাগায়ন এবং পর-পরাগায়ন।
(a) স্ব-পরাগায়ন:
একই ফুলে বা একই গাছের ভিন্ন দুটি ফুলের মধ্যে যখন পরাগায়ন ঘটে, তখন তাকে স্ব-পরাগায়ন বলে। সরিষা, ধুতুরা ইত্যাদি উদ্ভিদে স্ব-পরাগায়ন ঘটে থাকে। স্ব-পরাপায়নের ফলে পরাগরেণুর অপচর কম হয়, পরাগায়নের জন্য বাহকের উপর নির্ভর করতে হয় না এবং পরাগায়ন নিশ্চিত হয়। এর ফলে নতুন যে উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়, তাতে বৈশিষ্ট্যেরও কোনো পরিবর্তন আসে না এবং কোনো একটি প্রজাতির চরিত্রগত বিলুণ্নতা বজায় থাকে। তবে এতে জিনগত বৈচিত্র্য কম থাকে। এই বীজের থেকে জন্ম নেওয়া নতুন গাছের অভিযোজন ক্ষমতা কমে যায় এবং অচিরেই প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে।
(b) পর-পরাগায়ন:
একই প্রজাতির দুটি ভিন্ন উদ্ভিদের ফুলের মধ্যে যখন পরাগ সংযোগ ঘটে, তখন তাকে পর-পরাগায়ন বলে। শিমুল, পেঁপে ইত্যাদি গাছের ফুলে পর-পরাগায়ন হতে দেখা যায়।

চিত্রঃ স্ব-পরাগায়ন ও পর-পরাগায়ন
পর-পরাগায়নের ফলে নতুন চরিত্রের সৃষ্টি হয়, বীজের অংকুরোদগমের হার বৃদ্ধি পায়, বীজ অধিক জীবনীশক্তিসম্পন্ন হয় এবং নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়। দুটি ভিন্ন গুণসম্পন্ন গাছের মধ্যে পরাগায়ন ঘটে, তাই এর ফলে যে বীজ উৎপন্ন হয় তা নতুন গুণসম্পন্ন হয় এবং বীচ্ছ থেকে যে গাছ জন্মায় তাও নতুন গুণসম্পন্ন হয়। এ কারণে এসব গাছে নতুন বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়। তবে এটি বাহকনির্ভর প্রক্রিয়া হওয়ায় পরাগায়নের নিশ্চয়তা থাকে না, এতে প্রচুর পরাগরেণুর অপচয় ঘটে। ফলে প্রজাতির বিশুদ্ধতা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পরাগায়নের মাধ্যমঃ
পরাগ স্থানান্তরের কাজটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো না কোনো মাধ্যমের দ্বারা হয়ে থাকে। যে মাধ্যম পরাগ বহন করে গর্ভমুণ্ড পর্যন্ত নিয়ে যায়, তাকে পরাগায়নের মাধ্যম বলে। বায়ু, পানি, কীট-পতঙ্গ, পাখি, বাদুড়, শামুক এমনকি মানুষ এ ধরনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে। মধু খেতে অথবা সুন্দর রঙের আকর্ষণে পতঙ্গ বা প্রাণী ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায়। এ সময়ে ঐ ফুলের পরাগরেণু বাহকের গায়ে লেগে যায়। এই বাহকটি যখন অন্য ফুলে গিয়ে বসে তখন পরাগ পরবর্তী ফুলের গর্ভমুণ্ডে লেগে যায়। এভাবে পরাগায়ন ঘটে। পরাগায়নের মাধ্যমগুলোর সাহায্য পেতে ফুলের পঠনে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।

চিত্রঃ পতঙ্গপরাগী ফুল
পতঙ্গ পরাগী ফুল বড়, রঙিন ও মধুগ্রন্থিযুক্ত এবং পরাগরেণু ও পর্ভমুণ্ড আঠালো ও সুগন্ধযুক্ত হয়, যেমন: জবা, কুমড়া, সরিষা ইত্যাদি।
বায়ুপরাগী ফুল হালকা এবং মধুপ্রন্থিহীন। এসব ফুলে সুগন্ধ নেই। এরা সহজেই বাতাসে ভেসে যেতে পারে। এসের পর্ভমুণ্ড আঠালো এবং শাখান্বিত, কখনো পালকের মতো। ফলে বাতাস থেকে পরাগরেণু সহজেই সংগ্রহ করে নিতে পারে, যেমন: ধান। পানিপরাগী ফুল আকারে ক্ষুদ্র এবং হালকা। এরা সহজেই পানিতে ভাসতে পারে। এসব ফুলে সুগদ্ধ নেই। স্ত্রীপুষ্পের বৃত্ত লম্বা কিন্তু পুংপুষ্পের বৃষ্ণ ছোট। পরিণত পুংপুষ্প বৃত্ত থেকে খুলে পানিতে ভাসতে থাকে এবং স্ত্রী পুষ্পের কাছে পৌঁছালে সেখানেই পরাগায়ন ঘটে, যেমন: পাতাশেওলা।

চিত্রঃ প্রাণীপরাগী ফুল।
প্রাণীপরাগী ফুল মোটামুটি বড় ধরনের হয়, তবে ছোট হলে ফুলগুলো পুষ্পমঞ্জরিতে সাজানো থাকে। এদের রং আকর্ষণীয় হয়। এসব ফুলে গন্ধ থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে, যেমন: কদম, শিমুল, কচু ইতাদি।
পুং-গ্যামেটোকাইটের উৎপত্তিঃ (Microsporogenesis)
পরাগরেণু পুং-গ্যামেটোফাইটের প্রথম কোষ। পরাগ মাতৃকোষটি (2n) মিয়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে চারটি অপত্য পরাগ কোষ (n) সৃষ্টি করে। পূর্ণতাপ্রাপ্তির পরপর পরাপথলিতে থাকা অবস্থায়ই পরাগরেণুর অঙ্কুরোদগম শুরু হয়। পরাগরেণুর নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রিকাটি মাইটোটিক পদ্মতিতে বিভাজিত হয়। এ বিভাজনে একটি বড় কোষ এবং একটি ক্ষুদ্র কোষ সৃষ্টি হয়। বড়কোষটিকে নালিকোষ (Tube cell) এবং ছোট কোষটিকে জেনারেটিভ কোষ (Generative Cell) বলে।
নালিকোষ বড় হয়ে পরাপনালি (Polen tube) এবং জেনারেটিভ কোষটি বিভাজিত হয়ে দুটি পুংজনন কোষ (Male gametes) উৎপন্ন করে। জেনারেটিভ কোষের এ বিভাজন পরাগরেণুতে অথবা পরাণনালিতে সংঘটিত হতে পারে।

চিত্ৰঃ পুং-গ্যামেটোফাইট উৎপত্তির বিভিন্ন যাপ
স্ত্রী-গ্যামেটোফাইটের উৎপত্তিঃ (Megasporogenesis)
ভ্ৰূণপোষক কলায় (Nucellus tissue) ডিম্বকরন্থের কাছাকাছি একটি কোষ আকারে সামান্য বড় হয়। এর প্রোটোপ্লাজম ঘন এবং নিউক্লিয়াসটি তুলনামূলকভাবে বড়। এ কোষটি বিয়োজন বিভাজনের (Melosis) মাধ্যমে চারটি হ্যাপ্লয়েড (n) কোষ সৃষ্টি করে।
সর্বনিম্ন কোষটি ছাড়া বাকি তিনটি কোষ বিনষ্ট হয়ে যায়। সর্বনিম্ন এই বড় কোষটি বৃদ্ধি পেয়ে ক্রমশ পথলিতে পরিণত হয়। এ কোষটির নিউক্লিয়াস হ্যাপ্লয়েড (n)। এই নিউক্লিয়াসটি বিভক্ত হয়ে দুটি নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। এ নিউক্লিয়াস দুটি ভ্রুণখলির দুই মেরুতে অবস্থান নেয়। এবার এ দুটি নিউক্লিয়াসের প্রতিটি পরপর দুবার বিভক্ত হয়ে চারটি করে নিউক্লিয়াস সৃষ্টি করে।

চিত্রঃ স্ত্রী-প্যামেটোফাইট উৎপত্তির বিভিন্ন ধাপ
এর পরবর্তী ধাপে দুই মেরু থেকে একটি করে নিউক্লিয়াস ট্রুপথলির কেন্দ্রস্থলে এসে পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে ডিপ্লয়েড (2n) গৌণ নিউক্লিয়াস (Secondary nucleus) সৃষ্টি করে। দুই মেরুর নিউক্লিয়াসগুলো সামান্য সাইটোপ্লাজম সহকারে কোষের সৃষ্টি করে। ডিম্বকরন্দ্রের দিকের কোষ তিনটিকে পর্ভযন্ত্র (Egg apparatus) বলে। এর মাঝের কোষটি বড়। একে ডিম্বাণু (Egg) এবং অন্য কোষকে সহকারী কোষ (Synergids) বলা হয়। পভষন্ত্রের বিপরীত দিকের কোষ তিনটিকে প্রতিপাদ কোষ (Antipodal cells) বলে। এভাবেই লুপথলির গঠনপ্রক্রিয়া শেষ হয়।
নিষেকঃ (Fertilization)
পরাপায়নের ফলে পরিণত পরাগরেণু গর্ভপত্রের গর্ভমুণ্ডে (Style) পতিত হয়। এরপর পরাগনালিকা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে গর্ভদণ্ড ভেদ করে এবং কিছু তরুল পদার্থ শোষণ করে স্ফীত হয়ে উঠে। এক সময় এ স্ফীত অগ্রভাগটি ফেটে পুংজনন কোষ দুটি ট্রুপথলিতে যুক্ত হয়। এর একটি ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে জাইগোট (Zygote) তৈরি করে। অপর পুংজনন কোষটি গৌণ নিউক্লিয়াসের সাথে মিলিত হয়ে সিপ্লয়েড (3n) সস্য কোষের (Endosperm cells) সৃষ্টি করে।
প্রায় একই সময়ে দুটি পুংজনন কোষের একটি ডিম্বাণু এবং অপরটি গৌণ নিউক্লিয়াসের সাথে মিলিত হয়। এ ঘটনাকে দ্বিনিষেক (Double fertilization) বলা হয়।

চিত্রঃ সপুষ্পক উদ্ভিদের জীবন চক্র
নতুন স্পোরোফাইট গঠনঃ (Development of new sporophyte)
জাইগোট কোষটি স্পোরোফাইটের প্রথম কোষ। এর প্রথম বিভাজনে দুটি কোষ সৃষ্টি হয়। একই সাথে সস্যের পরিস্ফুটনও ঘটতে শুরু করে। জাইপোটের বিভাজন অনুপ্রস্থে (Transversely) ঘটে। ডিম্বকরন্ত্রের দিকের কোষকে ভিত্তি কোষ (Basal cell) এবং ট্রুপথলির কেন্দ্রের দিকের কোষটিকে এপিক্যাল কোষ (Apical cell) বলা হয়।
একই সাথে এ কোষ দুটির বিভাজন চলতে থাকে। ধীরে ধীরে এপিক্যাল কোষটি একটি ভ্রুণে পরিণত হয়। একই সাথে ভিত্তি কোষ থেকে মুণধারক (Suspensor) গঠন করে। ক্রমশ বীজপত্র, ভ্ৰূণমূল এবং ভ্রুণকাণ্ডের সৃষ্টি হয়। ক্রমান্বয়ে গৌণ নিউক্লিয়াসটি সস্যটিস্যু উৎপন্ন করে। এই সস্য কোষগুলো ট্রিপ্লয়েড অর্থাৎ এর নিউক্লিয়াসে 3n সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে। পরিণত অবস্থায় ডিম্বকটি সস্য ও ক্রুপসহ বীজে পরিণত হয়। এ বীজ অঙ্কুরিত হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ স্পোরোফাইটের সৃষ্টি করে।

চিত্রঃ ডিম্বকের গঠন ও নিষেক প্রক্রিয়া
অতএব দেখা গেল, একটি সপুষ্পক উদ্ভিদের জীবনচক্রে স্পোরোফাইট এবং গ্যামেটোফাইট নামে দুটি পর্যায় একটির পর একটি চক্রাকারে চলতে থাকে।
ফলের উৎপত্তিঃ
আমরা ফল বলতে সাধারণত আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, আঙুর, আপেল, পেয়ারা, সফেদা ইত্যাদি সুমিষ্ট ফলগুলোকে বুঝি। লাউ, কুমড়া, ঝিঙা, পটল ইত্যাদি সবজি হিসেবে খাওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলো সবই ফল। নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়া শেষ হলেই ফল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়া গর্ভাশয়ে যে উদ্দীপনার সৃষ্টি করে, তার কারণে ধীরে ধীরে এটি ফলে পরিণত হয় এবং এর ডিম্বকগুলো বীজে রূপান্তরিত হয়। নিষিক্তকরণের পর গর্ভাশয় এককভাবে অথবা ফুলের অন্যান্য অংশসহ পরিপুষ্ট হয়ে যে অঙ্গ গঠন করে, তাকে ফল বলে।
শুধু গর্ভাশয় ফলে পরিণত হলে তাকে প্রকৃত ফল বলে, যেমন: আম, জাম। গর্ভাশয়সহ ফুলের অন্যান্য অংশ পুষ্ট হয়ে যখন ফলে পরিণত হয়, তখন তাকে অপ্রকৃত ফল বলে, যেমন: আপেল, চালতা ইত্যাদি। সব প্রকৃত এবং অপ্রকৃত ফলকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন: সরল ফল, গুচ্ছ ফল এবং যৌগিক ফল।