এপ্রিল ফুল মানে কি?
‘এপ্রিল ফুল’ শব্দটা ইংরেজী। এর অর্থ ‘এপ্রিলের বোকা’। এপ্রিল ফুল ডে’ উদযাপন তথা একে অন্যকে বোকা বানিয়ে, মিথ্যা বলে আনন্দ লাভ করার প্রচেষ্টা দিবসই হচ্ছে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ‘এপ্রিল ফুল’।
এপ্রিল ফুল কি করে? এপ্রিল ফুল এর কাজ কি?
এই দিবসটি মানুষের সাথে মিথ্যা আচরণ, ধোকা দেওয়া ও প্রতারণা মতো নোংরা ও জঘন্য কাজ চর্চা করার শিক্ষা দেয় এবং এতে আনন্দ খুঁজে পেতে উৎসাহ দেয়। যদিও এই আনন্দ হয় একপাক্ষিক। কারণ অপরপক্ষ এই আচরণে রীতিমতো বিরক্ত ও রাগান্বিতই হয়।
এপ্রিল ফুল কেন পালন করা হয়? এপ্রিল ফুল কেন হয়?
কেন পালন করা হয় এপ্রিল ফুল এটা নিয়ে ২ টি মত আছে।
একদল এর মতে: ১৪৯২ সালের ‘পহেলা এপ্রিলে’ রাণী ইসাবেলা কর্তৃক মুসলমানদের চরম ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে ঘোষণা দিয়ে বলে যদি বাঁচতে চাও কর্ডোভার জামে মসজিদে সমবেত হলে প্রাণভিক্ষা দেয়া হবে। অতঃপর এই বলে সম্মিলিত হাজার হাজার আলেম-উলামা, সাধারণ মুসলমান, নারী-শিশু, বৃদ্ধ ও নিরীহ নাগরিকগণ মসজিদে অবস্থান নিলে তাদেরকে অগ্নিসংযোগ করে পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয়। একইভাবে প্রতারণার মাধ্যমে জাহাজে চড়িয়ে আগুন লাগিয়ে হত্যা করা হয়। খৃষ্ট জগতে বা মুসলিমবিদ্বেষী খৃষ্টান রাজ-রাণীর এ আনন্দঘন পৈশাচিকতার ঐতিহাসিক স্মারক দিবসই হচ্ছে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ‘এপ্রিল ফুল’।
অপর দলের মতে:
এপ্রিল ফুল কেন পালন করা হয়— এটা নিয়ে বেশ কয়েকটি ‘থিওরি’ আছে। তারমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় থিওরি হলো- ক্যালেন্ডার পরিবর্তন। ১৫৬৪ সালে ফ্রান্স তাদের ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে মার্চের শেষে বছর শুরু হতো। কিন্তু, এটা পরিবর্তন করে বছর শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১ জানুয়ারি থেকে। এই সিদ্ধান্ত অনেকেই মানতে পারলো না। তারা আন্দোলন শুরু করে বললো- ২৫ শে মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত তারা আগের মতো নিউ ইয়ার পালন করবে। যারা পরিবর্তন মেনে নিয়েছিলো, অর্থাৎ সরকারপক্ষ বিরোধী পক্ষের সাথে মজা নিতে চেয়েছিলো। যারাই নববর্ষ পালন করে বিরোধীতা করতে চেয়েছে, সরকারপক্ষ তাদের পিঠে কাগজের মাছ (Paper Fish) লাগিয়ে দিয়েছিলো। সেই থেকে ভিক্টিমদের বলা হতো- Poission d’Avril বা এপ্রিলের ফিশ [April Fool’s Day, Encyclopedia Britannica, Retrieved april 4, 2013]।
ক্যালেন্ডার থিওরি ছাড়াও এই দিনে মানুষকে বোকা বানানোর আরো কিছু থিওরি আছে। যেমন: রোমান মিথ, ব্রিটিশ গথাম থিওরি, জার্মান থিওরি, ডাচ থিওরি। ইউরোপ-অ্যামেরিকার বেশিরভাগ দেশে এই দিনে মানুষের সাথে Prank করে বোকা বানানোর প্রচলন আছে। ইউক্রেনের Odessa শহরে তো এপ্রিল ফুলের জন্য সরকারি ছুটি দেওয়া হয়!
এপ্রিল ফুল ও ইসলাম কি বলে?
এপ্রিল ফুল পালন করার মধ্যে যেহেতু মিথ্যা ও ধোঁকার আশ্রয় নেয়া হয়, তাই তা হারাম ও গোনাহে কবীরা। কেননা ধোঁকা দেয়া ও মিথ্যা বলা হারাম-গোনাহে কবীরা। ‘এপ্রিল ফুল ডে’ উদযাপন তথা একে অন্যকে বোকা বানিয়ে, মিথ্যা বলে আনন্দ লাভ করার প্রচেষ্টা ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের পরিপন্থী।
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন: ‘চরম সর্বনাশ ঐ ব্যক্তির জন্য যে মানুষকে হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলে থাকে। তার জন্য সর্বনাশ, তার জন্য সর্বনাশ।’ (তিরমিযীঃ ২৩১৫; আবু দাউদঃ ৪৯৯০)
রাসূলুল্লাহ (সা:) আরও বলেন: ‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই একজন বলে গণ্য হবে’ (আবূ দাঊদঃ ৪০৩১)
শুধু এপ্রিল ফুল কেনো, প্রতিদিনের জন্য আমাদের এই হাদিসটি মনে রাখা দরকার। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সেই লোক ধ্বংস হোক! যে মানুষকে হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে। সেই লোক নিপাত যাক, সেই লোক নিপাত যাক!’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৫)
রাসুল (সা.) মিথ্যা বলতে শুধু নিষেধই করেননি, বরং যে লোক হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে— তাকে তিনি অভিশাপ দিয়েছেন। এমন ‘গুরতর’ পাপ খুব কম আছে, যেগুলোর ব্যাপারে রাসুল (সা.) অভিশাপ দিয়েছেন। মিথ্যা কথা তারমধ্যে একটি। মিথ্যার পরিণতি সম্পর্কে আরেকটি হাদিসে তিনি বলেন—
মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়, আর পাপ তাকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। মানুষ মিথ্যা বলতে বলতে আল্লাহর কাছে ‘মহামিথ্যুক’ বলে গণ্য হয়
(বুখারি, হাদিস : ৬০৯৪)
তাই আসুন, আমরা এই দিন সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মিথ্যা-খেলায় অংশ নেবো না। পাশাপাশি তথ্য-প্রমাণ ছাড়াও কোনো কিছু প্রচারে জড়াবো না। এই বিষয়েও হাদিসে নির্দেশনা আছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতোটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (যাচাই না করে) তা বলে বেড়ায়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯২)