গরুকে দেহের ওজন অনুপাতে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। উপরের দানাদার মিশ্রণটি গরুর ওজনের শতকরা ০.৮ থেকে ১ ভাগ পরিমান সরবরাহ করলেই চলবে। দানাদার মিশ্রণটি একবারে না খাইয়ে ভাগ ভাগ করে সকালে এবং বিকালে খাওয়াতে হবে। গরুকে পর্যান্ত পরিমাণে পরিষ্কার খাওয়ার পানি সরবরাহ করতে হবে। কোনোভাবেই বাসি পানি, পচা বাসি খাবার মেশানো পানি, পুকুর, ডোবা বা নদীর পানি খাওয়ানো যাবে না।
গরুকে খাবার দেওয়ার নিয়ম বা গরুকে খাবার খাওয়ানোর নিয়ম:
• নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন প্রাণিকে পরিষ্কার ও সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে।
• দৈহিক ওজন অনুসারে প্রয়োজনীয় খাবার একবারে না দিয়ে ২৪ ঘন্টায় ৫-৬ বারে দিলে প্রাণির হজম ভাল হয়।
• খাদ্য সরবরাহের আগে অবশ্যই পাত্র পরিষ্কার করা।
• দানাদার খাদ্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ মেপে ২ বারে (সকালে ও বিকালে) পরিবেশন করা।
• দানাদার খাদ্য আধা ভাঙ্গা অব¯’ায় ভিজিয়ে খেতে অভ্যস্ত হলে সেভাবেই দিতে হবে।
• শুকনা দানাদার খাদ্য দিলে খাদ্য গ্রহণের পরপরই পানি পান করাতে হবে।
• গরু মোটাতাজাকরণের জন্য সরিষার খৈল বেশি উপকারী।
• প্রাণির বদ-হজম, পেট-ফাপা ও পাতলা পায়খানা হলে দানাদার খাদ্য খাবার দেওয়া যাবে না।
• প্রাণিদেহে শতকরা ৬০-৭০ ভাগ পানি তাই ১০-১৫ ভাগ পানি সরবরাহ করতে হবে।
• খাদ্যে দানাদার, খড়, কাঁচা ঘাস ও পানির অনুপাত ১ঃ৩ঃ৫ঃ১০-১৫ হতে হবে।
• আশঁযুক্ত খাবার (খড়) ২-৩ ইঞ্চি টুকরা করে কেটে ভিজিয়ে পরিবেশন করলে কম নষ্ট হয় এবং খাদ্যের গ্রহণও বাড়ে।
• খড় খাওয়ানোর পূবের্ ২-৩ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে খাদ্যের মান বাড়ে।
• শুধুমাত্র খড় না দিয়ে এর সাথে দানাদার খাবার, ইউরিয়া, মোলাসেস, পানি ও কাঁচাঘাস মিশিয়ে
• খাওয়ালে খাদ্যের মান বৃদ্ধি হয়।
• খাদ্য অবশ্যই মাটি/বালি মুক্ত থাকা, খাদ্য পঁচা, বাসি, অতি পুরাতন না হওয়া।
গরু ছাগল বা গবাদিপশুকে ঘাস খাওয়ানোর উপকারিতা:
• খাদ্য খরচ কম হবে।
• প্রাণির মৃত্যু হার খুবই কম হবে, ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা কম হবে।
• দানাদার খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কম হবে, ফলে উৎপাদন ব্যয় কমে যাবে।
• খাদ্য খরচ কম হবে বিধায় হৃষ্ট-পুষ্টকরণের গরু পালন করে ছোট একটি সংসার চালনো যাবে এবং দারিদ্র বিমোচন করা সম্ভব হবে।
• রোগ-ব্যাধি কম হয় ফলে ঔষধ খরচ কমে যাবে এবং চিকিৎসা খরচ খুবই কম হবে।
• এক একর জমিতে ধান চাষ করে যে লাভ পাওয়া যায় ঘাস চাষ করলে তার চেয়েও বেশী
• লাভ পাওয়া যাবে।
• প্রাণিকে পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস না খাওয়ালে অপকারিতাঃ
• প্রাণি অপুষ্টিতে ভোগে এবং রোগ-ব্যাধি বেশী হবে।
• দুর্বলতার কারণে রোগ-ব্যাধি বেশী হওয়াতে চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাবে।
• রোগ হলে উৎপাদন কমে যাবে ফলে কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
• দানাদার খাদ্য বেশী দরকার হবে, ফলে মোটাতাজাকরণের খরচ বেড়ে যাবে।
১০০ কেজি দৈহিক ওজনের গরুর খাদ্য তালিকা:
ধানের খড় = ২ কেজি
সবুজ ঘাস = ২ কেজি (ঘাস না থাকলে খড় ব্যবহার করতে হবে
দানদার খাদ্যে মিশ্রন = ১.২-২.৫ কেজি
ইউরিয়া = ৩৫ গ্রাম (নিয়মানুযায়ী)
চিটাগুড়া = ২০০-৪০০ গ্রাম
লবণ = ২৫ গ্রাম
দানাদার খাদ্যের সাথে লবন, ইউরিয়া, চিটাগুড় এক সাথে মিশিয়ে দিনে ২ বারদিতে হবে। ধানের খড় এবং কাঁচা ঘাস ছোট ছোট করে কেটে এক সঙ্গে মিশিয়েখাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
১৫০ কেজি ওজনের গরুর খাদ্য তালিকা:
খড় = ৩ কেজি
কাঁচা ঘাস = ৫-৬ কেজি
দানাদার খাদ্যের মিশ্রন = ১.৫-২ কেজি
চিটাগুড় = ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া = ৪৫ গ্রাম (নিয়মানুয়ায়ী)
লবন = ৩৫ গ্রাম
১৫০-২০০ কেজি ওজনের গরুর খাদ্য তালিকা:
ধানের খড় = ৪ কেজি
কাঁচা ঘাস = ৫-৬ কেজি
দানাদার খাদ্যের মিশ্রন = ১.৫-২ কেজি
চিটাগুড় = ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া = ৪৫ গ্রাম (নিয়মানুযায়ী)
লবন = ৩৫ গ্রাম
গরুর ১০০ কেজি দানাদার খাদ্য তৈরির তালিকা:
- ভুট্টা ভংগা = ৩৫ কেজি
- গম ভাংগা = ১৫ কেজি
- সয়াবিন থৈল = ২০ কেজি
- চাউলের কুড়া/রাইচ ব্রান = ২৫ কেজি
- লাইম স্টোন = ১ কেজি
- ডিসিপি/এমসিপি = ৫০০ গ্রাম
- লবন = ২ কেজি
- ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স = ১৫০ গ্রাম
- সোডিয়াম বাই-কার্বনেট = ৫০০ গ্রাম
- এনজাইম = ৫০ গ্রাম
ওজন অনুযায়ী গরুর খাদ্যের পরিমাণঃ
গরুর ওজন | ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র/ প্রক্রিয়াজাত খড়/শুধু খড় | সুষম দানাদার খাদ্য | সবুজ ঘাস |
১০০ কেজির কম | ২ কেজি | ২.৫ – ৩ কেজি | ৪ – ৫ কেজি |
১০০-১৫০ কেজি | ৩ কেজি | ৩ – ৩.৫ কেজি | ৭ – ৮ কেজি |
১৫০-২০০ কেজি এবং এর বেশি ওজনের গরু | ৪ কেজি | ৪ – ৪.৫ কেজি | ৮ – ১২ কেজি |
গরু মোটাতাজাকরণ খাদ্য সরবরাহ পদ্ধতিঃ
গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পে গবাদি পশুর জন্য পরিমাণ মত সুষম গরু মোটাতাজাকরণ খাদ্য সরবরাহ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের তালিকায় শর্করা (Carbohydrates), আমিষ (Protein), চর্বি (Fat) ও ভিটামিন-মিনারেল এর পরিমান সাধারণত খাদ্যের চেয়ে বেশি থাকতে হবে। প্রচুর পরিমাণ টিউবয়েলের টাটকা পানি সরবরাহ করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে গবাদি প্রাণির সবচেয়ে সহজলভ্য ও সাধারণ খাদ্য হলো খড়, যার ভিতর আমিষ, শর্করা ও খবিজের ব্যাপক অভাব রয়েছে। তাই খড়কে ইউরিয়া ও মোলাসাস(চিটাগুর) দ্বারা প্রকৃয়াজাত করে খাওয়াতে হয়। সেই সাথে সুষম দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
- মোট খাদ্য চাহিদার ৪০-৫০ন ভাগ দানাদার ও ৫০-৬০ ভাগ আঁশ জাতীয় খাদ্য যেমন খড়, ঘাস ইত্যদি দিতে হবে।
- সাইলেজ অথবা ইউএমএস অথবা ফর্মান্টেড ভুট্টা খাওয়াতে হবে।
- প্রতিদিন একই সময়ে একই ধরনের খাদ্য সরবরাগ করতে হবে। খাদ্য ও খাদ্য প্রদানের সময় কোনটা পরিবর্তন করা যাবে না।
- খাদ্য টাটকা ও ধুলো বালি মুক্ত হতে হবে।
- খাদ্য সহজ পাচ্য হতে হবে।
গরুকে পানি ও খাদ্য খাওয়ানোর পদ্ধতিঃ
গরুকে গুড়, লবন ও কুড়া যোগে পানি না খাইয়ে ফ্রি চুজে বা ইচ্ছা মতো পানি খেতে দিতে হবে। একটি পাত্রে সবসময় পরিষ্কার সাদা পানি রেখে দিতে হবে যাতে গরু ইচ্ছা মতো পানি খেতে পারে। অপর দিকে খড় বা পল ও ঘাস গরুকে দিনে ২-৩ বার দিতে হবে এবং দানাদার খাদ্য সকাল বিকাল ২ বার দিতে হবে। দুপুরে খুদের জাও দেওয়া যেতে পারে। গরুকে সবসময় না খাইয়ে জাবর কাটার টাইম বা বিশ্রাম দিতে হবে। সন্ধ্যা ৭ টার পর গরুকে কোনো খাবার না দেওয়াই উত্তম। মোটাতাজাকরণ কর্মসূচীতে ফ্রি চুজ পানির ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
গরুকে শুধু খড় খাওয়ালে সাথে মোলাসেস ব্লক দেওয়া প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের গরুকে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক, ১০০-১৫০ কেজি ওজনের জন্য ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক এবং ১৫০-২০০ কেজি কেজি ওজনের জন্য ৩০০-৪০০ গ্রাম ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক প্রতিদিন দিতে হবে।
দানাদার খাদ্য সমান ২ ভাগে ভাগ করে ১ ভাগ সকালে আর আরেক ভাগ বিকালে দিতে হবে।
বাকি অবসর সময়ে গরুকে কাঁচা ঘাস এবং ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র অথবা শুধু খড় দিতে হবে।
100 কেজি একটি গরুকে,প্রতিদিন কত টাকার খাদ্যের প্রয়োজন…?
গরুকে খুদের জাউ কেন দিতে হবে?