বিষয়: কবর জিয়ারত করার নিয়ম + ঈছালে ছওয়াব তার নিয়ম (যেমন- ৪ঠা, চল্লিশা, বার্ষিকী ইত্যাদি।
হ্যাশট্যাগ: #কবর জিয়ারত করার নিয়ম #ঈছালে ছওয়াব তার নিয়ম (যেমন- ৪ঠা, চল্লিশা, বার্ষিকী ইত্যাদি)।
কবর জিয়ারতের সংশ্লিষ্ট বিধিধ বিধি-নিষেধ
* কবরের উপর দিয়ে চলা, বসা এবং কবরের সাথে হেলান দেয়া থেকে বিরত থাকা সুন্নাত ৷
* কবরের দেয়াল পাকা করা, কবরের উপর গম্বুজ বানানো বা যে কোন ধরনের ইমারত বানানো থেকে বিরত থাকবে। সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে এরূপ করা হারাম এবং মজবৃত বানানোর উদ্দেশ্যে হলে তা মাকরূহ তাহরীমী, যা হারামের নিকটবর্তী।
* কবর বসে গেলে তাতে দ্বিতীয়বার মাটি দেয়া যায়।
* কবরে বাতি জ্বালানো নিষিদ্ধ।
* কবরে ফুল দেয়া নিষিদ্ধ ও বিদআত।
* চেনার জন্য কবরের উপরে কোন পাথর ইত্যাদি আলামত হিসেবে রাখা যায়।
* প্রয়োজনে নাম ফলক স্থাপন করা যায়, তবে তাতে কুরআনের কথা লেখা নাজায়েয।
* কবর বা বুযুর্গদের মাযারে চাদর চড়ানো নিষিদ্ধ ও হারাম।
* কোন মাযারে মান্নত মানা ও নযর প্রদান করা হারাম। (প্রাগুক্ত)
* মাযারে টাকা-পয়সা প্রদান করা হারাম। কবর জিয়ারতের আহকাম
* পুরুষদের জন্য কবর জিয়ারত করা মোস্তাহাব। নারী যুবতী হলে তার জন্য কবরস্থানে যাওয়া জায়েয নেই। তবে বৃদ্ধা হলে কান্নাকাটি, মাতম ইত্যাদি শরী’আত বিরোধী কাজ করবে না- এরূপ একীন থাকলে সাজসজ্জা না করে খুশবূ না মেখে পর্দার সাথে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। (احکام میت بحوالہ شامی ،امدادالفتاوی دامدادالاحکام)
কবর জিয়ারত করার নিয়ম
* প্রতি সপ্তাহে অন্ততঃ একবার কবর জিয়ারত করা মোস্তাহাব।
* শুক্রবার কবর জিয়ারত করা অধিক উত্তম। বৃহস্পতিবার, শনিবার এবং সোমবারও কবর জিয়ারত করা উত্তম।
* কবরস্থানে প্রবেশ করে সমস্ত কবরবাসীর উদ্দেশ্যে নিম্ন বাক্যে সালাম করবে-
السّلام عليكم دار قوم مؤمنين وانا ان شاء الله بكم لاحقون ، ونسأل الله لنا ولكم العافية ـ (احسن الفتاوى جـ / ۴)
অর্থঃ হে মু’মিন সম্প্রদায়ের আবাসস্থলের অধিবাসীগণ! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, আমরাও আল্লাহ চাহেতো তোমাদের সাথে মিলিত হব। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য শান্তির আবেদন করছি।
* অতঃপর উদ্দিষ্ট মাইয়েতের পায়ের দিক থেকে চেহারার (কেবলার দিক যেয়ে দাঁড়াবে বা বসবে। বসলে জীবদ্দশায় তার সাথে যেরূপ সম্পর্ক ছিল সে অনুযায়ী নিকটে বা দূরে বসবে।
* সালামের পর কেবলার দিকে পিঠ এবং মাইয়েতের (কবরের) দিকে মুখ করে যথাসম্ভব কুরআন শরীফ পড়ে মাইয়েতকে ছওয়াব পৌছে দিবে। বিশেষভাবে সূরা-বাকারার শুরু থেকে মুফলিহুন পর্যন্ত, আয়াতুল কুরছী, সূরা-বাকারার শেষ দুই আয়াত অর্থাৎ, ‘আমানাররসূলু’ থেকে শেষ পর্যন্ত, সূরা- ফাতেহা, সূরা-ইয়াসীন, সূরা-মূল্ক, সূরা-তাকাছুর বা সূরা এখলাস ১১/১২ বার কিংবা ৭ বার বা যে পরিমাণ সহজে পড়তে পারে পড়ে দোয়া করবে। মাইয়েতের মাগফিরাতের জন্যও দোয়া করবে।
* তিলাওয়াত ও দোয়া দুরূদ পড়ার পর কেবলামুখী হয়ে (অর্থাৎ,মাইয়েতের দিকে পিঠ করে দোয়া করবে।
ঈছালে ছওয়াব ও তার নিয়ম (যেমন- ৪ঠা, চল্লিশা, বার্ষিকী ইত্যাদি)
* নফল ইবাদত (যেমনঃ নফল নামায, নফল রোযা, নফল হজ্জ ইত্যাদি) তিলাওয়াত, যিকির-আযকার ও দান-সদকা করে তার ছওয়াব (মৃত বা জীবিতকে) পৌছে দেয়া এবং মাইয়েতের জন্য দোয়া করাকে ঈছালে ছওয়াব বলে। ঈছালে ছওয়াব দ্বারা আমলকারীর ছওয়াব কমে না বরং আল্লাহ তা’আলা নিজ অনুগ্রহে আমলকারী ও মাইয়েত উভয়কেই পূর্ণ পরিমাণ ছওয়াব দিয়ে থাকেন। কোন আমলের ছওয়াব একাধিক মাইয়েতকে পৌঁছানো হলে আল্লাহর রহমতের ব্যাপকতার ভিত্তিতে আশা করা যায় যে, সে ছওয়াব ভাগাভাগি করে নয় বরং প্রত্যেককেই আল্লাহ তা’আলা পূর্ণ পরিমাণ দান করবেন, যদিও যুক্তি অনুযায়ী তা ভাগাভাগি হওয়ারই কথা।
* ইবাদতে মালিয়া অর্থাৎ দান সদকা দ্বারা ঈছালে ছওয়াব করা উত্তম। এর মধ্যে কয়েকটি স্তর রয়েছে। যথাঃ
(ক) নগদ অর্থ প্রদান করা সবচেয়ে ভাল। এরূপ অর্থ সদকায়ে জারিয়ার কাজে (অর্থাৎ, এমন নেক কাজে যা অব্যাহতভাবে চালু থাকবে) ব্যয় করলে আরও উত্তম হবে।
(খ) তারপর কাঁচা খাবার (পাকানো ছাড়া) প্রদান করা।
(গ) আর সর্বনিম্ন স্তর হল খাদ্য-খাবার রান্না করে তা খাওয়ানো।
* ঈছালে ছওয়াবের একটি আদব এই যে, অন্ততঃ কিছু পাঠ করে হলেও (যেমনঃ তিনবার সূরা এখলাস পাঠ করে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রূহ মোবারকে তার ছওয়াব স্বতন্ত্র ভাবে পৌঁছে দিবে।
* মাইয়েতের আপনজন, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন সকলেই স্বতন্ত্রভাবে নিজ নিজ স্থানে থেকে তিলাওয়াত ও যিকির-আযকার পূর্বক কিংবা দোয়ার মাধ্যমে ঈছালে ছওয়াব করতে পারে। এর জন্য সকলে একত্রিত হয়ে সম্মিলিত ভাবে খতম পড়ার অবশ্যকতা নেই। তদুপরি আজকাল সম্মিলিতভাবে খতম পড়াটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। তাই এই রেওয়াজ পরিত্যাগ করা উচিত।
* টাকা-পয়সার বিনিময়ে কুরআন-খানী বা কোন খতম করালে তার কোন ছওয়াব পাওয়া যাবে না। অতএব সেরূপ কুরআন খানী ও খতমের দ্বারা ঈছালে ছওয়াবও হবে না বরং এরূপ বিনিময় গ্রহণ পূর্বক খতম ও কুরআন খানী করা এবং করানো উভয়টা হারাম।
* ঈছালে ছওয়াবের জন্য কোন দিন তারিখ (যেমন- ৪ঠা, চল্লিশা, বার্ষিকী ইত্যাদি) নির্ধারণ করা বিদআত। অতএব তা পরিত্যাজ্য। এসব নির্দিষ্ট দিনের অনুসরণ ছাড়াই ঈছালে ছওয়াব করা উচিত।
সমাপ্ত: কবর জিয়ারত করার নিয়ম + ঈছালে ছওয়াব তার নিয়ম (যেমন- ৪ঠা, চল্লিশা, বার্ষিকী ইত্যাদি)।
সূত্র: আহকামে যিন্দেগী।