⭐⭐⭐⭐⭐
কাফন-দাফন এর শুরু থেকে শেষ অবদি (A to Z) যাবতীয় নিয়ম, পদ্ধতি ও মাসআলা মাসায়েল। জানাজার নামাজের নিয়ম, জানাজার নামাজের দোয়া সহ।
বিষয়: কাফন দাফনের নিয়ম, কাফন দাফন পদ্ধতি ও কাফন দাফনের pdf (জানাজার নামাজের নিয়ম, জানাজার নামাজের দোয়া)।
হ্যাশট্যাগ: #কাফন দাফনের নিয়ম, #কাফন দাফন পদ্ধতি #কাফন দাফনের pdf #জানাজার নামাজের নিয়ম #জানাজার নামাজের দোয়া।
কবর খননের নিয়মাবলীঃ (কাফন-দাফন)
* কবর মাইয়েত-এর সমপরিমাণ লম্বা হবে। যতটুকু লম্বা তার অর্ধেক পরিমাণ চওড়া হবে।
* মাইয়েত-এর দেহ যত লম্বা, কবর ততপরিমাণ গভীর হওয়া সবচেয়ে উত্তম, অন্ততঃ তার অর্ধেক গভীর করলেও চলে। এরূপ কবরকে সিন্দুক কবর বলে।
* আর এরূপ খনন করার পর কবরের নীচে কেবলার দিকে আর একটি ছোট কুঠরির ন্যায় খনন করে তার মধ্যে মুরদারকে রাখা হলে তাকে বলে বুগলী কবর বা লাদ। সিন্দুকের চেয়ে এরূপ কবর করা উত্তম।
* কবরের উপরিভাগ অন্ততঃ এক ফুট গভীরতা সহকারে একটু অধিক প্রশস্ত করে খনন করতে হবে। এ স্থানে বাঁশ, কাঠ বা পিপার দিয়ে তার উপর মাটি দেয়া হবে।
কাফনের কাপড় সংক্রান্ত বিষয় সমূহঃ
* মাইয়েতকে কাফনের কাপড় দেয়া ফরযে কেফায়া।
* মাইয়েত জীবনে সাধারণতঃ যে মানের কাপড় পরিধান করত, কাফনও উক্ত মানের হওয়া উচিত।
* কাফন সাদা রংয়ের হওয়া উত্তম। নতুন বা পুরাতন উভয়টিই সমান।
* কাফনের কাপড় পবিত্র হতে হবে।
* পুরুষের কাফনে তিনটা কাপড় হওয়া সুন্নাত। যথাঃ
১। ইজারঃ এটা মাথা থেকে পা পর্যন্ত লম্বা হয়।
২। লেফাফা/চাদরঃ এটা ইজার থেকে ৪ গিরা (৯ইঞ্চি) লম্বা হয়।
৩। কুর্তা/জামাঃ (হাতা ও কল্লী বিহীন) এটা গর্দান থেকে পা পর্যন্ত লম্বা হয়।
* মহিলাদের কাফনে পাঁচটা কাপড় হওয়া সুন্নাত। উপরোক্ত ৩টা এবং
৪। সীনা বন্দঃ এটা বগল থেকে রান পর্যন্ত হওয়া উত্তম। নাভি পর্যন্ত হলেও চলে।
৫। সারবন্দ/উড়নাঃ এটা তিনহাত লম্বা হয়।
কাফনের কাপড়ের পরিমাণ ও তৈরির বিবরণ :
ক্রমিক | নাম | চম্বা | চওড়া | পরিমাণ |
১ | ইজার | আড়াই গজ | সোয়া ১ গজ থেকে দেড় গজ | মাথা থেকে পা পর্যন্ত |
২ | লেফাফা | পৌনে ৩ গজ | সোয়া ১ গজ থেকে দেড় গজ | ইজার থেকে চার গিরা (৯ ইঞ্চি) বেশী |
৩ | কুর্তা/জামা | আড়াই থেকে পৌনে তিন গজ | ১ গজ | গর্দান থেকে পা পর্যন্ত |
৪ | সীনাবন্দ | ১ গজ | সোয়া ১ গজ | বগলের নীচ থেকে রান পর্যন্ত |
৫ | সারবন্দ/উড়না | দেড় গজ | ১২ গিড়া/২৭ ইঞ্চি | যতদূর পৌঁছে |
(উপরোক্ত পরিমাণটা সাধারণতঃ বড় মানুষের জন্য, ছোটদের জন্য তার সাইজ অনুসারে কেটে নিতে হবে।)
* সর্বমোট কাফনের কাপড় পুরুষের জন্য, পৌনে আট গজ থেকে ৮ গজ এবং মহিলাদের জন্য সোয়া এগার গজ থেকে সাড়ে এগার গজ। মহিলাদের গোছল ও দাফনের সময় পর্দা রক্ষার জন্য যে কাপড়ের প্রয়োজন সেটা এ হিসাবের বাইরে।
মাইয়েতকে গোসল প্রদানের নিয়মঃ
* পুরুষ মাইয়েতকে পুরুষ এবং নারী মাইয়েতকে নারী গোসল করাবে। আপনজন আপনজনকে গোসল করানো উত্তম।
* গোসলের স্থান পর্দা ঘেরা হতে হবে।
* যে খাটিয়ায় গোসল দেয়া হবে প্রথমে তিন পাঁচ বা সাতবার সেটায় আগরবাতি ইত্যাদির ধোঁয়া দিবে।
* মাইয়েতকে এমন ভাবে খাটিয়ায় শোয়াবে, যেন কেবলা তার ডান দিকে থাকে, সম্ভব না হলে যে কোন ভাবে শোয়ানো যায়।
* একটা লম্বা মোটা কাপড় দিয়ে মাইয়েতের সতর ঢেকে তার ভিতর থেকে তার শরীরের কাপড় (প্রয়োজনে কেটে) খুলে নিবে।
* মাইয়েতের সতর দেখবে না, সতরের মধ্যে সরাসরি হাত লাগাবে না।
* বাম হাতে দস্তানা পরিধান করে বা কোন কাপড় পেঁচিয়ে তা দ্বারা মাইয়েতকে তিন বা পাঁচটা ঢিলা দ্বারা ইন্তেজা করাবে, তারপর পানি দ্বারা ইস্তেজার স্থান ধৌত করবে।
* অতঃপর তুলা ভিজিয়ে তা দ্বারা ঠোট, দাঁত ও দাঁতের মাঢ়ী মুছে দিবে এবং উক্ত তুলা ফেলে দিবে। এভাবে তিনবার করবে।
* অতঃপর অনুরূপভাবে তিনবার নাকের দুই ছিদ্র পরিস্কার করবে। তবে গোসলের প্রয়োজন (ফরয) অবস্থায় মৃত্যু হলে বা মহিলার হায়েয নেফাস অবস্থায় মৃত্যু হলে মুখে এবং নাকে পানি দেয়া জরুরী। পানি দিয়ে কাপড় বা তুলা দ্বারা উক্ত পানি তুলে নিবে। (আঠা)
* অতঃপর মুখ এবং নাক ও কানের ছিদ্রে তুলা দিয়ে দিবে, যেন পানি ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।
* অতঃপর উযূর ন্যায় মুখ ও উভয় হাত ধৌত করাবে, মাথায় মাসেহ করাবে এবং উভয় পা ধৌত করাবে।
* অতঃপর সাবান বা এজাতীয় কিছু দ্বারা মাথা (পুরুষ হলে দাড়িও পরিষ্কার করাবে।
* অতঃপর মাইয়েতকে বাম কাতে শুইয়ে বরই এর পাতা জ্বালানো (অপারগতায় সাধারণ) কুসুম গরম পানি দ্বারা মাথা থেকে পা পর্যন্ত ডান পার্শ্বে তিনবার এতটুকু পানি ঢালবে যেন নীচের দিকে বাম পার্শ্ব পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
* অতঃপর অনুরূপ ভাবে ডান কাতে শুইয়ে বাম পার্শ্বে তিনবার পানি ঢালবে।
* অতঃপর গোসলদাতা মাইয়েতকে তার শরীরের সাথে টেক লাগিয়ে বসাবে এবং পেটকে উপর দিক থেকে নীচের দিকে আস্তে আস্তে মর্দন করবে এবং চাপ দিবে। এতে কিছু মল-মুত্র বের হলে তা মুছে ফেলে ধুয়ে দিবে।
* অতঃপর মাইয়েতকে বাম কাতে শুইয়ে কর্পূর মিলানো পানি ডান পার্শ্বে মাথা থেকে পা পর্যন্ত এমনভাবে ঢালবে, যেন নীচে বাম পার্শ্ব পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
* অতঃপর আর একটি দস্তানা পরিধান করে বা কাপড় হাতে পেঁচিয়ে সমস্ত শরীর কোন কাপড় দ্বারা মুছে শুকিয়ে দিবে। এরপর মাইয়েতকে
কাফনের কাপড় পরিধান করাবে। এ হল মাইয়েতকে গোসল দেয়ার সুন্নাত নিয়ম।
* মাইয়েতকে গোসল দেয়ার পর গোসলদাতার নিজেরও গোসল করে নেয়া মোস্তাহাব।
* গোসলদাতা মাইয়েতের কোন দোষ (যেমন চেহারা বিকৃত হওয়া, কাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি) দেখলে তা অন্যের কাছে বর্ণনা করবে না। পক্ষান্তরে তার কোন ভাল কিছু দেখতে পেলে তা অন্যের কাছে বর্ণনা করা মোস্তাহাব।
কাফন পরিধান করানোর নিয়মঃ (পুরুষের)
* কাফনের কাপড়ে সর্বপ্রথম তিন পাঁচ বা সাতবার আগরবাতি প্রভৃতির ধোঁয়া দিবে।
* তারপর প্রথমে লেফাফা বিছাবে, তার উপর ইজার, তার উপর কোর্তা/জামার নীচের অর্ধাংশ বিছাবে এবং অপর অর্ধাংশ মাথার দিকে গুটিয়ে রাখবে। তারপর মাইয়েতকে এই বিছানো কাফনের উপর চিত করে শোয়াবে এবং কোর্তা/জামার গুটানো অর্ধাংশ মাথার উপর দিয়ে পায়ের দিকে এমনভাবে টেনে আনবে যেন কোর্তার/জামার ছিদ্র (গলা) মাইয়েতের গলায় এসে যায় ৷ এরপর গোসলের সময় মাইয়েতকে যে কাপড় পরানো হয়েছিল সেটা বের করে নিবে এবং নাক, কান ও মুখ থেকে তুলা বের করে নিবে। তারপর মাথা ও দাড়িতে আতর প্রভৃতি খুশবূ লাগাবে। অতঃপর কপাল, নাক, উভয় হাতের তালু, উভয় হাটু ও উভয় পায়ে (সাজদার অঙ্গসমূহে) কর্পূর লাগাবে। তারপর ইজারের বাম পাশ উঠাবে অতঃপর ডান পাশ (ডান পাশ উপরে থাকবে) তারপর লেফাফার বাম পাশ অতঃপর ডানপাশ উঠাবে। অতঃপর কাপড়ের লম্বা টুকরা বা সুতা দিয়ে মাথা এবং পায়ের দিকে এবং মধ্যখানে (কোমরের নীচে) বেঁধে দিবে, যেন বাতাসে বা নড়াচড়ায় কাফন খুলতে না পারে।
কাফন পরিধান করানোর নিয়মঃ (মহিলার)
* কাফনের কাপড়ে সর্বপ্রথম তিন, পাঁচ বা সাতবার আগরবাতি প্রভৃতির ধোঁয়া দিবে।
* প্রথমে লেফাফা বিছাবে, তারপর ইজার, তারপর সীনাবন্দ, তারপর কুর্তা/জামার নীচের অর্ধাংশ। তারপর মাইয়েতকে কাফনের উপর চিত করে শোয়াবে। অতঃপর পূর্ব বর্ণিত নিয়মানুযায়ী প্রথমে কোর্তা/জামা পরিধান করাবে, অতঃপর মাইয়েতের শরীরের থেকে গোসলের কাপড় বের করে নিবে এবং নাক, কান ও মুখ থেকে তুলা বের করে নিবে। অতঃপর পূর্বোক্ত নিয়মে খুশবূ এবং কর্পূর লাগাবে (মহিলাকে খুশবুর স্থলে জাফরানও লাগানো যায়) অতঃপর মাথার চুল দুই ভাগ করে জামার উপর সীনার পরে রেখে দিবে- একভাগ ডান দিকে আরেক ভাগ বাম দিকে। অতঃপর সারবন্দ বা উড়না মাথা এবং চুলের উপর রেখে দিবে (বাঁধবে না বা পেঁচাবে না) অতঃপর সীনাবন্দ বগলের নীচে দিয়ে প্রথমে বাম দিকে অতঃপর ডান দিক জড়াবে। অতঃপর ইজারের বাম দিক তারপর ডান দিক এমন ভাবে উঠাবে যেন সারবন্দ তার ভিতর এসে যায়। তারপর লেফাফা অনুরূপ ভাবে প্রথমে বাম পাশে তারপর ডান পাশে উঠাবে এবং সবশেষে পূর্বোক্ত নিয়মে তিন স্থানে বেঁধে দিবে।
উল্লেখ্য, সীনাবন্দ ইজার ও লেফাফার মধ্যে বা সব কাপড়ের উপর বাইরেও বাঁধা যায়।
জানাজা নামাযের বিবরণ
* জানাজা নামাযে মাইয়েত সামনে থাকা শর্ত। গায়েবানা জানাজা নামায হানাফী মাযহাবে জায়েয নেই।
* কেবলামুখী হয়ে এবং দাঁড়িয়ে জানাজার নামায পড়তে হবে। (এ দু’টো ফরয)
* ইমামের জন্য মাইয়েতের সীনা বরাবর দাঁড়ানো সুন্নাত। মুক্তাদীগণের কাতার তিনটা হওয়া মুস্তাহাব।
* নিয়ত করা ফরয। কারও কারও মতে নিয়তের মধ্যে মাইয়েত পুরুষ না মহিলা, ছেলে না মেয়ে তা-ও নির্ধারিত করা জরুরী।
* আরবীতে নিয়ত এভাবে করা যায়ঃ
نويت أن أصلي الجنازة لله تعالى ودعاء للميت ۔ ( بہشتی گوہر )
* বাংলায় নিয়ত এভাবে করা যায়ঃ আল্লাহর ওয়াস্তে এই মাইয়েতের জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে জানাজা নামাযের নিয়ত করছি।
* নিয়ত করার পর নামাযের তাকবীরে তাহরীমার ন্যায় হাত উঠাবে।
* তারপর আল্লাহু আকবার বলবে (এটা ফরয)। ইমাম আল্লাহু আকবার ও সালাম জোরে এবং মুক্তাদী আস্তে বলবে। অন্যান্য সবকিছু সকলেই আস্তে পড়বে।
* আল্লাহু আকবার বলে নামাযের ন্যায় উভয় হাত বাঁধবে।
* অতঃপর ছানা পড়বে (এটা সুন্নাত)। ছানা পড়া শেষে আল্লাহু আকবার বলবে হাত উঠানো ব্যতীত। (এই তাকবীর বলা ফরয।)
* অতঃপর দুরূদ শরীফ পড়বে (এটা সুন্নাত)। নামাযের দুরূদ পড়া উত্তম।
* অতঃপর পূর্বের ন্যায় আল্লাহু আকবার বলবে। (এই তাকবীরও ফরয)
* অতঃপর দোয়া পড়বে (এটা সুন্নাত)।
* মাইয়েত বালেগ পুরুষ বা বালেগা নারী হলে নিম্নোক্ত দোয়া পড়বে-
اللهم اغفر لحينا وميتنا وشاهدنا وغائبنا وصغيرنا وكبيرنا وذكرنا وأنثانا اللهم من احييته منا فاحيه على الإسلام ، ومن توفيته منا فتوفه على الإيمان
এর সাথে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়াও উত্তম। এ দোয়াটিও হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
اللهم اغفر له وارحمه وعافه واعف عنه وأكرم نزله ووسع مدخله واغسله بالماء والثلج والبرد، ونقه من الخطايا كما ينقى الثوب الأبيض من الدنس، وأبدله دارا خيرا من داره واهلا خيرا من أهله وزوجا خيرا من زوجه، وأدخله الجنة واعذه من عذاب القبر وعذاب النا ۔
* মাইয়েত নাবালেগ ছেলে হলে নিম্নোক্ত দোয়া পড়বে-
اللهم اجعله لنا فرطا واجعله لنا اجرا وذخرا واجعله لنا شافعا ومشفعا ۔
* আর মাইয়েত নাবালেগা মেয়ে হলে নিম্নোক্ত দোয়া পড়বে-
۔ اللهم اجعلها لنا فرطا واجعلها لنا أجرا وذخرا واجعلها لنا شافعةً ومشفعة
* দোয়া পড়ার পর পূর্বের ন্যায় আল্লাহু আকবার বলবে (এটা ফরয)।
* অতঃপর উভয় হাত ছেড়ে দিয়ে প্রথমে ডান দিকে তারপর বাম দিকে সালাম ফিরাবে। (احسن الفتاوی جه/ ۴ و بہشتی گوہر)
* উভয় সালাম ফিরানোর পর হাত ছাড়া যায় কিংবা ডান দিকের সালামের পর ডান হাত এবং বাম দিকের সালামের পর বাম হাত ছাড়া যায়।
* নামাযে জানাজার পর সাথে সাথে সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে দোয়া করা মাকরুহ ও বিদআত। তাই এটা করা যাবে না। (احکام میت ، خلاصة الفتاوى، نفع المفتى والسائل واحسن الفتاوى جـ/1)
* জুতা খুলে মাটিতে দাঁড়িয়ে নামাযে জানাজা পড়া উত্তম। অবশ্য দাঁড়ানোর স্থান এবং জুতা পাক হলে জুতা পরেও নামায পড়া যায়। আর জুতা খুলে জুতার উপর দাঁড়িয়ে নামায পড়ার ইচ্ছা হলে জুতার উপরিভাগ পাক হওয়া শর্ত।
কাফন-দাফনের মাসলা মাসায়েল
* জানাজার জন্য একাধিক লাশ একত্রিত হলে প্রত্যেকের জানাজা পৃথক পৃথক আদায় করা উত্তম। সে ক্ষেত্রে যাকে অধিক নেককার বলে মনে হয় তার জানাজা আগে পড়া ভাল। একত্রেও আদায় করা যায়। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের লাশ থাকলে পুরুষের লাশ ইমামের সন্মুখে, তারপর ছোট বাচ্চাদের, তারপর বয়স্কা মহিলাদের, তারপর নাবালেগা মেয়েদের- এই তারতীবে লাশ রাখবে।
* যদি ওলীর অনুমতি এবং শিরকাতে জানাজার জামা’আত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে তাহলে পুনর্বার জানাজার নামায পড়া মাকরূহ এবং তা শরী’আত সম্মত নয়। ওলীর অনুমতি ও শিরকাত ব্যতীত প্রথমে জানাজা হয়ে থাকলে ওলী দ্বিতীয় বার জামাআত করতে পারে। সেক্ষেত্রেও প্রথমবার যারা জানাজায় শরীক হয়েছে দ্বিতীয়বার তারা শরীক হতে পারবে না। (প্রাগুক্ত)
* কোন কোন স্থানে লাশ সম্মুখে রেখে লোকটা কেমন ছিল প্রশ্ন করা হয় আর উপস্থিত লোকেরা বলে ভাল ছিল, শরী’আতে এরূপ বলার কোন ভিত্তি নেই। (প্রাগুক্ত)
জানাজা বহন করার নিয়ম সমূহ
* মাইয়েত দুধের শিশু বা হাতে হাতে বহনযোগ্য ছোট হলে পর্যায়ক্রমে হাতে হাতে তাকে বহন করে নিয়ে যাবে। আর বড় হলে কোন খাটিয়া প্রভৃতিতে শুইয়ে নিয়ে যাবে, মাথা সামনের দিকে থাকবে।
* খাটিয়ার চার পায়াকে চার জনে উঠাবে।
* খাটিয়ার পায়াকে হাত দ্বারা উঠিয়ে কাঁধের উপর রাখবে।
* কবরস্থান দূর ইত্যাদি কোন ওজর না থাকলে জানাজা গাড়ী বা সওয়ারীতে উঠিয়ে নেয়া মাকরূহ।
জানাজা বহন করার মোস্তাহাব নিয়ম :
* প্রথমে মাইয়েতের ডান দিকের সম্মুখ পায়া হাত দিয়ে নিজের ডান কাঁধে উঠিয়ে কমপক্ষে দশ কদম চলবে। অতঃপর ঐদিকের পিছনের পায়া ডান কাঁধে রেখে কম পক্ষে দশ কদম চলবে। তারপর মাইয়েতের বাম দিকের সম্মুখের পায়া বাম কাঁধে রেখে দশ কদম, তারপর পশ্চাতের পায়া অনুরূপ বাম কাঁধে রেখে দশ কদম চলবে।
* জানাজা নিয়ে দ্রুত কদমে চলা সুন্নাত। তবে দৌড়ে নয় কিংবা খুব দ্রুত নয়।
* সঙ্গীরা জানাজার ডানে বায়ে নয় বরং পশ্চাতে চলবে।
* সঙ্গীদের পায়ে হেটে চলা মোস্তাহাব। কোন বাহনে থাকলেও জানাজার পশ্চাতে চলবে।
* জানাজা বহনকারী ও সঙ্গীগণ কোন দু’আ, যিকির শব্দ করে পড়বে না। শব্দ করা মাকরূহ।
* জানাজা কাঁধ থেকে রাখার পূর্বে কেউ বসবে না।
* জানাজার সাথে চলার সময় কোন কথা বলবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সময় খামূশ থাকতেন।
* দাফন হওয়ার পূর্বে মাইয়েত ওয়ালাদের অনুমতি ব্যতীত কেউ ফিরে আসবে না।
* জানাজা মহিলা হরে খাটিয়া ঢেকে নেয়া মোস্তাহাব।
* জানাজার ইমামত ও দাফন সম্পর্কে মাইয়েতের কোন ওছিয়াত থাকলে তার সমাধা করা।
দাফনের নিয়ম-পদ্ধতি
* সাধারণ কবরস্থানে দাফন করা সুন্নাত।
* যেখানে যার মৃত্যু হয় সে এলাকার সাধারণ কবরস্থানে তাকে দাফন করা সুন্নাত। অন্যত্র (দুই তিন মাইলের অধিক দূরে) লাশ স্থানান্তর করা সুন্নাতের খেলাফ।
* প্রয়োজনে কবরের জন্য জমি ক্রয়ের অনুমতি রয়েছে।
* কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে মাইয়েতকে সতর্কতার সাথে উঠিয়ে কবরে নামাবে।
* মাইয়েতকে কবরে রাখার সময় নিম্নোক্ত দোয়া বলা মোস্তাহাব।
بسم الله وعلى ملة رسول الله ـ
অর্থঃ আল্লাহর নামে এবং আল্লাহর রাসূলের ধর্মের উপর তাকে রাখলাম।
* মাইয়েতকে কেবলামুখী করে ডান কাতে শুইয়ে দেয়া সুন্নাত। চিত করে শুইয়ে শুধু মুখ কেবলামুখী করে দেয়া যথেষ্ট নয়।
* কবরে রাখার পর খুলে যাওয়ার আশংকায় কাফনে যে গিরা দেয়া ছিল তা খুলে দিতে হবে।
* মহিলাকে কবরে রাখার সময় পর্দা করে নেয়া মোস্তাহাব। আর মাইয়েতের শরীর প্রকাশ হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকলে পর্দা করা ওয়াজিব।
* বুগ্লী (লাহ্দ) কবর হলে কাঁচা ইট, বাঁশ প্রভৃতি দ্বারা বন্ধ করবে আর সিন্দুক কবর হলে কাঠ, বাঁশ বা পিপার দিয়ে ঢেকে দিবে এবং ফাকগুলো বন্ধ করে দিবে।
* তারপর মাটি ফেলবে। মাইয়েতের মাথার দিক থেকে মাটি ফেলতে শুরু করা মোস্তাহাব।
* প্রত্যেক ব্যক্তি উভয় হাতে মাটি নিয়ে তিনবার মাটি ফেলবে। প্রথমবার ফেলার সময় “মিনহা খলাকনাকুম” দ্বিতীয়বার ওয়া ফিহা নু্ঈদুকুম” এবং তৃতীয়বার “ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তা’রতান উখর” পড়বে।
* কবরের পিঠ উটের পিঠের ন্যায় এক বিঘৎ বা তার চেয়ে কিছু বেশী পরিমাণ উঁচু করে বানানো মোস্তাহাব।
* মাটি দেয়া সম্পন্ন হওয়ার পর সর্বশেষে কবরের মাটি জমানোর জন্য কবরের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া মোস্তাহাব।
* নিতান্ত অপারগতা ছাড়া এক কবরে একাধিক লাশ দাফন করবে না।
* কবরের দু পাশে খেজুরের ডাল বা যে কোন ডাল পুতে দেয়ার সাথে গলদ আকীদা জড়িত হওয়ার কারণে এ থেকে বিরত থাকই উত্তম। (فتاوی دار العلوم جه/ ۲ و احسن الفتاوی جه/ ۱)
* যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাফন কাফন সারা উত্তম। এমনকি জানাজায় অধিক লোক হবে এজন্যেও বিলম্ব করা সুন্নাতের খেলাফ।
দাফনের পর যা যা করণীয়
* দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর কবরের নিকট কিছুক্ষণ অবস্থান করতঃ মৃতের ক্ষমার জন্য দোয়া করবে অথবা কুরআন শরীফ পাঠ করে ছওয়াব পৌঁছে দিবে। এরূপ করা মোস্তাহাব। মৃত যেন মুনকার নাকীরের প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হয় তার জন্য দোয়া করবে ৷ এরূপ করা সুন্নাত।
* দাফনের পর কবরের মাথার দিকে দাঁড়িয়ে সূরা বাকারার শুরু থেকে (‘মুফলিহুন’ থেকে শেষ পর্যন্ত) পর্যন্ত এবং পায়ের দিকে দাঁড়িয়ে সূরা-বাকারার শেষ আয়াত সমূহ (‘আমানাররুসূল’ থেকে শেষ পর্যন্ত) আস্তে আস্তে পাঠ করা মোস্তাহাব। ( فتاوی دار العلوم جه ه ه و احکام میت)
মাইয়েতের পরিবারের সাথে অন্যদের যা যা করণীয়
* প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনদের জন্য মোস্তাহাব হল মৃতের পরিবারের জন্য এক দিনের খাবার তৈরী করে পাঠাবে এবং দুঃখের কারণে তারা খেতে না চাইলে পীড়াপীড়ি করে খাওয়াবে।
* মৃতের পরিবারকে তিন দিনের মধ্যে (এক বার) সান্ত্বনা জানানো মোস্তাহাব। দূরের লোকেরা শোকবার্তা প্রেরণের মাধ্যমে অর্থাৎ, পত্রের মাধ্যমেও এ মোস্তাহাব আদায় করতে পারেন। শরী’আতের পরিভাষায় এটাকে তাযিয়াত বলা হয়।
* প্রচলিত শোক প্রস্তাব অনুমোদন ও নীরবতা পালনের কোন শরঈ ভিত্তি নেই। এটা বিধর্মীদের অনুকরণ বিধায় পরিত্যাজ্য। শরীয়তের দৃষ্টিতে এতে কোন ফায়দা নেই।
* স্বতন্ত্র ভাবে একাকী তাযিয়াত করা সুন্নাত। তবে ঘটনাক্রমে যদি একাধিক লোক একত্রিত হয়ে যায় তাতে কোন অসুবিধা নেই।
* তাষিয়াতের মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
(ক) সান্ত্বনা বাণী।
(খ) ছবর ও ধৈর্যের ফযীলত বর্ণনা এবং ধৈর্যের প্রতি উৎসাহ প্রদান।
(গ) আপনজনের মৃত্যুজনিত কষ্টের জন্য তারা ছওয়াব লাভ করবে- একথার উল্লেখ।
(ঘ) তাযিয়াতের সময় হাত উঠানো ব্যতীত নিম্নোক্ত দোয়া পড়া-
أعظم الله أجرك وأحسن عزائك وغفر لميتك – (احسن الفتاوی ج ۴)
* তিন দিন অতিবাহিত হয়ে গেলে তাযিয়াত করা মাকরূহ, তবে সফরে থাকার কারণে এ সময়ের মধ্যে তাযিয়াত করতে না পারলে এরপরও করতে পারেন।
* তাযিয়াতকারীগণ মৃতের পরিবারের উপর তাদেরকে আপ্যায়ন করানোর বোঝা চাপাবে না। তাদের উপর এরূ বোঝা চাপানো অমানবিকতা এবং সুন্নাতের পরিপন্থী।
* শোকসভা করা এমনিতে খারাপ নয়। তবে এখন এটা রছমে পরিণত হয়েছে। তদুপরি পত্র-পত্রিকায় নাম আসবে এরূপ গলদ নিয়তও থাকে, তাই এটা পরিত্যাজ্য।
কাফন দাফনের pdf
সমাপ্ত: কাফন দাফনের নিয়ম, কাফন দাফন পদ্ধতি ও কাফন দাফনের pdf (জানাজার নামাজের নিয়ম, জানাজার নামাজের দোয়া)।
সূত্র: আহকামে যিন্দেগী।