Skip to content

 

অভিযোগঃ কা’বা ছিল আরব মূর্তিপুজকদের মন্দির এবং তা ইব্রাহিম(আ) নির্মাণ করেননি। মুহাম্মাদ (ﷺ) তাদের মন্দির থেকে তাদের উচ্ছেদ করে এক আল্লাহর উপাসনা ও হজ শুরু করেন।

অভিযোগঃ কা’বা ছিল আরব মূর্তিপুজকদের মন্দির এবং তা ইব্রাহিম(আ) নির্মাণ করেননি । মুহাম্মাদ (ﷺ) তাদের মন্দির থেকে তাদের উচ্ছেদ করে এক আল্লাহর উপাসনা ও হজ শুরু করেন।

🛑কা’বা ছিল আরব মূর্তিপুজকদের মন্দির এবং তা ইব্রাহিম(আ) নির্মাণ করেননি। মুহাম্মাদ (ﷺ) তাদের মন্দির থেকে তাদের উচ্ছেদ করে এক আল্লাহর উপাসনা ও হজ শুরু করেন।

🔷উত্তর : নাস্তিক-মুক্তমনা-খ্রিষ্টান মিশনারী এদের অভিযোগ হচ্ছে—কা’বা ছিল আরব মূর্তিপুজকদের মন্দির। মুহাম্মাদ(ﷺ) তাদের মন্দির থেকে তাদের উচ্ছেদ করে এক আল্লাহর উপাসনা ও হজ শুরু করেন। এছাড়া মুসলিমদের দাবি নাকি মিথ্যা—কা’বা নাকি কখনো ইব্রাহিম(আ) নির্মাণ করেননি।ইহুদি-খ্রিষ্টানদের প্রাচীন গ্রন্থ ইব্রাহিম(আ) এর ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনা করে। কিন্তু কা’বার ব্যাপারে নাকি এসব গ্রন্থ কিছু বলেনি।ইত্যাদি ইত্যাদি।

মুক্তমনারা আরবের মূর্তিপুজকদের প্রতি খুব মমতা রাখবার দাবি করে, মুহাম্মাদ(ﷺ) নাকি তাদের মন্দিরকে এক আল্লাহর উপাসনালয় মসজিদুল হারামে রূপান্তরিত করেছেন।মুক্তমনারা কি এটা জানে যে খোদ আরবের মূর্তিপুজকরাই এটা দাবি করত যে তারা ইব্রাহিম(আ) ও ইসমাঈল(আ) এর বংশধর এবং কা’বা ছিল তাদের পিতা ইব্রাহিম(আ) এর নির্মাণকৃত আল্লাহর ঘর? কা’বা যে ইব্রাহিম(আ) এর নির্মাণকৃত আল্লাহর ঘর—এটা নিয়ে মুসলিম কিংবা আরবের মূর্তিপুজক কারো কোন দ্বিমত ছিল না।দ্বিমত ছিল এটা নিয়ে যে মহাবিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর কোন শরীক আছে নাকি নেই।

ইব্রাহিম(আ) [prophet Abraham] যে মূর্তিপুজক ছিলেন না এবং এক-অদ্বিতীয় আল্লাহর [ইহুদি-খ্রিষ্টানদের গ্রন্থে Elohi] উপাসনা করতেন, এটা নিয়ে মুসলিম-ইহুদি-খ্রিষ্টান কারো দ্বিমত নেই।

“ঈশ্বর মোশিকে[নবী মুসা(আ)] আরো বললেন,“ইস্রায়েলিয়দের বলঃ সদাপ্রভু ঈশ্বর, তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর—আব্রাহামের[নবী ইব্রাহিম(আ)], ইসহাকের,যাকোবের[নবী ইয়াকুব(আ)] ঈশ্বর আমাকে তোমাদের নিকট পাঠিয়েছেন। এটাই চিরকালের জন্য আমার নাম, এই নামেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আমাকে স্মরণ করা হবে।”
[যাত্রাপুস্তক(Exodus) ৩:১৫]

মুক্তমনারা কুরআন এবং হাদিসের উপর সন্দেহ পোষণ করে। অথচ ইহুদি-খ্রিষ্টানদের গ্রন্থের ব্যাপারে তাদেরকে এমন কোন কথা বলতে শোনা যায় না।ইব্রাহিম(আ) এর ব্যাপারে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের গ্রন্থকে তারা প্রামাণ্য হিসাবে ধরেছে এবং কা’বা সম্পর্কে মুসলিমদের দাবিকে মিথ্যা প্রমাণের জন্য তারা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের গ্রন্থের কথা উল্লেখ করে বলেছে—“ইহুদি-খ্রিষ্টানদের গ্রন্থে কা’বার কথা নেই।” এ দিয়েই মুক্তমনাদের একচোখা দৃষ্টিভঙ্গী বোঝা যায়।

যাহোক, চলুন আমরা দেখি ইহুদি-খ্রিষ্টানদের গ্রন্থে আসলেই কা’বার কথা এসেছে কী না।

“[হে প্রভু] তারাই আশির্বাদধন্য যারা তোমার ঘরে বাস করে; তারা সদা-সর্বদা তোমার স্তুতি করে। তারাই আশির্বাদধন্য যারা তোমাতেই শক্তি খোঁজে, যারা তীর্থযাত্রার জন্য মনস্থির করে। যখন তারা বাকা উপত্যকা দিয়ে গমন করে, একে বসন্তের নিবাস বানায়। বসন্তের বৃষ্টি একে আশির্বাদে পূর্ণ করে। ”
[তানাখ(ইহুদি বাইবেল)/পুরাতন নিয়ম(খ্রিষ্টান বাইবেল); গীতসংহিতা(Psalms) ৮৪:৪-৬]

বাকা বা বাক্কা হচ্ছে মক্কার প্রাচীন নাম। গীত সংহিতা হচ্ছে দাউদ(আ) এর উপর নাযিলকৃত কিতাব[যাবুর] এর বিকৃত রূপ এবং এই কিতাবে আমরা বাকায় তীর্থযাত্রী(হজ কাফেলা) এর বিবরণ পাই।

“ নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা বাক্কায়[মক্কা] অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়। এতে রয়েছে মকামে ইব্রাহিমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে, লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। আর যে লোক তা মানে না— আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না।”
(কুরআন, আলি ইমরান ৩:৯৬-৯৭)

ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থ অনুযায়ী ইসমাঈল(আ) পারানে বাস করতেন[আদিপুস্তক(Genesis) ২১:২১ দ্রষ্টব্য]। তাঁকে শৈশবে তাঁর পিতা ইব্রাহিম(আ) পারানে রেখে গিয়েছিলেন। পারান স্থানটি লোহিত সাগরের সাথে সম্পর্কিত, এলাত [Elath/Eilat] এর পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশই বাইবেলে বর্ণিত পারানের অন্তর্ভুক্ত।যার মধ্যে আরবও পড়ে যায়। অধিকাংশ খ্রিষ্টান পণ্ডিত এই দাবি করেন যে পারানের যে অংশে ইসমাঈল(আ)কে রেখে আসা হয়েছিল তা লোহিত সাগরের পশ্চিমে।ইব্রাহিম(আ) আরবে আসেননি।এই দাবি তাদের জন্য মুহাম্মাদ(ﷺ)কে অস্বীকার করার ব্যাপারে সহায়ক হয়।মুক্তমনারাও এসব ব্যাপারে খ্রিষ্টান পণ্ডিতদের মুখের কথার উপরে খুব আস্থাশীল। কোন কোন ইহুদি পণ্ডিত যেমন র্যািবাই সাদিয়া গাওন(Saadia Gaon) তার আরবি Torah(ইহুদি তাওরাত) অনুবাদে পারানকে হিজাজ ও মক্কা বলে উল্লেখ করেছেন।

ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ থেকেই আমরা দেখি, পারান আসলে কোথায়—লোহিত সাগরের পশ্চিমে নাকি পূর্বে। মিশরে নাকি আরবে।

প্রথমত, ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থে স্পষ্টতই বলা হয়েছে যে ইসমায়েলীয়রা[Ishmaelites, ইসমাঈল(আ) এর বংশধর] আরবে থাকত, মিশরে নয়।

“তারা যখন খাবার জন্য বসল তখন তারা দেখতে পেল গিলিয়দ থেকে ইসমায়েলীয়দের একটা কাফেলা আসছে। তাদের উটগুলো মশলা,সুগন্ধি তেল এবং গন্ধরস দ্বারা পূর্ণ ছিল।তারা সেগুলো মিশরে নিয়ে যাচ্ছিল। ”
(আদিপুস্তক(Genesis) ৩৭:২৫)

খ্রিষ্টান মিশনারী ও মুক্তমনাদের দাবি অনুযায়ী ইসমাঈল(আ) এর বংশধররা যদি মিশরেই থাকত, তাহলে তারা আবার কিভাবে মিশরে উটে করে জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছিল? ঐতিহাসিকভাবেই এটা প্রমাণিত যে মক্কার আরবরা ইসমাঈল(আ) এর বংশধর।আর তারা উট ব্যবহার করত এবং দূর-দূরান্তে বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে যেত। বাইবেলের আদিপুস্তক ৩৭:২৫ একদম সেই দাবিকেই সমর্থন করছে।এবং বাইবেলের এই পদ আমাদেরকে জানাচ্ছে যে ইসমায়েলীয়রা মিশরে বাস করত না।

ঐতিহাসিক ও সিরাতকারকদের মতে, মুহাম্মাদ(ﷺ) এর পূর্বপুরুষ ছিলেন ইসমাঈল(আ) এর ছেলে কেদার(কাইদার) [রাহিকুল মাখতুম(শফিউর রহমান মুবারকপুরী(র), পৃষ্ঠা ৭৪(তাওহীদ পাবলিকেশন্স) দ্রষ্টব্য]।বাইবেল বলছে যে কেদারের বংশধরেরা আরবে বসবাস করত।

“আরবদেশ এবং কেদার বংশের সমস্ত নেতারা/যুবরাজরা [আদিপুস্তকে ভবিষ্যতবা্ণী রয়েছে যে ইসমায়েলের বংশ থেকে ১২জন নেতা আসবে] ছিল তোমার ক্রেতা। তারা মেষশাবক,ভেড়া ও ছাগ এগুলোর ব্যাপারে তোমার সাথে বাণিজ্য করত।”
(যিহিষ্কেল(Ezekiel) ২৭:২১)

খ্রিষ্টান মিশনারীরা দাবি করে যে পারান হচ্ছে মিশরের সিনাই মরুভূমির অংশ।কিন্তু তাদের এই দাবিও তাদের নিজ গ্রন্থ থেকেই খণ্ডণ হয়।

“অতঃপর ইস্রায়েলীয়রা সিনাই এর মরুভূমি থেকে যাত্রা করল এবং বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে লাগল যতক্ষণ না মেখখণ্ড তাদেরকে পারানের মরুভূমিতে নিয়ে এল।”
(গণণাপুস্তক ১০:১২)

এ থেকে বোঝা গেল যে পারান ও মিশরের সিনাই মরুভূমি মোটেও এক জায়গা নয় বরং ভিন্ন জায়গা।ইহুদিরা সিনাই এর মরুভূমি থেকে পারানে গিয়েছিল।

পারানের সুনির্দিষ্ট অবস্থান আমরা বাইবেলের এই পদগুলো থেকে নিশ্চিতভাবে জানতে পারি-

“এগুলো হচ্ছে মোশির[মুসা(আ)] বাণী যা সে জর্ডানের পূর্বদিকের মরুভূমির মধ্যে সমগ্র ইস্রায়েল জাতিকে বলেছিল। জায়গাটি ছিল আরাবায়, সূফের উল্টো দিকে। পারান এবং টোফেল,লাবান,হাৎসেরোত ও দিষাহব এর মধ্যে।”
(দ্বিতীয় বিবরণ(Deuteronomy) ১:১)

এ থেকে সন্দেহাতীতভাবে আমরা বুঝতে পারি যে পারান জর্ডানের পূর্বে। মানচিত্রে জর্ডানের ঠিক পূর্বের দেশ কোনটি? উত্তর হচ্ছে সৌদি আরব

বাইবেল আমাদেরকে জানাচ্ছে যে পারানের পাহাড় সিনাই এর দক্ষিণে।

“প্রভু সিনাই পর্বত হতে এলেন, সেয়ীরের গোধূলি বেলায় যেন আলো উদিত হল। পারান পর্বত হতে যেন আলো জ্বলে উঠল। প্রভু তাঁর পাহাড়ের দক্ষিণ দিক থেকে ১০,০০০ পবিত্রজনকে তাঁর সাথে নিয়ে এলেন।”
(দ্বিতীয় বিবরণ(Deuteronomy) ৩৩:২)

বাইবেলের নতুন নিয়ম(New Testament) আমাদেরকে জানাচ্ছে যে সিনাই পাহাড়টিই আরবে অবস্থিত। এ থেকে নিশ্চিতভাবে প্রমাণ হচ্ছে যে পারানের মিশরে অবস্থিত হবার কোন সম্ভাবনাই নেই বরং পারান আরবে অবস্থিত।

“হাগার হচ্ছেন আরব দেশের সিনাই পর্বতের মত এবং বর্তমান জেরুসালেম নগরের প্রতিরূপ।কারণ সে তার সন্তানদের সাথে দাসত্বে আবদ্ধ।”
(গালাতীয়(Galatians) ৪:২৫)

বাইবেলে বর্ণিত পারান আরবে অবস্থিত—এটি প্রমাণ করে যে ইব্রাহিম(আ) তাঁর স্ত্রী হাজিরা(Hagar) ও সন্তান ইসমাঈল(আ)কে আরবে রেখে এসেছিলেন, তিনি অবশ্যই আরবে এসেছিলেন। খ্রিষ্টান মিশনারী ও মুক্তমনাদের দাবি মিথ্যা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!