Skip to content

 

পীর বা শায়খে তরীকতের প্রয়োজনীয়তা এবং কামেল ও খাঁটি পীরের আলামত

পীর বা শায়খে তরীকতের প্রয়োজনীয়তা এবং কামেল ও খাঁটি পীরের আলামত

বিষয়: পীর বা শায়খে তরীকতের প্রয়োজনীয়তা এবং কামেল ও খাঁটি পীরের আলামত।
হ্যাশট্যাগ: পীর বা শায়খে তরীকতের প্রয়োজনীয়তা এবং কামেল ও খাঁটি পীরের আলামত।

পীর বা শায়খে তরীকতের প্রয়োজনীয়তাঃ

নামায, রোযা, হজ্জ যাকাত প্রভৃতি শরী’আতের জাহিরী বিধানের উপর আমল করা যেমন জরুরী তেমনি ভাবে এখলাস, আল্লাহ্র মহব্বত, রেজা, প্রভৃতি কলবের গুণাবলী হাছিল করা এবং রিয়া, তাকাব্বুর প্রভৃতি অন্তরের ব্যাধি দূর করা তথা বাতিনী বিধানের উপর আমল করাও জরুরী এবং ওয়াজিব। এই বাতিনী বিধানাবলীর উপর আমল করাকে বলা হয় তাকিয়া, এসলাহে বাতেন বা রূহানী এসলাহ।

ফতওয়ার ভাষায় দ্ব্যর্থহীন ভাবে একথা বলা হয় না যে, পীর ধরা ফরয বা ওয়াজিব। তবে তাকিয়া বা এসলাহে বাতেন ওয়াজিব। সাধারণ ভাবে যেহেতু উস্তাদ বিহনে কোন শাস্ত্র সঠিকভাবে আয়ত্ব করা যায় না এবং পথ প্রদর্শক ছাড়া পথ চলা যায় না বা চলা গেলেও বিপথগামী হওয়ার ও ভুলপথে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনি ভাবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য ছাড়া রোগ নির্ণয় করা যায় না বা করা সম্ভব হলেও নিজে নিজে চিকিৎসা করতে যাওয়াতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এসবের ভিত্তিতে একজন সঠিক উস্তাদ, একজন সঠিক পথ প্রদর্শক ও একজন অভিজ্ঞ রূহানী চিকিৎসক হিসেবে পীর বা শায়খে তরীকতের সহযোগিতা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী।

হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) লিখেছেনঃ হযরত রাসূল (সাঃ) সমস্ত মুসলমানের খায়েরখাহী করা, ধর্ম সম্বন্ধে কারও নিন্দাবাদ গালির পরওয়া না করা, কারও সামনে হাত না পাতা ইত্যাদি বিষয়ের জন্য বায়আত গ্রহণ করেছেন। এসব দলীলের ভিত্তিতে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, বায়আতে সুলূক (অর্থাৎ পীরের হাতে বায়আত) সুন্নাত।

এক সময় খেলাফতের বায়আতের সাথে গোলমাল না হয় এই ভয়ে সালাফে সালেহীন (পূর্বসূরীগণ) বায়আতে সুলূক বাদ দিয়ে শুধু ছোহবতের উপর ক্ষ্যান্ত করেন। আবার বায়আতের পরিবর্তে খেকার রছমও জারী হয়। পরে যখন খেলাফতের বায়আতের সাথে গোলমালের আর কোন ভয় না থাকে, তখন সুফিয়ায়ে কেরাম আবার এই মুরদা সুন্নাত যিন্দা করেন। পীর বা শায়খে তরীকত মুরীদকে আল্লাহ্র হুকুম-আহকাম পালন এবং তাঁর জাহিরী বাতিনী ভুল-ত্রুটি সংশোধনের পন্থা বাতলে দিবেন এবং মুরীদ সে অনুযায়ী চলে আল্লাহ্‌কে সন্তুষ্ট করবে। এই আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভ ও তাঁর রেজামন্দী হাছিল করা তথা আল্লাহ্‌কে পাওয়াই হল পীর-মুরীদী ও ফকীরী- দরবেশী শিক্ষা করার আসল উদ্দেশ্য। এছাড়া অন্যান্য উদ্দেশ্যে, যেমন মুরীদ হলে নানা রকম কারামত লাভ করা যাবে বা পীর সাহেব কিয়ামতের দিন পার হওয়ার ব্যবস্থা করবেন বা পীর তাওয়াজ্জুহ দিয়ে সব ঠিক করে দিবেন বা পীরের থেকে নানা রকম তাবীয তদবীর লাভ করা যাবে, অন্তরে জযবা এসে একেবারে মত্ত দিওয়ানা হয়ে যাবে ইত্যাদি- এসব উদ্দেশ্য ঠিক নয়, এগুলো পীর মুরীদীর উদ্দেশ্য নয়।

সারকথা, পীর-বুযুর্গের হাতে বায়আত গ্রহণ করা সুন্নাত এবং নফসের এসলাহ করা জরুরী। আর এই জরুরী দায়িত্ব পালনে হক্কানী পীরের ছোহবত ও দিক নির্দেশনা অত্যন্ত উপকারী। তবে স্মরণ রাখা দরকার যে, ভণ্ড ঠকবাজ পীরের হাতে বায়আত হওয়া অত্যন্ত ক্ষতিকর। হক্কানী পীর না পেলে হক্কানী উলামায়ে কেরাম থেকে মাসলা-মাসায়েল জেনে এবং সহীহ দ্বীনী কিতাবাদী পড়ে ও জেনে সে অনুযায়ী আমল করতে থাকবে। হক্কানী বুযুর্গের ছোহবত লাভের সুযোগ না পেলে তাদের কিতাব ও মালফূজাত পাঠ করেও বহু ফায়দা পাওয়া যাবে। শায়খে কামেলের অনেকটা বিকল্প হল তাঁদের কিতাব ও মালফূজাত পাঠ করা।

কামেল ও খাঁটি পীরের আলামতঃ

১. পীর তাফসীর, হাদীছ, ফেকাহ-অভিজ্ঞ আলেম হবেন। অন্ততঃ পক্ষে মেশকাত শরীফ ও জালালাইন শরীফ বুঝে পড়েছেন এতটুকু পরিমাণ ইল্স থাকা আবশ্যক।

২. পীরের আকীদা ও আমল শরী’আতের মোয়াফেক হওয়া দরকার এবং স্বভাব-চরিত্র ও অন্যান্য গুণাবলী যেরকম শরী আত চায় সেরকম হওয়া দরকার।

৩. পীরের মধ্যে টাকা-পয়সার ও সম্মান-সুখ্যাতির লোভ থাকবে না। নিজে কামেল হওয়ার দাবী করবেন না।

৪. তিনি কোন কামেল ও খাঁটি পীরের কাছ থেকে এসলাহে বাতেন ও তরীকত হাছিল করে থাকবেন।

৫. সমসাময়িক পরহেযগার মোত্তাকী আলেমগণ এবং খাঁটি সুন্নাত তরীকার পীর মাশায়েখগণ তাকে ভাল বলে মনে করেন।

৬. দুনিয়াদার অপেক্ষা সমঝদার দ্বীনদার লোকেরাই তার প্রতি বেশী ভক্তি শ্রদ্ধা রাখে-এমন হতে হবে।

৭. তার মুরীদদের অধিকাংশ এমন যে, তারা শরী আতের পাবন্দী করে এবং দুনিয়ার লোভ-লালসা কম রাখে।

৮. পীর মনোযোগ সহকারে মুরীদদের তালীম তালকীন ও এসলাহে বাতেন করান, তাদের কোন দোষ-ত্রুটি দেখলে সংশোধন করে দেন, তাদের মতলব ও মর্জি মত স্বাধীন ছেড়ে দেন না।

৯. তার ছোহবতে কিছুদিন থাকলে দুনিয়ার মহব্বত কম ও আখেরাতের চিন্তা বেশী হতে থাকে।

১০. পীর নিজেও রীতিমত যেকের শোগল করেন। (অন্ততঃ পক্ষে করার এরাদা রাখেন) কেননা নিজে আমল না করলে তার তা’লীম তালকীনে বরকত হয় না।

সমাপ্ত: পীর বা শায়খে তরীকতের প্রয়োজনীয়তা এবং কামেল ও খাঁটি পীরের আলামত।
সূত্র: আহকামে যিন্দেগী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!