বিষয়: কাযা নামাজের বিধান মাসায়েল, উমরী কাযার মাসায়েল, নামাজের ফেদিয়া কাযার মাসায়েল।
কাযা নামাজের বিধান মাসায়েল
◆ কারও কোন ফরয নামাজ ছুটে গেলে স্মরণ আসা মাত্রই কাযা পড়া ওয়াজিব-বিনা ওজরে কাযা করতে বিলম্ব করা পাপ।
◆ কাযা নামাজ পড়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় নেই- হারাম ও মাকরূহ ওয়াক্ত ছাড়া যে কোন সময় পড়া যায়।
◆ কারও যদি এক, দুই, তিন, চার বা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কাযা হয় এবং এর পূর্বে তার কোন কাযা নেই, তাহলোে তাকে ‘ছাহেবে তারতীব’ বলে। তাকে দুই ধরনের তারতীব রক্ষা করতে হবে-
(১) ওয়াক্তিয়া নামাজের পূর্বে এই কাযাগুলো পড়ে নিতে হবে, অন্যথায় ওয়াক্তিয়া নামাজ শুদ্ধ হবে না।
(২) এই কাযা নামাজগুলোও ধারাবাহিকভাবে (আগেরটা আগে এবং পরেরটা পরে) পড়তে হবে। ছাহেবে তারতীবের জন্য এই ধরনের তারতীব রক্ষা করা ফরয। যদি কারও যিম্মায় ছয় বা আরও বেশী ওয়াক্তের কাযা থাকে তাহলোে সে কাযা রেখে ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়তে পারে এবং কাযা নামাজগুলিও তারতীব ছাড়া পড়তে পারে, সে ছাহেবে তারতীব থাকে না।
◆ কারও যিম্মায় ছয় বা ততোধিক নামাজ কাযা ছিল সে কারণে সে ছাহেবে তারতীব ছিল না, সে সব কাযা পড়ে ফেলল, তাহলোে সে এখন থেকে আবার ছাহেবে তারতীব হবে। অতএব আবার যদি পাঁচ ওয়াক্ত পর্যন্ত কাযা হয় তাহলোে আবার তারতীব রক্ষা করা ফরয হবে।
◆ বহু সংখ্যক নামাজের অল্প অল্প করে কাযা পড়তে পড়তে পাঁচ ওয়াক্ত বা তার কম চলে আসলেও তারতীব ওয়াজিব হবে না।
◆ তিন কারণে তারতীব মাফ হয়ে যায়।
(১) ওয়াক্ত যদি এত সংকীর্ণ হয় যে, আগে কাযা পড়তে গেলে ওয়াক্তিয়া নামাজের সময় থাকে না, তাহলোে আগে ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়ে নিবে।
(২) কাযা নামাজ যদি পাঁচ ওয়াক্তের অধিক হয়।
(৩) যদি আগে কাযা পড়তে ভুলে যায়।
◆ শুধু ফরয এবং বেতরের কাযা পড়ার নিয়ম। নফল বা সুন্নাতের কাযা হয় না। তবে কোন নফল বা সুন্নাত শুরু করে পূর্ণ না করেই ছেড়ে দিলে তার কাযা করতে হবে। সুন্নাতের মধ্যে ফজরের সুন্নাতের ব্যাপারে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, সে সম্পর্কে আলাদা একটি পোষে।ট আলোচনা করা হবে।
◆ যদি কোন কারণ বশতঃ দলশুদ্ধ লোকের নামাজ কাযা হয়ে যায় তাহলোে তারা ওয়াক্তিয়া নামাজ যেমন জামা’আতে পড়ত তদ্রূপ কাযা নামাজও জামা’আতে পড়বে। ছিরিয়া নামাজের কাযার মধ্যে কিরাত চুপে চুপে পড়বে এবং জিরিয়া নামাজের কাযার মধ্যে কেরাত উচ্চস্বরে পড়বে।

উমরী কাযার মাসায়েল
◆ যদি কোন লোক শয়তানের ধোকায় পড়ে জীবনের প্রথম দিকে বা কোন একটা দীর্ঘ সময় বহু নামাজ ছেড়ে দিয়ে থাকে এবং পরবর্তীতে সে নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করে, তাহলোে বিগত জীবনের এই ছেড়ে দেয়া নামাজগুলো শুধু তওবা দ্বারা মাফ হয়ে যাবে না বরং সব নামাজের কাযা পড়া ওয়াজিব। সাধারণভাবে জীবনের এরূপ দীর্ঘ ছুটে যাওয়া নামাজের কাযাকে ‘উদ্গ্রী কাযা’ বলা হয়।
◆ বালেগ হওয়ার পর থেকে যত নামাজ ছুটে গিয়েছে তার একটা হিসাব করে সবগুলোর কাযা করতে হবে। যথাশীঘ্রই সম্ভব এবং যতবেশী করে সম্ভব এই কাযাগুলো পড়ে নিবে। এক এক ওয়াক্তে কয়েক ওয়াক্তের কাযা পড়ে নিতে পারলেও পড়ে নিবে। এক এক ওয়াক্তে কয়েক ওয়াক্তের কাযা পড়ে নিতে পারলে ভাল। জোহরের কাযা জোহরের ওয়াক্তে, আসরের কাযা আসরের ওয়াক্তে এমনিভাবে ওয়াক্তের কাযা সেই ওয়াক্তেই পড়া জরুরী নয়।
◆ উদ্গ্রী কাযার নিয়তের মধ্যেও কোন্ নামাজের কাযা করছে তা নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। সাধারণভাবে কোন্ দিন কোন্ তারিখের নামাজ কাযা পড়া হছে তা মনে করা এবং নির্দিষ্ট করা মুশকিল, তাই নিয়তের মধ্যে নির্দিষ্ট করার সহজ উপায় হলো এরূপ নিয়ত করবে-আমার যিম্মায় যতগুলো ফজরের নামাজ কাযা রয়েছে তার প্রথমটা কাযা করার নিয়ত করছি। এমনিভাবে জোহরের নামাজের কাযা করার ক্ষেত্রেও অনুরূপ নিয়ত করবে যে, আমার যিম্মায় যতগুলি জোহরের নামাজের কাযা রয়েছে তার প্রথমটা কাযা করার নিয়ত করছি। এরূপ প্রত্যেক ওয়াক্তের কাযা করার ক্ষেত্রে এ রকম নিয়ত করে কাযা করতে থাকবে।
নামাজের ফেদিয়া কাযার মাসায়েল
◆ যদি কারও নামাজ ছুটে গিয়ে থাকে এবং তার কাযা করার পূর্বে মৃত্যু এসে পড়ে, তাহলোে মৃতের ঐ সব নামাজের জন্য ফেদিয়া দেয়ার ওছিয়াত করে যাওয়া তার উপর ওয়াজিব। এরূপ অবস্থায় ওয়ারিছগণ তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে এই ফেদিয়া আদায় করবে। পরিত্যাক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের মধ্যে ফেদিয়া আদায় হলোে তা আদায় করা ওয়ারিছদের উপর ওয়াজিব। এক তৃতীয়াংশের মধ্যে আদায় না হলোে যতটুকু অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে তা সকল ওয়ারিছদের সম্মতিতে হতে হবে। তবে নাবালেগদের সম্মতি হলোেও তার অংশ থেকে নেয়া যাবে না।
◆ ছদকায়ে ফিতর বা ফিতরার পরিমাণ যা, নামাজের ফেদিয়ার পরিমাণও তাই ৷ প্রতি ওয়াক্ত ফরয নামাজ এবং বিতর নামাজের বদলে এক একটা ফেদিয়া আদায় করতে হবে। প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং বিতর নামাজ এই ছয়টা নামাজের অর্থাৎ, প্রতিদিনের ছয়টা ফেদিয়া আদায় করতে হবে।
◆ ছদকায়ে ফিতির যাদেরকে দেয়া যায় নামাজের ফেদিয়াও তাদেরকে দেয়া যায়
◆ মৃত ব্যক্তির যিম্মায় কাযা রয়ে গেছে, কিন্তু তিনি ওছিয়াত করে যাননি, এমতাবস্থায় তার বালেগ উত্তরসূরীগণ যদি নিজেদের সম্পত্তি থেকে স্বেচ্ছায় তার ফেদিয়া আদায় করে তাহলোেও আশা করা যায় আল্লাহ এর ওছীলায় মৃতকে ক্ষমা করবেন।
সমাপ্ত: কাযা নামাজের বিধান ও মাসায়েল, উমরী কাযার মাসায়েল, নামাজের ফেদিয়া কাযার মাসায়েল।
সূত্র: আহকামে যিন্দেগী।