Skip to content

 

কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ

জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ

রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ, সিল্ভার কার্প, গ্রাস্ কার্প, কমন্‌ কার্প প্রভৃতি মাছকে ‘কার্প জাতীয় মাছ’ বলা হয়। এসব মাছ পুকুরের ভিন্ন ভিন্ন স্তরের খাবার খায়।

পুকুরের বিভিন্ন স্তরে উৎপন্ন প্রাকৃতিক খাদ্য সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করে অধিক উৎপাদন পাওয়ার জন্য একটি পুকুরে এক সাথে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়। এরূপ মাছ চাষকে ‘মিশ্র চাষ’ বলা হয়। সফলভাবে মাছ চাষের জন্য উর্বর মাটি ও পানি, পর্যাপ্ত সূর্যের আলো, সুস্থ সবল পোনা,

সার, সম্পূরক খাদ্য এবং সুষ্ঠু পরিচর্যা প্রয়োজন। কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষের ধারাবাহিক পদক্ষেপগুলো আলোচনা করা হলো:

১. পুকুর নির্বাচন, ২. পুকুর প্রস্তুতকরণ, ৩. পোনা মজুদ, ৪. সার প্রয়োগ, ৫. সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ, ৬. সুষ্ঠু পরিচর্যা, ৭. কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষের কিছু সমস্যা ও সমাধান এবং ৮. মাছ আহরণ।

১. পুকুর নির্বাচন

  • পুকুর নির্বাচনের সময় স্থান, মাটির গুণাগুণ, পানির গভীরতা, আকার ও আয়তন এবং পরিবেশ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করতে হয়। স্থান নির্বাচনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, পুকুরটি যেন বসতবাড়ির কাছাকাছি থাকে। যাতে খাদ্য সরবরাহ ও সার প্রয়োগে সুবিধে হয়।
  • ৩০ শতাংশ থেকে ১ একর আকারের পুকুর বেশি উপযোগী। পুকুর পাড়ে বড় গাছ বা ঝোপ ঝাড় থাকা উচিত নয়। বড় গাছের পাতা পড়ে পুকুরের পানি নষ্ট করে। ঝোপ ঝাড়ে মৎস্যভূক ও ক্ষতিকর প্রাণী বাস করতে পারে। মাছ চাষের জন্য দো-আঁশ মাটির পুকুর উত্তম।
See also  মাছ চাষ ও মাছ ধরার (19 প্রকার) জাল এর নাম ব্যবহার ও বৈশিষ্ট্য, জাল সংরক্ষণ এর নিয়ম, জাল নষ্ট হওয়ার কারণ ও জালের যত্ন#আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ#চাষ মাছ চাষ করার সহজ উপায়#মাছ চাষের পদ্ধতি#মাছ চাষের নিয়ম

২. পুকুর প্রস্তুতকরণ

কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষের জন্য পূর্বের পোষ্টে বর্ণিত পদ্ধতিতে যথাযথভাবে পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। পুকুও প্রস্তুতি বিষয়ক পোষ্টটি না পড়ে থাকলে খামারিয়ান.কম থেকে পড়ে নিন।

৩. পোনা মজুদ

সুস্থ সবল পোনা অধিক উৎপাদনের পূর্বশর্ত। পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মানোর পর পোনা মজুদ করতে হবে। পুকুরে ৮-১২ সেন্টিমিটার আকারের পোনা মজুদ করা উচিত। বিভিন্ন প্রজাতির পোনার আকার সমান হলে ভালো হয়।

পোনার সংখ্যা: পুকুরে পোনার সংখ্যা ব্যবস্থাপনার ধরণ সাপেক্ষে কিছু কম বেশি হতে পারে। সাধারণভাবে কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষে পুকুরে পোনা মজুদ করা যেতে পারে। সুষম খাদ্য সরবরাহ ও উন্নত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে পোনার সংখ্যা আনুপাতিক হারে কিছুটা বাড়তে পারে।

৪. সার প্রয়োগ

পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্যের পর্যাপ্ত যোগান দেওয়ার জন্য পোনা মজুদের পর পুকুরে প্রতিদিন বা সপ্তাহে ১ দিন ভিত্তিতে মাছ আহরণের পূর্ব পর্যন্ত নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হয়। অধিক উৎপাদন পেতে হলে প্রতিদিন সার প্রয়োগ করা ভালো। এতে খরচও কম হয়।

৫. সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ

পুকুরের মাছকে বাইরে থেকে খাবার দেওয়া হয় তাই সম্পূরক খাদ্য। শুধু প্রাকৃতিক খাদ্যে মাছের পূর্ণ পুষ্টি সাধন হয় না। এ জন্য মাছকে প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণ সুষম খাদ্য দেওয়া উচিত।

খাদ্য তৈরির পদ্ধতি: প্রয়োজনীয় পরিমাণ সরিষার খইল কোনো পাত্রে ১০-১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভিজা খইল, কুঁড়া, ও চিটাগুড় একত্রে মিশিয়ে ছোট গোল বল বানাতে হবে।

খাদ্যের পরিমাণ নির্ণয়: পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য থাকলে কার্প জাতীয় মাছের ক্ষেত্রে পুকুরে মজুদ মাছের মোট ওজনের শতকরা ৩ ভাগ হারে সম্পূরক খাদ্য দিতে হয়। শীতকালে শতকরা ২ ভাগ খাদ্যই যথেষ্ট।

খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি: প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য দু ভাগ করে সকাল ও বিকাল দু বারে দিতে হয়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময় খাবার দিলে অপচয় বা খাবার নষ্ট হয় না। প্রয়োজনীয় খাদ্য ঝুড়ি বা সানকিতে করে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে পানির নিচে ঝুলিয়ে দিতে হবে। একই সময়ে কয়েকটি স্থানে খাদ্য দিতে হয়। এতে প্রতিযোগিতা কম হয়।

See also  বিভিন্ন মাছের পোনা চেনার উপায় ও মজুদ পুকুরে মাছ চাষ পদ্ধতি

৬. সুষ্ঠু পরিচর্যা

  • মাছের বৃদ্ধি স্বাস্থ্য ও রোগ বালাই পরীক্ষার জন্য প্রতিমাসে একবার জাল টেনে মাছ পর্যবেক্ষণ করা উচিত। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং ফাইটোপ্ল্যাংকটন্ ও জুপ্ল্যাংকটন্ জলজ পরিবেশের নিয়ন্ত্রক উপাদান। এ জন্য নিয়মিত এগুলোর পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করা দরকার।
  • পূর্বে বর্ণিত উপায়ে পানির স্বচ্ছতা নির্ণয় করে পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাণ জানা যায়। ১০০ লিটার পানি প্ল্যাংকটন্‌ নেটে ছেঁকে নিলে যদি ১-২ মিলিলিটার প্ল্যাংকটন্‌ পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে পুকুরে যথেষ্ট প্রাকৃতিক খাদ্য আছে।

৭. মাছ আহরণ

  • মাছ আহরণ মাছ চাষের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এরপর খাদ্য গ্রহণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেলেও সে হারে দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে না। এ জন্য নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণ গুরুত্বপূর্ণ।
  • রুই, কাতলা, মৃগেল ৮-১২ মাসের মধ্যে ৭০০ গ্রাম থেকে ১.৫ কেজি পর্যন্ত হয়। সিল্ভার কার্প, মিরর্ কার্প, গ্রাস্ কার্প ৬-৭ মাসের মধ্যেই ১-১.৫ কেজি হয়। পোনা মজুদের ৬-৭ মাস পর বড় মাছগুলো ধরে বিক্রি করে দিতে হবে। সেই সাথে সমসংখ্যাক একই প্রজাতির বড় পোনা পুকুরে ছাড়তে হবে। এতে অধিক উৎপাদন পাওয়া যায়।

৮. কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষের কিছু সমস্যা ও সমাধান

পানির উপর সবুজ আস্তরণ

পুকুরের পানি দীর্ঘ সময় গাঢ় সবুজ থাকলে বা পানির উপর সবুজ আবরণের আস্তরণ পড়লে সার ও খাদ্য দেওয়া সাময়িক বন্ধ রাখতে হবে। অতিরিক্ত প্রাকৃতিক খাদ্যের জন্য এরূপ স্তর হয়। এর ফলে অক্সিজেনের অভাবে মাছ মারা যেতে পারে।

মাছের খাবি খাওয়া

পুকুরে অক্সিজেনের অভাব হলে মাছ খাবি খায়। এ অবস্থায় পুকুরে বাঁশ পিটিয়ে বা সাঁতার কেটে পানি ওলট-পালট করার ব্যবস্থা করলে সুফল পাওয়া যায়। পাম্প দিয়ে পুকুরে ফোয়ারার মতো পানি ছিটিয়ে দিতে পারলে সাময়িকভাবে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ানো যায়।

See also  মাছের পোনা উৎপাদন পদ্ধতি, হাপার সাহায্যে রুই জাতীয় মাছের পোনা উৎপাদন পদ্ধতি, হ্যাচারিতে রুই জাতীয় মাছের পোনা উৎপাদন, রুই মাছের পোনা, কিভাবে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মাছের ডিম পোনা তৈরি করা হয়?

প্রতি শতকে ১ মিটার পানির গভীরতার জন্য ১০০ গ্রাম হারে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট প্রয়োগ করে অক্সিজেনের অভাব দূর করা যায়।

খাদ্যের ব্যবহার পরীক্ষা

পুকুরে দেওয়া সম্পূরক খাদ্য মাছ পুরোপুরি গ্রহণ করছে কিনা খাদ্য দেওয়ার জায়গা মাঝে মাঝে পরীক্ষা করে তা নিশ্চিত হওয়া দরকার।

পানি ঘোলা থাকা

পুকুরের পানি সরবরাহ ঘোলা থাকলে মাছের উৎপাদন কম হয়। এজন্য প্রতি শতকে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। পুকুরের কোণায় খড়ের আঁটি রেখে দিলেও ঘোলা ভাব দূর হয়।

মাছের রোগ

মাছ বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। যেমন: পাখনা গচা, উকুন, জাত ক্ষত, ড্রপসি ইত্যাদি। এসব রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মাছে ১৯ প্রকার রোগ, লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আলাদা একটি বিস্তারিত পোষ্ট খামারিয়ান.কম এ রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!