Skip to content

 

কিডনি কি কাজ করে/কিডনির কাজ কি? অসমোরেগুলেশনে কিডনির ভূমিকা, কিডনির সমস্যার লক্ষণ ও কিডনিতে পাথর।

কিডনি কি কাজ করে/কিডনির কাজ কি? অসমোরেগুলেশনে কিডনির ভূমিকা, কিডনির সমস্যার লক্ষণ ও কিডনিতে পাথর।

বৃক্ক বা কিডনি (Kidney) কি? কিডনির সাধারন পরিচয়ঃ

কিডনি কোথায় থাকে?

মানবদেহের উদরগহ্বরের পিছনের অংশে, মেরুদন্ডের দুদিকে বক্ষপিঞ্জরের নিচে পিঠ-সংলগ্ন অবস্থায় দুটি বৃত্ত অবস্থান করে।

কিডনি দেখতে কেমন?

প্রতিটি বৃত্ত দেখতে শিমবিচির মতো এবং এর রং লালচে হয়। বৃক্কের বাইরের পার্শ্ব উত্তল এবং ভিতরের পার্শ্ব অবতল হয়।

অবতল অংশের ভাঁজকে হাইলাস (Hilus) বা হাইলাম বলে। হাইলামের ভিতর থেকে ইউরেটার এবং রেনাল শিরা বের হয় এবং রেনাল ধমনি বৃত্তে প্রবেশ করে। দুটি বৃদ্ধ থেকে দুটি ইউরেটার বের হয়ে মূত্রাশয়ে প্রবেশ করে। ইউরেটারের ফানেল আকৃতির প্রশস্ত অংশকে রেনাল পেলভিস বলে।

চিত্রঃ বৃক্কেরকিডনির লম্বচ্ছেদ

চিত্রঃ বৃক্কের/কিডনির লম্বচ্ছেদ

কিডনি কি দিয়ে তৈরি?

কিডনি সম্পূর্ণরূপে এক ধরনের তন্তুমর আবরণ দিয়ে বেন্টিত থাকে, একে রেনাল ক্যাপসুল বলে।

ক্যাপসুল সংলগ্ন অংশকে কর্টেক্স এবং ভিতরের অংশকে মেডুলা বলে। উভয় অঞ্চলই যোজক কলা এবং রক্তবাহী নালি দিয়ে গঠিত। মেডুলায় সাধারণত 8-12টি রেনাল পিরামিড থাকে। এদের অগ্রভাগ প্রসারিত হয়ে রেনাল প্যাপিলা (Papilla) গঠন করে। এসব প্যাপিলা সরাসরি পেলভিসে উন্মুক্ত হয়।

প্রতিটি বৃক্কে বিশেষ এক ধরনের নালিকা থাকে, যাকে ইউরিনিফেরাস নালিকা বলে। প্রতিটি ইউরিনিফেরাস নালিকা, নেফ্রন, (Nephron) এবং সংগ্ৰাহক ৰা সংগ্ৰাহী নালিকা (Collecting tubule)-এই দু’টি প্রধান অংশে বিভক্ত। নেব্রুন মূত্র তৈরি করে আর সংগ্রাহী নালিকা রেনাল পেলভিসে যূত্র বহন করে।

নেফ্রন ও নেফ্রনের কার্যপ্রণালিঃ

চিত্রঃ একটি নেফ্রন

চিত্রঃ একটি নেফ্রন

  • বৃদ্ধের ইউরিনিফেরাস নালিকার ক্ষরণকারী অংশ এবং কাজ করার একককে নেব্রুন বলে। মানবদেহের প্রতিটি বৃক্কে প্রায় 10-12 লক্ষ নেব্রুন থাকে। প্রতিটি নেব্রুন একটি রেনাল করগাসল (Renal corpuscle) বা মালপিক্ষিয়ান অঙ্গ এবং রেনাল টিউবঝুল (Renal tubule) নিয়ে গঠিত।
  • প্রতিটি রেনাল করপাসল আবার গ্লোমেরুলাস (Glomerulus) এবং বোম্যান্স ক্যাপসুল— এ দুটি অংশে বিভক্ত। বোম্যান্স ক্যাপসুল গ্লোমেরুলাসকে বেন্টন করে থাকে।
  • বোম্যান্স ক্যাপসুল দুই স্তরবিশিষ্ট পেয়ালার মতো প্রসারিত একটি অংশ। গ্লোমেরুলাস একগুচ্ছ কৈশিক জালিকা দিয়ে তৈরি। রেনাল ধমনি থেকে সৃষ্ট অ্যাঙ্কারেন্ট আর্টারিওল (Afferent arteriole) ক্যাপসুলের ভিতরে ঢুকে প্রায় 50টি কৈশিকবালিকা তৈরি করে। এগুলো আবার বিভক্ত হয়ে সুখ রক্তজালিকার সৃষ্টি করে। এসব জালিকার কৈশিকনালিগুলো মিলিত হয়ে ইফারেন্ট অ্যার্টারিওল (Efferent arteriole) সৃষ্টি করে এবং ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে আসে।
  • গ্লোমেরুলাস ছাঁকনির মতো কাজ করে রক্ত থেকে পরিহৃত তরল উৎপন্ন করে। এই তরুলকে বলে আল্ট্রাফিলট্রেট। সেই আল্ট্রাফিলট্রেট রেনাল টিউব্যুলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় আরও কয়েক দফা শোষণ এবং নিঃসরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। সবশেষে যে তরলটি পাওয়া যায়, সেটিই মূত্র, যা সংগ্রাহী নালিকার মধ্য দিয়ে ইউরেটার হয়ে মূত্রথলিতে জমা হতে থাকে।
  • বোম্যান্স ক্যাপসুলে অক্ষিয়দেশ থেকে সংগ্রাহী নালি পর্যন্ত বিস্তৃত চওড়া নালিকাটিকে রেনাল টিউব্যুল বলে। প্রতিটি রেনাল টিউব্যুল ওটি অংশে বিভক্ত, গোড়াদেশীয় বা নিকটবর্তী পাঁচানো নালিকা (Proximal convoluted tubule), হেনগি-র সুপ (Henle’s loop) এবং প্রান্তীয় প্যাঁচানো নালিকা (Distal convoluted tubule)।
চিত্রঃ নেফ্রনের কার্যপ্রণালি

চিত্রঃ নেফ্রনের কার্যপ্রণালি

কিডনি কি কাজ করে/কিডনির কাজ কি?

  1. একজন স্বাভাবিক মানুষ প্রতিদিন প্রায় 1500 মিলিলিটার মূত্র ত্যাগ করে। মূত্রে ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, অ্যামোনিয়া, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি নাইট্রোজেনঘটিত পদার্থ থাকে। এগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এসব অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ মুত্রের মাধ্যমে অপসারণে বৃদ্ধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  2. বৃদ্ধ বা কিডনির ভিতরের নেব্রুন একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে মূত্র উৎপন্ন করে। উৎপন্ন যূত্র সংগ্রাহী নালিকার মাধ্যমে বৃত্তের পেলভিলে পৌঁছায় এবং পেলভিস থেকে ইউরেটারের ফানেল আকৃতির প্রশস্ত অংশ বেয়ে ইউরেটারে প্রবেশ করে। ইউরেটার থেকে মূত্র সূত্রথলিতে আসে এবং সাময়িকভাবে জমা থাকে। মূত্র দিয়ে মূত্রথলি একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত পূর্ণ হলে মূত্র ত্যাগের ইচ্ছা জাগে এবং মূত্রথলির নিচের দিকে অবস্থিত ছিত্রপথে মূত্রনালির মাধ্যমে দেহের বাইরে বেরিয়ে আসে। এভাবে বৃক্ক বা কিডনি মানবদেহ থেকে ক্ষতিকর নাইট্রোজেন জাতীয় পদার্থসহ বিভিন্ন বর্জ্য অপসারণ করে।
  3. বৃদ্ধ মানবদেহে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড ইত্যাদির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়াও মানবদেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পানি, অম্ল এবং ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।

অসমোরেগুলেশনে কিডনির ভূমিকাঃ

যাবতীয় শারীরবৃত্তিক কাজ সম্পাদনের জন্য মানবদেহে পরিমিত পানি থাকা অপরিহার্য। মূলত মূত্রের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি পানি দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। দেহের পানিসাম্য নিয়ন্ত্রণে বৃক্ক প্রধান ভূমিকা পালন করে। বৃক্ক নেফ্রনের মাধমে পুনঃশোষণ প্রক্রিয়ায় দেহে পানির সমতা বজায় রাখে। গ্লোমেরুলাসে রেচন বর্জ্য, পানি এবং অন্যান্য তরল পদার্থ পরিসুত হয়।

বৃক্ক/কিডনি অকার্যকর হয়ে গেলে দেহে পানি জমতে থাকে। চোখ-মুখসহ সারা শরীর ফুলে যেতে পারে, এমনকি উচ্চ রক্তচাপও সৃষ্টি হতে পারে। এগুলো প্রকৃতপক্ষে অসমোরেগুলেশন জনিত ত্রুটির লক্ষণ।

কিডনির সমস্যার লক্ষণঃ

কিডনির রোগের লক্ষণগুলো হলো-

  1. শরীর ফুলে যাওয়া,
  2. প্রস্রাবে অতিরিক্ত প্রোটিন যাওয়া,
  3. রক্ত মিশ্রিত প্রস্রাব হওয়া,
  4. প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা,
  5. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বা ক্ষেত্রবিশেষে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া।

কিডনিতে পাথরঃ

নানারকম রোগের কারণে বৃদ্ধ বা কিডনির স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটে। কিডনির প্রদাহ, প্রস্রাবে সমস্যা, কিডনিতে পাথর হওয়া এর মাঝে উল্লেখযোগ্য। মানুষের কিডনিতে ছোট আকারের পাথর জাতীয় পদার্থের সৃষ্টিই বৃক্ক বা কিডনির পাথর হিসেবে পরিচিত।

কিডনিতে পাথর কাদের হয়?

কিডনিতে পাথর সবারই হতে পারে, তবে দেখা গেছে, মেয়েদের থেকে পুরুষের পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি। অতিরিক্ত শারীরিক ওজন, কিডনির সংক্রমণ, কম পানি পান করা ইত্যাদি বৃক্ক বা কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ হতে পারে।

কিডনিতে পাথর হলে কি হয়?

প্রাথমিকভাবে বৃক্কে পাথর হলে তেমন সমস্যা ধরা পড়ে না। সমস্যা হয় যখন পাথর প্রস্রাব নালিতে চলে আসে এবং প্রস্রাবে বাধা দেয়। উপসর্গ হিসেবে কোমরের পিছনে ব্যথা হবে। অনেকের প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হয়। অনেক সময় কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে।

কিডনিতে পাথরের চিকিৎসা কি?

বৃক্কের/কিডনির পাথরের চিকিৎসা নির্ভর করে পাথরের আকার এবং অবস্থানের উপর। সাধারণত অধিক পানি গ্রহণ এবং ঔষধ সেবনে পাথর অপসারণ করা যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে ইউরেটারোস্কোপিক কিংবা আল্ট্রাসনিক লিথট্রিপসি অথবা বৃক্কে অস্ত্রোপচার করে পাথর অপসারণ করা যায়।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!