বিষয়ঃ খামারিয়ান এর আজকের এই পোষ্টটিতে তুলে ধরা হবে, কিভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়াবেন? কথা বলার দক্ষতা অর্জন করুনঃ বক্তব্যে শ্রোতাদের মন জয় করা সহজ উপায়, একজন সফল বক্তা হওয়ার উপায়, বক্তব্য ওয়ার নিয়ম ও ভাষণ দেওয়ার নিয়ম, কথা বলার কৌশল, কথা বলার জড়তা দূর করার উপায় (পর্ব-২, লেখকঃ ডেল কার্নেগী, বই অনুবাদ)। আশা করি শেষ অবধি সাথেই থাকবেন, চলুন শুরু করা যাক।
আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
(২) কিভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়াবেন
◼ ‘পাঁচ বছর আগের সে দিনটির কথা আমি কোনদিনই ভুলতে পারবো না মিঃ কার্ণেগী। আপনি তখন ক্লাস নিচ্ছিলেন। আমি আলোচনা সভার সেই ঘরের সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভেতরে ঢুকতে সাহস পাইনি। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ, হাত- পা ঠান্ডা, মাথা ঝিম ঝিম করে উঠল ভয়ে, আমি জানতাম ঘরে ঢুকলেই আমাকে আলোচনা সভায় আপনার সামনে কিছু বলতে হবে। আমি ভীরু খরগোসের মত পালিয়ে বাঁচলাম যেন ৷ অথচ যদি আমি জানতাম কি করে ভয় সংকোচ কাটিয়ে শ্রোতাদের মুখোমুখি হতে হয়, তবে হয়তো জীবনের মূল্যবান পাঁচ পাঁচটা বছর এভাবে নষ্ট হত না।’
◼ টেবিলে আমার সামনে বসে কেউ কথা বলছিল না। উপরের কথাগুলো যার,। তিনি সেটা বলেছিলেন কয়েকশো লোকের সামনে বক্তৃতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে। আজ তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। আত্মবিশ্বাস আর উদ্দীপনায় ভরপুর। পাঁচ বছর আগেকার ভীরু লোকটিকে চেনা যায় না আজ।
একজন বিখ্যাত ঐতাহাসিক বলেছেন, পৃথিবীতে ভয়ে যত লোক পরাজিত হয়, অন্য কোন কিছুতেই তা হয় না। তাই ভয় আর হীনতা কাটাতে হবে।
(ক) ভয় পাবার কারণ খুঁজে বের করুন
◼ যখন যেখানে সুযোগ পাবেন কিছু বলার সঙ্গে সঙ্গে তা কাজে লাগান। জড়তা কাটিয়ে ওঠার সবচেয়ে সোজা এবং সহজ উপায় হলা কথা বলা। কারণ লোকের সামনে কথা বলার অনভ্যাসই আপনাকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলে। হৃৎপিন্ডের স্পন্দন বাড়িয়ে দেয়, নাড়ির গতি দ্রুততর করে-আপনি ঘামতে থাকেন। সব কিছু তালগোল পাকিয়ে যায়।
মনে রাখবেন, “নিয়মিত কিছু বলার অনুশীলনই হল ভয়-ভীতি থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র উপায়।”
(খ) সঠিক ভাবনায় নিজেকে তৈরী করুন
◼ একবার নিউইয়র্ক রোটারী ক্লাবের একজন কর্মকর্তা মিঃ ব্রাউনিং বক্তৃতামঞ্চে উঠে অদ্ভুত আচরণ করলেন। তাঁকে ক্লাবের অগ্রগতি সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে বলা হয়েছিল। তিনি বারবার ঢোক গিলে থতমত খেলেন। বিড়বিড় করে কি যে বলার চেষ্টার করলেন নিজেই জানেনা। টেবিলের উপর থেকে জলের গ্লাস টেনে নিলেন কাঁপা হাতে, পড়ে ভাঙলো গ্লাসটা। অপ্রস্তুত হয়ে কয়েক মিনিট যেন কি খুঁজে বেড়ালো, কিছু মনে এলো না তাঁর। অসহায় অপ্রস্তুত লজ্জিত মুখে হঠাৎ তিনি বসে পড়লেন তিনি নিজেই বুঝতে পারলেন না কি দিয়ে আরম্ভ করেছিলেন আর কেমন করেই বা শেষ করলেন।
◼ এ পর্যন্ত হিসেব করলে আমাকে এক বছরে গড়ে সারে চার হাজারের মত বক্তৃতা করতে হয়। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি কেনই বা মিঃ ব্রাউনিং ওরকম আনাড়ি ব্যবহার কলেন। মূল কারণ একটাই কোনরকম মানসিক ও ব্যবহারিক প্রস্তুতি ছাড়াই তিনি বক্তৃতা করার দুঃসাসহ দেখিয়েছিলেন। একমাত্র একজন প্রস্তুতি নেওয়া বক্তাই বক্তৃতা মঞ্চে অবিচল ভঙ্গিতে মনোগ্রাহী বক্তব্য রাখতে পারেন- অন্য কেউ নয়। কি করে, কেমন করে একজন ভাবতে পারে, পুরানো মরচে ধরা বন্দুক আর গোলা-বারুদ দিয়ে ভয়ের দুর্ভেদ্য দুর্গ জয় করে নেবে অথবা অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াই দুর্গে ঢুকে পড়া সহজ হবে।
◼ লিংকন একবার বলেছিলেন- আমি বিশ্বাস রাখি। এমন একদিন আমার বার্ধক্য আসবে, যখন কোন কিছু বলার কথা খুঁজে না পেলেও আমি অপ্রস্তুত হবো না শ্রোতাদের সামনে। এ রকম আত্মবিশ্বাস অর্জন করা লিংকনের পক্ষে সম্ভব হয়েছিলো। দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি আর অনুশীলনের ফলেই যদি আপনি আত্মবিশ্বাস বাড়াতে চান— সে চাবিকাঠি আপনারই হাতে। শ্রোতারাই আপনার নিরাপত্তার রক্ষাকবচ হবে- যদি আপনি তাদের আন্তরিকভাবে ভালবাসেন, তাদের চাওয়াটা অনুভব করতে পারেন হৃদয় দিয়ে। একজন ঐতিহাসিক ও প্রখ্যাত বক্তা একবার বলেছিলেন, শ্রোতাদের ভালোবাসা- তা’হলেই ভয় নামক জিনিসটা কুকুরের মত পালিয়ে যাবে তোমার সামনে থেকে।
মোদ্দা কথা হল, বক্তৃতা করার চেয়েও মনে মনে ভাবনা চিন্তা ও সত্যিকারের মানবিক প্রস্তুতি অনেক বেশী জরুরী।
(গ) স্মৃতি হাতড়ে শব্দ খুঁজবেন না
◼ একটা কথায় খটকা লাগতে পারে আপনার মনে, সত্যিকারের প্রস্তুতি বলতে কি বোঝাতে চাইছি। আপনি যদি ভেবে নেন যে পুরো বক্তৃতাটা পূর্বে লিখে নিয়ে মুখস্থ করে নিবেন- মঞ্চে উঠে গড়গড় করে বলে যাবেন- তাহলে আমি একশো বার উচ্চারণ করবো না…না…না এটা ঠিক নয়।
◼ কখনোই এ ধরনের আত্মহত্যা করতে যাবে না। বলার সময় দেখবেন আপনার মুখস্থ করা কথাটা, পাখির মত ডানা ঝাপটে কেটে কেটে পড়ছে। কালো ব্লাকবোর্ডের মত মনে হবে আপনার স্মৃতি-এক বর্ণও মনে না পড়াটা স্বাভাবিক হবে। ফলে আপনি ডুববেন। সব ভুলে যাবেন।
◼ আমেরিকার নিউট কমেনটের্টম-এর ডীন মিঃ ফোর্ড তখন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। একবার তিনি একটি গল্প বলার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তিনি একটি গল্প বেছে নেন— মুখস্থ করে ফেলেন দাঁড়ি কমা সুদ্ধ। গল্পটার নাম— এক যে ছিল মহৎ রাজা। যখন তিনি মঞ্চে উঠলেন বলার জন্য, তখন যথারিতী তিনি গল্পের নামটি গম্ভীর নিটোল উচ্চারণে ঘোষণা করলেন। মুশকিল হলো তার পরেই হাজারবার মুখস্থ করা গল্পের একটি লাইনও মনে পড়লো না তাঁর। চোখের সামনে সব অন্ধকার। তিনি ভীত হলেন। মরিয়া হয়ে তিনি নিজের মত করে সহজ ভাষায় সাদামাঠাভাবে গল্পটি বলতে শুরু করলেন। বলা শেষও করলেন। অনুষ্ঠান শেষে বিচারকমন্ডলী যখন তাঁকেই শ্রেষ্ঠ . পুরস্কারে ভূষিত করলেন, তখন তিনি বিষ্ময়ে বোকা হয়ে গেলেন। সেদিন থেকে আর কখনও মিঃ ফোর্ড মুখস্থ করার চেষ্টা আদৌ করেন না। আজ আমেরিকার বেতার ও টেলিভিশন মাধ্যমে মিঃ ফোর্ডের মত বক্তা খুবই কম আছেন। এটাই তাঁর জীবিকা I বেতার টিভি অনুষ্ঠান প্রচারকালীন তিনি কোন রকম লেখা কাগজ ছাড়াই মন থেকে বক্তব্য রাখেন।
◼ যারা লিখে নিয়ে মুখস্থ করতে চেষ্টা করেন তারা অযথা সময় নষ্ট করেন শক্তির অপচয় করেন। সারা জীবন ধরে আমরা যে অফুরন্ত বলে চলেছি তা কি আমরা লিখে নিয়ে মুখস্থ করে বলি না মন থেকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে বলি। আমরা শব্দ খুঁজেও বেড়াই না। আমরা শুধু মূল বিষয় বা প্রসঙ্গটাই মনে রাখি ভাবনার গভীরে। যদি আমার ধারণা পরিষ্কার থাকে বক্তব্য বিষয়ে তাহলে বাতাসে টেনে নেবার মতই নিঃশ্বাস নেবার মতই সহজ হয়ে উঠবে কথা বলাটা।
◼ এমন কি উইনষ্টন চার্চিলের মত ব্যক্তিকেও অনেক ঠোক্কর খেয়ে এটা শিখতে হয়েছিলো। প্রথমে যৌবনে চার্চিল বক্তব্য বিষয় পুরোটা লিখে ফেলতেন আর মুখস্ত করতেন তোতা পাখির মত। একবার হলো কি, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আর বক্তৃতা করার সময় মুখস্থ বক্তৃতার একটা অক্ষরও মনে পড়লো না। মনের ক্ষমতটাই যেন অকেজো হয়ে গেলো। চোখের সামনে কেউ যেন বিস্মৃতির কালো পর্দা টানিয়ে দিলো। তিনি প্রচণ্ড অপ্রস্তুত হলেন। ঘামতে শুরু করলেন। ঘুরেফিরে একটা লাইনই বারবার বলতে থাকলেন। কোন উপায় না দেখে লজ্জায় অপমানে মুখ কালো করে বসে পড়লেন। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আর কখনও উইনষ্টন চার্চিল মুখস্থ কোন চেষ্টাই করেননি।
◼ যদি আমরা বক্তৃতাটা আগে লিখে নিয়ে দাঁড়ি-কমাসুদ্ধ মুখস্থও করে ফেলি, তাহলেও বলার সময় সবই ভুলে যেতে পারি। যদি ভুলে নাও যাই, তাহলেও বক্তৃতাটা হয়ে উঠবে একঘেয়ে, বিরক্তিকর আর যান্ত্রিক। কেন এটা হয়? কারণ হল হৃদয়ের গভীর থেকে আন্তরিকভাবে বলা হয়ে ওঠে না, বক্তব্যটা হয়ে যায় কথা-ফাঁকা বুলি মাত্র।
তাই মুখস্থ করবেন না। মূল বক্তব্য বিষয়টা নিয়ে আন্তরিকভাবে ভাবুন। বারবার ভাবুন।
(ঘ) চিন্তার সূত্রগুলোকে একত্রিত করুনঃ
◼ তাহলে ভালো বক্তৃতা দেবার সহজ উপায় কি দাঁড়ালো? সহজ কথায় ঃ আপনার অভিজ্ঞতা থেকে বলার উপাদান বেছে নিন। কিছু না কিছু অভিজ্ঞতা আপনার থাকবেই। শুধু ঠিকমত বেছে কাজে লাগাতে হবে, এই যা। তাহলে সহজ সোজা কথায় জোরালো সাড়া ফেলতে পারবেন শ্রোতার হৃদয়ে।
সত্যিকার প্রস্তুতি নিন- বক্তব্যের সার কথা নিয়ে। মূল বিষয়গুলোকে পরিবর্ধন- পরিমার্জন করে নিন অল্প কথায়। মনে রাখার সুবিধার জন্য দুটো শব্দে পরিকল্পিত করুন। এটা করা কি কঠিন মনে হচ্ছে?
◼ শুধু দরকার হবে গভীর মনোনিবেশ করা এবং বক্তব্যের মূল সূত্রকে ঘিরে আন্তরিক অনুশীলন।
(ঙ) বন্ধুদের মাঝে বক্তৃতা দেওয়ার অভ্যাস করুন
◼ আপনার চারপাশে বন্ধু-বান্ধবদের ভেতরই বক্তৃতা করার অভ্যাস করতে শুরু করুন। প্রথমে মূল বক্তব্য বিষয়টা ঠিক করে নিন। কি নিয়ে বক্তব্য রাখবেন আপনি, সেটা ঠিক করতে ভুল হলে সবই গন্ডগোল হয়ে যাবে তালগোল পাকিয়ে যাবে চিন্তার ‘অসংগতি আর বিচ্ছিন্নতায়। যাতে বন্ধুরা বিরক্ত না হয় এভাবে একটু কায়দা করে শুরু করুন। বুঝলে রিচার্ড, আজ এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হল আমার- নইলে বিরক্ত হয়ে হাই তুলবে। বলার সময় রিচার্ডের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করুন- সে কিভাবে নিচ্ছে গল্পটা- কতটা আগ্রহ নিয়ে শুনেছ, কোন মাতামত দিলে সেটা সংগ্রহ করতে পারেন। রিচার্ড তো আর জানে না যে, আপনি বক্তৃতা দেওয়ার মহড়া চালিয়ে যাচ্ছেন ওর সামনে।
বিখ্যাত একজন ঐতিহাসিকের বক্তব্য হল- এমন বিষয় নির্বচান করুন যে বিষয়ে তিনি জানতে আগ্রহী। এভাবে নানারকমভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বক্তব্য রাখতে সক্ষম হবেন। আপনি ভুল-ত্রুটিও শুধরে নেবার অফুরন্ত সুযোগ পাবেন। এছাড়াও বন্ধুবান্ধবের মতামত আপনাকে সাহায্য করবে সফল বক্তৃতা করতে।
অনুশীলন করুন। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কথা বলা মহড়া চালান, নিজেকে তৈরী করে নিন সঠিকভাবে।
(চ) আসন্ন জয়লাভের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখুন
◼ কি কি উপায়ে তা আপনি করতে পারেন?
◼ প্রথমত বিষয়বস্তুর গভীরে ডুব দিন।
বিষয়বস্তু নির্বাচন হওয়ামাত্রই, ভাল করে ভাবনা-চিন্তা করুন তা নিয়ে। নিজের অভিজ্ঞতাকে মিশিয়ে দেবার চেষ্টা করুন। অপর বক্তা কি বলেন সেটা খেয়াল করুন মনোযোগ দিয়ে। তাহলেই আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হবে।
(ছ) পরিপূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করুন
◼ মনস্তত্বের প্রফেসর মিঃ মার্টিনের কথা বলতে হয়, ভাবনা আগে কাজ পরে, যদিও এটাই আমরা সবাই জানি, তবু প্রকৃতপক্ষে ভাবনা আর কাজ পরস্পর হাত ধরাধরি করে হাঁটে। যদিও ভাবনার হাতেই থাকে কাজের নিয়ন্ত্রণ ভার, আবার ইচ্ছাশক্তির অধীনেই থাকে ভাবনার রশি টানার ভার। আমরা পরোক্ষভাবে যদিও ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করি কিন্তু আসলে তা ঠিক নয়। তাই নিজেকে সাহসী ভাবতে শিখলেই কাজের বেলাতেও সাহসী হয়ে উঠতে পারবেন। সমস্ত ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সাহসী ভাবতে পারলেই ভয়-ভীতি সত্যি সত্যি কেটে যাবে।
◼ প্রফেসর মিঃ মার্টিনের উপদেশকে কাজে লাগান। শ্রোতার সামনে বলার সময় নিজেকে সাহসী ভেবে ফেলুন। অবশ্য প্রস্তুতিবিহীন চেষ্টাতে এরকম ভাবটা কার্যকর হবে না। শুধু ভেবে নিতে হবে কি বিষয়ে আপনি বলতে চলেছেন। সোজা হয়ে দাঁড়ান। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিন ত্রিশ সেকেন্ড। তাজা বুকভরা অক্সিজেন টেনে নেবার পর দেখবেন শরীর ও মন চাঙা হয়ে উঠেছে। আপনি সাহসী হয়ে বলার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছেন।
সোজা টানটান হয়ে দাঁড়ান। চোখের দৃষ্টি হবে সোজা। সরাসরি শ্রোতাদের চোখের দিকে তাকান পুরো আত্মবিশ্বাস নিয়ে বক্তব্য রাখুন।
◼ একজন বিখ্যাত আমেরিকান তাঁর নিজের লেখা আত্মজীবনীতে লিখেছেন- আমি ছিলাম রুগ্ন। সব সময়ই ভয়ে ভয়ে থাকতাম। আমার ক্ষমতার ওপর একদমই বিশ্বাস ছিলো না। আস্তে আস্তে শরীর ও মনের উপর বিশ্বাস জন্মানোর চেষ্টা চালিয়ে সফল হলাম।
◼ একদিন সারা আমেরিকার লোক তাকে জানতো সাহসের প্রতীক বলে। সত্যনিষ্ঠ- দৃঢ়চেতা-মনোজ্ঞ বক্তা আর অসীম সাহসী শিকারী হিসেবে যিনি সারা আমেরিকাবাসীর হৃদয়ে অধিকার স্থাপন করেছিলেন, তিনি আর কেউ নন, প্রেসিডেন্ট ডোর রুজভেল্ট। ভয়-ভীতিকে দূরে সরিয়ে দিয়ে জনসমক্ষে ভালো বক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার এমন অনেক নজির আছে, যা পরবর্তী সময়ে, তাঁদের জীবনের আলাদা মূল্যায়নের রূপান্তরিত হতে সাহায্য করেছিল।
◼ একজন সেলসম্যান আমাকে লিখেছিলো- কিছুদিন আপনার নির্দেশাবলী আন্তরিকভাবে পালন করার পর এমন হল যে, আমি এখন যে-কোন লোকের মোকাবিলা করতে পারি। একদিন সকালে আমি নাছোড়বান্দা কাঠ গোঁয়ার মক্কেলের কাছে আমার মাল বিক্রির জন্য গেলাম। সে বহুবার আমাকে মুখের উপর রূঢ়ভাবে ‘না’ বলে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি কিন্তু মক্কেলটি ‘না’ করে দেবার পূর্বেই সমস্ত স্যাম্পল ফাইল দিয়ে তার দেরাজ ভর্তি করে দিলাম, মুখে কিছু বললাম না। বিশ্বাস করবেন না, এবারে কিন্তু আমাকে অনেক টাকার অর্ডার দিলো সে মক্কেলটি— যা ছিল আশাতীত।
◼ একজন বাড়ির গৃহবধু, তিনি জানালেন- আমি সর্বদা ভয়ে সম্ভ্রস্ত থাকতাম। ভালো করে গুছিয়ে কথা বলতে পারতাম না লোকজনের সঙ্গে। তাই বাড়িতে নেমন্তন্ন করতে ভয় পেতাম প্রতিবেশী বন্ধুদের। আপনার উপদেশ-নির্দেশ ভালো করে অনুশীলন করার পর সাহসে উদ্যোগী হয়ে বাড়িতে পার্টি দিলাম। বিশ্বাস করবেন না, পার্টি খুব জমেছিলো, সবাই আমার আথিথেয়তা এবং সুন্দর আপ্যায়নের জন্য প্রশংসা করেছেন।
◼ বেসরকারী বাণিজ্যিক অফিসের একজন কেরানি একবার লিখলো- আগে খদ্দের এলে আমি ভয় পেতাম। বারবার ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে মনমরা হয়ে থাকতাম। আপনার কথামত চলে আমি চাঙা হয়ে থাকতাম। ফলে আমি সতেজ সপ্রাণ হয়ে উঠলাম। হীনমন্যতা বোধ আর অপরাধী ভাব একেবারেই কাটিয়ে ফেললাম।
◼ খদ্দেরদের সকল অসন্তোষের জবাব দিতে শুরু করলাম ধীরস্থিরভাবে আর পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে। আমার বিষয়ে আমি খদ্দেরদের চেয়ে বেশি ভালো জানি, এ আত্মবিশ্বাসে ভরপুর থেকে চারিত্রিক সবলতা খুঁজে পেলাম। এক মাসের ভেতর আমার বিক্রির হার শতকরা পয়তাল্লিশ ভাগ বেড়ে গেলো।
◼ আপনার দৈনিন্দিন জীবনের হাজারো বাধা-বিপত্তি আর ঝামেলাকে আপনি যখন হাসিমুখে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করার শক্তি অর্জন করবেন তখন দেখবেন আপনার জীবন আরও আনন্দময় হয়ে উঠবে অনায়াসে। আপনি সফল হবেনই।
সকল পর্বের তালিকাঃ
(এখন আপনি আছেন পর্ব-২ এ)
পর্ব-১ : https://khamarian.com/বক্তব্যে-শ্রোতার-মন-জয়/
পর্ব-২ : https://khamarian.com/কিভাবে-আত্মবিশ্বাস-বাড়া/
পর্ব-৩ : https://khamarian.com/কথা-বলার-দক্ষতা-অর্জন-করু/
পর্ব-৪ : https://khamarian.com/সজীব-প্রাণবন্ত-কথা-বলুন/
পর্ব-৫ : https://khamarian.com/শ্রোতা-সঙ্গে-ভাব-বিনিময়/
পর্ব-৬ : https://khamarian.com/যা-বলতে-চান-গুছিয়ে-বলার-চ/
পর্ব-৭ : https://khamarian.com/কথায়-যোগাযোগ-স্থাপনের-ক/
পর্ব-৮ : https://khamarian.com/কথা-বলার-চ্যালেঞ্জ-গ্রহণ/
পর্ব-৯ : https://khamarian.com/কিভাবে-দীর্ঘক্ষণ-কথা-বলা/
সমাপ্তঃ আজকরে আলোচ্য বিষয় “কিভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়াবেন? কথা বলার দক্ষতা অর্জন করুনঃ বক্তব্যে শ্রোতাদের মন জয় করা সহজ উপায়, একজন সফল বক্তা হওয়ার উপায়, বক্তব্য ওয়ার নিয়ম ও ভাষণ দেওয়ার নিয়ম, কথা বলার কৌশল, কথা বলার জড়তা দূর করার উপায় (পর্ব-২, লেখকঃ ডেল কার্নেগী, বই অনুবাদ)।” পরবর্তী পোষ্ট পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে এই পোষ্টটি এখানেই সমাপ্ত করা হলো।