Skip to content

 

কেমন করে কিভাবে দীর্ঘক্ষণ বলতে সক্ষম হবেন? বক্তব্যে শ্রোতাদের মন জয় করা সহজ উপায়, একজন সফল বক্তা হওয়ার উপায়, বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম ও ভাষণ দেওয়ার নিয়ম, কথা বলার কৌশল, কথা বলার জড়তা দূর করার উপায় (পর্ব-৯, লেখকঃ ডেল কার্নেগী, বই অনুবাদ)।

কেমন করে কিভাবে দীর্ঘক্ষণ বলতে সক্ষম হবেন? বক্তব্যে শ্রোতাদের মন জয় করা সহজ উপায়, একজন সফল বক্তা হওয়ার উপায়, বক্তব্য ওয়ার নিয়ম ও ভাষণ দেওয়ার নিয়ম, কথা বলার কৌশল, কথা বলার জড়তা দূর করার উপায় (পর্ব-৯, লেখকঃ ডেল কার্নেগী, বই অনুবাদ)।

বিষয়ঃ খামারিয়ান এর আজকের এই পোষ্টটিতে তুলে ধরা হবে, কেমন করে কিভাবে দীর্ঘক্ষণ বলতে সক্ষম হবেন? বক্তব্যে শ্রোতাদের মন জয় করা সহজ উপায়, একজন সফল বক্তা হওয়ার উপায়, বক্তব্য ওয়ার নিয়ম ও ভাষণ দেওয়ার নিয়ম, কথা বলার কৌশল, কথা বলার জড়তা দূর করার উপায় (পর্ব-৯, লেখকঃ ডেল কার্নেগী, বই অনুবাদ)। আশা করি শেষ অবধি সাথেই থাকবেন, চলুন শুরু করা যাক।

◼ পৃথিবীতে এমন কোনও ব্যক্তি নেই যিনি কোনও রকম নক্সা ছাড়াই পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই একটি মনোরোম প্রাসাদ তৈরী করে ফেলতে পারেন। ফরাসী সম্রাট নেপোলিয়ন- অমিত বিক্রমশালী যোদ্ধা নোপোলিয়ান তাঁর লেখা চিঠিতে একবার জোেসফাইনকে লিখেছিলেন, ‘যুদ্ধ হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে কলাকৌশল, বিভিন্ন প্রস্তুতি আর নানারকম নকশার সমাহারে এক অত্যাশ্চর্য বিজ্ঞান- যার প্রতিটি পদক্ষেপ চালিত হয় সুনিয়ন্ত্রিত চিন্তা এবং বুদ্ধির সতর্ক দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপে’।

(ক) প্রথম পদক্ষেপেই শ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চেষ্টা করুন

◼ আমি একবার ইন্ডিয়ানা ইউনিভারসটির প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতাবহুল জীবন থেকে একজন বক্তা হিসেবে সবচেয়ে জরুরী বিষয় বলে কি মনে হয়েছে। উত্তরে তিনি বলেছিলেন,- যদি চমকপ্রদ উদ্দীপনাময় ভঙ্গিতে শুরু করা যায় এবং সেই সঙ্গে শ্রোতাকে বক্তৃতা শুনতে মনযোগী আগ্রহী করে তোলা যায় তাহলে তার চেয়ে বড় কিছু বিজয় বক্তার কাছে হতে পারে না।

অর্থ্যাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট বলতে চাচ্ছেন— আপনার প্রথম কথাগুলো যেন শ্রোতার মন জয় করতে সক্ষম হয়।

(খ) কোন ঘটনা বা উদাহরণ দিয়ে বক্তব্য শুরু করুন

◼ একবার আমেরিকার চলচ্চিত্র শিল্পের একজন দিকপাল পুরুষ, লরেন্স অব অ্যারাবি-য়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে এভাবে শুরু করেছিলেন–

◼ একদিন দুপুরবেলা রুক্ষ্ম পাথুরে জেরুজালেম শহরে খেজুর গাছের ছায়ায় ছায়ায় আমি হাঁটছিলাম—ক্রীশ্চান ষ্ট্রীট রাস্তাটি দিয়ে।

◼ এমন সময় একটি অদ্ভুত দৃশ্য আমার চোখে পড়ল, যা সারাজীবনে আমি চেষ্টা করেও ভুলতে পারব না। একজন দীর্ঘকায় শ্বেতবর্ণ ইউরোপিয়ান হেঁটে যাচ্ছিলো রাস্তা ধরে। তাঁর প্রাচ্যদেশীয় দীর্ঘ জোব্বা আল খাল্লাতে সোনা রঙের কারুকার্য, কোমরে বাঁধা সুচারু দড়ি যেন সোনা লাগিয়ে চুবিয়ে নেয়া হয়েছে। আর তাঁর কোমরে দোদুল্যমান উলঙ্গ বাঁকানো সোনার তরবারি পদক্ষেপের তালে তালে যেন নাচছিল। আমি একজন ইসলাম ধর্মালম্বী পথচারীকে ডেকে ঐ ইউরোপীয় ভদ্রলোকের পরিচয় জানতে চাইলাম এবং জেনে খুবই আশ্চর্য হলাম যে, তিনি একজন ইংরেজ, আর তিনি হলেন বহু বিতর্কিত সেই বিষ্ময়কর ব্যক্তিত্ব লরেন্স অব অ্যারাবিয়া।

◼ তাহলেই দেখুন এই রকম নাটকীয়ভাবে বর্ণনাবহুল ঘটনা দিয়ে শুরু করলে শ্রোতারা শুনতে আগ্রহী না হয়ে পারে?

সুতরাং বক্তব্যকে প্রাণবন্ত করার জন্য স্মরণীয় ঘটনা বা বিভিন্ন উদাহরণের আশ্রয় নিন।

(গ) শ্রোতার আগ্রহকে শতগুণে বাড়িয়ে তোলার কথা ভাবুন

◼ একবার বিখ্যাত শিল্পপতি মিঃ নেরুদা লস্ এঞ্জেলসে একটি ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা দিবসে বক্তৃতা করতে উঠে এভাবে বলতে শুরু করেছিলেন “বিরাশি বছর আগে লণ্ডনের একটি প্রকাশক একটি ছোট্ট পুস্তিকা প্রকাশ করেছিলেন। বইটি বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে প্রথম দিনই বিক্রি হয়েছিলো হাজার কপি। পনেরো দিনের মধ্যে প্রকাশকের কাছে পুস্তকের চাহিদা এসেছিল পনেরো হাজার কপি, তারপর থেকে ঐ বইটির এক হাজার পুনমুদ্রণ হয়েছিল। প্রায় পঁয়ত্রিশটি ভাষায় পৃথিবীর নানা দেশে বইটি অনূদিত হয়েছিল। মাত্র বছর দুয়েক আগে আর একজন পৃথিবীর বিখ্যাত প্রকাশক লেখকের মূল পাণ্ডুলিপিটি মোটা টাকার বিনিময়ে হস্তগত করেও লাভবান হবার আশা করেছেন।

◼ তাহলে এই যে কুবেরের ধন বা সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মত দুর্মূল্য এই বই-তার নামটি কি এটা নিশ্চয় জানার আগ্রহ হচ্ছে আপনাদের? বইটির নাম হল। তাহলে নিজেই বুঝুন বক্তা শ্রোতার মনে কি পরিমাণ আগ্রহের পাহাড় সৃষ্টি করেছিলেন।

(ঘ) বক্তব্যের মাঝখানে সত্যিকার পরিসংখ্যানমূলক তথ্য দিন

◼ যেমন আপনি বলতে শুরু করলেন- আজকাল আমাদের দেশে যুব সমাজের ভিতর বিয়ে করে সুখী হওয়ার ঘটনা একেবারে কমে যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে যে পরিমাণ বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়েছে সেটা জাতির এবং সমাজের পক্ষে খুবই ভয়াবহ এবং বিপজ্জনক। যেমন : ধরুন, ১৯৪০-এ প্রতি পাঁচটি বা ছটি বিয়ের মধ্যে একটি বিয়ে ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু ১৯৫০-এ চারটি বিয়ের ভিতর একটি মাত্র টিকেছে।

◼ তথ্যবহুল বক্তৃতা দিয়ে শুরু করার আরও একটি উদাহরণ দিচ্ছি। যেমন : “যুদ্ধ বিভাগ মনে করছে যদি আমেরিকাতে পরমাণু যুদ্ধ হয় তাহলে কুড়ি মিলিয়ন আমেরিকান নিহত হবে প্রথম রাতেই”।

(ঙ) দর্শক শ্রোতার হাত উপরে তুলিয়ে সম্মতিসূচক সমর্থন আদায় করুন

◼ মাঝে মাঝে অপ্রত্যাশিতভাবে ফল পাবেন- যদি আপনি শ্রোতার কাছ থেকে সম্মতি বা সমর্থন আদায় করে নিতে পারেন। অর্থ্যাৎ কিনা শ্ৰোতা দু’হাত তুলে আপনার বক্তব্য অনুমোদন করবে। একটি উদাহরণের সাহায্যে পরিষ্কার করে বলছি।

◼ একবার একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শ্রমিকের মাঝখানে আমাকে বক্তব্য রাখতে হয়েছিল। বক্তৃতার বিষয়বস্তু ছিল : ‘কি ভাবে ক্লান্তি দূর করা যায়।’ আমি শুরুতেই এভাবে আরম্ভ করেছিলাম আপনাদের সামনে কিছু বলার আগে দয়া করে আপনারা আমাকে একটি জিনিস জানান যে, আপনাদের মধ্যে কতজন খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়েন। হাত তুলে আপনার আমার দিকে তাকান, আমি সংখ্যা গুণে নেব।

◼ এতে করে খুব ভাল ফল হয়। দর্শকরা চটপট মাথার উপর হাত তুলতে থাকেন সমর্থনের ভঙ্গিতে। এ পদ্ধতি আপনারা প্রয়োগ করে দেখবেন, এটা আমি আশা করব। শ্রোতার সামনে তখনই বক্তা হিসেবে আপনি কিছু বলতে উঠবেন তখন নিচের ফরমূলাগুলো মাথায় রাখবেন এবং অবশ্যই পালন করবেন–

  • (ক) শ্রোতার কাছে প্রতিজ্ঞা করবেন তারা যাতে আপনার বক্তব্য থেকে কিছু গ্রহণ করতে পারে।
  • (খ) সম্ভব কোন কিছু দেখিয়ে বক্তব্য পেশ করুন।
  • (গ) সর্বদা খেয়াল রাখুন যাতে করে বাধ্যতামূলকভাবে শ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণ না করতে হয়।
  • .(ঘ) কখনও ক্ষমা চেয়ে বক্তব্য শুরু করবেন না।
  • (ঙ) বানিয়ে আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে বলতে শুরু করবেন না।
  • (চ) আপনার মূল বক্তব্যগুলোতে বেশি জোর দিন।
  • (ছ) বক্তৃতার ভেতরে পরিসংখ্যানমূলক তথ্য পেশ করুন।
  • (জ) বিখ্যাত লোকের উদ্ধৃতি টানুন।
  • (ঝ) বক্তব্য বিষয়ের সঙ্গে সাদৃশ্যমূলক উপমা দিন।
  • (ঞ) কোন কিছু দেখিয়ে বা না দেখিয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিন।
  • (ট) বক্তৃতার মধ্যে কার্যকর আবেদন রাখুন।
  • (ঠ) বক্তব্য যথাসম্ভব সংক্ষেপ করুন, অযথা বাড়াবেন না।
  • (ড) আপনার বক্তব্য যাতে শ্রোতারা বাস্তবে প্রোয়োগ করে সেজন্য আবেদন করুন।

◼ উপরের ফরমুলাগুলোকে বারবার পড়ুন-ভাবুন। আবার পড়ুন। অনুশীলন করুন। বাস্তবে কিভাবে প্রয়োগ করা যায় সে সম্পর্কে চিন্তা করুন। ফরমূলাগুলোতে যাদু আছে। আর যদি সত্য সত্যই চান যে লোকেরা আপনাকে পছন্দ করবে আপনি সহজে তাদের মন জয় করতে পারবেন। তাহলে মূল কথা হল- অন্য লোকের প্রতি সত্য সত্যই আগ্রহ দেখান। এ পর্যন্ত যা পড়লেন, জানলেন, শিখলেন-তা প্রয়োগ করুন।

(এখন আপনি আছেন পর্ব-৯ এ)

সমাপ্তঃ আজকরে আলোচ্য বিষয় “কেমন করে কিভাবে দীর্ঘক্ষণ বলতে সক্ষম হবেন? বক্তব্যে শ্রোতাদের মন জয় করা সহজ উপায়, একজন সফল বক্তা হওয়ার উপায়, বক্তব্য ওয়ার নিয়ম ও ভাষণ দেওয়ার নিয়ম, কথা বলার কৌশল, কথা বলার জড়তা দূর করার উপায় (পর্ব-৯, লেখকঃ ডেল কার্নেগী, বই অনুবাদ)।” পরবর্তী পোষ্ট পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে এই পোষ্টটি এখানেই সমাপ্ত করা হলো।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!