পাঠ শেষে আমরা জানতে পারব-
মৌমাছি চাষের উপকরণ সমূহ কি কি? কিভাবে মৌমাছি চাষ করা যায়? আধুনিক পদ্ধতিতে মৌমাছি পালন ও বাংলাদেশ মৌমাছি চাষ।
বাংলাদেশ মৌমাছি চাষঃ
♦ মৌমাছি পালনের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ। চাইলেই যেখানে সেখানে মৌমাছি পালন করা সম্ভব নয়। তখন কেউ যদি রাজধানী ঢাকায় মৌমাছি পালন করতে চায় তবে তা কিছু সম্ভব হবে না। কারণ মৌমাছি পালনের জন্য চাই শস্যক্ষেত্র, গাছ গাছালি, বন, ঝোপঝাড়। মরুভূমি বা কেবল ইট কাঠের শহরে মৌমাছির চাষ চলে না। মৌমাছি পালনের অন্যতম শর্ত হচ্ছে ধারে কাছে মধু সংগ্রহ করার মতো পর্যাপ্ত উৎস থাকতে হবে। আর মৌমাছির মধু সংগ্রহের অন্যতম উৎস হলো ফুল। উপযুক্ত পরিবেশ ছাড়া মৌমাছি পালন করলে তাতে কোনও লাভ হবে না।

মৌমাছি পালনের বিভিন্ন উপকরণঃ
কৃত্রিম উপায়ে মৌমাছি পালনের জন্য আধুনিক মৌমাছি পালনাকারী বিভিন্ন ধরনের মৌবাক্স ব্যবহার করে থাকেন।
১৮৫১ সালে এল. এল. ল্যাং ট্রুথ নামে একজন বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম মৌবাক্স তৈরি করেন। উপমহাদেশে তিন ধরনের মৌবাক্স ব্যবহৃত হয়।
১. ল্যাং স্ট্রথ প্রবর্তিত ১০ ফ্রেমের মৌবাক্স।
২. নিউটন প্রবর্তিত মৌবাক্স ও
৩. দেয়াল সংলগ্ন মৌবাক্স
মৌমাছি পালনের বিভিন্ন উপকরণ-১
ল্যাংস্ট্রথ প্রবর্তিত মৌবাক্সঃ
এই প্রকারের মৌবাক্স সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আমরা এর বিভিন্ন অংশের আলাদা আলাদা আলোচনা করব।
১. নিচের পাটাতন ও প্রবেশ পথ :
♦ এই পথ দিয়ে সব মৌমাছি যাতায়াত করে। রাণীকে আটকে রাখার জন্য প্রবেশ পথে রাণী আটক গেট বসানো হয়। ফলে শ্রমিক মৌমাছিরা সহজে বাইরে যাতায়াত করতে পারে। রাণী মৌমাছি বাক্স থেকে বেরুতে পারে না।
২. এক তলার বাচ্চা ঘর : (Brood Chamber) :
♦ মৌমাছির ডিম শূককীট মূককীট পর্যায়ে শ্রমিক, পুরুষ এবং রাণী মৌমাছিরা ব্রুড মেম্বারে থাকে। এই চেম্বারের সবচে উপরের অংশে থাকে শ্রমিক কোষ (Worker Brood cells)। এর ঠিক নিচে পুরুষ মৌমাছির কোষ (Drone Brood cells) আর রাণী কোষ (Queen cell) নির্মাণ করা হয় একেবারে নীচে বা পুরুষ মৌমাছি কোষের পার্শ্বে।
♦ রাণী মৌমাছি তার জন্য নির্ধারিত কোষে থাকে তবে বিভিন্ন কোষে কোষে ডিম পাড়ে। ল্যাং ট্রুথ প্রবর্তিত বাক্সে প্রচণ্ড শীত এবং প্রচণ্ড তাপ থেকে রক্ষা করার জন্য ঘরের চারপাশে অতিরিক্ত কাঠের পার্টিশন দেয়া হয়েছে। কারণ এই প্রকার বাক্স প্রবল শীতের এলাকা এবং শুষ্ক আবহাওয়ার অঞ্চলে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৩. দোতলায় মধুকক্ষ (Super Chamber) :
♦ মধু কক্ষের কোষে কোষে কেবল মধু ও পরাগ জমিয়ে রাখা হয়। মধু সংগ্রহ করতে হলে এই কক্ষের এক একটি কাঠের ফ্রেমের চাক তুলে দোঁয়া দিয়ে মৌমাছি তাড়িয়ে মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের মাধ্যমে মধু নিষ্কাশন করে কাঠের ফ্রেমের চাকরি আবার যথাস্থানে বসিয়ে দিতে হয়।
♦ রাণী মৌমাছি মধু কক্ষে আসতে পারে না। রাণীর জন্য বাচ্চা ঘরেই কিছু মধু থাকে। দোতলার মধুঘরে কেবল শ্রমিক মৌমাছিরাই বিভিন্ন কোষে মধু ও পরাগ জমিয়ে রাখে। ল্যাংট্রুথ প্রবর্তিত মৌবাক্সের বিভিন্ন অংশের মধ্যে আরও আছে উপরকার ঢাকনা (Top Carer), স্ট্যান্ড, ওঠানামার বোর্ড, তলার পাটাতন।
♦ প্রথমে ষ্ট্যান্ডের উপর বসানো হয় নিচের পাটাতন। তার উপরে স্থাপন করা হয় ব্রুড চেম্বার। এই ব্রুড চেম্বারে পাশাপাশি দাঁড় করানো আছে ১০টি কাটের ফ্রেম। প্রতিটি ফ্রেম খোলা যায়। তলায় পাটাতনের উপর এই ব্রুড চেম্বারটি বসালে সামনে দিকে যাতায়াতের পথ তৈরি হবে।
♦ ব্রুড চেম্বারে দুয়েকটি ফ্রেম তুলতে হবে তারপর রাণীসহ মৌমাছির ঝাঁকটি ভেতরে ছেড়ে দিয়ে Brood Chamberএর উপরটা কাপড় গামছা দিয়ে ঢাকতে হবে। এবার প্রবেশ পথে রাণী আটক গেট Queen Excluder লাগাতে হবে। রাণীসহ মৌমাছির ঝাঁক Brood Chamber এ বসে গেলে কাপড়টা সরিয়ে নিতে হবে। এবার স্থাপন করতে হবে মধুকক্ষ।
♦ মধুকক্ষ হচ্ছে বাক্সের দোতলায়। এই কক্ষেও পাশাপাশি কাঠের ফ্রেম থাকে। ওই ফ্রেমগুলোতে শ্রমিক মৌমাছিরা চাক বাঁধে এবং প্রত্যেক কোষে কোষে মধু জমিয়ে রাখে। পরাগ জমিয়ে রাখে। মধুকক্ষের ওপর ইনার কভার স্থাপন করতে হবে। ইনার কভারের মধ্যে কয়েকটা ছিদ্র রাখতে হবে। ইনার কভারের উপরে বসাতে হবে টপ কভার। এই টপ কভার হচ্ছে কৃত্রিম মৌচাকের ছাদ।
♦ রাণী যখন ডিম পাড়তে শুরু করে তখন রাণী আটক গেটটি সরিয়ে রাখতে হবে। কারণ একবার ডিম পাড়তে শুরু করলে নতুন রাণী সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত রাণীর পালিয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। এই সময়টায় রাণী আটক গেট সরিয়ে দিলে শ্রমিক মৌমাছিরা অনায়াসে যাতায়াত করতে হবে।
♦ ব্রুড চেম্বার এবং মধুকক্ষে চারকোণা আকারের ফ্রেম বসানো থাকে। এটি প্রয়োজনে খোলা যায় এবং টিকমতো আবার বসানো যায়। এইসব ফ্রেম প্রথম অবস্থায় খালি থাকলেও কয়েকদিনের মধ্যে মৌমাছিরা ওইসব কক্ষে চাক তৈরি করে। ব্রুড চেম্বারের ফ্রেমগুলো লম্বায় একটু বড় রাখা হয়। কারণ এতে তিন প্রকারের কোষ থাকে। যথা : ১. শ্রমিক কোষ, ২. পুরুষ কোষ ও ৩. রাণী কোষ
মৌমাছি পালনের বিভিন্ন উপকরণ-১
রেভা নিউটন প্রবর্তিত মৌ-বাক্সঃ
♦ বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নিউটন প্রবর্তিত অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের মৌ- বাক্সে মৌমাছি পালন করার সুবিধা রয়েছে। এই প্রকারের মৌ-বাক্স আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয়। যারা অধিক পরিমাণে মৌমাছি পালন করতে চায় তারা এই বাক্সের সংখ্যা বাড়াতে পারেন।
নিউটন প্রবর্তিত মৌবাক্সের বিভিন্ন অংশ :
১. মৌবাক্সের ঢাকনা (Top Carer) এবং বায়ু যাতায়াতের পথ ((Ventilator)
২. মধুকক্ষ (Super Chamber)
♦ মধু কক্ষে ২৭টি ফ্রেম পর পর বসানো থাকে। এই কক্ষের বিভিন্ন ফ্রেমে শ্রমিক মৌমাছিরা চাক বাঁধে। ঐ চাকসমূহের কোষে কোষে শ্রমিক মৌমাছিরা মধু সঞ্চয় করে রাখে। মধু সংগ্রহের সময় উপরের একটি ফ্রেম আলাদা করে তুলে নিতে হবে। ধোঁয়াদানীতে খড়, কাঠের গুঁড়া, ছেঁড়া চট, ন্যাকড়া ইত্যাদিতে আগুন লাগিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এরপর মধুকোষের উপরের ঢাকনাগুলো ছুরি দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে হবে।
♦ চাকের মধুকোষে সব ঢাকনাগুলো খোলার পর কাঠের ফ্রেমওয়ালা চাকটি মধু নিষ্কাশন যন্ত্রে বসানো যায়। হাতলটি কিছুক্ষণ অবিরাম ঘোরালে দেখা যাবে চাকের সব মধু গিয়ে পাত্রের নিচে জমা হচ্ছে। সব মধু ঝরে পড়ার পর কাঠের ফ্রেমটি আবার যথাস্থানে বসাতে হবে। এইভাবে মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের মাধ্যমে মধু নিষ্কাশন করলে মধু সাথে অন্য কোনও অবাঞ্ছিত দ্রব্য মিলতে পারে না। এর ফলে মৌমাছি বাচ্চাদের হত্যা করার প্রয়োজন হয় না। বিশুদ্ধ মধু পাওয়া যায়। চাক সম্পূর্ণ অক্ষত থাকে যার ফলে শ্রমিক মৌমাছিদের অনেক পরিশ্রম কমে।
মৌমাছি পালনের বিভিন্ন উপকরণ-৩
বাচ্চা ঘরঃ (Brood Chamber)
♦ এই ঘরে সাতটি ফ্রেম পাশাপাশি বসানো থাকে। এর বিভিন্ন কোষে কোষে রাণী মৌমাছি ডিম পাড়ে। এই ঘরের ফ্রেম খুব একটা নাড়াচাড়া করতে হয় না। সাধারণত মধুকক্ষ এবং ব্রুড চেম্বার আলাদা থাকার কারণে মধু নিষ্কাশনের সময় মধু কক্ষ উঠালেই চলে, ব্রুড চেম্বার নাড়তে হয় না। তবে মাঝে মাঝে চাক পরীক্ষা করার জন্য ফ্রেমগুলো আলাদা আলাদা খুলে দেখা যায়।
♦ ব্রুড চেম্বারের চাকগুলো খুলে দেখার সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোনও রকমের বেখেয়াল হলে রাণী মৌমাছি বেরিয়ে যেতে পারে।
মৌমাছি পালনের বিভিন্ন উপকরণ-৪
মৌবাক্সের নিচের পাটাতনঃ (Bottoom Board)
প্রবেশ পথঃ
♦ এই পথ দিয়ে মৌমাছিরা বাইরে যাতায়াত করে। মৌবাক্সে রাণী মৌমাছিকে আটকে রাখার জন্য প্রবেশ পথের মুখে রাণী আটক গেট ব্যবহার করা হয়। রাণী আটক গেট জিঙ্ক বা টিনের পাত দ্বারা তৈরি করা হয়। এই গেটের ভেতর দিয়ে শ্রমিক মৌমাছিরা অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে কিন্তু রাণী আকারে বড় হওয়ায় তার পক্ষে বেরুনো সম্ভব হয় না। মধু কক্ষ এবং ব্রুড চেম্বারের ছাদেও রাণী আটক চেম্বার থাকে। এখানে রাণী আটক গেট থাকার ফলে রাণী উপরে উঠে গিয়ে মধু কক্ষে ডিম পাড়তে পারে না। এর ফলে মধু কক্ষ থেকে অধিক বিশুদ্ধ মধু পাওয়া যায়।
♦ নতুন রাণী ঝাঁকসহ বাক্সে প্রবেশ করার ৫/৭ দিন পর্যন্ত রাণী আটক গেট লাগানো দরকার। এরপর রাণী ডিম পাড়তে শুরু করলে আর রাণী আটক গেট না হলেও চলে, কারণ তখন রাণীর কোথাও যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আসলে ওই গেটের মধ্য দিয়ে শ্রমিক মৌমাছিরা যাতায়াত করতে পারলেও তা কিন্তু পুরোপুরি স্বাচ্ছন্দ্যে নয়।
বক্স স্ট্যান্ডঃ
♦ বাড়িতে মৌমাছি পালন করার জন্য মৌবাক্স রাখতে বক্স স্ট্যান্ড দরকার হয়। বক্স স্ট্যান্ড হিসেবে একটি উঁচু টুল বা জলচৌকি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া মোটা ধরনের কাঠের গুঁড়ি মাটিতে পুতে তার ওপর সমান কাঠ বসিয়ে এবার মৌবাক্স বসানো যেতে পারে। মৌবাক্স বক্স স্ট্যান্ডের উপর বসালে মৌমাছিদের কলোনী স্যাঁতসেঁতে আদ্রতা থেকে রক্ষা পায়। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ঘাস বন ইত্যাদি থেকেও থাকে নিরাপদ উষ্ণতায়।
মৌমাছি পালনের বিভিন্ন উপকরণ-৫
মুখ ঢাকা জাল ওভারেল পোষাকঃ
♦ যারা মৌমাছি পালন করে প্রাথমিক পর্যায়ে মোটা কাপড়ের ফুল হাতাওয়ালা জামা ও ফুল প্যান্ট পরে মৌবাক্সের বিভিন্ন ফ্রেম নাড়াচাড়া করতে হবে। এর সাথে পরতে হবে মুখবাঁধা জাল।
♦ জামা প্যান্টের কাপড় মোটা হলে মৌমাছিরা গাযে হুল ফোটাতে পারবে না। চামড়া বা প্লাস্টিক ক্লথ কিংবা রবার ক্লথের Overall পরিচ্ছেদ ব্যবহার করা যায়। কালো রঙের লাইলন সুতোর বা চিকন তারে জাল দিয়ে মুখ ঢাকা জাল বানাতে হবে। এই প্রকারের মুখ ঢাকা জাল এবং Overall পোষাক পরে মৌমাছি নাড়াচাড়া করলে মৌমাছিরা চোখ মুখ বা গায়ের কোথাও হুল ফোটাতে পারে না।
মৌমাছি পালনের বিভিন্ন উপকরণ-৬
হাত মোজাঃ (Gloves)
♦ মুখ ঢাকা জাল এবং Overall পরিচ্ছেদের সাথে পরে নিতে হবে হাত মোজা বা (Gloves)। এটা পরলে বাক্সের বিভিন্ন ফ্রেম হাতে নাড়াচাড়া করে দেখা যাবে এবং পরীক্ষা করে দেখা যাবে মৌমাছির বিভিন্ন পর্যায়।
♦ প্রাথমিক অবস্থার মুখ ঢাকা জাল, Overall পরিচ্ছদ এবং হাত মোজা পরে নিয়ে মৌবাক্সের মৌমাছিদের তদারকি, মধুসংগ্রহ, বাক্স পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা ইত্যাদি কাজ করতে সহজ হবে। তবে পরবর্তী সময়ে এইসব ছাড়া মধু সংগ্রহকারী বা মৌমাছি পালনকারী অনায়াসে মৌমাছিদের নিয়ে কাজ করতে পারবে। তখন মৌমাছরা তাকে হুল ফোটাবে না। অথবা হুল ফোটালেও তার তেমন বিষ করবে না, কোনও ক্ষতিও হবে না।
মৌমাছি পালনের বিভিন্ন উপকরণ-৭
রাণী ধরার খাঁচাঃ
♦ রাণী আটক করা খাচা বহু ধরনের হয়ে থাকে। একটা ম্যাচ বাক্সের মতো আকারের সরু তার দিয়ে তৈরি চিকন বা লম্বা গোল ধরনের হবে। সব দরজা থাকবে বন্ধ শুধু একদিক থাকবে খোলা ৷ রাণীকে ধরার জন্য ব্যবহৃত হয় এক ধরনের খাঁচা আবার রাণীকে ধরার পর মৌবাক্সে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় আবার অন্য ধরনের খাচা।
♦ রাণী মৌমাছিকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উন্নত সরু তারে ঘেরা ছোট বাক্সে আকারের খাঁচার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে আমাদের দেশে উর্বর জাতের রাণী মৌমাছি কিনতে পাওয়া যায়। নিকটতম বিসিক বা সরাকারি মৌমাছি পালন কেন্দ্র থেকে মৌবাক্সে রাখা যায়। এসময় রাণী মৌমাছিকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় Queen Travelling Box.
মৌমাছি পালনের বিভিন্ন উপকরণ-৮
মৌমাছি ধরা জালঃ
♦ একটি লম্বা ধরনের কাঠ বা বাঁশের মাথায় একখণ্ড শক্ত তার গোল করে লাগিয়ে নিতে হবে। এবার দেখতে অনেকটা ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যাটের মতো দেখাবে। একটা মশারি বা জালের তৈরি গোল মুখওয়ালা থলে বানাতে হবে। থলের মুখটা তারের সাথে লাগালে মুখটা থাকবে খোলা। কাছে ধারে গাছের ডাল বা দালানের কার্নিশে অথবা খোলা জায়গায় ঝাঁকধরা মৌমাছি দেখলে এবং ওই দলে রাণী মৌমাছি থাকলে এই জালে আটকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। চাক বা ঝাঁকধরা মৌমাছিকে খোলা মুখ দিয়ে ঢুকিয়ে নিতে হবে। এবার হাতলটি ডান বা বাম পাশে কাত করলেই জালের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে।
♦ মৌবাক্সের ঢাকনা খুলে মধু কক্ষটি নামিয়ে ব্রুড চেম্বারের ওপর ঝাঁকধরা জাল উপুড় করে দিলে মৌমাছিরা সব ভেতরে ঢুকে যাবে। এবার প্রবেশ পথের মুখে রাণী আটক গেট লাগাতে হবে। এরপর ব্রুড চেম্বারের উপর ফ্রেমসহ মধুকক্ষ বসাতে হবে এবং বাক্সের ঢাকনা বন্ধু করতে হবে। রাণী মৌমাছি ঝাঁকসহ পালিয়ে গেলে বাইরে থেকে তাদেরকে ওই জালের সাহায্যে ধরে আনতে হবে।
মৌমাছি পালনের বিভিন্ন উপকরণ-৯
বী-ব্রাশঃ
♦ মধু কক্ষ থেকে মধু নিষ্কাশনের সময় ঢাকসহ কাঠের ফ্রেম তুলতে হবে। ধোঁয়াদানীর মাধ্যমে চাকের ওপর বসা মৌমাছিদের তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। তবে তারপরও কিছু মৌমাছি চাকে থাকবে তাদের তাড়াবার জন্য ফ্রেমের ওপর থেকে ব্রাশ দিয়ে ঝেড়ে ফেলতে হবে।
মৌমাছি পালনের বিভিন্ন উপকরণ-১০
খাদ্যপাত্রঃ
♦ মৌবাক্সে ব্যবহৃত খাদ্যপাত্র বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এই বাক্স কেনাকাটি না করে নিজেরাও বানিয়ে নেয়া যেতে পারে। শীতকালে প্রচণ্ড খরার সময়, বর্ষাকালে এবং নতুন ঝাঁক বাক্সে স্থাপন করার সময় কিছুদিন বাইরে থেকে মৌমাছিদের খাবার সরবরাহ করতে হয়। একটা ছোট্ট টিনের বাক্স বা ছোট্ট দুধের কৌটা আকারের কোনও কৌটা ভালো করে গরম পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এবার পানিতে চিনি গুলিয়ে দিতে হবে। তারপর কৌটার ঢাকনা বন্ধ করতে হবে। এখন ঢাকনা বা মুখের ওপর চারপাঁচটা ছিদ্র করে মধু কক্ষের কয়েকটি ফ্রেম তুলে নিতে হবে। এবার ঢাকনা বন্ধওয়ালা কৌটাটা উপুড় করে দিতে হবে। সাথে সাথে মৌনাক্সের ঢাকনাটিও বন্ধ করে নিতে হবে।
♦ চিনি গোলা পানির সাথে সামান্য টার্টারিক এসিড মিশিয়ে দিলে ভালো হয়। মৌমাছিদের গুড় গোলানো পানি খাওয়ানো যেতে পারে। কিন্তু গুড় গোলানো পানিতে মৌমাছিরা আমাশয়ে আক্রান্ত হতে পারে। প্রচণ্ড গরমের সময় মৌমাছিদের বাক্সে কোনও একটি পাত্রে করে পানি রাখলে তাতে মৌমাছিদের তৃষ্ণা মিটে। খাদ্যপাত্রে চিনি এবং পানি দুই-ই সমান পরিমাণে মিশিয়ে বাক্স দিলে তাতে মৌমাছিদের খাদ্য ও তৃষ্ণা দুই-ই মেটে।
মৌমাছি পালনের বিভিন্ন উপকরণ-১১
স্প্রেয়ারঃ
♦ মাঝে মাঝে মৌমাছির বাক্সের মধ্যে পিচকারী দিয়ে সামান্য পরিমাণ পানি ছিটিয়ে দেয়া উচিত। মৌমাছির ঝাঁক মৌবাক্সে রাখার অল্পক্ষণ পর পেতলের বা টিনের ছোট ঝাঁঝরি পিচকারী দিয়ে পানি ছিটিয়ে দিলে বা চিনি গোলা পানি ছিটিয়ে দিলে মৌমাছিদের মৌবাক্সে বসবাস করতে সুবিধা হয়।
মৌমাছি পালনের বিভিন্ন উপকরণ-১২
ডিভিশন বোর্ডঃ
♦ একটি কাঠের তৈরি পার্টিশনের মতো, ভীষণ খরার সময় ব্রুড চেম্বারের একেবারের দুপক্ষের দুটি ফ্রেম তুলে দুটো ডিভিশন বোর্ড বসিয়ে দিতে হয়। এই বোর্ড বাচ্চাঘড়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণর কাজ করে। এ ছাড়া বাইরের শত্রুর হাত থেকে মৌমাছিদের রক্ষা করে। শীত বা অতিরিক্ত গরমের সময় শেষ হলে এই ফ্রেম দুটি তুলে ফেলে আবার আসল ফ্রেম লাগিয়ে দিতে হবে। এ ধরনের বোর্ড ব্রুড চেম্বারকে ভাগ করার জন্যও ব্যবহার করা হয়। আর একজন্য বোর্ডকে বসাতে হবে মাঝখানে।
মৌমাছি পালনের বিভিন্ন উপকরণ-১৩
ব্রুড চেম্বার প্যাকিং ব্যবস্থাঃ
♦ বাক্সটি দেখতে মৌ-বাক্সের মতো। এতে ব্রুড চেম্বারের চারটি ফ্রেম বসানো যাবে। ব্রুড চেম্বারসমহ মৌমাছিদের দূরে কোথাও নিয়ে যেতে চাইলে ওই ধরনের বাক্স ব্যবহার করা ভালো। এর প্রবেশ পথে সরু তার দিয়ে বানানো যাকে রাণী আটক গেট। শূককীট মূককীটসহ ৪টি চাক ফ্রেম বাক্সের ভেতরে বসাতে হবে। তারে ছিদ্রযুক্ত প্রাথমিক ট্রাভেলিং কভার দিয়ে বাক্সটি ঢাকুন। তারপর ওপরের Top Cover দিয়ে বাক্সটি ঢাকতে হবে। এভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় রেলে, স্টিমারে, বাসে, নৌকায় চাক নিয়ে যাওয়া যায়। এই ফ্রেমগুলোই অন্য কোনও কলোনীর ব্রুড চেম্বারে বসিয়ে কলোনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
♦ প্রদর্শনীর জন্যও এভাবে Brood cells সহ ফ্রেমগুলি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া যায়। ফ্রেমগুলি এক স্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় যাতে বেশি ঝাঁকুনি না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পথে বাক্সের ঢাকনা খুলে স্প্রেয়ারের সাহায্য চিনি গোলানো পানি ছিটিয়ে দিতে পারেন। কারণ একসাথে বাচ্চা মৌমাছি ছাড়াও শ্রমিক মৌমাছি পুরুষ মৌমাছি রাণী মৌমাছি যায়। তাই পথে কিছু খাবারের ব্যাপার তো আসেই এই প্যাকিং ব্যবস্থায় কোনও কারণে প্রবেশ পথটি আটকাতে হতে পারে এজন্য প্রবেশ পথ সাধারণত দুই ইঞ্চি মাপের হওয়া প্রয়োজন।
♦ পথটি আটকাতে হালকা ধরনের ঘাস ব্যবহার করা চলে। ঘাসের মধ্য দিয়ে মৌমাছিরা শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারে। এবং পুরনো ঘরে ফিরে যেতে পারে না। ৪৮ ঘণ্টা পরে তারা পুরনো ঘরের কথা ভুলেই যায়। নতুন ঘরকেই স্থায়ী বাসস্থান বলে ধরে নেয়। মৌমাছি পালনের জন্য মৌ-বাক্স এবং প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জামাদি সংগ্রহ হলো। কীভাবে মৌমাছি পালন করতে হবে তা নিয়েও মোটামুটি আলোচনা হলো। এখন কাজ হচ্ছে মৌমাছির ঝাঁক সংগ্রহের কাজ। কিন্তু কোথায় পাওয়া যাবে মৌমাছি। কবে বাড়ির পাশের আম গাছ মৌমাছিরা চাক বাঁধবে তার জন্য কি কাজটা আটকে থাকবে?
♦ তার চেয়ে বরং আমরা থানা বা জেলা পর্যায়ের সরকারি মৌমাছি কেন্দ্র থেকে মৌমাছি এবং মৌমাছির সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে নিই। আর নিজেই মৌমাছির ঝাঁক ধরতে চাইলে সেটাও সাবধানতার সাথে করা যেতে পারে।

মৌমাছি চাষ/মৌমাছি পালনের নিয়ম-১
ঝাঁক ধরার কৌশলঃ
♦ ধরা যাক কোনও গাছের মোটা ডালের ফোকরে মৌমাছিরা চাক বেঁধেছে। চাক যে বেঁধেছে তা কিন্তু বাইরে থেকে হঠাৎ বুঝতে পারার কথা নয়। বিশেষভাবে দেখলেই তবে বোঝা যাবে। যখন দেখা যাবে একদল মৌমাছি ওই ফোকরে ঢুকছে আর বেরুচ্ছে তাহলে ধরে নিতে হবে ভেতরে চাক বেঁধেছে। Overall পোষাক, মুখ ঢাকা জাল আর হাত মোজা পরে তৈরি হয়ে নিতে হবে। সাথে নিতে হবে জাল। থলে বা জালের মুখ ফোকরের দিকে রাখতে হবে। এবার কিছু পাতা হাতে নিয়ে সোজা পরা হাত দিয়ে ফোকরের মধ্যে নাড়াচাড়া দিতে হবে। এসময় মৌমাছিরা যাতে বাইরে বেরিয়ে আসে এজন্য ধোঁয়া ব্যবহার করা যেতে পারে।
♦ কয়েকটা মৌমাছি থলে বা জালে ঢুকলো অন্য মৌমাছিরাও তাদের অনুসরণ করে থলের মধ্যে ঢুকবে। চাক যদি কোনও সরু ডালে হয় তবে আস্তে সাবধানে ডাল কেটে টুপ করে থলের মধ্যে ফেলতে হবে। চাক যদি কোনও সরু ডালে হয় তবে আস্তে সাবধানে ডাল কেটে টুপ করে থলের মধ্যে ফেলতে হবে। চাক গর্তের খুব ভেতরে যদি এমনভাবে হয়ে থাকে যে সেখানে হাত ঢুকানো সম্ভব নয় তবে গর্তের মুখ প্রথমে একটু বড় করে কেটে নিতে হবে। তারপর পিচকারী দিয়ে পানি ছিটিয়ে ওদের বাইরে আনতে হবে।
♦ পানি ছিটিয়ে দেয়া ছাড়াও কোনও লম্বা কঞ্চি কিংবা কাঠি দিয়ে ভেতরটা ধীরে ধীরে নেড়ে দিলেও মৌমাছি বেরিয়ে আসবে। বাইরে আসার পর দেখা যাবে তারা জালে ঢুকছে। এই চাকের মৌমাছিদের দিকে একটু লক্ষ্য রাখলেই রাণী মৌমাছির দেখা মিলবে। আর রাণী মৌমাছিকে দেখলেই সাথে সাথে রাণী ধরা খাঁচায় রাণীকে আটকাতে হবে। রাণী মৌমাছিকে আটকাতে পারলেই ব্যস আর কোনও চিন্তা নেই সব মৌমাছিরা অনায়াসে এসে ঢুকবে থলে মধ্যে।
♦ মৌবাক্সে মৌমাছির ঝাঁক রাখার উত্তর সময় হলো সন্ধ্যাবেলা। ঝাঁক ধরে এনে মুখ বেঁধে জালকে ঠাণ্ডা জায়গায় রেখে দিতে হবে। এসময় জাল বা ঝুড়ির মধ্যে পিচকারীর সাহায্যে চিনি গোলানো পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। সন্ধ্যাবেলা ব্রুড চেম্বার থেকে ৩টি ফ্রেম তুলে রাণীসহ পুরো ঝাঁক অথবা রাণীসহ কয়েকটি মৌমাছিকে ভেতরে ছেড়ে দিতে হবে। রাণীকে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়ার পর প্রবেশ পথে রাণী আটক গেট লাগাতে হবে।
♦ এ অবস্থায় ২/৩ দিন ভেতরে চিনিগোলা পানি সরবরাহ করতে হবে। তবে খাদ্য হিসেবে পুরনো কোনও কলোনীর মধুপূর্ণ চাক সুতো দিয়ে একটি ফ্রেমের সাথে বেঁধে দিতে পারলে এখান থেকেই মৌমাছিরা খাবার নিতে পারে। ঝাঁক ধরে মৌমাছি বাক্সে রাখার পর সব সময় রাণী মৌমাছির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। মৌবাক্সে রাণী মৌমাছিকে আটক করতে পারলে শ্রমিক মৌমাছিরা আপনা আপনি খোলা প্রবেশ পথে ভেতরে ঢুকবে। রাণী মৌমাছিকে মৌ-বাক্সে ঢোকবার আগে প্রয়োজন বোধে একটি ডানা কেটে দেয়া যেতে পারে। এভাবে ডানা কাটা থাকলে রাণীর আর কোথাও উড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকেনা। ডানা কাটার কাজ খুব সাবধানে করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে রাণী যেন কোনওভাবে আহত না হয়।

মৌমাছি চাষ/মৌমাছি পালনের নিয়ম-২
কলোনী পর্যবেক্ষেণঃ
♦ আধুনিক পদ্ধতিতে মৌমাছি পালন করলে বড় যে সুবিধা পাওয়া যায় তাহলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করার সুবিধা। রাণী ডিম পাড়ছে কিনা, কী পরিমাণ ডিম পেড়েছে ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজ নেয়া যায়। মধু কক্ষ বা ব্রুড চেম্বারের কাঠের ফ্রেমযুক্ত একটা চাক তুলে কোষগুলো পর্যবেক্ষণ করা যায়। কোনও শত্রু মৌমাছির কলোনী আক্রমণ করেছে কিনা কিংবা কলোনীর জন্য আরও স্পেস দরকার কিনা ইত্যাদি।
♦ ব্রুড চেম্বারের জন্য যদি আরও স্পেস দরকার হয় তবে দোতলায় অতিরিক্ত ব্রুড চেম্বার তৈরি করা যেতে পারে। আর এর উপর বাড়ানো যায় মধু কক্ষ। যারা নতুন মৌমাছি পালন করছে তাদের জানা থাকা দরকার যে ঘনঘন বাক্স খুলে ব্রুড চেম্বার পরীক্ষা না করাই ভালো। কারণ ঘন ঘন বাক্স খুলে পরখ করলে বা নাড়াচাড়া করলে তাতে মৌমাছিদের স্বাভাবিক কাজের অসুবিধা হয়। শীতকাল বা বর্ষাকালে যখন পর্যাপ্ত মধু আহরণ করা সম্ভব হয় না। তখন অযথা মৌমাছিদের বিরক্ত করবে তারা বাক্স ত্যাগ করে পালিয়ে যেতে পারে।
♦ ব্রুড চেম্বারের ফ্রেমসমূহ নাড়াচাড়া করতে হলে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। ফ্রেমগুলো যদি পরখ করে দেখার দরকারই হয় তবে উজ্জল রোদ্দুরের দিনে দেখতে হবে। প্রচণ্ড শীতের দিনে, বর্ষার দিনে, রাত্রিবেলা কখনও ব্রুড চেম্বারের ফ্রেম নাড়াচাড়া করা উচিত নয়। ফ্রেমগুলো নাড়াচাড়ার সময় জোরে জোরে শ্বাস ত্যাগ করা উচিত নয়। তাছাড়া শরীর থেকে কোনও দুর্গন্ধ বেরুলেও মৌমাছিরা বিরক্ত হয়।
♦ মৌবাক্স পরীক্ষা করার জন্য বাক্স খোলার আগে হাত মোজা পরে নিতে হবে। Overall পোষাক এবং মুখ ঢাকা জাল পরে নেয়া উচিত। তারপর ধোঁয়াদানীর সাহায্যে ধোঁয়া দিয়ে মৌমাছিদের পাশ থেকে সরিয়ে নিতে হবে। এবার ঢাকনা খুলে, মধুকক্ষ খুলে একে একে ফ্রেমগুলো দেখা যেতে পারে। দেখা শেষ হলে প্রেমগুলো পুনরায় যথাস্থানে বসিয়ে দিতে হবে। এরপর পুরো মধুকক্ষটি পাশে একটা সমতল বোর্ডের ওপর নামিয়ে নিয়ে ব্রুড চেম্বার পরীক্ষা করার কাজ করা যেতে পারে।
♦ বাচ্চাঘর বা ব্রুড চেম্বারের ফ্রেমগুলো একটা একটা করে খুলে পরীক্ষা করতে হবে। ব্রুড চেম্বারের ফ্রেমগুলো এভাবে দেখার সময় রাণী মৌমাছির প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। রাণী মৌমাছিকে যে ফ্রেমে দেখা যাবে সেই ফ্রেমটি কিন্তু অন্য কোনও ফ্রেমের মতো নাড়াচাড়া করা যাবেনা। সেটিকে তাৎক্ষণিকভাবে বসিয়ে দিতে হবে বাক্সে।
♦ ফ্রেমগুলো নাড়াচাড়া করার সময় খুব ধীরে ধীরে সাবধানে নাড়াচাড়া করতে হবে যাতে মৌমাছির কোনও আঘাত না লাগে। ওরা যদি বিরক্ত হয় তবে হুল ফুটিয়ে দিতে একটুও দ্বিধা করবে না। এই অবস্থায় মৌমাছিরা হুল ফোটালে সেই স্থানে মধু, ঘি ও চিনি মিশিয়ে একটু পানি দিতে হবে।
♦ মৌবাক্স খোলার সময় আরও একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে বাক্সের কাছে তখন যেন আর কেউ না আসে। অন্যরা তেমন সতর্কতা অবলম্বন নাও করতে পারে আর এ কারণে তাদের হুল ফুটিয়ে দিতে পারে মৌমাছিরা। সমস্ত রকমের পর্যবেক্ষণের পর মৌ-বাক্সটি যথাযথভাবে ঢাকনা বন্ধ করতে হবে। পর্যবেক্ষণের সময় যেসব তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে হবে তা হলো :
১. কলোনীতে ঠিক মতো খাবার আছে কিনা
২. চাকের কোষে শুধু বাচ্চা মৌমাছিরা থাকে?
৩. শ্রমিক, পুরুষ এবং রাণী মৌমাছিরা কোষে থাকে নাকি চাকের ওপর বসে বসে কাটিয়ে দেয়?
৪. শ্রমিক মৌমাছিরা কি কোষের পরিচর্যা নেয়?
পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রেকর্ড রাখা যায়। প্রতিদিনের রেকর্ড থেকে সহজই মৌ-বাক্সের কোথাও কোনও ত্রুটি বিচ্যুতি ঘটলে মৌ-বাক্সের প্রতি যত্নবান ও সতর্ক হওয়া সহজ হয়।
মৌমাছি চাষ/মৌমাছি পালনের নিয়ম-৩
বৌ-বাক্স বসানোর জায়গাঃ
♦ বাড়ির সামনে, বাগানের ধারে, কোনও ফুলবাগানের কোণে ছায়াযুক্ত নিরিবিলি জায়গায় মৌ-বাক্স রাখা যেতে পারে। কোনও স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বা পানিতে ডুবে যেতে পারে এমন জায়গায় মৌ-বাক্স রাখা অনুচিত। রাস্তার পাশে যেখানে প্রচুর ধূলা এবং গাড়ির শব্দ এবং হর্ণ বাজে তেমন জায়গায় মৌ-বাক্স রাখা উচিত নয়।
♦ মৌ-বাক্সের চারপাশে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে আটকিয়ে দেয়া যেতে পারে অথবা গাছ লাগিয়ে চারপাশে বেড়ার মতো করে বাইরের উপদ্রব থেকে মৌ-বাক্সকে রক্ষা করা খুবই প্রয়োজন। এ ছাড়া উপযুক্ত পরিবেশে যা আগে আলোচনা করা হয়েছে তেমন পরিবেশেই মৌ-বাক্স রাখতে হবে। যেমন- খুব উঁচু ঢিবির ওপর মৌ-বাক্স স্থাপন করা উচিত হবে না। পেটে মধু এবং পায়ের থলিতে পরাগ নিয়ে শ্রমিক মৌমাছিদের বারবার খুব উপরে উঠতে কষ্ট হবে।
মৌমাছি চাষ/মৌমাছি পালনের নিয়ম-৪
মৌমাছি পালন কেন্দ্ৰঃ
♦ একটা মৌ-পালন কেন্দ্রে ২৫ থেকে ৫০টি মৌবাক্স বসানো যেতে পারে। মৌ পালন কেন্দ্রের এই বাক্সের সংখ্যা স্থানীয় পরিবেশের উপর নির্ভর করে। যদি উপযুক্ত পরিবেশ হয়, চারপাশে মধু সংগ্রহের বহু উৎস থাকে তবে বেশি সংখ্যক মৌ-বাক্স স্থাপন করা যেতে পারে। আর যদি মধু উৎস পর্যাপ্ত না হয় তবে কম সংখ্যক মৌ-বাক্স স্থাপন করতে হবে। মধু সংগ্রহের উৎস যাচাই করার পরই ঠিক করে নিতে হবে মৌ-বাক্সের সংখ্যা। তবে প্রথমত ৪/৫ টি বাক্স নিয়ে শুরু করা ভালো। ১০/১৫ ফুট দুরে দূরে সারি ধরে বাক্স বসাতে হবে। এজন্য অবশ্যই স্ট্যান্ড ব্যবহার করতে হবে। যে জায়গাটিতে বাক্স বসানো হবে, সেখানে যেন কালো পিঁপড়ে না থাকে। এরা মৌমাছিদের কোষে ঢুকে মধু, ডিম খেয়ে ফেলে। সরাসরি বাক্সের উপর এসে রোদ পড়তে পারে এমন জায়গায় বাক্স রাখা ঠিক নয়। যদি ছায়াযুক্ত জায়গা না পাওয়া যায় তবে বাঁশ এবং খড়ের দ্বারা তৈরি ছাউনি ব্যবহার করে ছায়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
♦ বাক্সের মুখগুলো পূর্ব দিকে দিয়ে রাখতে হবে। এর ফলে খুব ভোরে পূর্ব দিকের ফরসা আকাশ দেখে কাজে বেরিয়ে পড়তে পারে শ্রমিক মৌমাছিরা। আর তারা সকাল সকাল কাজে বের হওয়া মানে মৌ-বাক্সে অধিক মধু উৎপাদন হওয়া।
♦ মৌ-পালন কেন্দ্রের মৌ-বাক্স খোলা অবস্থায় যেন অবশ্যই ছোটদের লাগালের মধ্যে না থাকে। এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার মৌমাছি পালন সংক্রান্ত এ বইটি থেকে শিশু কিশোররা জ্ঞান অর্জন করে তাদের পরবর্তী জীবনে মৌমাছি পালনে দক্ষ ও লাভবান হতে পারবে। তাবে এখনই যদি কোনও শিশু কিশোর বন্ধু মৌমাছি পালন করতে চাও তবে অবশ্যই তোমরা তোমাদের মা বাবা কিংবা বড় কারও সাহায্য নিয়ে করবে। কোনও অবস্থায়ই একা একা মৌ-বাক্সের পরিচর্যা করার মতো দুঃসাহসিক কাজে জড়াবে না।
♦ মৌমাছি পালনকারীরা মৌমাছি পালনের ব্যাপারে অভিজ্ঞ হওয়া ভীষণ জরুরি। মৌমাছি এমনভাবে পালন করতে হবে যে যখন মধু আহরণের মৌসুম শুরু হবে তার আগে থেকেই মৌমাছির কলোনী পুরোপুরিভাবে তৈরি থাকবে। অধিক মধু আহরণের জন্য কলোনীতে অধিক মৌমাছি থাকা আবশ্রক। তাই মৌসুমের আগে মৌমাছির সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাছাড়া কলোনীর নানাবিধ সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে জ্ঞান থাকতে হবে।
মৌমাছি চাষ/মৌমাছি পালনের নিয়ম-৫
বসন্ত ঋতুতে পরিচালন ব্যবস্থাঃ
♦ পার্বত্য অঞ্চলে শীতকালে তেমন মধু সংগ্রহ হয় না। এসময় খাদ্যের অভাবে মৌমাছিরা দুর্বল হয়ে পড়ে। শরতের পর শীত এবং বসন্তকালের জন্য যদি কলোনীতে মধু জমা না থাকে তবে শীতকালের শেষে কোনও একদিন রোদ্দুরের দিনে বাক্স খুলে ফ্রেমগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। দেখতে হবে রাণী কেমন কাজ করছে। মুখ খোলা আর মুখ ঢাকা কোষে কত সংখ্যক মৌমাছির ডিম শূককীট, মূককীট অবস্থায় আছে তা দেখতে হবে। দেখতে হবে মধু এবং পরাগের স্টক কী পরিমাণ আছে। মধু কক্ষের কোনও ফ্রেমের কোনও কোষ অব্যবহৃত হলে তা ভেঙে পরিষ্কার করতে হবে।
♦ বসন্তের ফুল ফুটতে শুরু করলে মধু কক্ষের কোষে কোষে নতুন মধু জমা হচ্ছে কিনা তার খবর নিতে হবে। বসন্তকালে ফুল ফুটতে শুরু করলে মধু কক্ষে মৌমাছি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে কলোনীতে বহু বাচ্চা মৌমাছিরও আগমন ঘটে। এই বাচ্চাদের বৃদ্ধি জন্য দরকার প্রচুর খাবার। মধুতে যদি খাবারের চাহিদা না মেটে তবে চিনি গোলানো পানি সরবরাহ করতে হবে।
♦ এসময় রাণী মৌমাছির কাজ যদি সন্তোষজনক না হয় তাহরে কলোনীতে নতুন মৌমাছি আনতে হবে। তবে মৌমাছিদের অযথা বিরক্ত করলে, অযত্ন সহকারে চিনিগোলা পানি খাওয়ালে মৌমাছিরা কলোনী ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে। এই সমস্ত দুর্বল কলোনীতে অন্যকোনও শক্তিশালী কলোনী থেকে দুয়েকটি ফ্রেমযুক্ত ব্রুডসেল এনে বসিয়ে দেয়া যেতে পারে। এর ফলে দুর্বল কলোনীর সামঞ্জস্য বিধান হয়।
♦ আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় মৌমাছিদের বেশি ঠাণ্ডা না লাগে এ বিষয়ে মৌমাছি পালনকারীদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। এই সময়ে প্রতি ১০ দিন পরপর কলোনীর ভেতরের ফ্রেমগুলো পরীক্ষা করতে হবে। যারা সমতল এলাকায় মৌমাছি চাষ করে শীতের পর বসন্তের শুরুতে তাদের তেমন একটা তৎপর না হলেও চলবে।
মৌমাছি চাষ/মৌমাছি পালনের নিয়ম-৬
ঝাঁক ত্যাগঃ
♦ মৌমাছিরা বেশিদিন এক জায়গা থাকতে অভ্যস্ত নয়, মাঝে মাঝে বাসা বদল বা কলোনী ত্যাগ করে চলে যাওয়াই তাদের স্বভাব। এপিস সিরানা জাতের মৌমাছিদের এই প্রবণতা আরও বেশি। এ ছাড়া কলোনী ত্যাগ করার রয়েছে বিশেষ কতগুলো কারণ :
১. হঠাৎ করে পর্যাপ্ত মধু পাওয়া গেলে।
২. রাণী মৌমাছিরা ডিমপাড়া বন্ধ করলে।
৩. বিভিন্ন বয়সের শ্রমিক মৌমাছির একত্র সমাবেশ হলে।
৪. তাপমাত্রার হেরফের হলে, বায়ু সঞ্চালনের অভাব হলে, গাদাগাদি অবস্থা হলে। ইত্যাদি কারণে মৌমাছিরা কলোনী ছেড়ে চলে যেতে পারে।
♦ শ্রমিক মৌমাছিদের প্রধান কাজ হলো ফুলে ফুলে চরে বেড়িয়ে মধু এবং পরাগ সংগ্রহ করে আনা। কিন্তু তারা যখন কলোনীতে জমে থেকে ভিড়ের সৃষ্টি করে বা নতুন রাণীর সৃষ্টি হয় এইসব কারণে কলোনী ছেড়ে মৌমাছিরা পালিয়ে অন্যত্র যায়। অবশ্য শুধু ভিড়ের কারণে তারা কলোনী ত্যাগ করে না। এখানে প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করে নতুন রাণীর জন্ম।
♦ কোনও কলোনীতে যদি শরৎকালে নতুন রাণীর সৃষ্টি হয় তবে সেই কলোনীতে বসন্তকালে সাধারণত ঝাঁক ত্যাগের ঘটনা কম ঘটে। সবকিছু মিলিয়ে মৌমাছিদের কলোনী ত্যাগের প্রধান কারণ হিসেবে যেটা চিহ্নিত করা হয় তা হলো পুরনো রাণী থাকা সত্ত্বেও নতুন রাণীর আবির্ভাব।
♦ মৌমাছি পালনকারীদের তাদের পালন কেন্দ্রের স্বার্থে মৌমাছিদের ঝাঁক ত্যাগ করার প্রবণতা রোধ করতে হবে। ঝাঁক ত্যাগ রোধ করার জন্য নিম্নলিখিত নির্দেশ সমূহ পালন করা উচিত :
১. মৌ-বাক্স ছায়া শীতল জায়গায় বসাতে হবে। বাতাস চলাচলের পথ সুগম করতে হবে। বাক্স স্ট্যাণ্ড একটু উঁচু আকৃতির করতে হবে।
২. ব্রুড চেম্বার বা বাচ্চা ঘরের ফ্রেমগুলো নাড়াচাড়া করে মৌমাছিদের অযথা বিরক্ত করা ঠিক হবে না। ব্রুড চেম্বারের যে কোষগুলোতে মধু ও পরাগ ভর্তি থাকবে সেই কোষগুলো বাইরে বের করে ফেলতে হবে অথবা মধু কক্ষে বসাতে হবে। আর সরিয়ে নেয়া ফ্রেমগুলোর পরিবর্তে নতুন ফ্রেম বসাতে হবে যাতে রাণীর ডিম পাড়ার জন্য কোষের অভাব না হয়।
৩. যদি কোনও কলোনীতে ব্রুড-এর সংখ্যা খুব বেশি হয় তবে ব্রুড চেম্বার থেকে একটা দুটো ফ্রেম অন্য দুর্বল কলোনীর ব্রুড চেম্বারে বসিয়ে ফ্রেম বদল করে দিতে হবে।
৪. ঢাকনা বন্ধ পুরুষ কোষ এবং মুখখোলা রাণীকোষগুলো চাক থেকে কেটে বাদ দিলে এক দুই সপ্তাহের জন্য Swarming রোধ করা যায়- তবে এ অবস্থা গ্রহণ করা উচিত নয়, কারণ ভবিষ্যতে কলোনী রাণীবিহীন হয়ে যেতে পরে।
৫. যদি মৌমাছিরা রাণী কোষ নির্মাণ করে তবে বিভাজক ড্যামি বোর্ড দ্বারা ব্রুড চেম্বারকে দুভাগে ভাগ করে দেয়া যেতে পারে। তারপর পুরনো রাণীকে অন্য কোনও মৌ-বাক্সের ব্রুড চেম্বারে স্থানান্তর করা যেতে পারে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে নতুন রাণী ধরার ঝামেলা থেকে রেহাই পাওয়া যায় এই ঝাঁক ত্যাগ করার প্রবণতাও কমে।

মৌমাছি চাষ/মৌমাছি পালনের নিয়ম-৭
মধু সংগ্রহের কালঃ
♦ পর্যাপ্ত মধু সংগ্রহের সময়ে মৌমাছিদের মধ্যে ঝাঁক ত্যাগ করার প্রবণতা দেখা যায়। আর এ কারণে এ সময়ে সুষ্ঠু, পরিচালনা ব্যবস্থা একান্ত প্রয়োজন। তা না হলে পর্যাপ্ত পরিমাণের মধু পাওয়া সম্ভব হবে না। এ সময়ে মৌমাছি পালনকারীদের প্রধান কাজ হচ্ছে-মৌমাছিদের কলোনী ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছাকে কৌশলে দমিয়ে রেখে মধু সংগ্রহের প্রবণতাকে বাড়িয়ে তোলা।
♦ ঝাঁক ত্যাগ করার প্রবণতা কীভাবে বন্ধ করতে হবে তা আমরা একটু আগে আলোচনা করেছি। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে তারা কলোনী ছেড়ে যাবে না। পাশাপাশি মধু সঞ্চয়ের ব্যবস্থা ঠিক মতো হয় সে ব্যবস্থা করা জরুরি। প্রথম মধু কোষের যাতে অভাব না হয় তা মৌমাছি পালনকারীকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এই সময মধু নিষ্কাশন করে ফাঁকা মধু কোষকে পুনরায় মধুকক্ষে স্থাপন করতে হবে। যখন পর্যাপ্ত মধু সংগ্রহ হয় তখন প্রতি কলোনীর সাথে অতিরিক্ত মধুকক্ষ সংযোজন করা যায়।
♦ এসময়ে দেখা যাবে রাতেরবেলাও মৌ-বাক্সের প্রবেশ পথে মৌমাছিদের ভিড়। প্রবেশপথের মুখে এই রকম ভীড় কিন্তু মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। ব্রুড চেম্বারে এরকম ভিড় জমতে দেয়া মোটেও ঠিক নয়। তাই এই সময় অতিরিক্ত মধুকক্ষ সংযোজন জরুরি। ব্রুড চেম্বার থেকে কয়েকটি ফ্রেম সংযোজিত কক্ষে নতুন রাণী মৌমাছি সহ স্থানান্তর করতে হবে।
♦ ১৫ দিনের মধ্যে প্রায় অতিরিক্ত ১৮ পাউন্ড মধু সংগ্রহ হয়। ৫ মে থেকে ২০ মের মধ্যে এই অতিরিক্ত মধু সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে। মৌমাছি পালনকারী যদি আগে থেকে প্রস্তুত না নিতো তবে এই অতিরিক্ত মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হতো না।
♦ মধু সংগ্রহ যখন ধীরগতিতে হয় তখন মধু কক্ষের চাক থেকে নিয়মিত মধু নিষ্কাশন করতে হবে। তা না হলে দুর্বল কলোনীর সঞ্চিত মধু সচল কলোনীর দস্যু বা ডাকাত মৌমাছিরা এসে লুন্ঠন করে নিয়ে যায়। এ কারণে কিন্তু মৌমাছিদের কলোনীতে শান্তি বিনষ্ট হয়। মধু নিষ্কাশন করার আগে মধু নিষ্কাশন যন্ত্রটি গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। মধু কক্ষের সব মধু নিষ্কাশন করা ঠিক নয়। মৌমাছিদের খাওয়ার জন্য কিছু মধু অবশ্যই মজুত রাখা প্রয়োজন।