আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
কুকুর সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ
কার্নির্ভোরা অর্ডারভুক্ত কুকুর একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। কুকুর প্রায় ১২,০০০ বছর পূর্বে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে স্বীকৃত হবার তথ্য রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি জেনেটিক গবেষণা থেকে প্রমাণ করে যে, সম্ভবতঃ কুকুর ১৫০,০০০ বছর পূর্বে গৃহপালিত।
- মানুষের ন্যায় কুকুর সামাজিক প্রাণী, দলবদ্ধ শিকারী, আমোদপ্রিয় এবং মানুষের পরিবারের সাথে খাপ খাওয়ানোর যোগ্যতা রয়েছে।
- মানুষ্য- সমাজে কুকুর বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা পালন করে এবং বিভিন্ন কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া যায়। বিভিন্ন কুকুরের খেলাধুলা, বাড়ী পাহারা, মেষের দল পাহারা ছাড়াও কুকুর মানুষের সঙ্গী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- কুকুর মানুষের সাথে বাস করে এবং মানুষ বিভিন্ন ধরনের কাজে নিয়োজিত থাকে। কুকুর প্রভুভক্ত। বিশ্বস্ত সঙ্গী। মানুষ পোষা কুকুরের নাম রাখে এবং ভালোবাসে।
- বিপরীতক্রমে, কতিপয় সমাজ বা ধর্ম কুকুরকে অপবিত্র প্রাণী বিবেচনা করা হয়। অন্য সমাজে বিশেষ করে কোরিয়া, চীনে মানুষ কুকুরের মাংস ভক্ষণ করে।
- আমাদের দেশে কুকুর পোষা প্রাণী হিসেবে বেশ পরিচিত হলেও শহুরে এলাকায় এর সংখ্যা কম। তবে দিন দিন অনেকেই ঘরের সদস্য হিসেবে কুকুর বেছে নিচ্ছেন।
- তবে একটি কুকুরকে ঘরে নিয়ে এলেই শেষ নয়। সঠিকভাবে তার পরিচর্যা করতে হয়। পোষাপ্রাণী-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে কুকুর পোষার আগে কী কী পূর্ব-পস্তুতি নেওয়া দরকার, সে বিষয়ে জানানো হয়।
কুকুর পালনঃ
নতুন একটি ছোট কুকুরকে ঘরে আনতে চাইলে তাকে গোড়া থেকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাই এই সময়ে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে এবং কুকুরটির পিছনে বেশ কিছুটা সময় ব্যয় করতে হবে। এসব ব্যাপারে ধৈর্য আছে কিনা সেই বিষয়ও খেয়াল রাখতে হবে। না হলে বড় কুকুর বেছে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
- প্রতিটি কুকুরই দিনের কিছুটা সময় বাইরে খেলাধুলা ও হাঁটাতে নিয়ে যেতে হয়। আকার অনুযায়ী আধা ঘণ্টা থেকে দিনে সম্ভব হলে দু’বার এদের খেলার সময় দিতে হয়। এই সময়ও দিতে পারবেন কিনা তা বুঝে নিতে হবে।
- ঘর এবং আশপাশের পরিবেশ কুকুরটির জন্য উপযোগী কিনা, সেটা খেয়াল করুন। বড় আকারের কুকুরের জন্য প্রচুর জায়গা প্রয়োজন। তাই অ্যাপার্টমেন্টে পালার জন্য ছোট আকারের কুকুর বেছে নেওয়াই ভালো ।
- ঘরে কুকুর আনার আগে পরিবারের সবার মতামত নিন। কারও আপত্তি আছে কিনা বা কুকুরের কারণে কারও কোনো ধরনের অ্যালার্জির সমস্যা আছে কিনা- এই সব বিষয়ে জেনে নিতে হবে। পাশাপাশি বাড়িওয়ালা এবং প্রতিবেশীদের মতামতও জেনে নেওয়া জরুরি।
- পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় আছে কিনা সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। একটি ছোট শিশুর মতোই একটি কুকুরের যত্ন নেওয়া জরুরি। তাকে সময় দিতে হয় এবং প্রশিক্ষণ দিতে হয়। এর জন্য যে আলাদা সময় দরকার তা করতে পারবেন কিনা সেই বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।
- ঠিক মতো প্রশিক্ষণ না দিলে কুকুর যেখানে সেখানে ‘বাথরুম’ করতে পারে। এছাড়া কুকুর অনেক ক্ষেত্রেই চিবিয়ে জিনিস নষ্ট করে। এসব দুর্ঘটনার জন্য আগে থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার।
- কাজের কারণে যদি দুএকদিন ঘর থেকে দূরে থাকতে হয় তাহলে আপনার কুকুর কোথায় থাকবে সেই ব্যবস্থাও আগে করে নিতে হবে। কারণ কুকুরটিতে তো আর একা ঘরে রেখে যাওয়া যাবে না ।
- সময় করে কুকুরের ভ্যাক্সিন দেওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। দিনে একবার এদের দাঁত মাজাতে হবে এবং মাসে একবার নখকেটে দিতে হবে। যতটা জলদি সম্ভব কুকুরের ‘নিউটার’ বন্ধ্যা করানোর ব্যবস্থাও নিতে হবে।
- একটি কুকুর পালা অনেক ক্ষেত্রেই বেশ ব্যয়বহুল। এর জন্য বিশেষ খাবার, খেলনা, ভ্যাক্সিন এবং ডাক্তার দেখানো সব কিছুই বেশ খরচ সাপেক্ষ। তাই এই ব্যয় বহন করতে আপনি সক্ষম কিনা সেগুলোও চিন্তা করতে হবে আগেই। কুকুর ঘরে আনার আগেই এর জন্য আলাদা খাবার, খাবার খাওয়ার পাত্র, আলাদা জায়গা ইত্যাদি ঠিক করে রাখতে হবে।
- কুকুর না বুঝেই সব কিছু মুখে দেয়। তাই ক্ষতিকর জিনিস কুকুরের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।

কুকুরের বিভিন্ন নামকরণ (Terminology of dogs )
→ প্যাক (Pack) – এক দল কুকুরকে প্যাক বলা হয়।
→ কুকুর ছানা (Pup/Pochie) – নবজাত কুকুরের বাচ্চা।
→ পুচ (Pooch), পচি (Pochie), ডলি (Doggy or doggie) – স্নেহশীল বা প্রীতিপূর্ণ শব্দ যা ছেলে-মেয়েরা কুকুরের জন্য ব্যবহার করে থাকে।
→ কুকুর শালা (Kennel ) – কুকুর রাখার স্থান।
→ কুকুর (Dog) – স্ত্রী-পুরুষ উভয় পুকুরকে বুঝায়।
→ কুকুরী (Bitch) – অন্তত একবার বাচ্চা প্রসবকারী স্ত্রী কুকুর।
কুকুর পালনের সুবিধাঃ
- কুকুর অন্ধ মানুষের পথ প্রদর্শন হিসেবে কাজ করে যেমন কমান্ডোস (Commondos) এবং মহাশূন্যে গমনেও কুকুর ব্যবহার হয়েছে যেমন লাইকি (Laike) এবং রাশিয়ার অন্যান্য স্পেস ডগ ।
- মানুষ, পশু ও অন্যান্য দ্রব্যাদি অনুসন্ধান, উদ্ধার ও মুক্ত করার জন্য কুকুরের ভূমিকা প্রশংসনীয় যেমন— হিমানীসম্প্রপাত (হিমবাহ), দুর্ঘটনা পীড়িত এলাকায় হারানো মানুষ ও পোষা প্রাণীর খোঁজার জন্য কুকুরকে ব্যবহার করা হয় ।
- কুকুর শিকারী ও খেলোয়াড়দের অংশীদার বা নিত্যসঙ্গী।
- কতিপয় দেশে কতিপয় জাতের কুকুরের মাংস মানুষে ভক্ষণ করে। যেমন- চীনে বিশেষ কুকুরের জাত ‘ব্লাক ডগ’ এবং কোরিয়ার কতিপয় জাতের কুকুরের মাংস মানুষ খেয়ে থাকে।
- অনেক জাতের কুকুর বিশেষ করে জার্মান শেপার্ড (German shepherd), লেব্র্যাডার (Labrador), রিট্রাইভার (Retriever) এবং বর্ডার কলিয় (Border collie) মানুষ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকে ।
- কাজের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের কুকুর রয়েছে যেমন সার্ভিস ডগ (চাকরের কাজ), গার্ড ডগ (প্রহরিরূপে কাজ করা), হান্টিং ডগ (শিকারী কুকুর) এবং হাডিং ডগ (পশু চরানোর কাজ) ইত্যাদি।

কুকুরের জাতঃ
→ কুকুরের জাত অনেক। পৃথিবীর বিভিন্ন কেনেল ক্লাব ৮০০টিরও অধিক জাতের কুকুর সনাক্ত করেছে।
→ যেহেতু সকল জাতের কুকুর মিশ্রিত জাত থেকে সৃষ্ট, তাই কতিপয় জেনারেশন পর্যন্ত পিওর ব্রীড হিসেবে বিবেচনা করা হলো।
→ কতিপয় কুকুরের জাত (Alsatian (US German shepherd), Bulldog, Cocker spaniel, Collie, Dachshund, Daimatian, Greyhound, Irish setter, Labrador, Pekinese, Poodie, Scotch terrier etc.) বিশ্বব্যাপী সুবিখ্যাত।