আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
বড় কুফরি কত প্রকার ও তার শ্রেণী বিভাগঃ
বড় কুফর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়। আর এটি হচ্ছে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে কুফরী। তার অনেক শ্রেণী বিভাগ রয়েছে। যেমন,
১। মিথ্যাপ্রতিপন্ন করার কুফরি :
কোরআন ও হাদিসকে অথবা তাদের কোনো অংশকে অস্বীকার করা।
কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন :
আর সে ব্যক্তির চেয়ে যালিম আর কে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে অথবা তার নিকট সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে? জাহান্নামের মধ্যেই কি কাফেরদের আবাস নয়? (সূরা আনকাবুত : আয়াত ৬৮)
অন্যত্র বলেন,
তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? (সূরা বাকারা : আয়াত ৮৫)
২। অহঙ্কার প্রদর্শন ও অস্বীকার করার কুফরি :
আর তা হল সত্যকে জেনেও গ্রহণ না করা,তার অনুসরণ না করা। যেমনটি করেছিল ইবলিস। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে উদ্ধৃত হয়েছে,
আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, তোমরা আদমকে সেজদা কর। তখন তারা সেজদা করল, ইবলিস ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহংকার করল। আর সে হল কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত। ( সূরা বাকারা ২ : আয়াত ৩৪)
৩। কিয়ামত সম্বন্ধে সন্দেহ বা মিথ্যা ধারণা পোষণ করা কিংবা অস্বীকার করা
এদের সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন :
আর আমি মনে করি না যে, কেয়ামত সংঘটিত হবে। আর আমাকে যদি ফিরিয়ে নেয়া হয় আমার রবের কাছে, তবে নিশ্চয় আমি এর চেয়ে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল পাব। কথায় কথায় তার সঙ্গী বলল, তুমি কি তাকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অত:পর বীর্য থেকে, তারপর তোমাকে অবয়ব দিয়েছেন পুরুষের? (সূরা কাহাফ : আয়াত ৩৬ ও ৩৭)
৪। অবজ্ঞা, উপেক্ষা ও বিমুখতা প্রদর্শন করার কুফরি
অর্থাৎ, ইসলাম যা দাবী করে ও নির্দেশ দেয় তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন না করা। আল্লাহ বলেন :
আর যারা কুফরি করে, তাদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে তা থেকে তারা বিমুখ। (সূরা আহকাফ : আয়াত, ৩)
৫। নিফাকির কুফরি
আর তা হল মুখে ইসলাম প্রকাশ করা, অন্তরে ও কাজে তার বিরোধিতা করা।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
তা এ জন্য যে, তারা ঈমান এনেছিল তারপর কুফরি করেছিল। ফলে তাদের অন্তরসমূহে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই তারা বুঝতে পারছে না। (সূরা মুনাফিকুন: আয়াত, ৩)
অন্যত্র বলেন :
আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি, অথচ তারা মুমিন নয়।(সূরা বাকারা: আয়াত ৮)
৬। অস্বীকার করার কুফরি
যেমন, কেউ ইসলাম কিংবা ঈমানের রুকনসমূহ, সালাত ইত্যাদির মত দ্বীনের প্রমাণিত কোনো বিষয়কে অস্বীকার করল, সালাত ত্যাগ করল। অনুরূপভাবে কোনো বিচারক কিংবা শাসনকর্তা আল্লাহর বিধানে বিচার ও শাসনকে অস্বীকার করল।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
আর যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সেই মতে বিচার করে না তারা কাফির। (সূরা মায়েদা: আয়াত ৪৪)
ইবনে আব্বাস রা. বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা অস্বীকার করল সে কুফরি করল।
ছোট কুফরি কত প্রকার ও তার শ্রেণী বিভাগঃ
ছোট কুফর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না। যেমন,
১। নিয়ামতের কুফরি করা
আল্লাহ তাআলা মুসা আ.-এর কওমের মুমিনদের উদ্দেশ্য করে বলেন :
আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব আর যদি তোমরা (কুফরি করে) অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন। (সূরা ইব্রাহিম : আয়াত ৭)
২। আমলের ক্ষেত্রে কুফরি
আর তা হচ্ছে সে সব পাপকাজ যাকে কোরআন কিংবা হাদিসে কুফরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু সম্পাদনকারীকে ঈমানদার বলেই বিবেচনা করা হয়।
যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকি আর হত্যা করা কুফরি। (সহিহ বুখারি)
অন্যত্র বলেছেন :
যেনাকারী যখন যেনা করে তখন সে আর মুমিন থাকে না এবং মদ্যপ যখন মদ পান করে তখন সে আর মুমিন থাকে না। ( সহিহ মুসলিম)।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন :
বান্দা ও শিরক-কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত ছেড়ে দেয়া। (সহিহ মুসলিম)
কতিপয় শরিয়তবিদ অস্বীকার না করে অলসতা বশত: সালাত ত্যাগ করাকেও কুফরি বলে মন্তব্য করেছেন। তবে সর্বসম্মত মতে সালাত ত্যাগ করা কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।
৩। বিচার ও শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে কুফরি
যে বিচারক বা শাসনকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত আইনে বিচার করে না, কিন্তু আল্লাহর আইনকে অস্বীকারও করে না, বরং সঠিক বলেই বিশ্বাস করে।
(তাদের এ বিচারকে কুফর বলা হয় কিন্তু এটি ছোট কুফর, যার কারণে পাপ হয় ঠিক কিন্তু ঈমান বিনষ্ট হয় না।)
ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন : যে আল্লাহর আইনকে অস্বীকার করে সে অত্যাচারী ফাসিক। আতা রা. বলেছেন : এই কুফর বড় কুফর নয়।