বিষয়: কাউকে কাফের বললে কি হয়? কখন ও কিভাবে কাউকে কাফের বলা যায়? {3 টি নীতি}। কুফরী ও তার তালিকা বিবরণ {18 টি}। কুফরী অর্থ কি? কুফরী কাকে বলে? কুফরী কত প্রকার?
কুফরী অর্থ কি? কুফরী কাকে বলে?
যে সব বিষয়ের প্রতি ঈমান আনতে হয় তার কোনটি অস্বীকার করা কুফরী।
কুরআন-হাদীসের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত কোন বিষয় অস্বীকার করা যেমনঃ নামায রোযা ফরয হওয়াকে অস্বীকার করা, নামাযের সংখ্যা, রাকআতের সংখ্যা, রুকু সাজদার অবস্থা, আযান, যাকাত, হজ্জ, ইত্যাদি বিষয়-এর কোনটি অস্বীকার করা কুফরী।
কুফরীর আভিধানিক অর্থ আবৃত করা ও গোপন করা। আর শরীয়তের পরিভাষায় ঈমানের বিপরীত অবস্থানকে কুফরী বলা হয়।
কেননা কুফরী হচ্ছে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান না রাখা, চাই তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হোক কিংবা না হোক। বরং তাদের ব্যাপারে কোন প্রকার সংশয় ও সন্দেহ, উপেক্ষা কিংবা ঈর্ষা, অহংকার কিংবা রাসূলের অনুসরণের প্রতিবন্ধক কোন প্রবৃত্তির অনুসরণ কুফরীর হুকুমে কোন পরিবর্তন আনয়ন করবেনা। যদিও তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী বড় কাফির হিসাবে বিবেচিত। অনুরূপভাবে ঐ অস্বীকারকারী ও বড় কাফির, যে অন্তরে রাসূলগণের সত্যতার প্রতি বিশ্বাস রাখা সত্ত্বেও হিংসাবশতঃ মিথ্যা সাব্যস্ত করে থাকে।
(যে সকল বিষয়ে প্রতি ঈমান আনতে হয় তা এই পোষ্টে পর্যন্ত দেখুন)
কুফরী কত প্রকার?
কুফুরী দুই প্রকার। (1) বড় কুফরী। (2) ছোট কুফরী।
- বড় কুফরী ইসলামী মিল্লাত থেকে বের করে দেয় এবং আমলসমূহ নষ্ট করে দেয়। যেমনঃ আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁর মনোনীত ধর্ম ইসলামকে গালি দেওয়া অথবা ইসলামের রুকনসমূহ সহ আল্লাহ কর্তৃক ফরযকৃত দ্বীনের অন্যান্য যরূরী বিষয়ের কোনো কিছুকে অস্বীকার করা।
- পক্ষান্তরে ছোট কুফরী ইসলামী মিল্লাত থেকে বের করেনা এবং আমল ও নষ্ট করে না। তবে তা তদনুযায়ী আমলে ত্রুটি সৃষ্টি করে এবং লিপ্ত ব্যক্তিকে শাস্তির মুখোমুখি করে।
- বড় কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তি চিরস্থায়ী ভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে। কিন্তু ছোট কুফরীর কাজে লিপ্ত ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করলেও তাতে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবেনা। বরং কখনো আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। ফলে সে মোটেই জাহান্নামে প্রবেশ করবেনা।
- বড় কুফরীতে লিপ্ত হলোে ব্যক্তির জান মাল মুসলমানদের জন্য বৈধ হয়ে যায়। অথচ ছোট কুফরীতে লিপ্ত হলোে জান মাল বৈধ হয়না।
- বড় কুফরীর ফলে মুমিন ও অত্র কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তির মধ্যে প্রকৃত শত্রুতা সৃষ্টি হওয়া অপরিহার্য হয়ে যায়। তাই সে ব্যাক্তি যত নিকটাত্বীয়ই হোক না কেন, তাকে ভালবাসা ও তার সাথে বন্ধত্ব স্থাপন করা মুমিনদের জন্য কখনোই বৈধ নয়। পক্ষান্তরে ছোট কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনে কোন বাধা নেই। বরং তার মধ্যে যতটুকু ঈমান রয়েছে সে পরিমান তাকে ভালবাসা ও তার সাথে বন্ধুত্ব করা উচিত এবং যতটুকু নাফরমানী তার মধ্যে আছে, তার প্রতি ততটুকু পরিমান ঘৃণা ও বিদ্বেষভাব পোষণ করা যেতে পারে।
{18 টি} কতিপয় কুফরী ও তার তালিকা বিবরণ
- কোন মুসলমানকে কাফের আখ্যায়িত করা কুফরী।
- কুরআন-হাদীসের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত কোন বিষয়ের এমন ব্যাখ্যা দেয়া, যা কুরআন ও হাদীসের স্পষ্ট বিবরণের খেলাফ-এটাও কুফরী।
- কুফর ও ভিন্ন ধর্মের কোন শি’আর বা ধর্মীয় বিশেষ নিদর্শন গ্রহণ করা কুফরী, যেমন হিন্দুদের ন্যায় পৈতা গলায় দেয়া, খৃষ্টানদের ক্রুশ গলায় ঝুলানো ইত্যাদি।
- কুরআনের কোন আয়াতকে অস্বীকার করা বা তার কোন নির্দেশ সম্পর্কে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা কুফরী।
- কুরআন শরীফকে নাপাক স্থানে ও ময়লা আবর্জনার মধ্যে নিক্ষেপ করা কুফরী।
- ইবাদত ও তাযীমের নিয়তে কবরকে চুমু দেয়া কুী। ইবাদতের নিয়ত ছাড়া চুমু দেয়া গোনাহে কবীরা।
- দ্বীন ও ধর্মের কোন বিষয় নিয়ে উপহাস ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা কুফরী। এ জন্যেই নামায রোযা নিয়ে উপহাস করা কুফরী, ইসলামের পর্দা ব্যবস্থাকে তিরস্কার করা বা উপহাস করা কুফরী, দাড়ি টুপি পাগড়ী নিয়ে উপহাস করা কুফরী ইত্যাদি।
- আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কোন হুকুমকে খারাপ মনে করা এবং তার দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করা কুফরী।
- ফেরেশ্তাদের সম্পর্কে বিদ্বেষভাব পোষণ করা বা তাদের সম্পর্কে কটুক্তি করা কুফরী।
- হারামকে হালাল মনে করা এবং হালালকে হারাম মনে করা কুফরী।
- কারও মৃত্যুতে আল্লাহর উপর অভিযোগ আনা, আল্লাহ্কে জালেম সাব্যস্ত করা কুফরী।
- কাউকে ‘কুফরী শিক্ষা দেয়া কুফরী।
- হারাম বস্তু পানাহারের সময় বিসমিল্লাহ বলা, যেনায় লিপ্ত হওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলা কুফরী।
- দ্বীনী ইল্মের প্রতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রদর্শন ও অবমাননাকর বক্তব্য প্রদান করা কুফরী।
- হক্কানী উলামায়ে কেরামকে দ্বীনী ইল্মের ধারক বাহক হওয়ার দরুণ গালি দেয়া বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। এটাও কুফরী।
- কেউ প্রকাশ্যে কোন গোনাহ করে যদি বলে যে, আমি এর জন্য গর্বিত তাহলোে সেটা কুফরী।
- আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ)-এর অবমাননা করা, আল্লাহ ও নবীকে গালি দেয়া এবং তাঁদের শানে বেয়াদবী করা কুফরী।
- যে যাদুর মধ্যে ঈমানের পরিপন্থী কুফ্র ও শিরকের কথাবার্তা বা কাজকর্ম থাকে তা কুফরী।

{3 টি নীতি} কাউকে কাফের বললে কি হয়? কখন ও কিভাবে কাউকে কাফের বলা যায়?
বিষয়: কাউকে কাফের বললে কি হয়? কখন ও কিভাবে কাউকে কাফের বলা যায়?
{১} যখন কেউ প্রকৃতই কাফের হয়ে যায়, তখন তাকে কাফের বলে ফতওয়া দিয়ে দেয়া মুফতীদের কর্তব্য, যাতে অন্য মুসলমান তার আকীদা বিশ্বাসের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যেতে পারে। এরূপ ক্ষেত্রে মুফতীদের কিছু লোকের এ কথার ভয় করা উচিত হবে না যে, মৌলভীরা শুধু ফতওয়াবাজী করে বেড়ায় বা নিজেদের মধ্যে কাদা ছুড়াছুড়ি করে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে হক কথা বলা কাদা ছুড়াছুড়ি নয় বরং উম্মতকে হেফাজত করার জন্য এটা বলে দেয়াই জরুরী।
{২} যদি কেউ প্রকৃতঃই কাফের না হয়ে যায়, তাহলোে তাকে কাফের আখ্যায়িত করা মহাপাপ। এতে এরূপ ফতওয়া প্রদানকারী স্বয়ং নিজেই কাফের হয়ে যাবে। কাজেই কাফের ফতওয়া প্রদানের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে-এ ব্যাপারে তাড়াহুড়া সংগত নয়।
{৩} কোন মুসলমানের কোন কথা বা কাজ কুফর কি-না- এ ব্যাপারে উভয় দিকের সম্ভাবনা থাকলে তাকে সেই কথা বা কাজের ভিত্তিতে কাফের বলে ফতওয়া দেয়া যাবে না, এমন কি কুফরের দিকটার সম্ভাবনা বেশী থাকলেও এমনকি সেটা কুফর হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ ভাগ আর কুফর না হওয়ার সম্ভাবনা ১ ভাগ হলোেও। তবে হ্যাঁ একটি কথা বা একটি কাজও যদি এমন পাওয়া যায় যা নিশ্চিতই কুফরী, তাহলোে তার কারণে তাকে কাফের, আখ্যায়িত করা হবে।
পোষ্টটি লিখতে নিম্নক্তো বই/লেখকের লিখনী থেকে সাহায্য নেওয়া হয়েছে: আহকামে জিন্দেগী (মাকতাবাতুল আবরার প্রকাশনী) মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন শায়খুল হাদীস, জামেয়া ইসলামিয়া আরার্বিয়া, তাঁতী বাজার, ঢাকা-১১০০ মুহাদ্দিছ, জামিয়া ইসলমিয়া দারুল উূলুম মাদানিয়া, ৩১২, দক্ষীণ যাত্রাবাড়ি, ঢাকা-১২৩৬