বিষয়: কুরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে করণীয় আমল, আদব ও আজমত সম্পর্কিত আরও কয়েকটি বিধান।
হ্যাশট্যাগ: #কুরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে করণীয় আমল, আদব ও আজমত সম্পর্কিত আরও কয়েকটি বিধান।
কুরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে করণীয় আমল সমূহ
* কুরআন তিলাওয়াতের পূর্বে মিসওয়াক করে নেয়া উত্তম।
* কুরআন তিলাওয়াতের পূর্বে উযূ করে নেয়া উত্তম, আর কুরআন শরীফ স্পর্শ করতে হলে উযূ করে নেয়া জরুরী।
* ভাল পোশাক পরিধান করে খুশবু মেখে এবং পরিপাটি হয়ে তিলাওয়াতে বসা আদব।
* কেবলামুখী হয়ে বসে (হেলান বা টেক না দিয়ে) তিলাওয়াত করা আদব।
* এখলাসের সাথে, আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে তিলাওয়াত করতে হবে।
* তিলাওয়াতের সময় এই মনোভাব জাগ্রত রাখবে যে, সে মহান আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করা হচ্ছে, আল্লাহ্র সাথে তার একান্ত কথাবার্তা হচ্ছে, আল্লাহ তাকে দেখছেন।
* খুশু-খুযূ ও বিনয়ের সাথে তিলাওয়াত করা উত্তম।
* আমলের নিয়তে তিলাওয়াত করবে।
কুরআনের বিষয়বস্তুর প্রতি খেয়াল ও চিন্তা সহকারে তিলাওয়াত করা উত্তম। তবে কেউ না বুঝে পড়লেও তার তিলাওয়াত অর্থহীন নয়। কেউ যদি বলে যে, না বুঝে পড়লে কোন লাভ নেই, তাহলে সে ব্যক্তি মূৰ্খ বা বে-দ্বীন। কেননা, কুরআন তিলাওয়াতের দ্বারা নিম্নোক্ত ফায়দাগুলো সর্বাবস্থায় লাভ হয়ে থাকে।
(১) তিলাওয়াতের দ্বারা দেলের জং (গুনাহের কালিমা) মুছে যায়।
(২) কুরআন তিলাওয়াত করলে প্রতি হরফে অন্ততঃ ১০টি নেকী অর্জন হয়।
(৩) কুরআন তিলাওয়াতের দ্বারা আল্লাহ্র মহব্বত বাড়ে।
* তিলাওয়াতের শুরুতে “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রজীম” ও “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” বলা ওয়াজিব। তিলাওয়াতের মধ্যে কোন নতুন সূরা আসলে তার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলবে সূরা তাওবা ব্যতীত, তবে তওবা থেকেই তিলাওয়াত শুরু করলে তখন বিসমিল্লাহ বলবে। সূরা তওবার শুরুতে আউযুবিল্লাহি মিনান্নারি যে দু’আটি পড়ার রেওয়াজ রয়েছে এ দু’আটির কোন প্রমাণ নেই।
* তাজবীদ ও তারতীল সহকারে তিলাওয়াত করা ওয়াজিব।
* দরদ এবং ওয়াজদ (মহব্বত) এর স্বরে তিলাওয়াত করবে।
* রোদন বা রোদনের ভঙ্গি সহকারে তিলাওয়াত করা উত্তম।
* সুন্দর আওয়াজে তিলাওয়াত করা উত্তম। সুন্দর আওয়াজ বলতে বুঝায় এমন স্বরে তিলাওয়াত করা যেন শ্রবণকারী বুঝতে পারে যে, তিলাওয়াতকারী আল্লাহর ভয় নিয়ে তিলাওয়াত করছে।
* রিয়ার আশংকা থাকলে কিংবা কোন নামাযী বা ঘুমন্ত ব্যক্তি প্রমুখের অসুবিধার আশংকা থাকলে নিম্নস্বরে তিলাওয়াত করা উত্তম। অন্যথায় মধ্যম জোর আওয়াজে তিলাওয়াত করা উত্তম।
* কুরআন শরীফ রেহাল/বালিশ প্রভৃতি উঁচু কিছুর উপর রেখে তিলাওয়াত করবে। কুরআন খতম হলে তখনই আবার শুরু থেকে কিছুটা আরম্ভ করে রাখা সুন্নাত।
* কুরআন খতম করার প্রাক্কালে দু’আ করা মোস্তাহাব।
কুরআনের আদব ও আজমত সম্পর্কিত আরও কয়েকটি বিধান
* পড়ার অযোগ্য ছেড়া ফাটা পুরাতন কুরআন শরীফ পবিত্র কাপড়ে পেঁচিয়ে দাফন করে দেয়া উত্তম।
* ভুলে কুরআন শরীফ পড়ে গেলে তওবা এস্তেগফার করে নিবে। এর জন্য কুরআনের ওজনে কোন কিছু দান করা জরুরী বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে তা ভুল।
* কুরআন শরীফ বরাবর রাখা থাকলে সেদিকে পা ছড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে কুরআন শরীফ উঁচুতে থাকলে সেদিকে পা ছড়িয়ে দেয়াতে অসুবিধা নেই। ( فتاوی محمودی جها)
* গ্রামোফোন হল ক্রীড়া কৌতুকের উপকরণ, তাই তাতে কুরআন তিলাওয়াত রেকর্ড করা নিষিদ্ধ। পয়সার বিনিময়ে তিলাওয়াত রেকর্ড করা জায়েয নয়। এরূপ রেকর্ড বিক্রি করাও নিষিদ্ধ।
* রেকর্ড করার জন্য টেপরেকর্ডারে তিলাওয়াত বা ওয়াজ করা জায়েয। টেপরেকর্ডার থেকে তিলাওয়াত বা ওয়াজ শোনাও জায়েয।
* রেডিওতে কুরআন তিলাওয়াত কালামুল্লাহ (আল্লাহ্র কালাম)-এর আজমতের খেলাফ।
* মুফতী শফী সাহেব (রহঃ) রেডিওতে তিলাওয়াতকে জায়েয বলেছেন তবে হাটে-বাজারে হোটেলে, দোকানে ইত্যাদি নানাবিধ ব্যস্ততা ও আমোদ-প্রমোদের মজলিসে- যেখানে কুরআন তিলাওয়াতের প্রতি লক্ষ্য দেয়া হয় না-এরূপ স্থানে রেডিও, টেপের তিলাওয়াত শুনানোকে বে-আদবী ও নাজায়েয বলেছেন।
সমাপ্ত: কুরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে করণীয় আমল, আদব ও আজমত সম্পর্কিত আরও কয়েকটি বিধান।
সূত্র: আহকামে যিন্দেগী।