Skip to content

 

অপব্যাখ্যা: কুরআন বলে, আকাশ হল এমন একটি ছাঁদ যা কঠিন পদার্থের সুরক্ষিত ছাঁদ আর এই ছাঁদ হতেই বৃষ্টি বর্ষণ হয় – এটি তো বৈজ্ঞানিক ভুল? [২:২২] [২১:৩২]

অপব্যাখ্যা: কুরআন বলে, আকাশ হল এমন একটি ছাঁদ যা কঠিন পদার্থের সুরক্ষিত ছাঁদ আর এই ছাঁদ হতেই বৃষ্টি বর্ষণ হয় - এটি তো বৈজ্ঞানিক ভুল? [২:২২] [২১:৩২]

🛑নাস্তিক মুক্তমনার অপব্যাখ্যা খন্ডন:-
প্রশ্নঃ কুরআন বলে, আকাশ হল এমন একটি ছাঁদ যা কঠিন পদার্থের সুরক্ষিত ছাঁদ আর এই ছাঁদ হতেই বৃষ্টি বর্ষণ হয় – এটি তো বৈজ্ঞানিক ভুল? [২:২২] [২১:৩২]

🔷উত্তরঃ এটা মিথ্যাচার, আয়াত নং [২:২২] ও [২১:৩২] তে কখনও বলা হয়নি “আকাশ হল এমন একটি ছাঁদ যা কঠিন পদার্থের সুরক্ষিত ছাঁদ আর এই ছাঁদ হতেই বৃষ্টি বর্ষণ হয় “?

সুরা বাকারা ২:২২ = আকাশকে ছাঁদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে।

সুরা আম্বিয়া ২১:৩২ = আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাঁদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।

খেয়াল করুন প্রশ্নকর্তা দাবী করেছে “আকাশকে কঠিন পদার্থের ছাঁদের মত সৃষ্টি করা হয়েছে” সেই ছাঁদ থেকে বৃষ্টি পরে অথচ কুরআন কিন্তু একবারও বলে নাই যে আকাশ হল “কঠিন পদার্থের তৈরি ছাঁদের মত”। কুরআন বলেছে আল্লাহ আকাশকে ছাঁদ স্বরূপ বানিয়েছেন অর্থাৎ এখানে ছাঁদ হল রুপক অর্থে ব্যাবহার করা হয়েছে। কোন কিছুকে ছাঁদ বললেই যে সেটি কঠিন পদার্থের হবে এরকম কোন কথা নেই। আমরা অনেক সময় বলি আমাদের পরিবারের আমার পিতা হলেন আমাদের ছাঁদ স্বরূপ। এরমানে কি আপনার বাবার মাথা ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা ছাঁদের মত? উত্তর হল না। একজন বাবা যেমন তার পরিবারকে রক্ষা করে সব দিক থেকে ছাঁদের মত তাই বাবাকে ছাঁদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে এরমানে এই না যে বাবার মাথা কঠিন পদার্থের ছাঁদ!

একজন ছাত্রের কাছে একজন আদর্শ জ্ঞানী শিক্ষক হলেন ছাঁদের মত – এরমানে কি সকল শিক্ষকদের মাথা অথবা দেহ ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে? উত্তর হল না। একজন ছাত্রকে আদর্শ শিক্ষা দিয়ে তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে এবং একজন ছাত্রকে অন্যায় এবং সুন্দর পথে হাটতে শিখায় যা একজন ছাত্রকে ভুল পথ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে – এই হিসেবে শিক্ষককেও ছাত্রের ছাঁদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এরমানে এই না যে শিক্ষক হল ছাঁদের তৈরি!

আকাশ নিয়ে ইংরেজি অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে বলা আছে,- ‘The region of the atmosphere and outer space seen from the earth’, অর্থাৎ, পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমন্ডলের এবং তার বাইরে যা কিছু দেখা যায়, সেটাই আকাশ।

আবারঃ আকাশ নিয়ে উইকিপিডিয়া তে বলা আছে,- ‘The sky (or celestial dome) is everything that lies above the surface of the Earth, including the atmosphere and outer space’, অর্থাৎ, পৃথিবীর ভূ-পৃষ্টের উপরে যা কিছু আছে, তার সবই আকাশের অন্তর্গত। এর মধ্যে বায়ুমন্ডল এবং তার বাইরের সবকিছুও আকাশের মধ্যে পড়ে’।

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিজ্ঞানিরা পৃথিবীর উপরিভাগে যে বায়ুমন্ডল আছে, তাতে কিছু স্তরের সন্ধান পেয়েছেন।আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডল এসব পুরু স্তর দ্বারা গঠিত।এই স্তরগুলো হচ্ছে- ১/ ট্রপোস্ফিয়ার ২/ স্ট্রাটোস্ফিয়ার ৩/ মেসোস্ফিয়ার ৪/ থার্মোস্ফিয়ার ৫/ এক্সোস্ফিয়ার। এই প্রত্যেকটি স্তরের আলাদা আলাদা কাজ রয়েছে। বিজ্ঞানি Sir Venn Allen প্রমান করে দেখিয়েছেন, আমাদের পৃথিবীর ভূ-পৃষ্টের চারদিকে একটি শক্তিশালী Magnetic Field আছে। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ড আমাদের পৃথিবীপৃষ্ঠের চারদিকে একটি বেল্টের মতো বলয় সৃষ্টি করে রেখেছে। বিজ্ঞানি স্যার Venn Allen এর নামে এই জিনিসটার নাম রাখা হয় Venn Allen Belt… এই বেল্ট চারপাশে ঘিরে রেখেছে আমাদের বায়ুমন্ডলকে। আমাদের বায়ুমন্ডলের দ্বিতীয় স্তরটির নাম হচ্ছে ‘ষ্ট্রাটোস্ফিয়ার।’ এই স্তরের মধ্যে আছে এক জাদুকরি উপ-স্তর। এই উপ-স্তরের নাম হলো ‘ওজোন স্তর।’ এই ওজোন স্তরের কাজের কথায় পরে আসছি। আগে একটু সূর্যের কথা বলি। সূর্যে প্রতি সেকেন্ডে যে বিস্ফোরণগুলো হয়, তা আমাদের চিন্তা-কল্পনারও বাইরে। এই বিস্ফোরণগুলোর ক্ষুদ্র একটি বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয়তা এমন যে, তা জাপানের হিরোশিমায় যে এ্যাটমিক বোমা ফেলা হয়েছিলো, সেরকম দশ হাজার বিলিয়ন এ্যাটমিক বোমার সমান। চিন্তা করার মত বিষয় যে সেই বিস্ফোরণগুলোর একটু আঁচ যদি পৃথিবীতে লাগে, পৃথিবীর কি অবস্থা হতে পারে? এখানেই শেষ নয়। মহাকাশে প্রতি সেকেন্ডে নিক্ষিপ্ত হয় মারাত্মক তেজস্ক্রিয় উল্কাপিন্ড। এগুলোর একটি আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে পৃথিবী।

আমাদের এই পৃথিবীকে এরকম বিপদের হাত থেকে কোন জিনিসটা রক্ষা করে? সেটা হচ্ছে আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডল।আরো স্পেশেফিকলি বলতে গেলে বলতে হয়, ‘ওজোন স্তর।’ শুধু তাই নয়, সূর্য থেকে যে ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্নি আর গামা রশ্মি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, সেগুলো যদি পৃথিবীতে প্রবেশ করতে পারতো, তাহলে পৃথিবীতে কোন প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারতো না। এই অতি বেগুনি রশ্মির ফলে মানুষের শরীরে দেখা দিতো চর্ম ক্যান্সার। উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষন হতো না।আপনি জানেন, সূর্য থেকে পৃথিবীর দিকে ধেঁয়ে আসা এসব ক্ষতিকর জিনিসকে কোন জিনিসটা আটকে দেয়? পৃথিবীতে ঢুকতে দেয় না? সেটা হলো বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর। এই ওজোন স্তর এসব ক্ষতিকর উপাদানকে স্ক্যানিং করে পৃথিবীতে প্রবেশে বাঁধা দেয়।

মজার ব্যাপার কি জানেন পাঠক? এই ওজোন স্তর সূর্য থেকে আসা কেবল সেসব উপাদানকেই পৃথিবীতে প্রবেশ করতে দেয়, যেগুলো পৃথিবীতে প্রাণের জন্য সহায়ক। যেমন, বেতার তরঙ্গ আর সূর্যের উপকারি রশ্মি। এখানেই শেষ নয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় যে তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়, তার সবটাই যদি মহাকাশে বিলিন হয়ে যেতো, তাহলে রাতের বেলা পুরো পৃথিবী ঠান্ডা বরফে পরিণত হয়ে যেতো। মানুষ আর উদ্ভিদ বাঁচতেই পারতো না। কিন্তু, ওজোন স্তর সব কার্বন ডাই অক্সাইডকে মহাকাশে ফিরে যেতে দেয় না। কিছু কার্বন ডাই অক্সাইডকে সে ধরে রাখে যাতে পৃথিবী তাপ হারিয়ে একেবারে ঠান্ডা বরফ শীলত না হয়ে পড়ে।বিজ্ঞানিরা এটাকে ‘গ্রীন হাউস’ বলে।বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তরের এই যে ফর্মুলা, কাজ, এটা কি আমাদের পৃথিবীকে সূর্যের বিস্ফোরিত গ্যাস, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি, মহাকাশীয় উল্কাপিণ্ড থেকে ‘ছাদ’ এর মতো রক্ষা করছে না? আপনার বাসায় বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে পারে না আপনার বাসার ছাদের জন্য। বিভিন্ন দূর্যোগে আপনার বাসার ছাদ যেমন আপনাকে রক্ষা করছে, ঠিক সেভাবে বায়ুমন্ডলের এই ওজোন স্তর কি আমাদের পৃথিবীকে রক্ষা করছে না?

আমরা আকাশের সংজ্ঞা থেকে জানলাম যে, – পৃথিবীপৃষ্ঠ হতে উপরের সবকিছুই আকাশের মধ্যে পড়ে। বায়ুমন্ডলও তো তাহলে আকাশের মধ্যে পড়ে, এবং আকাশের সংজ্ঞায় বায়ুমন্ডলের কথা আলাদা করেই বলা আছে। তাহলে বায়ুমন্ডলের এই যে আশ্চর্যরকম ‘প্রটেক্টিং পাওয়ার’, এটার উল্লেখ করে যদি আল্লাহ বলেন- ‘আর আমরা আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ। অথচ, তারা আমাদের নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে’, – বিজ্ঞান তো নিজেই বলছে, বায়ুমন্ডল, স্পেশালি বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর একটি ছাদের ন্যায় পৃথিবীকে রক্ষা করছে। তাহলে আল্লাহও যদি একই কথা বলে, তাহলে সেটা অবৈজ্ঞানিক হবে কেনো?

(উপরের তথ্যের অংশটুকু আরিফ আজাদ ভাইয়ের পেরাডক্সিকাল সাজিদ বই থেকে নেয়া)

[ #ভ্রান্তি #অপব্যাখ্যা #সংশয় #ইসলাম_বিদ্বেষী #মুক্তমনা #নাস্তিক #প্রশ্ন #জিজ্ঞাসা #উত্তর ]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!