🛑অভিযোগ:
কুরান যদি মানুষের জন্যে সৃষ্টকর্তার পাঠানো জীবন বিধানই হবে, তবে কেন এতে পুরো একটা সুরা জুড়ে স্থান পাবে আবু লাহাব নামক তৎকালিন এক ব্যক্তির প্রতি আল্লাহর আক্রোশ এবং অভিশাপ পূর্ণ বানী (কোরআন ১১১:১-৫) এটা কি একজন সৃষ্টিকর্তার জন্যে হাস্যকর নয়?
🔷জবাব :
চোরকে চোর বলা, সন্ত্রাসীকে সন্ত্রাস বলা , হত্যাকারীকে ডাকাত বলা , মানুষকে অন্যায়ভাবে নির্যাতনকারীদের অভিশাপ দেয়া অথবা সেটার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া এবং সেটার সমালোচনা করা মোটেও দোষের কিছু নয় এবং অথবা ব্যাক্তিগত কিছু নয় বরং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান করাকেই বুঝায়।
“অন্যায় ভাবে নির্যাতনকারী মানুষের ফলাফল ভাল হয় না বরং ধ্বংস অনিবার্য” এই উপদেশ মনে রাখার জন্য যদি কোন মানুষ মাঝে মাঝে এই উপদেশ মুলক বানী পাঠ করে সেটা মোটেও অন্যায় কিছু নয় বরং প্রশংসনীয় ব্যাপার।
সুরা লাহাব হচ্ছে কু’রআনের অলৌকিকতার একটি প্রমাণ।
যখন এই সুরাটি নাজিল হয়, তখন আবু লাহাব বেঁচে ছিল। এই সুরাতে বলা হয়েছে আবু লাহাব কোন দিনও বিশ্বাস করবে না। আবু লাহাব যদি প্রমাণ করতে চেত যে কু’রআন ভুল, এটা জন ঐশ্বরিক বাণী নয়, মুহম্মদ ভন্ড তাহলে তাকে শুধু একটা কাজই করতে হত। নবীর কাছে গিয়ে বলতে হত – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ – ব্যাস, কু’রআন ভুল প্রমাণ হয়ে যেত।
কুরআনের মজেজাঃ
১/ আবু লাহাব জানত এবং সে ইচ্ছা করলেই পারতো যে আমি ইসলামের গ্রহনের নাটক করব আর কুরআনের আয়াত ভুল প্রমান করবো কিন্তু এরকম কিছুই ঘটেনি।
২/ আবু লাহাবের স্ত্রীও জানত “সুরা লাহাব” সম্পর্কে। ইসলাম গ্রহন করেনি সেও। ইচ্ছা করলে সেও পারতো ইসলাম গ্রহনের নাটক করে কুরআনকে ভুল প্রমান করার কিন্তু এরকম কিছুই হয়নি।
৩/ কুরআন আগে কিভাবে দাবি করল যে তারা কেউই ইসলাম গ্রহন করবে না, এটাই ফাইনাল? এর একটাই উত্তর আর তা হল একমাত্র আল্লাহই ভবিষ্যতের খবর জানেন এবং সেই অনুযায়ী তিনি আগেই এই খবর জানিয়ে দিয়েছেন।
৪/ নবী (সা) তো নিচ্ছিত ভাবে ভবিষ্যতের খবর জানতেন না বরং আল্লাহই তাঁকে জানিয়ে দিতেন। যারা বলেন কুরআন নবী মুহাম্মদ (সা) লিখেছেন তারা উত্তর দিন কিভাবে নবী (সা) নিচ্ছিত হল যে আবু লাহাব আর তার স্ত্রী কখনোই ইসলাম গ্রহন করবেন না?
৫/ আবু লাহাবের ধন সম্পদ তার কোন কাজে আসবে না এই তথ্য নবী মুহাম্মদ (সা) জানলেন কিভাবে?
৬/ এই ঘটনা থেকেও স্পষ্ট প্রমান হয় যে কুরআন আল্লাহর বানী কারন আল্লাহ ছাড়া কারো পক্ষেই ভবিষ্যৎ জানা পসিবল না।
আবু লাহাবের ভয়ংকর অপরাধ সমূহঃ
* আবু লাহাব সে ছিল রাসুল (সা)এর নিকৃষ্টতম শত্রু। সব সময় সে তাঁকে কষ্ট দেয়ার জন্য এবং তাঁর ক্ষতি সাধনের জন্য সচেষ্ট থাকতো।
(ড মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৮ খণ্ড, ৩১২ পৃষ্ঠাঃ)
* আবু লাহাবের স্ত্রীর কাছে একটি সুন্দর গলার মালা ছিল, সে বলতো আমি এই মালা বিক্রি করে তা মুহাম্মদ (সা)এর বিরোধিতায় ব্যয় করবো।
(ড মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৮ খণ্ড, ৩১৩ পৃষ্ঠাঃ)
* নবী (সা) তাঁর চাচা আবু লাহাবকে তাওহীদের দাওয়াত দিলে সে পাথর ছুড়ে মারত।
(তাফসীরে জালালাইন, ৭ খণ্ড , ৬০৬ পৃষ্ঠা এবং তাফসীরে রুহুল মা”আনী)
* আবু লাহাব মানুষকে এই বলে রাসুল (সা) থেকে বিরত রাখতো যে মুহাম্মদ জাদুকর।
(তাফসীরে জালালাইন, ৭ খণ্ড , ৬০৭ পৃষ্ঠাঃ )
* আবু লাহাব ছিল কৃপণ লোক। সে কৃপণতার দ্বারা বহু সম্পদ সঞ্চয় করেছিল।
(তাফসীরে জালালাইন, ৭ খণ্ড , ৬০৮ পৃষ্ঠাঃ)
* “সুরা লাহাব” অবতীর্ণ হলে আবু লাহাব রাগান্বিত হয়ে আপন পুত্র ওতবা ও ওতায়বাকে বলে তোমাদের বিবাহ বন্ধনে মুহাম্মদের যে দুই কন্যা রোকাইয়া ও উম্মে কুলছুম রয়েছে তাদের এক্ষণই তালাক দিয়ে দেও , নাইলে আমি তোমাদের মুখ দেখবো না।
(তাফসীরে জালালাইন, ৭ খণ্ড , ৬০৮ পৃষ্ঠাঃ)
* আবু লাহাবের স্ত্রী নবী (সা) কে প্রচুর ঘৃণা করতেন এবং নবী (সা) নামে মিথ্যা এবং উগ্র টাইপ কবিতা রচনা করতেন।
আবু লাহাবের স্ত্রী চোগলখুরি করতেন একের সাথে অন্যের ঝগড়া লাগিয়ে দিতেন মিথ্যা বলে। রাসুল (সা) কষ্ট দেওয়ার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন এই মহিলা।
(তাফসীরে জালালাইন, ৭ খণ্ড , ৬০৮,৬০৯ পৃষ্ঠাঃ )
* আবু লাহাবের স্ত্রী সে সর্বদাই মুসলিম এবং কাফেরদের মাঝে চুগলী করে বেড়াতো। সে কাটা সংগ্রহ করে রাখতো এবং তা নবী (সা)এর মসজিদে যাওয়ার পথে কাটা বিছিয়ে রাখতো এবং মুসলিমদের যেই রাস্তায় চলাচল করতো সেখানেও কাটা বিছিয়ে রাখতো এই নারী।
(ই,ফাঃ তাফসীরে ইবনে আব্বাস, ৩ খণ্ড, ৭২১ পৃষ্ঠাঃ)
* নবী মুহাম্মদ (সা) যখন ইসলামের কথা মানুষের কাছে পেশ করতেন তখন এই আবু লাহাব পাথর নিক্ষেপ করতো এবং নবীজির পা মুবারক রক্তাক্ত হয়ে যেত।
(তাফসীরে ওসমানী, ৭ খণ্ড , ৪৪২ পৃষ্ঠাঃ )
* আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিলা ধনী হওয়া সত্ত্বেও কৃপণ ছিল। সে এতই নিচ ছিল যে জঙ্গল থেকে কাঠ আহরন করতো এবং নবীর পথে কাটা বিছাত যাতে চলাচল করতে নবী মুহাম্মদ (সা) এবং তাঁর কাছে গনাগমনকারীদের আসতে কষ্ট হয়। (তাফসীরে ওসমানী, ৭ খণ্ড , ৪৪৩ পৃষ্ঠাঃ)
“সুরা লাহাব” থেকে আমরা যা শিখতে পারি তা হলঃ
১/ মানুষের সাথে কখনো খারাপ আচরণ করতে হয় না।
২/ মানুষকে কখনো গালাগালি করতে হয় না।
৩/ আত্মীয়তা সম্পর্ক নষ্ট করতে হয় না।
৪/ চোগলখরী করে একজনের সাথে অন্যজনের দণ্ড লাগিয়ে দেয়া ঠিক না।
৫/ ধন সম্পদ থাকতে তা থেকে কিছু গরিব অসহায় এতীমদের দান করা উচিত।
৬/ কৃপণা করা ঠিক না।
৭/ মতের বিরুদ্ধে গেলেই তার রাস্তায় কাটা বিছিয়ে দেয়া ঠিক না।
৮/ কারো মুখে রাগ করে হলেও থু থু দেয়া ঠিক না।
৯/ কাউকে অন্যায়ভাবে পাথর নিক্ষেপ করা ঠিক না।
১০/ কাউকে অন্যায়ভাবে রক্তাক্ত করা উচিত নয়।
কিছু প্রশ্নঃ
১/ নাস্তিকরা বেশির ভাগ প্রশ্ন করে আল্লাহ কেন আবু লাহাবকে অভিশাপ দিলেন , আচ্ছা আবু লাহাব কি ভাল মানুষ ছিল, কিভাবে?
২/ আবু লাহাব মূর্তি পুজা করতো এখন নাস্তিকরা কি আবু লাহাবের এই পুজার পক্ষে?
৩/ নবী মুহাম্মদ (সা) তাঁর বাক স্বাধীনতার অধিকারে ইসলামের দাওয়াত দিত আর আবু লাহাব সেই অধিকারে বাধা দিত , নাস্তিকরা কি আবু লাহাবের এই অন্যায়কাজের পক্ষে?
৪/ আবু লাহাবের স্ত্রী নবী (সা) ও মুসলিমদের রাস্তায় কাটা বিছিয়ে দিত , এটি কি ভাল কাজ নাকি অন্যায় কাজ?
৫/ আবু লাহাব এবং তার স্ত্রীর সমস্ত ভয়াবহ অপরাধ সামনে রাখলে একটাই বিষয় ফুটে উঠে যে তারা অনেক বড় মাপের অপরাধী ছিল এখন তাদের এই অন্যায়কে সামনে রেখে যদি কেউ তাদের অভিশাপ দেয় , এটি কিভাবে গালাগালি হয়?
৬/ আবু লাহাব এবং তার স্ত্রী ধনী হওয়া সত্ত্বেও তারা ছিল কিপটা , নাস্তিকরা কি এই কিপটাদের ভাল বলবেন নাকি কি বলবেন?
৭/ আবু লাহাব নবী মুহাম্মদ (সা) কে পাথর নিক্ষেপ করে তার পা মোবারক রক্তাক্ত করে দিয়েছিল , এটি কি ভাল কাজ নাকি অন্যায় কাজ?
৮/ বিনা কারনে নবীজির দুই মেয়েকে তালাক দিতে বলেছিল আবু লাহাব এটি কি অন্যায় কাজ?
৯/ আবু লাহাব এবং তার স্ত্রী কিভাবে সুন্দর চরিত্রের মানুষ হয় নাস্তিক ধর্মের আলোকে ব্যাখ্যা করুন?
১০/ নবী মুহাম্মদ (সা) কিভাবে জানলেন যে তারা তাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জীবনেও ইসলাম গ্রহণ করবেন না?
সুতরাং পরিশেষে উপরের সমস্ত তথ্য প্রমান হাতে রেখে আমরা দাবি করলামঃ
১/ আবু লাহাব এবং তার স্ত্রী উগ্র মানুষ ছিলেন।
২/ তারা দুইজনেই বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিলেন।
৩/ তারা দুইজনেই নবী মুহাম্মদ (সা) সহ তার সাথীদের ধ্বংস কামনা করতেন।
৪/ নবী মুহাম্মদ (সা) যখন বাক স্বাধীনতার অধিকারে ইসলামের দাওয়াত পেশ করতেন তখন আবু লাহাব পাথর নিক্ষেপ করতেন।
৫/ নষ্টাকিজমের খগেনদের মত “নবী মুহাম্মদ (সা) কে জাদুকর” বলে দাবি করতেন কিন্তু কোন প্রমান আজ পর্যন্ত সে বা তার অনুসারীরা দিতে পারেনি।
৬/ আবু লাহাবের স্ত্রী নবী (সা) এবং মুসলিমদের যাতায়াত রাস্তায় কাটা বিছিয়ে দিত।
৭/ আবু লাহাবের এক পুত্র নবী (সা)এর মুখের দিকে ফিরে বিনা কারনে থু থু নিক্ষেপ করেছিল এবং বিনা কারনে নবীজির কন্যাদের তালাক প্রদান করেছিল।
৮/ আল্লাহ আমাদেরকে উপদেশ দেওয়ার জন্যই “সুরা লাহাব” অবতীর্ণ করেছেন।
৯/ এই সুরা দ্বারা প্রমান হয় যে কুরআন আল্লাহর বানী।
১০ / সুতরাং সুরা লাহাবে মোটেও গালাগালি করা হয়নি বরং সত্যের পক্ষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা হয়েছে।
একটি ছোট প্রশ্ন উদয় হয় তা হলঃ
আল্লাহ চেয়েছেন বলেই আবু লাহাব ও তার স্ত্রী ইসলাম গ্রহন করতে পারেনি সুতরাং এখানে তাহলে আল্লাহর দোষ? উত্তর খুবই সোজা। মূল কথা হল আল্লাহ জানতেন বলেই তিনি সুরা লাহাব লিখে রেখেছেন , তিনি লিখেছেন বলে যে তারা ইসলাম গ্রহন করেনি ব্যাপারটা সেটা নয়।
আল্লাহ ভবিষ্যৎ জ্ঞান রাখেনঃ
সূরা নামল ২৭:৬৫ = আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আসমান-যমীনে অন্য কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেনা। এবং তারা জানে না কখন তারা উত্থিত হবে।
সুরা আন‘আম ৬:৫৯ = অদৃশ্যের চাবিকাঠি কেবল আল্লাহর নিকট রয়েছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ জানেনা।
উদাহরণঃ কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় খাদ্য না খায় তবে সে ক্ষুধার্ত হবে এবং কষ্ট ভোগ করবে। এখন আমি আমার এক সাথীকে বললাম যদি তুমি না খাউ তবে তুমি ক্ষুধার্ত হবে ফলে কষ্ট তোমাকে ভোগ করতেই হবে। এটা সত্য এটা হবেই।যদি ঐ বন্ধু এই সত্য কথা জানার পরেও না খায় তবে তো তার ক্ষুধা ও কষ্ট লাগবেই।এর মানে এই না যে সে আমার কথার কারনেই ক্ষুধা ও কষ্ট পেল অর্থাৎ সে তার নিজের মূর্খতার কারনেই ক্ষুধা ও কষ্ট ভোগ করল কারন সে জানার পরেও খাদ্য খায় নি। কেউ যদি বলে আমি বলার কারনেই ঐ সাথীর ক্ষুধা ও কষ্ট লাগছে তাহলে এটা যেমন ভুল তেমনি আল্লাহ আবু লাহাব ও তার স্ত্রীকে কেও প্রচুর সতর্ক করেছেন নবী মুহাম্মদ (সা) দ্বারা।
এখন আবু লাহাব ও তার স্ত্রী যদি সত্যকে না মানে তবে সে ধ্বংস হবেই আর আবু লাহাব ও তার স্ত্রী আল্লাহ্র কথা সত্য জেনেও মানেনি এবং আল্লাহ জানতেন যে তারা দুইজনেই কেউই ইসলামে ফিরে আসবে এর জন্যই তিনি আমাদের উপদেশের জন্য আগেই কুরআনে মজেজা স্বরূপ তাদের পরিনতি লিখে দিয়েছেন।
এখানে কোনভাবেই আল্লাহ দোষী হয় না বরং সুরা নাজম ৫৩:৩৯,৪০ = মানুষ শুধু তাই পায় যা সে অর্জন করে এবং তার কর্ম শীঘ্রই তাকে দেখানো হবে।
ঐ বন্ধু যেমন সত্য কথা জেনেও খাদ্য, না গ্রহন করার ফলে সে যে ক্ষুধার কষ্ট পেল সে অসুস্থ হয়ে পরবে। আমরাও যেন জেনে বুঝে আল্লাহকে অস্বীকার না করি তাই আল্লাহ আমাদেরকে এটা মনে রাখার জন্যই নামাজে “সুরা লাহাব” পড়ার আদেশ করেছেন, আবু লাহাবের মত আমরাও সত্যকে জানার পরেও অস্বীকার না করি। আশা করি জবাব পেয়েছেন।