আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
কৃষি উদ্যোক্তা রচনাঃ
ভূমিকা:
অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে এবং জনবল কাজে লাগিয়ে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ উপার্জনের প্রত্যাশায় যখন কোনো কাজ করার পরিকল্পনা করে, তখন তাকে উদ্যোগ বলে। যারা এই উদ্যোগ গ্রহণ করে তাদের বলে উদ্যোক্তা। প্রতিটি পেশাকে কেন্দ্র করে উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব। একজন উদ্যোক্তা আত্মনির্ভরশীল হন এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন। কৃষিকে উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণ করার বিষয়টি বাংলাদেশে নতুন। বিপুল জনসংখ্যা, কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস, বেকারত্ব – এ সবকিছুর ভিতরে একদল তরুণ কৃষিকে প্রধান অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করছেন। শিক্ষিত তরুণদের কৃষিক্ষেত্রে পরিকল্পিত উদ্যোগ ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তা:
কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তার মধ্যে পার্থক্য আছে। একজন কৃষক তাঁর পণ্য বাজারে বিক্রির চেয়ে পরিবারের চাহিদা মেটানোকে বেশি গুরুত্ব দেন অথবা কিছুটা বিক্রির জন্য এবং কিছুটা পরিবারের চাহিদা মেটাতে ব্যয় করেন। অন্যদিকে, একজন কৃষি উদ্যোক্তার মূল লক্ষ্য বাজারজাতকরণ ও মুনাফা তৈরি। তাই একজন কৃষি উদ্যোক্তাকে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির হতে হয় এবং তার কাজে প্রচুর ঝুঁকি থাকে।
কৃষি উদ্যোগের ক্ষেত্রসমূহ:
শস্য, প্রাণীসম্পদসহ কৃষি ও কৃষিসংশ্লিষ্ট যে-কোনো বিষয়কে কৃষি উদ্যোগের আওতায় আনা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাকে অবশ্যই মূলধন, জমির পরিমাণ, মাটির গুণাগুণ, অবকাঠামো, বালাই ব্যবস্থাপনা, লোকবল, পরিবহণ ব্যবস্থা, বাজার ও চাহিদা, উৎপাদিত পণ্যের সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করতে হয়। ধান, গম, ডাল, আখ, পাট, ঘাস, শাকসবজি, ফুল, ফল, মসলা, মধু, মাশরুম, রেশম, মাছ প্রভৃতির চাষ ও উৎপাদন; গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি প্রভৃতি প্রাণীসম্পদের লালন- পালন; গাছের চারা, জৈব সার, বায়োগ্যাস, দুধ ও দুধজাত পণ্যের উৎপাদন ও বিপণন ইত্যাদি কৃষি উদ্যোগের আওতাভুক্ত।
কৃষি উদ্যোক্তার করণীয়:
একজন কৃষি উদ্যোক্তাকে নিম্নোক্ত করণীয় সম্বন্ধে অবগত থাকা উচিত:
ক. উদ্যোক্তাকে প্রথমেই তার পণ্যের বাজার সম্বন্ধে ভালো ধারণা রাখতে হবে।
খ. প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে অপচয় ও ব্যয় হ্রাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
গ. একজন কৃষি উদ্যোক্তাকে উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন হতে হয়। কারণ, তাঁর এই উদ্ভাবনী বুদ্ধি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে সাহায্য করবে।
ঘ. কৃষিখাতে উদ্যোক্তাকে অনেক রকমের ঝুঁকি নিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ঝুঁকি নিতে হবে এবং ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সম্ভাব্য প্রস্তুতি রাখতে হবে।
ঙ. উদ্যোক্তা যে ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করবেন, সে বিষয়ে যাবতীয় তথ্যের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখা জরুরি। উপযুক্ত খাবার, সার, কীটনাশক, আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ প্রযুক্তি সম্বন্ধে ধারণা থাকা দরকার। সম্প্রতি স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার উদ্যোক্তাদের সাফল্যে ভূমিকা রাখছে।
চ. একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে কয়েকজন উদ্যোক্তা একসঙ্গে কাজ করতে পারেন। এতে বড়ো ধরনের কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হয় এবং ঝুঁকি হ্রাস পায়। তবে অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে অংশীদার নির্বাচন করা উচিত।
ছ. পরিবর্তনশীল প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ, শ্রমিক ও পণ্য পরিবহণ, বাজার পরিস্থিতি ও প্রতিযোগীদের কথা চিন্তা করে কাজে অগ্রসর হলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কয়েকটি উদ্যোগ:
কৃষির উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন:
ক. সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো কৃষির ধরন অনুযায়ী স্বল্প সুদে বিভিন্ন অঙ্কের ঋণ প্রদান করছে।
খ. কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর ও মৎস্য সম্পদ অধিদপ্তর উদ্যোক্তাদের যে-কোনো প্রয়োজনে পরামর্শ দিয়ে থাকে।
গ. বছরব্যাপী চাষ করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ‘ডিজিটাল শস্য ক্যালেন্ডার’ ও ‘বালাইনাশক নির্দেশিকা’ দেওয়া আছে, যা ঠিক সময়ে ঠিক ফসল ফলাতে সাহায্য করে। ১৬১২৩ নম্বরে ফোন করে কৃষিসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কৃষি প্রযুক্তি সম্বন্ধে জানাতে ‘কৃষি প্রযুক্তি ভান্ডার’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কৃষিদ্রব্যাদির বাজারদর, কৃষকপ্রাপ্ত বাজারদর, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক ভিত্তিতে প্রেরণ করে।
উপসংহার:
একজন কৃষি উদ্যোক্তা সফল হলে একদিকে যেমন দারিদ্র্য দূরীভূত হয়, অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা পায়। তবে কৃষি উদ্যোক্তাকে অবশ্যই সততার সঙ্গে কাজ করা উচিত। কারণ তাঁর পণ্য চূড়ান্ত বিচারে খাবারের চাহিদা মেটাবে।
রচনা লেখা নিয়ম-
প্ৰবন্ধ/রচনা কি? রচনা কত প্রকার ও কি কি?
প্ৰবন্ধ/রচনা/রচনা এক প্রকার গদ্য রচনা। রচনা শব্দের অর্থ নির্মাণ বা সৃষ্টি করা। কোনো বিশেষ ভাব বা তত্ত্বকে ভাষার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার নামই রচনা। কোনো বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিতে প্ৰবন্ধ/রচনা/রচনা রচিত হয়।
সব ধরনের প্ৰবন্ধ/রচনাকে অন্তত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যথা – বর্ণনামূলক প্ৰবন্ধ/রচনা, চিন্তামূলক প্ৰবন্ধ/রচনা ও ব্যক্তি অনুভূতিমূলক প্ৰবন্ধ/রচনা।
উদাহরণস্বরূপঃ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প’ বা ‘ভাষা আন্দোলন’ প্ৰবন্ধ/রচনাকে বলা যায় বর্ণনামূলক প্ৰবন্ধ/রচনা, ‘সময়ানুবর্তিতা’ বা ‘মাদকাসক্তি’ প্ৰবন্ধ/রচনাকে বলা যায় চিন্তামূলক প্ৰবন্ধ/রচনা, এবং ‘লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা’ বা ‘কোনো ঘটনার স্মৃতি’ প্ৰবন্ধ/রচনাকে বলা যায় ব্যক্তি অনুভূতিমূলক প্ৰবন্ধ/রচনা।
রচনা লেখার ফরমেট/স্টাইলঃ
রচনার সাধারণত তিনটি অংশ। যথা-
১। ভূমিকা: প্রবন্ধের প্রথম অনুচ্ছেদটি হবে এর ভূমিকা বা সূচনা। ভূমিকা হচ্ছে প্রবন্ধের সূচনা অংশ। অনেকটা বিষয়ে ঢোকার দরজার মতো ভূমিকা যত বিষয় অনুযায়ী, আকর্ষণীয় ও মনোরম হয় ততই ভালো। লক্ষ রাখা দরকার, ভূমিকা অংশে যেন অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য ভিড় না করে আর তা যেন খুব দীর্ঘ না হয়।
ভূমিকা হল বাড়ীর দরজার মতো। তাই আপনি কি নিয়ে রচনা লিখতে চলেছেন তা পরিষ্কার করে ফুটিয়ে তুলবেন ভূমিকা তে।
এমনভাবে ভূমিকা লিখুন, যেন পাঠক বুঝতে পারেন আপনি কিসের ওপর রচনা লিখতে চলেছেন। কিন্তু সেই সব ব্যাপারে বেশী তথ্য ভূমিকা তে দেবেন না। কিন্তু পাঠকের মনে আরও ভেতরে প্রবেশ করার একটা কৌতূহল জন্মাবে, মানে পাঠক আপনার রচনা পড়তে আগ্রহী হবেন। পাঠক এর মনে হবে- এর পরে কি আছে, আরও একটু পড়া যাক।
২। মূল অংশ: ভূমিকার পরে প্রবন্ধের মূল বিষয়ের আলোচনা শুরু হয়। প্ৰবন্ধ/রচনাের মূল অংশ একাধিক অনুচ্ছেদে বিভক্ত হয়ে থাকে। অনুচ্ছেদগুলো যাতে সমরূপ থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হয়। বিশেষভাবে বর্ণনামূলক ও চিন্তামূলক প্ৰবন্ধ/রচনাের বেলায় অনুচ্ছেদগুলোর আলাদা শিরোনাম থাকে। এগুলোর নাম অনুচ্ছেদ-শিরোনাম। এসব শিরোনামের পরে কোলন যতি (:) দিয়ে লেখা শুরু করা যায়।
৩। উপসংহার: প্রবন্ধের সর্বশেষ অংশ উপসংহার। সূচনার মতো সমাপ্তিরও আছে সমান গুরুত্ব। প্রবন্ধের ভাববস্তু ভূমিকার উৎস থেকে ক্রমাগ্রগতি ও ক্রমবিকাশের ধারা বহন করে উপসংহারে এসে একটি ভাবব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে সমাপ্তির ছেদ-রেখা টানে। এখানে লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশের যথেষ্ট অবকাশ থাকে। উপসংহারে লেখক একদিকে যেমন আলোচনার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, অন্যদিকে তেমনি লেখকের নিজস্ব অভিমতের কিংবা আশা-আকাঙ্ক্ষার সার্থক প্রতিফলনও ঘটে।
তাই কখনোই তাড়াহুড়ো করে, যেমন তেমন করে উপসংহার লিখে রচনাটি শেষ করে দেবেন না যেন। উপসংহার হবে –আপনি এতক্ষণ যা কিছু লিখলেন তার সারকথা।
প্ৰবন্ধ/রচনা লেখার সাধারন নিয়মঃ
- ক. ভূমিকা হলো প্ৰবন্ধ/রচনাের প্রবেশক অংশ। এটি সাধারণত এক অনুচ্ছেদের হয়। এই অংশে প্রায়ই মূল আলোচনার ইঙ্গিত থাকে।
- খ. প্ৰবন্ধ/রচনাের মূল অংশ একাধিক অনুচ্ছেদে বিভক্ত হয়ে থাকে। অনুচ্ছেদগুলো যাতে সমরূপ থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হয়। যুক্তি বা কালের অনুক্রম মনে রেখে অনুচ্ছেদগুলোর সমরূপতা ঠিক করা যেতে পারে।
- গ. বিশেষভাবে বর্ণনামূলক ও চিন্তামূলক প্ৰবন্ধ/রচনাের বেলায় অনুচ্ছেদগুলোর আলাদা শিরোনাম থাকে। এগুলোর নাম অনুচ্ছেদ-শিরোনাম। এসব শিরোনামের পরে কোলন যতি (:) দিয়ে লেখা শুরু করা যায়।
- ঘ. উপসংহার হলো প্ৰবন্ধ/রচনাের সমাপ্তি অংশ। প্ৰবন্ধ/রচনাের প্রকৃতি অনুযায়ী এখানে সাধারণত ফলাফল, সম্ভাবনা, সীমাবদ্ধতা, প্রাসঙ্গিকতা ইত্যাদি স্থান পায়।
- ঙ. প্ৰবন্ধ/রচনাের ভাষা হওয়া উচিত সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল।
- চ. প্ৰবন্ধ/রচনাের প্রতিটি অনুচ্ছেদ লেখার সময়ে প্ৰবন্ধ/রচনাের শিরোনামের কথা মনে রাখতে হয়, তাতে প্ৰবন্ধ/রচনাের মধ্যে অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা প্রবেশ করতে পারে না।
- ছ. উদ্ধৃতি ব্যবহারে সতর্ক হওয়া উচিত। অপরিহার্য না হলে উদ্ধৃতি ব্যবহার করা ঠিক নয়। বিশেষভাবে বাংলা প্ৰবন্ধ/রচনাের মধ্যে অন্য কোনো ভাষার উদ্ধৃতি বর্জনীয়।
- জ. প্ৰবন্ধ/রচনাের নির্দিষ্ট কোনো আয়তন নেই। এমনকি এর অনুচ্ছেদসংখ্যাও নির্দিষ্ট করা যায় না। তবে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্ৰবন্ধ/রচনাের শব্দসংখ্যা কমবেশি এক হাজার হতে পারে।
রচনার লেখার সাধারণ নিয়মের পাশাপাশি আরও যা যা লক্ষ্য রাখা প্রয়োজনঃ
প্রবন্ধ রচনার সময় কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করা প্রয়োজন। তাহলে প্রবন্ধের মান বৃদ্ধি পায় এবং পরীক্ষায় অধিক নম্বর পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে-
১। রচনা লিখার পর একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিন সব বানান ঠিক আছে কিনা
২। সাধু ভাষা, চলিত ভাষা মিশিয়ে ফেলবেন না, যে কোন একটা ভাষা তে লিখুন।
৩। যে টপিকের ওপর রচনা লিখবেন, তার ওপর জ্ঞান থাকাটা খুবই জরুরী।
৪। আপনার জানা জ্ঞান কে খুব সুন্দর ভাবে পয়েন্ট অনুসারে সাজিয়ে লিখবেন। কোন তথ্য কোন হেডলাইনে রাখা যাবে তা আগে ঠিক করে নিন।
৫। কিছু বিখ্যাত কবিদের কবিতার লাইন যদি প্রাসঙ্গিক মনে হয়, তাহলে সেইসব লাইন বা কোন প্রাসঙ্গিক কোটেশন প্রতিটি হেডলাইনেই দিতে পারেন। তবে প্রাসঙ্গিকতা বিচার করে দেবেন।
৬। অপ্রাসঙ্গিক কিছুই লিখবেন না। তথ্য ছাড়া শুধু নানান রকম গল্প লিখে রচনা কে বিনা কারনে দীর্ঘায়িতো করবেন না।