কোন ছাগল পালনে লাভ বেশী প্রশ্নটা আমাদের কাছ খুব বেশি এসে থাকে। তো এর উত্তরে বলবো যে, আমাদের আবহাওয়ায় কালো ছাগল বা ব্ল্যাক বেঙ্গল পালন করাই উত্তম। তবে দুধের জন্য যমুনাপারি জাতের ছাগল বা রাম ছাগল পালন করা যেতে পারে যেতে পারে। এছাড়া যদি আপনার মূলধন অনেক বেশি হয়ে থাকলে আপনি বোয়ার ছাগল পালন করতে পারেন।
♦ আমি এখানে ৬ টি ছাগলের জাতের নাম বলে দিচ্ছি যে কোন ছাগলে লাভ বেশি ও কোন ছাগল ভালো। এছাড়া আরো পড়তে পারেন এখানেঃ কোন ছাগল বেশি বাচ্চা দেয়? এগুলো বাংলাদেশে পালনের জন্য বেশ উপযোগী এবং অত্যান্ত লাজনক। তবে যদি আপনি সঠিক ভাবে ছাগলের যত্ন করেন।
যেমন- ছাগলের যাতে রোগ না হয় তার জন্য যত্ন নিতে হবে ও টিকার ব্যবস্থা করতে হবে। এদের থাকার জায়গাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, শুকনো রাখলে, সময় মতো ক্রিমির ওষুধ খাওয়ালে (বর্ষার আগে এক বার আর বর্ষার শু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়ম মতো টিকা দিলে, আর পরে এক বার), রোগ-জ্বালার প্রকোপ অনেকটাই এড়ানো যায়। ছাগলের রোগ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে পশু চিকিৎসক পরামর্শ নিতে হবে।ছাগলের পি পি আর রোগের প্রতিরোধঃরোগ হওয়ার পূর্বে সুস্থও ছাগলকে এ রোগের টিকা দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা।বাচ্চার বয়স ৪ মাস হলেই এ রোগের টিকা দিতে হবে। ইত্যাদি কাজ যেগুলো একজন খামারির সবসময় করতে হয়।
১) ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল (Black Bengal Goat)

কালো রংয়ের এই ছাগল বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র দেখা যায়। কালো রং সাদা ও বাদামী, খয়েরী ও সাদা রংয়ের বেঙ্গল গোট দেখা যায় ৷ এই ছাগলগুলি আকারে ছোট প্রকৃতির ৷ গড়ে ২ – ৩টি বাচ্চা একসাথে দিতে পারে এবং ১ বার বাচ্চা দেওয়ার খুব কম সময়ের মধ্যে (আট মাস অন্তর) আর একবার বাচ্চা দেয় অর্থাত ২ বছরে ৩ বার বাচ্চা দেয় ৷ ১২ – ১৪ মাসের মধ্যে এরা বাচ্চা দেয় ৷ এরা প্রতিদিন গড়ে ৪০০ গ্রাম দুধ দেয় ৷ নাম মাত্র দানা-ভূষি খেয়ে এরা ৬ মাসে প্রায় ৮ কেজি ওজন হয়৷ তবে পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ছাগলের ওজন ৩০ কেজি ও স্ত্রী ছাগলের ওজন ২০ কেজি হয় ৷
২) সিরোহি ছাগল (Sirohi Goat)

এই প্রজাতির ছাগল রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ এবং গুজরাটে লালন-পালন করা হয়। এগুলি আকারে ছোট। এই জাতের ছাগলের দেহ বাদামী বর্ণের হয় এবং শরীরে হালকা বা বাদামী দাগ থাকে। এদের কান চ্যাপ্টা এবং ঝুলন্ত এবং শিং বাঁকা হয়। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ছাগলের ওজন ৫০ কেজি এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ছাগীর ওজন ৪০ কেজি হয়। পুরুষ সিরোহির দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী সিরোহির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬২ সেমি। এই প্রজাতির ছাগল প্রতি দিন ০.৫ কেজি থেকে ০.৬ কেজি দুধ দিতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ছাগলের ওজন ৫০ কেজি এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ছাগীর ওজন ৪০ কেজি হয়। পুরুষ সিরোহির দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী সিরোহির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬২ সেমি। এই প্রজাতির ছাগল প্রতি দিন ০.৫ কেজি থেকে ০.৬ কেজি দুধ দিতে পারে। আরও জানেতে পড়ুন এখানেঃ শিরোহি ছাগলের বৈশিষ্ট্য।
৩) বারবারি ছাগল (Barbari Goat)

এই ছাগলগুলির রং সাদা ও হরিণের মতো দেহে ছোপ ছোপ দাগ থাকে ৷ পাগুলি ছোট প্রকৃতির ৷ পরিপূর্ণ পুং ছাগলের ওজন ২৫ – ৩০ কেজি ও স্ত্রী ছাগলের ওজন ৩৫ – ৪০ কেজি ৷ ১২ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে এরা দুবার বাচ্চা দিতে পারে এবং একসাথে দুটি বাচ্চা দেয় ৷ দিনে সাধারণতঃ .৮ কেজি থেকে ১.৩ কেজি দুধ দেয় ৷ দুধে ফ্যাটের পরিমাণ প্রায় ৫ ভাগ।
৪) বোয়ার জাতের ছাগল (Boar Goat)

এদের প্রতিদিন ২৫০ গ্রাম পৰ্যন্ত ওজন বাড়ে যা কিনা ৩ মাসে ৩০ থেকে ৩৬ কেজি ওজন পর্যন্ত হয়ে থাকে। খুব বাজে খাবার ব্যাবস্থায় ও এরা ১৫ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে ৩ মাসে। এরা খুব দ্রুত পূর্ণ বয়স্ক হয়ে থাকে এবং ২ থেকে ৩ টা বাচ্চা এক সাথে দিয়ে থাকে। ২টি বাচ্চা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। বোয়ার এর দাম বেশি হওয়ায় পৃথিবীতে সব জায়গায় ক্রস করানো হয় ওই এলাকার লোকাল জাতের ছাগলের সাথে। এই ক্রস এর ফলে প্রথম বারই ৫০% ব্লাড লাইন চলে আসে। ৫০% বোয়ার ব্লাড লাইন এর ছাগল খুব সহজেই ৬ মাসে ৩০কেজি ওজন পাওয়া সম্ভব।
যদিও বোয়ারেএকটি উৎকৃষ্ট মাংস উৎপাদনকিারী সেরা ছাগলের জাত তবুও এটাকে তালিকার প্রথমে রাখালাম না। কারণ প্রশ্নটি যেহেতু করা হয়েছে কোন ছাগল পালনে লাভ বেশী। আপনি একজন নতুন খামারি হিসেবে যদি প্রথমেই বোয়ার দিয়ে শুরু করেন তবে বেশি সম্ভাবনা আপনি আপনার খামারি জীবনের শুরিুতেই লসের সম্মুখিন হতে পারেন।
কারণ এই ছাগল খুব একটা সহজলভ্য নয়, আর যারাই ছাগল বিদেশ থেকে আমদানি করে আনে তারা সাধারনত বিক্রি করতে চায় না। আপনি যদি এই ছাগল পালন করতে চান তবে ছাগল ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবত প্রচুর টাকা খরচ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে খামারে কোন বিপর্যয় দেখা দিলে তখন আর রিকোভার করার মতো মূলধন হাতে থাকবে না।
তাই খামারের শুরুতে বোয়ার দিয়ে শুরু না করে উপরে উল্লিখিত ৪ টি জাতের ছাগল পালনে লাভ বেশী হবে। পরে আপনি যখন আরও অভিজ্ঞ খামারি হয়ে যাবেন তখন আপনি বোয়ার ছাগল পালন করা শুরু করতে পারেন।
৫) বিটল ছাগল (Beetal Goat)

এরা কালো, সাদা, লালচে বাদামী ও এদের মিশ্রণে হতে পারে ৷ পূর্ণ বয়স্ক পুং ছাগলের ওজন ৫০ – ৬০ কেজি ও স্ত্রী ছাগলের ওজন ৪০ -৫০ কেজি হয় ৷ এরা সাধারণতঃ একসাথে একটি বাচ্চা দেয় তবে অনেক সময় দুটি বাচ্চাও দেয় ৷ দিনে প্রায় ১.৫ – ২ কেজি দুধ দেয় ৷
৬) যমুনাপারি বা রাম ছাগল (Jamnapari)

এই জাতের ছাগল যমুনা ও পদ্মা নদীর নিকটবর্তী জেলায় দেখা যায় ৷ এই ছাগলের আকার-আকৃতি বেশ বড় ধরনের ৷ এরা মাংস ও দুধ উভয়ের জন্য ব্যবহৃত হয় ৷ সংকরায়নের কাজে অন্যান্য দেশী জাতের সহিত এদের মিলন করানো হয়৷ পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ছাগল ওজনে ৫০ – ৬০ কেজি ও স্ত্রী ছাগল ৪০ – ৫০ কেজি হয় ৷ প্রতিদিন প্রায় ১.৫ কেজি থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত দুধ দেয় ৷ ঐ দুধে প্রায় ৪ – ৫ ভাগ ফ্যাট থাকে ৷ এরা বছরে একবার বাচ্চা দেয় এবং ১টি বাচ্চা দেয় ৷
শেষকথাঃ
আমার অভিজ্ঞতায় এই ৬ টি ছাগলের জাত হলো বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বাংলায় ছাগল পালনের জন্য সবচেয়ে। কোন জাতের ছাগল পালনে লাভ বেশি, আশা করি এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন।
লাভজনক ছাগলের জাত সম্পর্কে যদি আপনার আরও কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আপনি আমাদের জানাতে পারেন। ধন্যবাদ শেষ পর্য়ন্ত পড়ার জন্য। আমাদের খামারিয়ান ফেইসবুক পেইজে একটা লাইক দিলে খুশি হব এবং আমারা এ ধরণের নতুন কোন পোষ্ট করলে আপনিও জানতে পারবেন।
কোন জাতের ছাগল একশ কেজি পর্যন্ত ওজন হতে পারে ?