বাংলাদেশের কোন জাতের গাভী সবচেয়ে বেশি দুধ দেয়? এক কথায় যদি উত্তর দিতে হয়, উত্তরটা হলো বাংলাদেশে চাষ করা সবচেয়ে বেশি দুধ দেওয়া গরু হলো: Holstein-Friesian বা হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান।
যে সমস্ত খামারি ভায়েরা ডেইরি খামার করতে আগ্রহী তারা প্রয়িস প্রশ্ন করেন কোন জাতের গাভী সবচেয়ে বেশি দুধ দেয় বা যে কোন জাতের গাভী ভাল?
তাই আজকের আলোচনার বিষয়ঃ
- বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন ৫টি জাতের গাভীর দুধ দেওয়ার পরিমাণ।
- ভাল দুধাল গাভী নির্বাচনের বৈশিষ্ট্য।
- গাভী থেকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে দুধ দোহন পদ্ধতি।
পৃথিবীতে উন্নত জাতের গাভীর অনেক জাত রয়েছে। এর মধ্যে যে সকল উন্নত জাতের দেশী ও ক্রস গাভী (সংকর জাতের গাভী) আমাদের দেশে পাওয়া যায় সে সকল গাভীর জাত পরিচিত খামারীদের সুবিধার জন্যে সংক্ষিপ্তাকারে নিচে দেয়া হলো:-
- দেশী গাভী।
- ফ্রিজিয়ান ক্রস গাভী।
- শাহীওয়াল ক্রস গাভী।
- জার্সী ক্রস গাভী।
- সিন্ধি ক্রস গাভী।
1. উন্নত দেশী গাভীঃ
জন্ম ওজন: ১৬-১৮ (কেজি)
বয়ঃপ্রাপ্তি কাল: ৯৮০-১১২৬ (দিন)
দুধ উৎপাদন: ২.০-২.৫ (লি./দিন)
দুধ উৎপাদন কাল: ১৭০-২২৭ (দিন)
বাচ্চা প্রসবের পর ১ম গরম হওয়া: ১২১-১৬ (দিন)
প্রতি গর্ভধারণে পাল সংখ্যা: ১.৮-২.০।
2. ফ্রিজিয়ান ক্রস গাভীঃ
জন্ম ওজন: ১৯-২৪ (কেজি)
বয়ঃপ্রাপ্তি কাল: ৯২০-১০২২ (দিন)
দুধ উৎপাদন: ৩.৫-১২.০ (লি./দিন)
দুধ উৎপাদন কাল: ২৯৫-৩৩০ (দিন)
বাচ্চা প্রসবের পর ১ম গরম হওয়া: ৮৫-১৫৫ (দিন)
প্রতি গর্ভধারণে পাল সংখ্যা: ১.৬-২.৪৪
3. শাহীওয়াল ক্রস গাভীঃ
জন্ম ওজন: ১৬-১৮ (কেজি)
বয়ঃপ্রাপ্তি কাল: ৯৮০-১১২৬ (দিন)
দুধ উৎপাদন: ২.০-২.৫ (লি./দিন)
দুধ উৎপাদন কাল: ১৭০-২২৭ (দিন)
বাচ্চা প্রসবের পর ১ম গরম হওয়া: ১২১-১৬২ (দিন)
প্রতি গর্ভধারণে পাল সংখ্যা: ১.৮-২.০
4. জার্সী ক্রস গাভীঃ
জন্ম ওজন: ১৭-২০ (কেজি)
বয়ঃপ্রাপ্তি কাল: ৮৫৫-১১০১ (দিন)
দুধ উৎপাদন: ২.৫-৫.০ (লি./দিন)
দুধ উৎপাদন কাল: ২৮০-৩০৫ (দিন)
বাচ্চা প্রসবের পর ১ম গরম হওয়া: ১২০-২৩৮ (দিন)
প্রতি গর্ভধারণে পাল সংখ্যা: ১.৫-২.০
5. সিন্ধি ক্রসঃ
জন্ম ওজন: ১৬-২২ (কেজি)
বয়ঃপ্রাপ্তি কাল: ১০৫৮-১১২৪ (দিন)
দুধ উৎপাদন: ৩.৫-৭.০ (লি./দিন)
দুধ উৎপাদন কাল: ২৫৮-২৮০ (দিন)
বাচ্চা প্রসবের পর ১ম গরম হওয়া: ১২৭-২০৩ (দিন)
প্রতি গর্ভধারণে পাল সংখ্যা: ১.৪৮-২.০
ভাল দুধাল গাভী নির্বাচনের বৈশিষ্ট্যঃ
যেসব গাভী সন্তোষজনক পরিমাণ দুধ দেয় তাদের ভাল দুগ্ধবতী গাভী বলা হয়।
সাধারণত দুগ্ধবতী গাভীর দুধের পরিমাণ দেখে দুগ্ধবতী গাভীর মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। এছাড়া শুষ্ক গাভী, গর্ভবতী গাভী যখন দুধ দেয় না এবং বকনা অবস্থায়ও কতিপয় বৈশিষ্ট্য দেখে এরা দুগ্ধবতী হবে কিনা তা বোঝা যায়।
⇒ দৈহিক গঠনঃ বৃহৎ দেহ, ঝুড়িশিথিল পা, চওড়া কপাল, ছোট মাথা, চামড়া পাতলা, বুক বেশ গভীর ও প্রশস্ত এবং দেহ অতিরিক্ত মাংসল ও চর্বি বহুল হবে না।
⇒ গোজ আকৃতির দেহঃ ভাল জাতের গাভীকে পিছনের দিক থেকে গোঁজাকৃতির ন্যায় দেখা যাবে। প্রশস্ত চওড়া পাছা ও পিছনের পা দুটোর মধ্যে যথেষ্ট ফাঁক থাকবে যার ফলে ওলান বড় হওয়ার সুযোগ থাকে।
⇒ ওলান ও বাটঃ ওলান বেশ বড়, চওড়া, মেদহীন ও কক্ষগুলো সামাঞ্জস্যপূর্ণ হবে। বাটগুলো প্রায় একইমাপের এবং পরস্পর থেকে সমান দূরে হবে।
⇒ দুধের শিরাঃ গাভীর পেটের নিচে ওলানের সাথে সংযুক্ত শাখা প্রশাখাযুক্ত দুধের শিরা থাকবে।
⇒ প্রকৃতিঃ দুগ্ধবতী গাভী শান্ত, ধীর স্থির মাতৃভাবাপন্ন প্রকৃতির হবে।
⇒ বয়সঃ সাধারণত একটি গাভী প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত বাচ্চা ও দুধ উৎপাদন করে। সুতরাং গাভীর বয়স জানা আবশ্যক।
⇒ দুধ উৎপাদনঃ পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদনকারী গাভী উৎকৃষ্ট হিসাবে বিবেচিত হয়। দুধে চর্বির পরিমাণ যাচাই কওে গাভীর উৎকৃষ্টতা বিচার করা প্রয়ােজন।
গাভী থেকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে দুধ দোহন পদ্ধতিঃ
(১) স্বাস্থ্যসম্মত দুধ মানুষের শরীরের জন্যে যতটা প্রয়ােজনীয় তেমনী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও গাভী থেকে সংগৃহিত দুধ মানুষের শরীরের জন্যে ততটা ক্ষতিকর। এ ধরনের দুধ মানুষের শরীরের জন্যে বিভিন্ন ধরনের দুধ বাহিত রোগ যেমন: ডায়রিয়া, ডিপথেরিয়া, টিউবারকিউলোসিস ইত্যাদি ছড়িয়ে থাকে।
(২) এ জন্যে গাভী থেকে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে দুধ দোহন অত্যন্ত জরুরী। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে গাভী থেকে দুধ উৎপাদনের জন্যে নিলিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করা প্রয়ােজনঃ
(৩) গাভীকে শান্ত অবস্থায় আরামদায়ক পরিবেশে রেখে দুধ দোহন করতে হবে।
(৪) পরিষ্কার স্থানে গাভীকে রেখে পরিষ্কার পাত্রে দুধ দোহন করতে হবে।
(৫) দুধ দোহনের পূর্বে গাভীকে কিছু পরিমান দানাদার খাদ্য প্রদান করা ভালো।
(৬) দুধ দোহনের পূর্বে গাভীকে গোসল করানো উচিত। গোসল করানো সম্ভব না হলে গাভীর ওলান পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
(৭) ওলান ধুয়ে নেয়ার পর পরিষ্কার জীবানুমুক্ত কাপড় দিয়ে মুছে দিলে ভাল হয়।
(৮) দুধ দোহনের পূর্বে দোহনকারীর হাত ভাল করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
(৯) দুধ দোহনকারীর হাত চুলকানী বা ঘা মুক্ত হতে হবে।
(১০) দুধ দোহনের সময় শরীরের কোন অংশ হাত দিয়ে চুলকানো যাবে না।
(১১) দুধ রাখার পাত্র পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে।
(১২) প্রতিবার দুধ দোহনের পর পাত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করে রোদে ভালোভাবে শুকাতে হবে।
(১৩) ছোট মুখওয়ালা পাত্রে দুধ দোহন করা ভাল যাতে করে দুধ ছিটকে না পড়ে।
(১৪) সকাল ৮ টার মধ্যে এবং বিকেল ৫ টার মধ্যে দুধ দোহন করা ভাল।
(১৫) বাছুরের জন্য পর্যাপ্ত পরিমান দুধ রেখে দোহন সম্পন্ন করলে সুস্থ সবল বাছুর পাওয়া যায়।
“গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ এবং গোয়ালভরা গরু” এ হলো বাঙালী জাতির ঐতিহ্য। আমাদের দেশে গৃহপালিত প্রাণীর মধ্যে গরুই প্রধান। দেশের প্রায় প্রতিটি কৃষক পরিবার সুদূর অতীত থেকে তাদের কৃষিকাজে হালচাষ সহ পারিবারিক দুধের চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে দু’চারটি করে গরু পালন করে আসছে।
বর্তমানে গাভী পালন কৃষিকাজের হাতিয়ার এবং পারিবারিক দুধের চাহিদা পূরণের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক ব্যবসার একটি অন্যতম হাতিয়ারে পরিনত হয়েছে। ফলে দিনে দিনে দেশী গাভী উন্নত হচ্ছে পাশাপাশি উন্নত জাতের গাভীও পালন করা হচ্ছে। গ্রামের পাশাপাশি আজকাল শহর ও শহরতলীতেও গাভী পালন করা হচ্ছে।
It’s is useful,, Thank you all adviser