Skip to content

 

ব্রয়লার কোয়েল পালন পদ্ধতি, কিভাবে কোয়েল পালন করা যায়, বাংলাদেশে কোয়েল পালন (কোয়েল পালন)

ব্রয়লার কোয়েল পালন পদ্ধতি, কিভাবে কোয়েল পালন করা যায়, বাংলাদেশে কোয়েল পালন (কোয়েল পালন)

প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মুরগির মাধ্যমে বা কৃত্রিম পদ্ধতিতে ইনকুবেটরের মাধ্যমে যেভাবেই ডিম ফোটানো হোক না কেন এরপর এদেরকে কৃত্রিম পদ্ধতিতেই পালন করতে হয়। কোয়েল পালনের পুরো সময়কালকে দু টো প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন :

১. বাচ্চা পালন পর্ব ও ২. বয়স্ক কোয়েল পালন পর্ব।

বাচ্চা পালন পর্বঃ-

এ পর্বটি দু টো ভাগে বিভক্ত। যথা :

ক. ক্রডিং পর্ব (Brooding) : এ পর্বটি ০ ১৪ দিন (০ – ২ সপ্তাহ) বয়স পর্যন্ত। তবে, পরিবেশের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে এ পর্বটি তিন সপ্তাহ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

খ. রিয়ারিং পর্ব (Rearing) : এ পর্বটি ১৫- ৩৫ দিন (৩-৫ সপ্তাহ) বয়স পর্যন্ত। তবে, পরিবেশের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে ক্রডিং পর্ব তিন সপ্তাহ পর্যন্ত বেড়ে গেলে রিয়ারিং পর্ব কমে গিয়ে ৪-৫ সপ্তাহ হয়।

বয়স্ক কোয়েল পালন পর্ব : এ পর্বটি ৬ সপ্তাহ থেকে বাকি সময় অর্থাৎ লেয়িং/ব্রিডিং পর্ব পর্যন্ত চলে।

লেয়ার বা ব্রিডার কোয়েলের জীবনে সবগুলো পর্ব আসলেও ব্রয়লার কোয়েল যেহেতু মাত্র পাঁচ সপ্তাহ পালনের পর বাজারজাত করা হয় তাই এদের পালনের সময়কাল ক্রডিং এবং রিয়ারিং পর্বেই সীমাবদ্ধ থাকে।

১. ক্রডিং পর্ব

একদিন বয়সের বাচ্চাদের জন্মের পর থেকে ১৪দিন (বা পরিবেশের অবস্থাভেদে ২১ দিন) বয়স পর্যন্ত কৃত্রিম তাপের মাধ্যমে পালনকে ত্রুডিং বলা হয়। ক্রডিং পর্বে যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এদেরকে পালন করা হয় তা ত্রুডিং তাপমাত্রা নামে পরিচিত। ক্রডিং তাপ বাচ্চার পেটের মধ্যে আমিষসমৃদ্ধ যে কুসুম থাকে তা শরীরে মধ্যে মিশে যেতে সাহায্য করে। তাছাড়া এই তাপ বাচ্চার হজমশক্তি বাড়ায় এবং দ্রুত পালক গজাতে সাহায্য করে। এই কুসুম দেহের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে মিশে যেতে ২ ৩ দিন সময় লাগে। তাই এ সময় উচ্চ শক্তিসমৃদ্ধ খাদ্য ছাড়া বাচ্চার অন্য কোন খাদ্যের দরকার পড়ে না। কোয়েলের বাচ্চার জন্য এই ক্রডিং পর্বটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ, এ সময় এরা অত্যন্ত স্পর্শকাতর থাকে এবং যে কোন ধরনের ছোটখাট ব্যবস্থাপনা ত্রুটিও এদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে ও মৃত্যুহার অত্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।

২. রিয়ারিং পর্ব

কোয়েলের ক্ষেত্রে এ পর্বটি ৩ ৫ সপ্তাহ (অবস্থাভেদে ৪ ৫ সপ্তাহ)। এ সময়টি এদের বৃদ্ধিকাল। এ সময়ের সঠিক যত্নের ওপরই এদের ভবিষ্যত উৎপাদন ক্ষমতা নির্ভর করে।

৩. লেয়িং ও ব্রিডিং পর্ব

লেয়িং বা ডিম পাড়া পর্বটি ৫৪ সপ্তাহব্যাপী অর্থাৎ ৬ – ৬০ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত। আর প্রজনন খামারে প্রজননের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ব্রিডার কোয়েলের ব্রিডিং পর্বটি ২০ সপ্তাহব্যাপী অর্থৎ – ৩০ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত।

ব্রয়লার কোয়েল পালন পদ্ধতি, কিভাবে কোয়েল পালন করা যায়, বাংলাদেশে কোয়েল পালন (কোয়েল পালন)

কোয়েল পালন পদ্ধতিঃ-

বাচ্চা ও বয়স্ক কোয়েলকে তিনটি পদ্ধতিতে পালন করা যায়। যথা :

১. ব্যাটারি বা খাঁচা পদ্ধতি

২. লিটার পদ্ধতি এবং

৩. ব্যাটারি ও লিটারের সমন্বিত পদ্ধতি।

১. ব্যাটারি বা খাঁচা পদ্ধতি (Battery or Cage System) :

এ পদ্ধতিতে এদের ক্রডিং, রিয়ারিং এবং লেয়িং/ব্রিডিং প্রতিটি পর্বই বিশেষভাবে তৈরি খাঁচার ভিতর সম্পন্ন করা হয়। এ খাঁচা কোয়েলের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে ছোট বা বড় এবং এক থেকে শুরু করে পাঁচ/ছয় তলাবিশিষ্ট হতে পারে। খাঁচা পদ্ধতিতে কোয়েল পালনে জায়গা খুব কম লাগে।

২. লিটার পদ্ধতি (Litter system) :

এ পদ্ধতিতে এদের পালনকালের প্রতিটি পর্বই ডিপ লিটারের উপর অতিবাহিত হবে। লিটার হলো ঘরের মেঝের উপর কাঠের গুঁড়া, তুষ, বালি, ছাই বা কাগজের ছেঁড়া টুকরা বিছিয়ে তৈরি করা বিছানা। এ পদ্ধতিতে কোয়েলকে ব্যাটারি পদ্ধতির থেকে বেশি জায়গা দিতে হয়।

৩. ব্যাটারি ও লিটারের সমন্বিত পদ্ধতি :

এ পদ্ধতিতে ক্রডিং পর্বটি ব্যাটারি ব্রুডারে এবং বাকি দু টো পর্ব ডিপ লিটারে সম্পন্ন করা হয়।

See also  কোয়েল পালন ও চিকিৎসা, কোয়েল পাখির রোগ ও চিকিৎসা, কোয়েল পাখির চিকিৎসা, কোয়েল পাখির ঔষধ, কোয়েল পাখির ভ্যাকসিন, কোয়েল পাখির চোখের রোগ, কোয়েল পাখির চুনা পায়খানা, কোয়েল পাখির রোগ-ব্যাধি ও প্রতিকার
ব্রয়লার কোয়েল পালন পদ্ধতি, কিভাবে কোয়েল পালন করা যায়, বাংলাদেশে কোয়েল পালন (কোয়েল পালন)

কোয়েলের বাচ্চা পালনঃ-

কোয়েলের বাচ্চা ব্যাটারি বা লিটার যে কোন পদ্ধতিতেই পালন করা যায়। তবে, যে পদ্ধতিতেই পালন করা হোক না কেনো এদের খাঁচা যে ঘরে রাখা হবে বা লিটার পদ্ধতিতে যে ঘরে পালন ক হবে সেটি যথেষ্ট মজবুত হওয়ায় বাঞ্ছণীয়। ঘরটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন তাতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে ; বৃষ্টি-বাদলে যেন পানি প্রবেশ না করে ; ইঁদুর বা অন্যান্য পশু-পাখি যেন উৎপাত না করে। তাছাড়া ঘরটি বয়স্ক কোয়েল বা হাঁস-মুরগির ঘর থেকে কিছুটা দূরে হওয়া বাঞ্ছনীয়। ঘরটিকে সব সময় পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। কোয়েলের বাচ্চার ক্রডিং ও রিয়ারিং এর জন্য আলাদা ঘর ব্যবহার করা উচিত। তবে, তা সম্ভব না হলে একই ঘরে বেড়া বা পার্টিশন দিয়ে পালন করা যেতে পারে। তবে, কখনোই একই খাঁচায় বা একসাথে লিটারে বিভিন্ন বয়সের কোয়েল পালন করা উচিত নয়। সঠিকভাবে কোয়েলের বাচ্চা পালনের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে। যথা :

১. সঠিক তাপমাত্রা

২. পর্যাপ্ত আলো

৩. বায়ু চলাচল ব্যবস্থা

৪. বাচ্চার ঘনত্ব

৫. খাদ্য ও পানি ব্যবস্থাপনা এবং

৬. স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ।

১. সঠিক তাপমাত্রা

বাচ্চাদের জীবন-ধারণ ও সঠিক বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে তাপমাত্রার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে মিল রেখে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা জন্মের প্রথম দিকে এদের খুবই কম থাকে। তাছাড়া এদের দেহের কোমল পালকের আচ্ছাদানও (Dawn feather) পর্যাপ্ত তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে তাপের অভাবে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এতে অনেক বাচ্চাই মারা মারা যায়। যেগুলো বেঁচে থাকে তাদের বৃদ্ধিও সঠিক হয় না। তাই বাচ্চা পালন ঘরে সঠিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। বাচ্চা পালন ঘরের তাপমাত্রা ২১° সেলসিয়াসে (৬৯.৮° – ৭১.৬° ফা.) রাখতে হয়। ব্রুডারের (Brooder- বাচ্চাদের তাপ দেওয়ার বিশেষ ধরনের যন্ত্র) তাপমাত্রা প্রথম দিন ৩৫° সে.-এ (৯৫° ফা.) রাখতে হবে। এরপর প্রতি তিন-চারদিন পরপর ২.৫°-৩° সে. (৪.৫°-৫.৪° ফা.) করে কমিয়ে তিন সপ্তাহ পর তা ঘরের তাপমাত্রায় নামিয়ে আনতে হবে। শীতকাল ছাড়া বাচ্চা পালনের পরবর্তী দুই সপ্তাহ (৪র্থ ও ৫ম) শুধু রাতের বেলায় তাপের ব্যবস্থা করলেই চলে।

বাচ্চাদের ঘরে সঠিক তাপমাত্রা আছে কি-না তা ব্রুডারে এদের আচরণ দেখেই বুঝা যাবে। ব্রুডারের তাপমাত্রা কম হলে বাচ্চাগুলো হোভারের (Hover-ব্রুডারের উপরের ছাতার মতো অংশটি যাতে বাল্ব লাগানো থাকে) নিচের এসে একসাথে জড়াজড়ি করে থাকবে। তাপমাত্রা অতিরিক্ত হলে ব্রুডারের বেস্টনির (Chick guard) দিকে ছড়িয়ে পড়বে। আর যদি ব্রুডারে সঠিক তাপমাত্রা থাকে তবে বাচ্চারা পুরো ব্রুডারে সমভাবে ছড়িয়ে থাকবে, দৌড়াদৌড়ি করবে, ঠিকমতো খাবার পানি পান করবে। ব্রুডারে তাপ কম-বেশি হলে বাল্বের পাওয়ার বদলিয়ে বা ঝুলানো বাল্ব নিচে নামিয়ে বা উপরে উঠিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা অর্থাৎ বাড়ানো-কমানো যায়। বাল্ব সতর্কতার সাথে ঝুলাতে হবে যেন নিচে পড়ে বা ভেঙ্গে দিয়ে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে |

২. পর্যাপ্ত আলো

বাচ্চাদের বৃদ্ধিতে আলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাচ্চাদের জনন-গ্রন্থির (Gonad) বৃদ্ধিতে আলোর বর্ণ বেশ প্রভাব ফেলে। যেমন : মর্দা বাচ্চাদের শুক্রাশয়ের বৃদ্ধিতে লাল বর্ণের আলোর ভূমিকা নীল বর্ণের তুলনায় বেশি। তাছাড়া আলোর সাহায্যেই এরা নিজেদেরকে ব্রুডার হাউজের/কেইজের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে শেখে এবং খাদ্য ও পানি পান করার প্রতি মনোযোগী হয়। দু সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের ঘরে ২৪ ঘণ্টা আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয় সপ্তাহের শেষে তা কমিয়ে দৈনিক ১২ ঘণ্টায় আনতে হবে। এরপর বাকি সময় পর্যন্ত (৫ সপ্তাহ) তা ১২ ঘণ্টায়ই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। তবে, তাড়াতাড়ি যৌন পরিপক্কতা (Sexual maturity) আনতে হলে প্রথম দিন থেকে ৫-৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ঘরে দৈনিক ২৪ ঘণ্টা আলো জ্বেলে রাখতে হবে। ব্রয়লারের ক্ষেত্রে তাড়াতড়ি ওজন বাড়ানোর জন্য ২৫-২৮ দিন থেকে ৩৫ দিন পর্যন্ত অর্থাৎ বাজারজাত করার ৭-১০ দিন পূর্ব থেকে দৈনিক ৮ ঘণ্টা আলোতে ও ১৬ ঘণ্টা অন্ধকারে রাখতে হবে।

৩. বায়ু চলাচল ব্যবস্থা

বাচ্চা পালন ঘরে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ব্যবস্থা থাকতে হবে। এর মাধ্যমে গরমের দিনে ঘরের মধ্যে সৃষ্ট তাপ সহজেই বেরিয়ে যেতে পারবে। এ ছাড়া ঘরে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ বায়ু ঢোকা ও ঘরে সৃষ্ট ক্ষতিকারক গ্যাস (যেমন : কার্বন-ডাই-অক্সাইড, অ্যামোনিয় ইত্যাদি) বের হয়ে যাওয়ার জন্যও সঠিক বায়ু চলাচল ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। ক্রডিংয়ের প্রথম সপ্তাহে ঘরে বায়ু চলাচল ব্যবস্থা সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে হবে এবং ধীরে ধীরে তা বাড়াতে হবে। ঘরের আপেক্ষিক আর্দ্রতা প্রথম তিন সপ্তাহ ৬০-৬৫% ও পরবর্তী দু সপ্তাহ ৫৫-৬০%-এ রাখতে হবে।

See also  কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা, কোয়েল পাখির মাংসের উপকারিতা, কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ ও কয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম, কোয়েল পাখির ডিম ও মুরগির ডিমের তুলনা

৪. বাচ্চার ঘনত্ব

ঘরের ভিতর ব্রুডারের নির্দিষ্ট জায়গার ভিতরে মোট বাচ্চার ঘনত্বের ওপর এদের সঠিক বৃদ্ধি নির্ভর করে। তিন সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত প্রতিটি বাচ্চার জন্য ব্রুডারের হোভারের নিচে ৭৫ বর্গ সেমি জায়গা বরাদ্দ করতে হবে। রান-এও (Run- ব্রুডারের হোভারের চারদিক থেকে চিক গার্ড পর্যন্ত ফাঁকা জায়গাটুকু) একই পরিমাণ জায়গা থাকবে। ৩-৫ সপ্তাহ পর্যন্ত ১৫০-১৭৫ বর্গ সেমি জায়গার প্রয়োজন হবে। কিন্তু এ তো গেলো ব্যাটারি বা খাঁচা পদ্ধতির বেলায় লিটার পদ্ধতিতে প্রতিটি বাচ্চার জন্য সর্বমোট ২০০-২৫০ বর্গ সে.মি জায়গা দিতে হবে। এ পদ্ধতিতে বাচ্চাদের ঘরের লিটার অন্তত ৫ সেমি পুরু হতে হবে।

৫. খাদ্য ও পানি ব্যবস্থাপনা

বাচ্চাদের প্রথম দিকে খাদ্য ও পানির সহজপ্রাপ্যতা আরামপ্রদ পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি কোন বাচ্চা তার ধারেকাছে খাদ্য ও পানি খুঁজে না পায়, তবে তার শরীর পর্যাপ্ত শক্তির (ক্যালরি) অভাবে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে ও না খেতে পেয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে মারা যাবে। জন্মের প্রথম সপ্তাহে বাচ্চা মৃত্যুর একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো পানির অভাব। যেহেতু ক্রডিংয়ের উচ্চ তাপমাত্রায় বাচ্চারা সহজেই পানিশূন্যতায় ভোগে তাই এদের জন্য পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি বাচ্চার জন্য ১-১.৫ সেমি জায়গা (Water space) দিতে হবে। খোলা পাত্রে পানি দেওয়া যাবে না। কারণ, এতে বাচ্চারা সহজেই পানিতে পড়ে যায় এবং ভিজে গিয়ে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কোয়েলের বাচ্চার ক্ষেত্রে এ ঘটনা অহরহই ঘটে। তাই এদিকে পালনকারিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তাছাড়া কোয়েলের বাচ্চারা যাতে সঠিকভাবে খাবার খেতে পারে সেদিকটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতিটি বাচ্চা কোয়েলের জন্য ২-২.৫ সেমি খাবার জায়গা (Feeder space) বরাদ্দ করতে হবে।

৬. স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ

বাচ্চাদের সঠিক বৃদ্ধির জন্য ঘর ও ব্রুডারের পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া বঞ্ছনীয়। ঘরের ভিতর কোন ময়লা-আবর্জনা থাকা চলবে না। লিটার ভেজা থাকা চলবে না। বাচ্চা পালন ঘরে পালনকারি ছাড়া অন্যদের প্রবেশাধিকা নিষিদ্ধ করতে হবে। তাছাড়া অন্যান্য পশু- পাখিও যেন ঘরের আশেপাশে না আসতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোন বাচ্চার নখ, পা, পালক, ঠোঁট প্রভৃতিতে ময়লা জমলে তা আলতোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। ময়লায় চোখ বন্ধ হয়ে গেলে এক টুকরা তুলো পানিতে ভিজিয়ে ময়লা পরিষ্কার করা উচিত। উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো সখের কোয়ের পালনকারিদের পক্ষে মেনে চলা সম্ভব না হতে পারে। কারণ, তারা খুব কম বাচ্চা পালন করে থাকেন। তাই তারা একটি ছোট কাগজের বা পাতলা কাঠের বাক্সের চারদিকে কতগুলো ছোট ছোট ছিদ্র করে, তলায় চট বা খসখসে কাগজ বিছিয়ে এবং উপরের দিকটা খোলা রেখে বা ঢাকনার বড় ছিদ্র করে বাক্সটিকে ব্রুডার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। বাক্সের উপর থেকে ঢাকনা বা খোলা দিক দিয়ে একটি ৪০ বা ৬০ ওয়াটের বাল্ব জ্বেলে বাচ্চার সংখ্যা অনুযায়ী উপরে-নিচ করে তাপমাত্র নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

ব্রয়লার কোয়েল পালন পদ্ধতি, কিভাবে কোয়েল পালন করা যায়, বাংলাদেশে কোয়েল পালন (কোয়েল পালন)

বয়স্ক কোয়েল পালনঃ-

লেয়ার খামারে পূর্ণবয়স্ক মাদী কোয়েলগুলো ষষ্ঠ সপ্তাহ বয়স থেকে ডিম পাড়ার ঘরে লিটার বা খাঁচা পদ্ধতিতে পালন করা যায়। ব্রিডার কোয়েলগুলোকে ব্রিডার কেইজে দেওয়ার পূর্বে মর্দা ও মাদী আলাদাভাবে পালন করতে হবে। সাধারণত ৭-৮ সপ্তাহ বয়সের বাছাই করা মর্দা কোয়েলগুলো ব্রিডার কেইজে একসাথে রাখা হয়। এই লক্ষ্যে ৩/৪ সপ্তাহ বয়সে যখন পালকের রঙ দেখে পার্থক্য করা যাবে তখন থেকে ব্রিডার কেইজে দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এদেরকে আলাদাভাবে পালন করতে হবে। তাছাড়া ব্রিডিং খাঁচায় মর্দা ও মাদী সব সময়ের জন্যই একসাথে রাখা যাবে না। বরং দরকার মতো সময়ে প্রজনন করানোর জন্য মর্দাকে ব্রিডিং খাঁচায় ঢুকানো হবে এবং নির্দিষ্টকালের পরে আবার পৃথক করে ফেলতে হবে। ব্যাটারি বা লিটার দু পদ্ধতিতে পালন করা গেলেও কোয়েলের জন্য ব্যাটারি পদ্ধতিই সহজ, নিরাপদ, টেকসই ও স্বাস্থ্যসম্মত। তাই এ পদ্ধতিতে খামার করাই লাভজনক। সাফস্যজনকভাবে বয়স্ক কোয়েল পালন করতে হলে খামারিদের নিম্নের বিষয়গুলো সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। যথা :

১. তাপমাত্রা :

বয়স্ক কোয়েলের ঘরের তাপমাত্রা ২১°-২২° সে.-এ (৬৯.৮°-৭১.৬°) স্থির রাখতে হবে। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় এরা হিট স্ট্রেসে(Heat stress) ভুগবে। এতে ডিম উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে।

See also  কোয়েল পাখির খামার ব্যবস্থাপনা, কোয়েল পাখি চাষ, কোয়েল পাখির চাষ করে সফল হতে চাইলে (৮টি) পয়েন্ট জেনে নিন!!! কোয়েল পাখি চাষের পদ্ধতি

২. আলো :

কোয়েলের ডিম উৎপাদন আলোর ওপর যথেষ্ট নির্ভরশীল। তাই কোয়েল থেকে পর্যাপ্ত ডিম পেতে হলে দৈনিক ১৬ ঘন্টা আলোর ব্যবস্থা (দিনের আলোসহ) করতে হয়। এই লক্ষ্যে ষষ্ঠ সপ্তাহে ১৩ ঘণ্টা আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। সপ্তম, অষ্টম ও নবম সপ্তাহে সপ্তাহপ্রতি এক ঘণ্টা হিসেবে বাড়িতে তা যথাক্রমে ১৪, ১৫ ও ১৬ ঘণ্টায় বৃদ্ধি করতে হবে। নবম সপ্তাহ থেকে বাকি সময় প্রতিদিন এই ১৬ ঘণ্টা হিসেবেই আলো বরাদ্দ করতে হবে। উল্লেখ্য, একটি ৪০ ওয়াটের বাল্ব দিয়ে ৯ মিটার জায়গা আলোকিত করা যায়। ডিম উৎপাদনে আলোর বর্ণের প্রভাব রয়েছে। যেমন : পর্যাপ্ত ডিম উৎপাদনে লাল বর্ণের আলো নীল বর্ণের থেকে বেশি ভূমিকা রাখে।

৩. বায়ু চলাচল ব্যবস্থা :

ঘরে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল থাকতে হবে। বড় খামারের ক্ষেত্রে বায়ু চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘরের দেওয়ালে এক্সস্ট পাখা (Exhaust fan) লাগাতে হবে। ঘরের আপেক্ষিক আর্দ্রতা থাকবে ৫৫-৬০%।

৪. প্রয়োজনীয় জায়গা :

লিটার পদ্ধতিতে প্রতিটি পাখির জন্য ২০০-২৫০ বর্গ সেমি জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া ঘরের লিটার ১০ সেমি পুরু হওয়া বাঞ্চনীয়। ব্যাটারি পদ্ধতিতে খাঁচা ছোট হোক বড় হোক, একতলা হোক বা ছয়তলা হোক অবশ্যই প্রতিটি কোয়েলের জন্য ১৫০-২০০ বর্গ সেমি জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। উভয় পদ্ধতিতেই ব্রুডার কোয়েলের জন্য কিছুটা বেশি জায়গার প্রয়োজন হবে।

৫. ডিম পাড়ার বাক্স :

লিটার পদ্ধতিতে কোয়েল পালনে একটি অসুবিধা হলো, এরা ডিম পাড়ার পর অনেক সময়ই তা লিটারের ভেতরে লুকিয়ে ফেলে। তাছাড়া লিটারে পাড়া ডিমে অহরহই ময়লা লেগে যায়। এতে ডিম দেখতে খারাপ লাগে। তাই লিটারে পালিত কোয়েলের ক্ষেত্রে ডিম পাড়ার বাক্সে ডিম পাড়ানোর অভ্যাস করা উচিত। এ লক্ষ্যে লেয়ার হাউজে কোয়েলের সংখ্যার অনুপারে ডিম পাড়ার বাসা বা লেয়িং নেস্ট (Laying nest) সরবরাহ করা উচিত। প্রতিটি লেয়িং নেস্ট ১৫× ২০×২০ ঘন সে.মি মাপের হওয়া বাঞ্ছনীয়।

৬. খাদ্য ও পানির জায়গা :

ব্যাটারি ও লিটার উভয় পদ্ধতিতেই প্রতিটি কোয়েলের জন্য খাদ্য ও পানির জন্য যথাক্রমে ৩ ও ২ সেমি জায়গা বরাদ্দ করতে হবে। তাছাড়া বিশেষ নকশার (বা ডিজাইন) খাদ্য ও পানির পাত্র ব্যবহার করতে হবে। এতে খাদ্য ও পানির অপচয় রোধ হবে।

৭. স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ :

খামার সবসময় স্বাস্থ্যসম্মত ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। এতে কোয়েল থেকে পর্যাপ্ত উৎপাদন পাওয়া যাবে।

খামারিয়ান.কম কয়েল পাখি পালন সিরিজঃ

  • কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা, কোয়েল পাখির মাংসের উপকারিতা, কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ ও কয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম, কোয়েল পাখির ডিম ও মুরগির ডিমের তুলনাঃ
  • https://khamarian.com/কোয়েল-পাখির-ডিমের-উপকার/

  • কোয়েল পাখির খাবার তালিকা-১, বয়স অনুযায়ী কোয়েল পাখির খাদ্য তালিকা-২, কোয়েল পাখি কি কি খাবার খায় এবং কোয়েল পাখির খাবার তৈরি/কোয়েলের খাদ্য তৈরিঃ-
    https://khamarian.com/কোয়েল-পাখির-খাবার-তালিক/

  • কোয়েল পালন ও চিকিৎসা, কোয়েল পাখির রোগ ও চিকিৎসা, কোয়েল পাখির চিকিৎসা, কোয়েল পাখির ঔষধ, কোয়েল পাখির ভ্যাকসিন, কোয়েল পাখির চোখের রোগ, কোয়েল পাখির চুনা পায়খানা, কোয়েল পাখির রোগ-ব্যাধি ও প্রতিকারঃ
    https://khamarian.com/কোয়েল-পালন-ও-চিকিৎসা-কোয/

  • কোয়েল পাখির খামার ব্যবস্থাপনা, কোয়েল পাখি চাষ, কোয়েল পাখির চাষ করে সফল হতে চাইলে ৮টি পয়েন্ট জেনে নিন!!! কোয়েল পাখি চাষের পদ্ধতিঃ-
    https://khamarian.com/কোয়েল-পাখির-খামার-চাষ/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!