বিষয়বস্তু: কোয়েল পাখি কত দিনে ডিম পারে, কোয়েল পাখি কি উড়তে পারে, কোয়েল পাখির গড় আয়ু, কোয়েল পাখির ইংরেজি নাম, কোয়েল পাখি উইকিপিডিয়া, কোয়েল পাখি একটানা কতদিন ডিম দেয়, কোয়েল পাখি কত দিনে ডিম পাড়ে, কোয়েল পাখি কতদিন বাঁচে, কোয়েল পাখি কখন ডিম দেয়, কোয়েল পাখি কতদিন ডিম দেয়, কোয়েল পাখি কত বছর বাঁচে, কোয়েল পাখি চেনার উপায়, কোয়েল পাখির বয়স চেনার উপায়, কোয়েল পাখির জাত, কোয়েল পাখি ডিম দেয় কত দিনে, কোয়েল পাখির ডিম, কোয়েল পাখি কতদিন বয়সে ডিম দেয়, কোয়েল পাখি দিনে কয়টি ডিম দেয়, কোয়েল পাখি কত দিন বাঁচে ও কোয়েল পাখির ছবি।
কোয়েল পাখির ইংরেজি নাম কি?
কোয়েল পাখির ইংরেজি নাম হলো- Quail.
কোয়েল পাখির গড় আয়ু কত?
কোয়েল পাখির গড় আয়ু ৩-৪ বছর। মর্দাগুলোর বেঁচে থাকার হার মাদীগুলোর থেকে বেশি।
কোয়েল পাখি কত বছর বাঁচে?
কোয়েল সাধারণত ৩-৪ বছর বেঁচে থাকে। তবে বাণিজ্যিক খামারগুলোতে সাধারণত লেয়ার কোয়েলগুলোকে ৬০ (৬+৫৪) সপ্তাহ বয়সের বেশি পালন করা হয় না।
কোয়েল পাখি দিনে কয়টি ডিম দেয়? কোয়েল পাখি কতদিন বয়সে ডিম দেয়? কোয়েল পাখি একটানা কতদিন ডিম দেয়?
মাদী কোয়েরগুলো ৬-৭ সপ্তাহ বয়স থেকে ডিম পাড়া শুরু করে। আট সপ্তাহে ডিম উৎপাদন ৫০%-এ পৌঁছে। দশ সপ্তাহে তা বেড়ে গিয়ে ৮০% হয় এবং ১৫ সপ্তাহের মধ্যে ডিম উৎপাদন সর্বোচ্চ পর্যায়ে (৯০%) পৌছায়। তবে ২৬ সপ্তাহের পর থেকে ডিম পাড়ার হার কমতে থাকে। এরা প্রথম বছর প্রায় ২৯০-৩০০টি ডিম পাড়ে। প্রথম বছরে উৎপাদিত ডিমের ৪৮% অর্থাৎ প্রায় ১৪০-১৪৫টি ডিম দ্বিতীয় বছর পেড়ে থাকে। সাধারণত ১৩৮ সপ্তাহ বয়সে ডিমপাড়া বন্ধ হয়ে যায়। এদের ডিম পাড়ার হার আলোর ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। তাই পর্যাপ্ত উৎপাদন পেতে হলে প্রতিদিন এদের ঘরে ১৬ ঘণ্টা আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। এরা শতকরা ৭৫ ভাগ ডিম বিকাল ৩-৬ টার মধ্যে, শতকর ২০ ভাগ ডিম সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত্রি ৯টার মধ্যে এবং বাকি ডিম এ সময়ের পরে পেড়ে থাকে।

কোয়েল পাখির ডিম কেমন হয়? ওজন কত?
জাপানি কোয়েলের ডিমগুলো অত্যন্ত সুন্দর। ডিমের খোসার রঙ গাঢ় হলদে থেকে হালকা বাদামি। খোসার এই রঙের উপর থাকে অসংখ্য ছোটবড় নীল, বেগুনি, খয়েরি বা চকোলেট রঙের কারুকাজ বা দাগ। একেক কোয়েলের ডিমের কারুকাজ বা কারুকাজের রঙ একেক রকম হয়। কোন কোন লাইনের কোয়েল আবার সাদা রঙের ডিম পেড়ে থাকে। ডিমগুলো ৬-১৬ গ্রাম (গড়ে ১১ গ্রাম) হয়।
কোয়েল পাখি কি উড়তে পারে? কোয়েল পাখির সাইজ কি রকম হয়?
কয়েল পাখি আকাশে উড়তে পারে না। জাপানি কোয়েল ছোটখাট ও গাঁট্টাগোট্টা পাখি। এদের ঠোঁট, ঘাড়, পা খাটো ; লেজ ছোট। পালকের তুলনায় দেহ (মাংস, হাড় ও নাড়িভুঁড়ি) বেশি ভারি। ঠোঁটের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত একেকটি কোয়েল গড়ে ১৭.৫ সে. মি. লম্বা হয়।
কোয়েল পাখির ওজন কেমন হয়? কোয়েল পাখির বয়স চেনার উপায়?
বুনো কোয়েলগুলো পোষাগুলোর থেকে প্রায় ২০% কম ওজনের হয়। এদের মর্দা ও মাদীগুলো যথাক্রমে প্রায় ৯৮ ও ১০২ গ্রাম হয়ে থাকে বাণিজ্যিক কোয়েলগুলো ওজনে বেশি হয়। এরা ১৫০-২০০ গ্রাম হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে যেসব কোয়েল আনা হয়েছে তাদের মর্দা ও মাদীগুলোর ওজন যথাক্রমে ১২০-১৩০ ও ১৪০-১৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। সদ্যফোটা বাচ্চাগুলো মাত্র ৬-৮ গ্রাম (গড়ে ৭ গ্রাম) হয়। জন্মের দিন থেকে পাঁচ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত মর্দা ও মাদীর ওজনে তেমন কোন পার্থক্য দেখা যায় না। তবে, এরপর থেকে মাদীগুলোর ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু বড় হওয়া এবং ডিম্বনালী বৃদ্ধির কারণে ওজন বেড়ে যায়।
কোয়েল পাখির পালকের রঙ বা কালার কি কি?
কোয়েল পাখির পালকের রঙ অত্যন্ত সুন্দর। বিভিন্ন জাত ও উপজাতের কোয়েলের পালকের রঙে পার্থক্য থাকে। নিম্নে বেশ ক’ধরনের কোয়েলের পালকের রঙ বর্ণনা করা হলো:
ফারাওঃ
এদের পালকের রঙ হুবহু বুনো জাপানি কোয়েলের মতো। তাই এদের বুনো প্রকৃতির (Wild type) কোয়েলও বলা হয়। এদের গায়ের রঙ বাদামি। তবে সারা গায়ে গাঢ় চকোলেট বা কালো রঙের ছোপ থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক মর্দাগুলোর বুকের উপরের অংশ হলদে বাদামি এবং নিচের অংশ হালকা বাদামি ; আর মুখমণ্ডলের রঙটা খয়েরি। মাদীগুলোর মুখমণ্ডল, ঘাড় ও বুকের উপরের অংশ বাদামি। বুকের উপরের অংশের এই বাদামি রঙের উপর কালো বা খয়েরি গোলকার ফোঁটা থাকে। এদের বুকের নিচের অংশটা তামাটে। সদ্যফোটা বাচ্চাগুলোর গায়ের কোমল পালকের (Dawn feather) রঙ হলদে। এর উপর খয়েরি বা কালো রঙের ছোপ থাকে।
ব্রাউন কোয়েলঃ
ব্রাউন কোয়েলের পালকের রঙের ধরন ফারাও-এর মতোই কিন্তু একেবারেই হালকা ; কোন কালচে ভাব নেই। তবে পুরুষগুলোর মুখমণ্ডলের রঙ ফারাও উপজাতের থেকেও তুলনামূলকভাবে বেশি খয়েরি হয়। বাচ্চাগুলোর কোমল পালকের রঙ হলদে। তবে এই হলদের উপরের ছোপগুলো তুলনামূলকভাবে হালকা।
ব্রিটিশ রেঞ্জঃ
এদের মর্দা-মাদীর পালকের রঙের কোন পার্থক্য নেই। পালকের রঙ ফারাও উপজাতের থেকেও গাঢ়। তবে উপরের ও নিচের ঠোঁটের সংযোগস্থল ও গলার নিচের খানিকটা অংশ সাদা।
ইংলিশ হোয়াইটঃ
এদের পালকের রঙ পুরোপুর সাদা। তবে কোন কোনটার পালকে অল্প কিছু কালো ফোঁটা থাকতে পারে। চোখগুলো গাঢ় রঙের। মর্দা ও মাদীর পালকের রঙে কোন পার্থক্য নেই। ম্যানচুরিয়ান গোল্ডেন যদিও এদের পালকে নানা রঙের মিশ্রণ দেখা যায় তথাপি দেখতে গাঢ় সোনালী বা গমের খড়ের (Wheat straw) রঙের ন্যায় দেখায়। মর্দা ও মাদী একই বর্ণের। টুক্সেডো : এদের গলা ও মুখমণ্ডল সাদা। শরীরের উপরের অংশে কালো এবং বাদামি রঙের মিশ্রণ। মর্দা ও মাদী একই রঙের।
কোয়েল পাখির স্বভাব ও ডাক কেমন?
কোয়েল চটপটে স্বভাবের পাখি। বাচ্চাগুলো অত্যন্ত চঞ্চাল হয়। ফারাও উপজাত বেশ মারামারি ও ঠোকরা-ঠুকরি করে। বিশেষ করে মাদীগুলো মর্দা বা অন্য মাদীর মাথা, পায়ু ও পিঠ ঠুকরে রক্ত বের করে ফেলে। ব্রাউন স্ট্রেইনের কোয়েলগুলো বেশ শান্ত স্বভাবের, এরা মারমারি ঠোকরা-ঠুকরি খুব কম করে।
কোয়েলের বেশ ক’ধরনের ডাক রয়েছে। একেক ধরনের ডাক এরা একেক কাজে ব্যবহার করে। বাচ্চাগুলোর ডাকের সাথে বড়গুলোর ডাক মিলবে না। বাচ্চাগুলো মুরগির বাচ্চার মতো চিঁ চিঁ শব্দে ডাকে। কোন কারণে ভয় পেলে এরা একসাথে তীক্ষ্ণস্বরে ডেকে ওঠে। বড়গুলো ভয় পেলে বা একটি অন্যটিকে তাড়া কারলেও ভিন্ন স্বরে ডাকে। মর্দাগুলো মোরগের মতো বুক উঁচিয়ে উচ্চস্বরে ডাকে। মাদীগুলো ডিম পাড়ার পরপরই চিকন গলায় এক ধরনের লম্বা ডাক দেয়।
কোয়েল পাখির জাত কি কি?
বাণিজ্যিক জাপানি কোয়েলের অনেকগুলো জাত ও উপজাত রয়েছে। জাত ও উপজাতভেদে এদের গায়ের রঙ, ওজন, আকার, আকৃতি, ডিম পাড়ার হার, ডিমের ওজন, বেঁচে থাকার হার ইত্যাদিতে বেশ পার্থক্য হয়ে থাকে। প্রতিটি জাত বা উপজাত থেকে উন্নত বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রজনন ঘটিয়ে বিভিন্ন লাইন (Line) ও স্ট্রেইন (Strain) সৃষ্টি করা হয়েছে। এদের মধ্যে মাংসের জন্য সাদা বুক (White breasted) কোয়েল লাইন, সাদা রঙের ডিমের জন্য সাদ ডিম লাইন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন স্ট্রেইনের কোয়েলের ডিমপাড়া ডিমের ওজন, মাংস উৎপাদন ক্ষমতা প্রভৃতিতে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত হালকা স্ট্রেইনের কোয়েলগুলো ভারি স্ট্রেইনেরগুলোর তুলনায় বেশি ডিম পেড়ে থাকে এবং এদের ডিমের উর্বরতার হারও বেশি হয়ে থাকে। তাই ভালো ও প্রতিষ্ঠিত হ্যাচারি (Hatchery) থেকে উন্নত স্ট্রেইনের কোয়েল সংগ্রহ করা উচিত। বর্তমানে পৃথিবীতে পাঁচটি উপজাতের কোয়েল বেশি জনপ্রিয়। যেমন:
- ১. ফারাও (Fharaoh)
- ২. ব্রিটিশ রেঞ্জ (British Range)
- ৩. ইংলিশ হোয়াইট (English White)
- ৪. ম্যানচুরিয়ান গোল্ডেন (Manchurian Golden)
- ৫. টুক্সেডো (Tuxedo)
এই পাঁচ উপজাতের কোয়েলগুলোকে প্রধানত পালকের রঙের ভিত্তিতেই ভাগ করা হয়েছে। উপজাতগুলোর মধ্যে প্রজনন ঘটিয়েও নানা বর্ণের কোয়েল তৈরি করা যায়। এই উপজাতগুলোর মধ্যে ফারাও উৎকৃষ্টতম। তাই সারাবিশ্বে এর কদরও বেশি। ফারাও থেকে বাদামি বর্ণের শান্ত স্বভাবের একটি স্ট্রেইন তৈরি কা হয়েছে যা ব্রাউন কোয়েল নামে পরিচিত। এ ছাড়াও তৈরি করা হয়েছে সাদা স্ট্রেইনের কোয়েল। বাংলাদেশে ফারাও এবং ব্রাউন দু প্রকারের কোয়েল পালন করা হয়। এ পুস্তকে এ দুটো কোয়েল নিয়েই মূলত আলোচনা করা হবে। তাছাড়া সাদা বুক কোয়েল সম্পর্কেও আলোচনা থাকবে।
পালনে উদ্দেশ্য অনুযায়ী কোয়েল পাখির জাত কত প্রকার?
বর্তমানে পৃথিবীতে উদ্দেশ্য ও অবস্থান অনুযায়ী তিন ধরনের জাপানি কোয়েল রয়েছে। যেমন:
১. বন্য কোয়েল (Wild Quail)
২. বাণিজ্যিক কোয়েল (Commercial Quail)
৩. ল্যাবরেটরি কোয়েল (Laboratory Quail)
বিভিন্ন ধরনের গবেষণায় ল্যাবরেটরি কোয়েল ব্যবহৃত হয়। তবে কোয়েল খামারিদের জন্য বাণিজ্যেক কোয়েরই গুরুত্বপূর্ণ। উদ্দেশ্য অনুযায়ী বাণিজ্যিক কোয়েল তিন প্রকার। যেমন:
১. লেয়ার কোয়েল (Layer Quail)
২. ব্রয়লার কোয়েল (Broiler Quail)
৩. ব্রিডার কোয়েল (Breeder Quail)
লেয়ার কোয়েল পাখিঃ
ডিম উৎপাদনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত কোয়েলকে লেয়ার কোয়েল বলা হয়। লেয়ার কোয়েল শুধু ‘খাবার ডিম’ উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। তাই লেয়ার কোয়েল খামারে কোন মর্দা কোয়েল রাখা হয় না। সাধারণত ৬-৭ সপ্তাহ বয়স থেকে মাদী কোয়েল ডিম পাড়া শুরু করে এবং প্রতিটি কোয়ের বছরে ২৯০-৩০০টি ডিম পেড়ে থাকে। লেয়ার খামারে সাধারণত ৫৪ সপ্তাহব্যাপী মাদী কোয়েল পালন করা হয়। এরপর এগুলোকে ডিম উৎপাদনের জন্য বাতিল করে দেয়া হয় এবং মাংসের জন্য বিক্রি করা হয়।
ব্রয়লার কোয়েল পাখিঃ
নরম ও সুস্বাদু মাংস উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত জাপানি কোয়েলকে ‘ব্রয়লার কোয়েল’ বলা হয়। এ উদ্দেশ্যে মর্দা-মাদী নির্বিশেষে জন্মের দিন থেকে পাঁচ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত এদেরকে পালন করা হয়। এ সময়ের মধ্যে একেকটির জীবিত ওজন ১৪০-১৫০ গ্রাম হয়ে যায়। এগুলো থেকে প্রায় ৭২.৫% খাওয়ার উপযোগী মাংস (Edible meat) পাওয়া যায়। মাংস উৎপাদনের জন্য পৃথিবীতে যতো ধরনের কোয়েল তৈরি করা হেেছ তার মধ্যে ভারতের তামিলনাড় প্রদেশের কোইমবাটোরস্থ (Coimbatore) এ. ভি. এম. হ্যাচারিজ এন্ড ব্রিডিং রিসার্চ সেন্টার (প্রা:) লিমিটেড কর্তৃক উৎপন্ন সাদা বুক কোয়েলই উৎকৃষ্টতম। অবশ্য এটি এখনও আমাদের দেশে আনা হয় নি। তাই আপাতত লেয়ার কোয়েলগুলোই ব্রয়লার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এদের মাংস উৎপাদন হারও যথেষ্ট ভালো।
ব্রিডার কোয়েল পাখিঃ
লেয়ার ও ব্রয়লার কোয়েলের বাচ্চা ফোটানোর লক্ষ্যে ডিম উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত বাছাই করা প্রজননে সক্ষম মর্দা ও মাদী কোয়েলগুলোকে ব্রিডার কোযেল বলা হয়। সাধারণত ৭- ৮ সপ্তাহ বয়সের মাদী এবং ১০ সপ্তাহ বয়সের মর্দা কোয়েলকে ব্রিডিং খামারে এনে পালন করা হয়। তবে, এদের বয়স ১০ সপ্তাহ হওয়ার পর প্রজননের কাজে ব্যবহার করা উত্তম। এখানে এদেরকে ৩০ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত রাখা হয়। ডিমের উর্বরতা (Fertility) ও স্ফুটন ক্ষমতা (Hatchability) সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখার জন্য দুটি মাদী কোয়েলের সাথে একটি মর্দা কোয়েল রাখতে হয় (অনুপাত, ২:১)।
কোয়েল পাখির জাতের শ্রেণীবিন্যাস রয়েছে কি?
হ্যা। এখনকার বাণিজ্যিক জাপানি কোয়েলের বিজ্ঞানভিত্তিক পরিচয় নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি ও মতবিরোধ রয়েছে। সাধারণভাবে এটিকে সাধারণ কোয়েল (Common Quail), কটুরনিক্স কটুরনিক্স-এর (Coturnix coturnix) একটি উপপ্রজাতি, কটুরনিক্স কটুরনিক্স জাপনিকা (Coturnix coturnix japonica) বলে উল্লেখ করা হয়। তবে, প্রাণী শ্রেণীবিন্যাসবিদরা ব্যঅপক গবেষণা করে সাধারণ কোয়েলের সাথে জাপানি কোয়েলের বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য খুঁজে বের করেছেন। ফলে এটিকে একটি আলাদা প্রজাতি, কটুরনিক্স জাপনিকা (Coturnix Japanica) বলে সম্প্রতি গণ্য করা হচ্ছে। জাপানি কোয়েল মুরগি জাতীয় পাখি (Gallinaceous Bird) এটি অ্যাভিস শ্রেণীর গ্যালিফরমেস বর্গের ফ্যাসিয়ানিডি পরিবারের অন্তর্গত ফ্যাসিয়ানিনি উপপরিবারের সদস্য। নিম্নে জাপানি কোয়েলের বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস দেখানো হলো:
- Kingdom: Animalia (অ্যানিম্যালিয়া)
- Class: Aves (অ্যাভিস)
- Order: Galliformes (গ্যালিফরমেস)
- Family: Phasianidae (ফ্যাসিয়ানিডি)
- Sub-family: Phasianinae (ফ্যাসিয়ানিনি)
- Genus: Coturnix (কটুরনিক্স)
- Species: Coturnix japonica (কটুরনিক্স জাপনিকা)
কোয়েল পাখি কতগুলো প্রজাতি রয়েছে?
পৃথিবীতে কোয়েলের প্রায় ১৩১টি প্রজাতির অস্তিত্ব আছে বলে প্রাণিবিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন। আকার, আকৃতি, ওজন ও বর্ণে প্রজাতিগুলোর মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এদের মধ্যে ৯৫টি প্রজাতি এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার এবং ৩৬টি প্রজাতি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার অধিবাসী। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার প্রজাতিগুলো আকার-আকৃতিতে অন্য মহাদেশের প্রজাতিগুলো থেকে তুলনামূলকভাবে কিছুটা বড় হয়ে থাকে। এক্সকালফ্যাকটোরিয়া চাইনেনসিস (Excalfactoria chinensis) ক্ষুদ্রতম। এরা মাত্র ১২ সে. মি. লম্বা ও ৪৫ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। আমেরিকার পাহাড়ি কোয়েল (Mountain Quail), ওরিওরটিক্স পিকটা (Oreortyx picta) বৃহত্তম প্রজাতি। এরা ২৬.৭-২৯.২ সে. মি. লম্বা ও ২৩০ গ্রাম হয়ে থাকে। এই ১৩১ প্রজাতির মধ্যে শুধু আমেরিকার বব হোয়াইট কোয়েল (Bob White Quail), কলিনাস ভার্জিনিয়ানাস (Colinus virginianus) এবং জাপানি কোয়েলই বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হয়। বাকিরা পুরোপুরি বুনো। বাংলাদেশে দু প্রজাতির কোয়েল বাস করে। এদের মধ্যে চীনা বটের (Chinese Quail) প্রধানত উত্তরবঙ্গের ঝোঁপ-জঙ্গলে এবং রঙ্গিলা বটের (Painted Quail) সিলেট, চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলাগুলোর ঘাসবন ও উপত্যকায় বাস করে। তবে, বর্তমানে এরা বিলুপ্তির দোড়গোড়ায়।
কোয়েল পাখি চেনার উপায়ঃ


কোয়েল পাখি দেখাওঃ


কোয়েল পাখি ধরার ফাঁদঃ


কয়েল পাখির ছবিঃ




কোয়েল পাখিকে কি পোল্ট্রি হিসেবে ধরা হয়?
হ্যা। জাপানি কোয়েল (Japanese Quail) পোল্ট্রির ক্ষুদ্রতম প্রজাতি। এদেশে এটি জাপানি বর্গের নামেও পরিচিত। সেই প্রাচীনকাল থেকেই সুস্বাদু মাংসের জন্য মানুষ বিভিন্ন প্রজাতির বুনো কোয়েল পাখি শিকার করে আসছে ; এদের ডিম ও মাংসের স্বাদ গ্রহণ করছে। আর তাই বর্তমানে সুস্বাদু মাংস ও ডিম খামারভিত্তিতে উৎপাদনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ বিজ্ঞানীরা কৌলিতাত্ত্বিক গবেষণা ও উন্নত বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবন করেছেন জাপানি কোয়েলের বিভিন্ন জাত ও উপজাত। পৃথিবীতে বাণিজ্যিকভিত্তিতে পরিচালিত পোল্ট্রি শিল্প থেকে যে পরিমাণ মাংস ও ডিম উৎপাদিত হয় তার সিংহভাগই আসে মুরগি, হাঁস ও টারকি থেকে। কিন্তু বর্তমানে আরও যেসব পোল্ট্রি মাংস ও ডিম উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। , তাদের মধ্যে জাপানি কোয়েল অন্যতম। সম্প্রতি এটি আমাদের দেশের পোল্ট্রি শিল্পে হাঁস- মুরগির সাথে সংযোজিত হয়েছে।
কোয়েল পাখি উইকিপিডিয়া ইতিহাসঃ
কীভাবে বুনো কোয়েল গৃহপালিত হলো, সে সম্পর্কে পুরনো তথ্য-দলিল খুব বেশি পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানী জেউনার (Zeuner) মিশরে খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২৫০০ সালে অংকিত কোয়েলের চিত্রলেখা (Hieroglyph) আবিষ্কার করেছেন। তবে এ থেকে এদের গৃহপালিতকরণ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। গ্রিক এবং রোমানরাও কোয়েল পুষতো বলে জানা যায়। তবে, তারা এগুলোকে শুধু লড়াইয়ের জন্যই পুষতো ; খাদ্যের জন্য নয়। জাপানি প্রজাতির কোয়েলের গৃহপালিতকরণ সম্পর্কে বিচ্ছিন্ন কিছু দলিল পাওয়া যায়। অনেক পোল্ট্রিবিজ্ঞানীই মনে করেন, এদেরকে একাদশ বা দ্বাদশ শতাব্দীতে জাপান কিংবা চীন বা কোরিয়াতে প্রথম পোষ মানানো হয়। ‘GRZIMEK’S ANIMAL LIFE ENCYCLOPEDIA’ এবং অন্যান্য গবেষণা প্রকাশনা অনুযায়ী, ষোড়শ শতাব্দীতে জাপানের সামুরাই জাতির (Samurai Caste) লোকেরা কোয়েলকে এর মধুর স্বরের জন্য পুষতে শুরু করে। কেইচো [Keicho (১৫৯৬-১৬১৪)], কান-এই [Kan-ei (১৬২৪-১৬৪৩)], মিউয়া এবং অ্যান-এইদের [Meiwa and An-ei (১৭৬৪-১৭৮০)| আমলে গায়ক কোয়েলের প্রজনন ও পালন যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করে। পরবর্তীকালে এ সকল গৃহপালিত গায়ক কোয়েল পর্যাপ্ত সংখ্যায় পাওয়া গেলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে, যে সকল বুনো কোয়েল থেকে গায়ক কোয়েলের উৎপত্তি তাদের বংশধররা এখনও জাপান, কোরিয়া, পূর্ব চীন, মঙ্গোলিয়া, সাইবেরিয়া ও সাখালিন (Sakhalin) দ্বীপে পৰ্য্যাপ্ত সংখ্যায় বাস করছে। এরা যাযাবর প্রকৃতির পাখি। ঝোঁপ-ঝাপপূর্ণ এলাকায়, মাটিতে বসাবস করতে ভালোবাসে সাধারণত মর্দা ও মাদী জোড় বাঁধে। প্রতি প্রজনন মৌসুমে মাত্র ৬-১২টি ডিম পাড়ে। ঘাসবীচি, শস্যদানা, কীট-পতঙ্গ খেয়ে জীবন ধারণ করে।
জাপানি বিজ্ঞানীরা ১৯১০ সালের দিকে গৃহপালিত গায়ক কোয়েলের ডিম ও মাংস উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গবেষণা শুরু করেন এবং ১৯৪১ সাল পর্যন্ত এ সম্পর্কিত বহু গবেষণা কাজ সম্পন্ন করেন। তাদের উন্নত বাছাই প্রক্রিয়া ও কৌলিতাত্ত্বিক গবেষণার ফলেই জাপানি কোয়েলের উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের অধিকাংশ কোয়েলই মারা যায়। যেগুলো বেঁচে ছিল পরবর্তীকালে সেগুলো থেকেই এদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করা হয়। পঞ্চাশের দশকের মধ্যেই জাপানের পোল্ট্রি শিল্পে কোয়েল নিজের আসন স্থায়ী করে ফেলে। আর অল্প দিনের মধ্যেই জাপানের খাদ্য শিল্পের একটা বিরাট অংশ দখল করে নেয় এই কোয়েল।
জাপানি বাণিজ্যকভিত্তিতে কোয়েলের ব্যাপক প্রসারের পর এটি জাপানের গণ্ডি ছাড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, ইত্যালি, জার্মানি, বৃটেন প্রভৃতি দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে বিশ্বের পোল্ট্রি শিল্পে নিজের আসনকে মুরগি, হাঁস ও টারকির মতো স্থায়ী করে নয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের উত্তর প্রদেশের ইজ্জতনগরের সেন্ট্রাল এভিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (C.A.R.I) সর্বপ্রথম ১৯৭৪ সালে জাপানি কোয়েল আনা হয়। সি.এ.আর.-এর বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত গবেষণার ফলে কোয়েলের উন্নত জার্মপ্লাজম (Germplasm) তৈরি হয়েছে। এতে করে সেদেশে বাণিজ্যিকভিত্তিতে কোয়েল পালনের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। বাংলাদেশে কয়েকজন উৎসাহী পোল্ট্রি খামারি ‘৯০ দশকের শেষের দিকে সর্বপ্রথম কোয়েল আমদানি করেন। পরবর্তীকালে ১৯৯১ সালের জানুয়ারি মাসে সরকারিভাবে সাভারস্থ বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (B.L.R.I.) থাইল্যান্ড থেকে কোয়েলের ডিম এনে বাচ্চা ফোটায় এবং এগুলো থেকে সংখ্যা বাড়ানো হয়। বি. এল. আর. আই. ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা কোয়েলের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন, এদেশের আবহাওয়া বাণিজ্যিকভিত্তিতে কোয়েল পালনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তাছাড়া অর্থনৈতিকভাবেও অত্যন্ত লাভজনক। বর্তমানে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ও থানা পর্যায়ে বেশ কিছু কোয়েল খামার বা কোয়েলারি (Quailiry) গড়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই এটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং এদেশের পোল্ট্রি শিল্পে নিজের আসন মজবুত করেছে।
পরবর্তী পোষ্টে “কয়েল পাখি পালন পদ্ধতি”র a to z বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। খামারিয়ান ব্লগ নিয়মিত ভিজিট করুন। আজকে এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।
খামারিয়ান.কম কয়েল পাখি পালন সিরিজঃ
- কোয়েল পাখি সম্পর্কে a to z (30 টি প্রশ্নের উত্তর):-
https://khamarian.com/কোয়েল-পাখি/
- কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা, কোয়েল পাখির মাংসের উপকারিতা, কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ ও কয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম, কোয়েল পাখির ডিম ও মুরগির ডিমের তুলনাঃ
- https://khamarian.com/কোয়েল-পাখির-ডিমের-উপকার/
- ব্রয়লার কোয়েল পালন পদ্ধতি, কিভাবে কোয়েল পালন করা যায়, বাংলাদেশে কোয়েল পালন (কোয়েল পালন):-
https://khamarian.com/কোয়েল-পাখি-পালন-পদ্ধতি/
- জেনে নিনঃ খাচায় কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি/কোয়েল পাখির খাঁচা তৈরি/কোয়েল পাখির খাঁচা তৈরি মাপঃ-
https://khamarian.com/খাচায়-কোয়েল-পাখি-পালন-প/
- কোয়েল পাখির খাবার তালিকা-১, বয়স অনুযায়ী কোয়েল পাখির খাদ্য তালিকা-২, কোয়েল পাখি কি কি খাবার খায় এবং কোয়েল পাখির খাবার তৈরি/কোয়েলের খাদ্য তৈরিঃ-
https://khamarian.com/কোয়েল-পাখির-খাবার-তালিক/
- কোয়েল পাখির বাচ্চা উৎপাদনঃ (কোয়েল পাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো):-
https://khamarian.com/কোয়েল-পাখির-বাচ্চা-উৎপা/
- কোয়েল পালন ও চিকিৎসা, কোয়েল পাখির রোগ ও চিকিৎসা, কোয়েল পাখির চিকিৎসা, কোয়েল পাখির ঔষধ, কোয়েল পাখির ভ্যাকসিন, কোয়েল পাখির চোখের রোগ, কোয়েল পাখির চুনা পায়খানা, কোয়েল পাখির রোগ-ব্যাধি ও প্রতিকারঃ
https://khamarian.com/কোয়েল-পালন-ও-চিকিৎসা-কোয/
- কোয়েল পাখির খামার ব্যবস্থাপনা, কোয়েল পাখি চাষ, কোয়েল পাখির চাষ করে সফল হতে চাইলে ৮টি পয়েন্ট জেনে নিন!!! কোয়েল পাখি চাষের পদ্ধতিঃ-
https://khamarian.com/কোয়েল-পাখির-খামার-চাষ/