আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
কোয়েল পালনঃ
কোয়েলের মাংস এবং ডিম গুণগতভাবে অন্যান্য পোল্ট্রির তুলনায় শ্রেষ্ঠ। কোয়েলের ডিমে কোলেস্টরলেন পরিমাণ কম এবং আমিষ বেশি। একটি মুরগির পরিবর্তে ৮ টি কোয়েল পালন করা যায়। কোয়েলের মাংস ও ডিম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং ভিটামিন সরবারহ করে, এজন্য খুব দ্রুত তা জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। তবে মাংস ও ডিমের জন্য জাপানী কোয়েলের পরিচিতি ও বিস্তার লাভ ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। জাপানে কোয়েল পালন অত্যন্ত জনপ্রিয়। সম্প্রতি আমাদের দেশে কোয়েল পালন আরম্ভ হয়েছে।
কোয়েল পালনের সুবিধাঃ
→ রোগবালাই খুব কম এবং খাবার খুবই কম লাগে;
→ বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল পালনের উপযোগী;
→ অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে অল্প দিনে বেশি লাভ করা যায় ।
→ কোয়েল দ্রুত বাড়ে, ৬-৭ সপ্তাহে ডিমপাড়া শুরু করে এবং বছরে ২৫০-২৬০ টি ডিম পাড়ে;
→ ডিমে কোলেস্টেরল কম এবং প্রোটিনের ভাগ বেশি;
→ কোয়েলের দৈহিক ওজনের তুলনায় ডিমের শতকরা ওজন বেশি;
→ ৮-১০টা কোয়েল একটি মুরগির জায়গায় পালন করা যায় এবং ১৭-১৮ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়;
কোয়েলের উপারিতা ও বৈশিষ্ট্যঃ
→ মাদী কোয়েল ৬-৭ সপ্তাহ বয়স থেকে আরম্ভ করে প্রত্যহ একটি করে ডিম দেয়। সাধারণত এরা ১ম বছরে ৩০০টি এবং ২য় বছরে ১৫০-১৭৫টি ডিম দিয়ে থাকে।
→ কোয়েলের ডিম মানুষের বলবৃদ্ধি, সুস্বাস্থ্য ও শারীরিক ক্ষয়রোধের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এদের ডিমের চর্বির পরিমাণ মুরগির ডিম অপেক্ষা ২.৪৭ ভাগ কম। অনেকের মতে এই পাখির ডিম উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানী ও বহুমূত্র রোগ নিরাময়ে সহায়ক।
→ কোয়েলের মাংস সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এই পাখির মাংসে চর্বির পরিমাণ অত্যন্ত কম। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের খাওয়ার জন্য উপযোগী।
→ আমাদের দেশের আবহাওয়ায় কোয়েল পালনের জন্য বেশ উপযোগী এবং লাভজনক।
→ কোয়েল একটি ছোট আকৃতির পাখি। প্রাপ্ত বয়স্ক একটি পাখির দৈহিক ওজন ১৫০-২০০ গ্রাম এবং ডিমের ওজন ৭-১৫ গ্রাম।
কোয়েলের জাতঃ
পৃথিবীতে বর্তমানে ১৭-১৮ জাতের কোয়েল আছে। অন্যান্য পোলট্রির মতো কোয়েলের মাংস এবং ডিম উৎপাদনের জন্য পৃথক পৃথক জাত আছে। পৃথিবীতে কোয়েলের বিভিন্ন জাতের মধ্যে ‘জাপানিজ কোয়েল’ অন্যতম। উল্লেখ্য বিভিন্ন জাতের কোয়েলের প্রকৃত উৎস জাপানিজ কোয়েল ।



বাণিজ্যিক কোয়েল পালনঃ
মুরগির ন্যায় প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে অধিক উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ব্রয়লার ও লেয়ার কোয়েল সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশে কোয়েল পালন মূলত পারিবারিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রয়েছে। ভারতের উত্তর প্রদেশের ইজ্জতনগরে অবস্থিত ‘সেন্ট্রাল এভিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ এর উদ্ভাবিত ব্রয়লার ও লেয়ার কোয়েলের বৈশিষ্ট্য নিচের টেবিলে দেয়া হলো।
ব্রয়লার কোয়েলের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যঃ
ক্র.নং | বৈশিষ্ট্য | ব্রয়লার কোয়েল |
১। | বাচ্চার ফুটার হার | ৬০% |
২। | দৈহিক ওজন (৪ সপ্তাহ) | ১৩০ গ্রাম |
৩। | দৈহিক ওজন (৫ সপ্তাহ) | ১৫০ গ্রাম |
৪। | খাদ্যের কর্মক্ষমতা (৪ সপ্তাহ) | ২.৪১ |
৫। | খাদ্যের কর্মক্ষমতা (৫ সপ্তাহ) | ২.৯০ |
৬। | প্রথম ডিম পাড়ার গড় বয়স | ৫৪ দিন |
লেয়ার কোয়েলের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যঃ
ক্র.নং | বৈশিষ্ট্য | লেয়ার কোয়েল |
১। | বাচ্চা ফুটার হার | ৬৫% |
২। | দৈহিক ওজন (৬ সপ্তাহ) | ১৩০ গ্রাম |
৩। | দৈনিক খাদ্য গ্রহণ | ২০-২৫ গ্রাম |
৪। | ৫০% ডিম পাড়ার বয়স | ৮ সপ্তাহ |
৫। | ৮০% ডিম পাড়ার বয়স | > ১০ সপ্তাহ |
৬। | বছরে ডিম উৎপাদন সংখ্যা | ২৮০-২৯০ |
কোয়েলের বাসস্থানঃ
→ বাণিজ্যিকভাবে কোয়েল পালনের জন্য লিটার পদ্ধতির চেয়ে কেইজে পালন অধিক লাভজনক।
→ বাচ্চা অবস্থায় প্রতিটি কোয়েলের জন্য খাঁচায় ৭৫ বর্গ সেন্টিমিটার এবং মেঝেতে ১০০ বর্গ সেন্টিমিটার জায়গায় দরকার।
→ অন্যদিকে বয়স্ক কোয়েলের বেলায় খাঁচায় প্রতিটির জন্য ১৫০ বর্গ সেন্টিমিটার এবং মেঝেতে ২৫০ বর্গ সেন্টিমিটার জায়গা প্রয়োজন।
→ কোয়েলের ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
→ তাপমাত্রা ৫০-৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট হওয়া ভালো। স্ত্রী কোয়েল এবং পুরুষ কোয়েল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৃথক পৃথকভাবে রাখতে হবে।
→ কোয়েলকে ১২ মাস খাঁচায় (১৫০ বর্গ সেন্টিমিটার/পাখি এবং মেঝেতে (২৫০ বর্গ সেন্টিমিটার/পাখি) পালনে যথাক্রমে ১৩৫.৩ এবং ১৪০.৩ গ্রাম দৈহিক ওজন হয় এবং মাসিক ডিম উৎপাদন বাড়ে যথাক্রমে ৬০% এবং ৫৯%।
→ কোয়েলের খাঁচা বা ঘর পর্যাপ্ত আলো বাতাসযুক্ত শুষ্ক ঘরে রাখতে হবে।
→ কোয়েলের ডিম উৎপাদন, বেঁচে থাকার হার মেঝেতে পালন অপেক্ষা খাঁচায় পালনে অধিকতর ভাল। তবে কোয়েলকে দু’সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত খাঁচায় পালন করে মেঝেতে পালন করলে অধিক সুফল পাওয়া যায়।
→ কোয়েল পাখি পোষা পাখির মতই লোহার খাঁচায় পালন করতে হয়।
কোয়েলের বাচ্চা ফুটানোঃ
→ কোয়েলের ডিম মুরগির ডিমের মতই প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম পদ্ধতিতে ফুটানো যায়। কোয়েল পাখির ডিম বাচ্চা বের হতে ১৬-১৮ (গড়ে ১৭ দিন) দিন সময় লাগে।
→ বাণিজ্যিক কোয়েল কখনও কুঁচে হয়না। তাই প্রাকৃতিকভাবে এদের ডিম ফুটাতে কুঁচে লাগা মুরগিই ব্যবহার করা হয়।
→ বাচ্চা ফুটানোর ডিম উৎপাদনের জন্য প্যারেন্ট স্টকের ১০-৩০ সপ্তাহের মধ্যে হওয়া ভালো এবং একই খাঁচায় পুরুষ ও স্ত্রী কোয়েলের অনুপাত ১ : ২ হওয়া প্রয়োজন।
→ কোয়েলের ডিমের খোসা অত্যন্ত পাতলা। তাই সাবধানে সংগ্রহ করতে হবে।
→ মসৃণ ও শক্ত খোসা বিশিষ্ট পরিষ্কার ৯-১১ গ্রাম ওজনের ডিম বাচ্চা ফুটানোর জন্য উত্তম।
কোয়েলের বাচ্চা পালনঃ
→ বাচ্চাকে তাপ দেয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত সুষম খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
→ কোয়েলের বাচ্চা ফুটার পর তিন থেকে চার সপ্তাহ কৃত্রিম উপায়ে তাপ দেয়া প্রয়োজন ।
→ শীতকালে ১ম সপ্তাহে ১০০° ফাঃ তাপ দেয়া আরম্ভ করে পরবর্তী প্রতি সপ্তাহে ৫° ফাঃ তাপ কমিয়ে দিতে হয়। চার সপ্তাহ পর আর তাপ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। গরমে ২-৩ সপ্তাহ তাপ দিলেই চলে।
কোয়েলের প্রজননঃ
- শুধুমাত্র ডিম ফুটাতে চাইলে স্ত্রী এবং পুরুষ কোয়েল একত্রে রাখার প্রয়োজন। স্ত্রী কোয়েল প্রতিপালন অধিক লাভজনক।
- আশানুরূপ ডিমের উর্বরতা পেতে হলে ৩টি স্ত্রী কোয়েলের সাথে ১টি পুরুষ কোয়েল দেয়ার ৪ (চার) দিন পর থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য ডিম সংগ্রহ করা উচিৎ।
- স্ত্রী কোয়েল থেকে পুরুষ কোয়েল আলাদা করার পর তৃতীয় দিন পযন্ত ফুটানোর ডিম সংগ্রহ করা যায়।
- বাংলাদেশের আবহাওয়ায় কোয়েল ৬-৭ সপ্তাহ বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে এবং ৮-১২ মাস পযন্ত ডিম পাড়া অপরিবর্তিত থাকে।
- উপযুক্ত পরিবেশে প্রথম বছর গড়ে ২৫০-৩০০টি ডিম পাড়ে।
- দ্বিতীয় বছরের ডিমের উৎপাদন প্রথম বছরের উৎপাদনের শতকরা ৪৮ ভাগ।
- কোয়েল ডিমের উর্বরতা শতকরা ৮২-৮৭ ভাগ।
- ডিমপাড়া শুরুর প্রথম দুই সপ্তাহের ডিম ফুটাতে বসানো উচিত নয়।
- কোয়েলের ডিমের গড় ওজন ১০-১২ গ্রাম।
কোয়েলের বাচ্চার ব্রুডিং এবং যত্নঃ
- সদ্য ফুটন্ত কোয়েলের বাচ্চা খুবই ছোট থাকে, ওজন মাত্র ৫-৭ গ্রাম।
- এ সময় যে কোনো রকম ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার প্রভাব স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধি, ডিম উৎপাদন এবং বেঁচে থাকার ওপর পড়ে।
- এঅবস্থায় খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান এবং কাম্য তাপমাত্রা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বজায় রাখতে হবে।
- বাচ্চাকে ত্রুডিং বা তাপ দেয়া খাঁচায় এবং লিটারে করা যায়।
কোয়েলের বাচ্চার বয়স অনুযায়ী তাপমাত্রাঃ
- প্রথম সপ্তাহ ৩৫০ সেন্টিগ্রেড (৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তৃতীয় সপ্তাহ ২৯.৫০ সেন্টিগ্রেড (৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট)।
- দ্বিতীয় সপ্তাহ ৩২.২০ সেন্টিগ্রেড (৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) চতুর্থ সপ্তাহ ২৭.৬০ সে. (৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট)।
- ইনকুবেটরে বাচ্চা ফুটার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ত্রুডিং ঘরে এনে প্রথমে গ্লকোজ এবং এমবাভিট ডলিউ এস পানির সাথে মিশিয়ে পরপর তিনদিন খেতে দেয়া ভালো এবং পরে খাদ্য দিতে হবে।
- প্রথম সপ্তাহ খবরের কাগজ বিছিয়ে তার ওপর খাবার ছিটিয়ে দিতে হবে এবং প্রতিদিন খবরের কাগজ পরিবর্তন করতে হবে।
- এক সপ্তাহ পর ছোট খাবার পাত্র বা ফ্লাট ট্রে ব্যবহার করতে হবে।
- পানির পাত্রে বাচ্চা যাতে পড়ে না যায় সে জন্য মার্বেল অথবা কয়েক টুকরা পাথর খন্ড পানির পাত্রে রাখতে হবে।
- সর্বদাই পরিষ্কার পরিচছন্ন পানি সরবরাহ করতে হবে।
খাঁচায় কোয়েল পালনঃ
- খাঁচায় ৫০টি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ১২০ সেমি. দৈর্ঘ্য, ৬০ সেমি. গ্রন্থ এবং ৩০ সেমি. উচ্চতা বিশিষ্ট একটি খাঁচার প্রয়োজন।
- খাঁচার মেঝের জালিটি হবে ১৬-১৮ গেজি ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চার খাচার মেঝের জালের ফাঁক হবে ৩ × ৩ মিলিমিটার এবং বয়স্ক কোয়েলের খাঁচায় মেঝের জালের ফাঁক হবে ৫ × ৫ মিলিমিটার।
- খাঁচার দুই পার্শ্বে একদিকে খাবার ন্যদিকে পানির পাত্র সংযুক্ত করে দিতে হবে।
- খাঁচায় ৫০টি কোয়েলের জন্য তিন সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট ২৮ বর্গ সেন্টিমিটার বা ৩ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন।
কোয়েল পালনে খাবার পাত্রঃ
- বাচ্চা অবস্থায় ফ্লাট ট্রে বা ছোট খাবার পাত্র দিতে হবে যেন খাবার খেতে কোনো রকম অসুবিধা না হয়।
- স্বাভাবিকভাবে প্রতি ২৮টি বাচ্চার জন্য একটি খাবার পাত্র (যার দৈর্ঘ্য ৫০ সেন্টিমিটার, গ্রন্থ’ ৮ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতা ৩ সেন্টিমিটার) এবং প্রতি ৩৪ টি বয়স্ক কোয়েলের জন্য একটি খাবার পাত্র (যার দৈর্ঘ্য ৫৭ সেন্টিমিটার, গ্রন্থ ১০ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতা ৪ সেন্টিমিটার) ব্যবহার করা যেতে পারে।
- সকালে এবং বিকালে খাবার পাত্র ভালো করে পরিষ্কার সাপেক্ষে মাথাপিছু দৈনিক ২০-২৫ গ্রাম খাবার দিতে হবে।
- উল্লেখ্য যে, প্রথম সপ্তাহ থেকে ৫ গ্রাম দিয়ে শুরু করে প্রতি সপ্তাহে ৫ গ্রাম করে বাড়িয়ে ২০-২৫ গ্রাম পর্যন্ত উঠিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- প্রতিটি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ১.২৫-২.৫ সেন্টিমিটার (১/২ থেকে ১ ইঞ্চি) খাবার পাত্রের জায়গা দিতে হবে।.
কোয়েল পালনেপানির পাত্রঃ
- সর্বদাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পানি সরবরাহ করতে হবে।
- প্রতিটি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ০.৬ সেন্টিমিটার (১/৪ ইঞ্চি) পানির পাত্রের জায়গা দিতে হবে।
- অটোমেটিক বা স্বাভাবিক যে কোনো রকম পানির পাত্র ব্যবহার করা যেতে পারে।
- প্রতি ৫০টা কোয়েলের জন্য একটি পানির পাত্র দেয়া উচিত।
- নিপল ড্রিংকার বা কাপ ড্রিংকার ও ব্যবহার করা যায়।
- এ ক্ষেত্রে প্রতি ৫টি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ১টি নিপল বা কাপ ড্রিংকারও ব্যবহার করা যেতে পারে।
কোয়েল পাখির খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ
- বাচ্চা, বাড়ন্ত অথবা প্রজনন কাজে ব্যবহৃত কোয়েলের জন্য স্ট্যান্ডার্ড রেশন বাজারে সহজলভ্য নয়।
- কোয়েলের রেশনকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। স্টার্টার, বাড়ন্ত, এবং লেয়ার বা ব্রিডার।
- ডিম পাড়া কোয়েলের প্রতি কেজি খাবারে ২.৫- ৩.০% ক্যালসিয়াম থাকতে হবে।
- ডিমের উৎপাদন ধরে রাখার জন্য গরমের সময় ৩.৫% ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
কোয়েলের খাদ্যঃ
→ কোয়েলের স্বাস্থ্য রক্ষা, দৈহিক বৃদ্ধি, ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য সুনির্দিষ্ট গুণসম্পন্ন খাদ্য প্রয়োজন। যেমন- ০-৩ সপ্তাহ বয়সের পাখির খাদ্যে আমিষের প্রয়োজন শতকরা ২৭ ভাগ ৪-৫ সপ্তাহ বয়সে ২৪ ভাগ এবং ৬ সপ্তাহ থেকে পরবর্তী সময়ের জন্য প্রয়োজন ২২ ভাগ।
→ বিভিন্ন বয়সের কোয়েলের খাদ্য তালিকা দেশীয় উপাদান সমন্বয়ে নিচের টেবিলে দেয়া হলো। সঠিক ভাবে খাদ্য উপাদান মিশ্রিত করে পাখিকে খাওয়ানো যায়।
→ সাধারণত একটি পূর্ণ বয়স্ক কোয়েল প্রতিদিন ২০-২৫ গ্রাম খাদ্য খায়।
বিভিন্ন বয়সের কোয়েল পাখির খাদ্য তালিকাঃ
ক্র.নং | খাদ্য উপাদান (শতকরা, %) | প্রারম্ভিক (স্টাটার) (০-৩ সপ্তাহ) ফর্মূলা-১ | প্রারম্ভিক (স্টাটার) (০-৩ সপ্তাহ) ফর্মূলা-২ | বৃদ্ধির (গ্লোয়ার) (৪-৫ সপ্তাহ) ফর্মূলা-১ | বৃদ্ধির (গ্লোয়ার) (৪-৫ সপ্তাহ) ফর্মূলা-২ | লেয়ার রেশন (৬ সপ্তাহ) |
১। | গম ভাঙ্গা | ৫০.০০ | ৫০.০০ | ৫৩.০০ | ৫০.০০ | ৫০.০০ |
২। | চাউলের মিহি কুড়া | ০৭.০০ | ০৬.০০ | ০৯.০০ | ০৮.০০ | ০৯.০০ |
৩। | তিলের খৈল | ১৫.০০ | ২৩.০০ | ১৫.০০ | ২৩.০০ | ২৩.০০ |
৪। | শুটকি মাছের গুড়া | ২০.০০ | ১৮.০০ | ১৮.০০ | ১৫.০০ | ১২.০০ |
৫। | ঝিনুকের গুড়া | ০২.৫০ | ০২.৪০ | ০৩.৫০ | ০৩.৪০ | ০৫.৩০ |
৬। | হাঙ্গর মাছের তেল | ০১.০০ | – | ০১.০০ | – | – |
৭। | লবণ | ০০.২৫ | ০০.৩০ | ০০.২৫ | ০০.৩০ | ০০.৪০ |
৮। | ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স | ০০.২৫ | ০০.৩০ | ০০.২৫ | ০০.৩০ | ০০.৪০ |
কোয়েল পাখির লিটার ব্যবস্থাপনাঃ
- তুষ, বালি, ছাই, কাঠের গুড়া প্রভৃতি দ্রব্যাদি কোয়েলের লিটার হিসাবে মেঝেতে ব্যবহার করা যায়।
- অবস্থাভেদে লিটার পরিবর্তন আবশ্যক যেন কোনো রকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি না হয়।
- মেঝেতে ডিপ লিটার পদ্ধতি অবলম্বন করা ভালো।
- প্রথমেই ৫-৬ ইঞ্চি পুরু তুষ বিছিয়ে দিতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে যেন লিটার ভিজা না হয়।
- স্বাভাবিকভাবে শীতকালে লিটার পরিবর্তন এবং স্থাপন করতে হবে, অন্য ঋতুতে লিটার পরিবর্তন এবং স্থাপন করলে লিটারের শতকরা ১-২ ভাগ কলি চুন মিশিয়ে দিতে হবে যেন লিটার শুষ্ক এবং জীবাণুমুক্ত হয়।
কোয়েল পালনে আলো ব্যবস্থাপনাঃ
- কাঙ্খিত ডিম উৎপাদন এবং ডিমের উর্বরতা বাড়ানোর জন্য দৈনিক ১৪-১৮ ঘণ্টা আলোর প্রয়োজন।
- শরৎকালে এবং শীতকালে দিনের আলোক দৈর্ঘ্য কম থাকে তাই কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করা হয়।
- পুরুষ কোয়েল যেগুলো প্রজনন কাজে ব্যবহার করা হয় না এবং যেগুলো শুধু মাংস উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয় সেগুলোর জন্য দৈনিক ৮ ঘণ্টা আলোই যথেষ্ট।
কোয়েল পাখির রোগবালাইঃ
- কোয়েলের রোগবালাই নেই বললেই চলে। সাধারণত কোনো ভ্যাকসিন অথবা কৃমিনাশক ওষুধ দেয়া হয় না।
- তবে বাচ্চা ফুটার প্রথম ২ সপ্তাহ বেশ সংকটপূর্ণ। এ সময় অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কোয়েলের বাচ্চার যত্ন নিতে হয়।
- অব্যবস্থাপনার কারণে কোয়েলের বাচ্চা মারা যায়, তবে বয়স্ক কোয়েলের মৃত্যুহার খুবই কম।
কোয়েল পালনে আর্থিক লাভঃ
- উৎপাদনের দিক থেকে কোয়েল অধিক উৎপাদনশীল।
- একটি মুরগির পরিবর্তে ৮টি কোয়েল পালন করা যায়।
- অল্প জায়গায়, বাংলাদেশের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায়, অল্প খরচে, পারিবারিক পর্যায়ে অথবা বাণিজ্যিকভিত্তিতে কোয়েল পালন দেশে পুষ্টি ঘাটতি মেটাতে এবং জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম।