🛑অভিযোগ :-
কোরআনে যেহেতু শুধু পুরুষকে একই সাথে একাধিক স্ত্রী রাখার অধিকার দেয়া হয়েছে সেহেতু নারী-পুরুষকে সমান অধিকার দেয়া হয়নি! কোরআনে পুরুষের বহুবিবাহ একটি অমানবিক প্রথাও বটে!
🔷খন্ডন :-
প্রথমত, পুরুষকে কোন অধিকার দেয়া মানে সেই একই অধিকার নারীকেও দিতে হবে, তাহলেই কেবল নারী-পুরুষকে সমান অধিকার দেয়া হবে–মুসলিমরা এই ধরণের অবাস্তব যুক্তিতে বিশ্বাস করে না। কারণ নারী-পুরুষের মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্যের কারণে বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার দেয়া আদৌ সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত, মুসলিম নারীরা একই সাথে একাধিক স্বামী রাখার জন্য কান্নাকাটি করে না। কারণ তারা খুব ভালভাবেই অবগত যে, একই সাথে একাধিক স্বামী রাখাটা যৌক্তিক বা সুখের কিছু নয়।
তৃতীয়ত, কোরআনের কোথাও সরাসরি বলা হয়নি যে নারীরা একই সাথে একাধিক স্বামী রাখতে পারবে না। নৈতিক ও যৌক্তিক কিছু কারণের উপর ভিত্তি করে এটি মুসলিমদের একটি শক্ত অবস্থান। ফলে কেউ একই সাথে একাধিক স্বামী রাখতে চাইলে তাকে মুসলিম সমাজের বাহিরে যেয়ে এই কাজ করতে হবে।
চতুর্থত, পুরুষের বহুবিবাহ প্রথা যদি এতটাই অমানবিক কিছু হতো তাহলে আব্রাহামের একাধিক স্ত্রী থাকে কীভাবে! সলোমনের এক হাজার স্ত্রী ও উপ-পত্নী থাকে কীভাবে! ডেভিডের একাধিক স্ত্রী ও উপ-পত্নী থাকে কীভাবে! শ্রীকৃষ্ণের ষোল হাজারেরও বেশী স্ত্রী ও গোপি থাকে কীভাবে! অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা এতদিন ধরে বহুবিবাহ প্রথা চালু রেখেছিল কীভাবে! এখনও কোন কোন সমাজে এই প্রথা চালু আছে। এই তো মাত্র কিছুদিন আগে পশ্চিমা বিশ্বে পুরুষের বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে আইন করা হলো। তার মানে কি এই আইন পাশ করার আগ পর্যন্ত পুরুষের বহুবিবাহ প্রথা মানবিক ছিল! অথচ ইসলামে পুরুষের বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে এমনভাবে অপপ্রচার চালানো হয় যেন তারা জীবনে কখনো এই প্রথার নামই শোনেনি!
পঞ্চমত, ইসলামে পুরুষের বহুবিবাহ অবশ্য করণীয় কোন কর্তব্য নয়। বহুবিবাহের জন্য কেউ ভাল মুসলিমও হবে না। প্রকৃতপক্ষে মুসলিমদের মধ্যে খুব কম পুরুষেরই একই সাথে একাধিক স্ত্রী আছে। তার মানে এটি জনপ্রিয় কোন প্রথা নয়। তাছাড়া কাউকে জোর করে হয়তো ধর্ষণ করা যায় কিন্তু জোর করে বিয়ে করে স্ত্রী হিসেবে তো আর রাখা যায় না। এক্ষেত্রে জোর-জবরদস্তির কোন স্থান নেই (৪:১৯, ২:২৫৬)। তবে কোন নারী যদি স্ব-ইচ্ছায় অন্য কারো স্ত্রীর সাথে যৌথভাবে থাকতে চায় এবং সেই পুরুষের পক্ষে যদি একাধিক স্ত্রীর দায়িত্ব নেয়া সম্ভব হয় সেক্ষেত্রে তো কারো গাত্রদাহ হওয়ার কথা নয়। একই সাথে একাধিক অবৈধ উপ-পত্নী রাখা গেলে একাধিক বৈধ স্ত্রী রাখা যাবে না কেন? বরঞ্চ অবৈধ উপ-পত্নীর ক্ষেত্রে কোন দায়িত্ব যেমন নিতে হয় না তেমনি আবার বিভিন্ন সমস্যারও সৃষ্টি হতে পারে।
ষষ্ঠত, ইসলামে পুরুষের বহুবিবাহকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়। কারণ কোরআনে মূলতঃ বিধবা নারীদেরকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে বলা হয়েছে (৪:২-৩)। পাশাপাশি তাদের প্রতি ন্যায়বিচারও করতে বলা হয়েছে। তবে এও বলা হয়েছে যে স্ত্রীদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে না পারলে একজনই যথেষ্ট। অতএব ইসলামে পুরুষের বহুবিবাহ কোন সামাজিক সমস্যা তো নয়-ই, বরঞ্চ প্রয়োজনে সামাজিক সমস্যার যৌক্তিক ও মানবিক একটি সমাধান হতে পারে।
সপ্তমত, যে পশ্চিমা বিশ্বের অতি সাম্প্রতিক কিছু নিয়ম-নীতিকে ‘আদর্শ’ বা ‘গডের অভ্রান্ত বাণী’ ধরে নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে সেই পশ্চিমা বিশ্বেরই হাজার হাজার নারী-পুরুষ প্রতি বছর ইসলাম গ্রহণ করে ইসলাম সম্পর্কে কী বলেন সেটা জানাটা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।