খতনার করা কি ফরজ?
না, খতনা করা সুন্নাত। সকল রাসূল ও সাহাবীগণ সবাই খতনা করেছেন?
খতমা বা মুসলমানি করা কাকে বলে?
পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের নির্দিষ্ট পরিমাণ চামড়া কেটে বাদ দেওয়াকে খত্না বলে যা আমাদের দেশে মুসলমানি বলে।
খতনা শব্দের ইংরেজি কি?
খতনা শব্দের ইংরেজি অর্থ হলো- Circumcision.
* ছেলেদের খতনা (মুসলমানী) করানো সুন্নাত। খতনা ইসলামের একটি বৈশিষ্ট্য, তাই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।
* খতনা করানোর কোন বয়স নির্ধারিত নেই। বালেগ হওয়ার পূর্বে যে কোন বয়সে যে কোন সময় করে নিবে।
* যদি বালেগ হওয়ার পূর্বে কারও খতনা না হয়ে থাকে বা কোন অমুসলিম বালেগ হওয়ার পর মুসলমান হয় এবং পূর্বে তার খতনা না হয়ে থাকে, তাহলেও (বালেগ হওয়া সত্ত্বেও) খতনা করার হুকুম বলবৎ থাকবে, যদি তার মধ্যে খতনার কষ্ট সহন করার ক্ষমতা থাকে।
* খতনা উপলক্ষে আড়ম্বর করা, দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়-স্বজনকে ডেকে আনা এবং তাদেরও ছেলের জন্য কাপড়-চোপড় ও হাদিয়া তোহফা নিয়ে আসা- এটা সুন্নাত পরিপন্থী। (ইসলামী ফিকাহ)
মুসলমানি কেন করা হয়?
ধর্মীয় কারণে মুসলমান ও খ্রিস্টানরা খতনা করিয়ে থাকে। কিছু কিছু রোগ হলে যেমন ফাইমোসিস, প্যারাফাইমোসিস হলে খতনা বা মুসলমানি করাতে হয়। ফাইমোসিস হলো পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের চামড়া এমনভাবে মূত্রনালীকে ঢেকে রাখে, যার কারণে প্রস্রাব ঠিকমতো বের করতে পারে না। প্রস্রাব বের হতে না পেরে পুরুষাঙ্গের মাথা ফুলে ওঠে এবং শিশু ব্যথায় কান্নাকাটি করতে থাকে। এভাবে বেশিদিন চলতে থাকলে প্রস্রাবে ইনফেকশন, এমনকি কিডনি ফেইলিওরও হতে পারে। আবার অনেক সময় পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের চামড়া উল্টে গিয়ে টাইট হয়ে যায়। যার ফলে চামড়াকে আর সামনে ও পেছনের দিকে নাড়াচাড়া করা যায় না। এক্ষেত্রে মাথার দিকে ফুলে যায় এবং রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। উভয় ক্ষেত্রেই জরুরি ভিত্তিতে খতনা করানো প্রয়োজন। অনেক সময় ছোট শিশুদের পুরুষাঙ্গ প্যান্টের চেইনের সঙ্গে আটকে যেতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতেও অনেক সময় খতনা করানো হয়।
খতনা করার উপকারিতা কি?
খত্না করার বেশকিছু উপকার আছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ
১. পুরুষাঙ্গের মধ্যের ঐ অংশে ব্যকটেরিয়ার সংক্রমণ কমে যায়;
২. বিভিন্ন যৌনরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে যেমনঃ স্বামীর পেনাইল ক্যান্সার, স্ত্রীর সার্ভিকাল ক্যান্সার প্রভৃতি;
৩. স্ত্রী সহবাসের সময় স্বামী-স্ত্রীর জন্য সুবিধা হয় প্রভৃতি।
এছাড়াও কিছু রোগের (Phimosis, balanitis, balanoposthitis) ক্ষেত্রে ডাক্তাররা পুরুষাঙ্গের ঐ চামড়াটুকু কেটে বাদ দেন।
জেনে হয়তো অবাক লাগবে, খতনার কিন্তু উপকারিতাও আছে! সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতাটি হলো, খতনা করে পুরুষাঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র খতনার কারণেই এ ক্যান্সার মুসলমান ও খ্রিস্টানদের মধ্য নেই বললেই চলে। পুরুষাঙ্গের মাথার বাড়তি চামড়ার নিচে এক ধরনের সাদা পদার্থ জমে এবং এটিই পুরুষাঙ্গের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
অন্যান্য ধর্মে খতনা করা কি?
খৎনা করা ইসলামে সুন্নাত, কিন্তু ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মে বাধ্যতামূলক (Genesis17:14, Luke 2:21)। এছাড়া হিন্দুধর্মেও খৎনার বিধান পাওয়া যায়। (ভবিষ্যপুরাণ, নবভারত পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ৩৭৯)
সূত্র- তুলনামূলক ধর্মালোচনা
কখন খতনা না করার অনুমতি আছে?
হাইপোস্পেডিয়াসিস রোগে খতনা করানো যায় না। এটি পুরুষাঙ্গের জন্মগত ত্রুটি। এতে প্রস্রাবের নালী পুরুষাঙ্গের মাথায় না থেকে নিচের দিকে থাকে। এক্ষেত্রে চিকিত্সা করাতে হয় এবং খতনা করানোর আগে এ জন্মগত ত্রুটি ঠিক করাতে হয়। খতনা করানোর আগে রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ এমনটাও দেখা গেছে যে, শুধু খতনা করানোর কারণেই অনেক রোগী রক্তপাতের ফলে মারা গেছে। অনেক শিশুর জন্মগত রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা থাকতে পারে। তাই খতনার আগে শিশুর জন্মগত রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা আছে কি না, তা পরীক্ষা করাটা জরুরি।
খতনা করার সময় কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়?
অভিজ্ঞ চিকিত্সকের মাধ্যমে খতনা করালে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না বললেই চলে। তবে হাজামদের দিয়ে খতনা করালে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়া, অতিরিক্ত বা কম চামড়া কেটে ফেলা, পুরুষাঙ্গের সংবেদনশীল মাথা কেটে ফেলার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এ সমস্যাগুলো অভিজ্ঞ চিকিত্সকের ক্ষেত্রে হওয়ার সম্ভাবনা নেই। শিশুর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হাজামের পরিবর্তে চিকিত্সক দ্বারা খতনা করার। বাংলাদেশের সব হাসপাতালেই শিশুর খতনা করানো হয় এবং খরচ খুবই অল্প।
আশা করি খতনার হুকুম কি ফরজ? প্রশ্নের উত্তরটি পেয়েছেন। এ ধরণের আরও প্রশ্নত্তোরের জন্য নিয়মিত খামারিয়ান.কম ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।
খতনা কেন করা হয়?
খৎনা করা ইসলামে ফরজ বা বাধ্যতামূলক নয়। এটি একটি সুন্নাত। তাছাড়া আমরা জানি পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ! পবিত্রতা ছাড়া ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়। যেকোন ইবাদতের প্রথম শর্ত পবিত্রতা! আর এই পবিত্রতার পথে বাধা সৃষ্টি করে বাড়তি ঐ চামড়াটুকু! এই চামড়াটুকু থাকা অবস্থায় পবিত্র হওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। কেননা এতে প্রস্রাব ও অন্যান্য নাপাকি লেগে থাকে, যা পরিষ্কার করা সময়সাপেক্ষ! আর এক্ষেত্রে পবিত্র হতে পানি অপরিহার্য! অথচ আমরা জানি সর্বাবস্থায় পানি পাওয়া সম্ভব নয়!
এজন্যই সহজে পবিত্রতা অর্জনের জন্য মুসলমানরা খৎনা করে থাকে! এছাড়া খৎনার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা যে কত, তার তালিকা দিয়ে শেষ করা যাবে না। যদি কোনো ব্যক্তি খৎনা না করে পবিত্রতা অর্জন করতে পারে, তবে তাকে ইসলাম খৎনা করতে বাধ্য করে না! এখন প্রশ্ন হচ্ছে যেহেতু পবিত্রতা অর্জনে বাধা সৃষ্টি করে, সেহেতু জন্ম থেকে মাওলা এই বাড়তি চামড়া দিলেন কেন?
আচ্ছা কলাতো সবাই খেয়েছেন! কলার উপরের আবরণটি কেন থাকে? উত্তর হলো, কলাকে নিরাপদ রাখার জন্য। তা নাহলে কলা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। আমরা জানি শিশুদের ত্বক অত্যন্ত নাজুক ও কোমল থাকে! ফলে এইসময় সামান্য আঁচড়ই তাদের ত্বকে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আর বিশেষ সেই অঙ্গটিতো আরো নাজুক থাকে। এসময় যদি এটি উন্মুক্ত থাকতো, তবে খুব সহজে সামান্য কাপড়ের ঘষাতেই এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেত!
ঠিক এজন্যই মাওলা এই বাড়তি চামড়া দিয়ে একে ঢেকে রাখেন। যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়! তাহলে পরে কেন কাটতে বলেন? পাক-পবিত্রতার মাস’আলাটি শিশুদের জন্য প্রযোজ্য নয়। যখন সে শরীয়ত অনুযায়ী ইবাদত করার বয়সে পৌঁছাবে, তখনি পবিত্রতার প্রশ্নটি সামনে আসে। আর তখনি খৎনা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেসময় অঙ্গটি আর নাজুক থাকে না আগের মতো, যখন সে শিশু ছিল। আর তাই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না! সুবহানাল্লাহ!! এটাই মাওলার বিশেষত্ব! নিশ্চয়ই তিনি সকল কারিগরের চেয়ে উত্তম কারিগর।
খৎনা করাকে স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে হাদিসে। চুল, নখ ইত্যাদি কাটার মতোই স্বাভাবিক বিষয়। এর দ্বারা কোনো বিকৃতি ঘটে না। বিকৃতি তখনই বলা হবে, যখন সেটা জীবের স্বাভাবিক কর্মকে বাধাগ্রস্ত করবে। কিন্তু খৎনা করলে সন্তান জন্মদানে কোনো অসুবিধাই হয় না।
জন্মের পর সন্তানের নাড়ি কাটাকে কি আপনি বিকৃতি বলতে পারেন? এরকম আরো অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যায়। ইউরোপ-আমেরিকার মতো চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলোর হসপিটালে ছেলে সন্তান জন্ম নিলে তাদের উপযুক্ত বয়স হলেই ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে খৎনা করিয়ে দেয়া হয়৷ এটি পুরুষদের জন্য একটি সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি (Basic Health Rule)৷ খৎনা না করালে পুরুষদের গোপনাঙ্গের ওই চামড়ার ভিতরে ময়লা জমতে জমতে ইনফেকশন, ক্যান্সার, যৌন সমস্যা, সন্তান না হওয়া, গনরিয়া, সিফিলিসের মতো মারাত্মক বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ তাই নিজের জীবন ঝুঁকিমুক্ত রাখতে ও সুস্থ থাকতে পুরুষদের খৎনা করা আবশ্যক৷
প্রিয়, খামারিয়ান পাঠক, আশাকরি খতনার হুকুম কি ফরজ? খতনা কেন করা হয়? মুসলমানি কেন কনা হয়? ও খতনা করারর উপকারিতা সম্পর্কে আপনার সকল প্রশ্নগুলোকে উত্তর করতে পেরেছি। এই পোষ্টটি এখানেই সমাপ্ত করফিঅ আল্লাহ হাফেজ।