আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
খাদ্যশিকল বা খাদ্যশৃঙ্খল কী/কাকে বলে/বলতে কি বুঝায়ঃ
যখন খাদ্য শক্তি উৎপাদক থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের খাদকদের মধ্যে প্রবাহিত হয়, তখন সেই প্রবাহকে এক সাথে খাদ্যশিকল বা খাদ্যশৃঙ্খল বলা হয়।
উৎপাদক হিসেবে সবুজ উদ্ভিদ যেকোনো বাস্তুতন্ত্রের জীব উপাদানগুলোর মধ্যে সবার প্রথম কাজে নামে। তারা খাদ্য তৈরি না করলে তৃণভোজী প্রাণী এবং মাংসাশী প্রাণীরা খাদ্যসংকটে পড়ে মারা যেত।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় মাঠের সবুজ ঘাস হচ্ছে উৎপাদক। ঘাসফড়িং সে ঘাসের অংশবিশেষ খেয়ে বাঁচে। ব্যাঙ ঐ ঘাসফড়িংকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, আর সাপ সেই ব্যাঙকে আস্ত গিলে খায়। যদি মনে করা হয়, সাপটি আকারে ছোট এবং আশপাশে বেশ বড় একটি গুইসাপ আছে। তাহলে সুযোগ পেলে ঐ গুঁইসাপ আবার সাপটিকে গিলে খাবে। সেক্ষেত্রে খাদ্যশিকলটিকে নিচের মতো করে লেখা যাবে:
ঘাস → | ফড়িং → | ব্যাঙ → | সাপ → | গুঁইসাপ |
উৎপাদক | প্রথমস্তরের খাদক | দ্বিতীয়স্তরের খাদক | তৃতীয়স্তরের খাদক | সর্বোচ্চস্তরের খাদক |
বিভিন্ন ধরনের বাস্তুতন্ত্রে খাদ্যশিকল বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন শিকারজীবী খাদ্যশিকল, পরজীবী খাদ্যশিকল এবং মৃতজীবী খাদ্যশিকল।
(a) শিকারজীবী খাদ্যশিকল (Predator food chain):
যে খাদ্যশিকলে প্রথম স্তরের খাদক আকারে সবচেয়ে ছোট থাকে এবং পর্যায়ক্রমে উপরের খাদকেরা নিচের স্তরের খাদকগুলো শিকার করে খায়, সেরূপ শিকলকে বলা হয় শিকারজীবী খাদ্যশিকল। উপরে বর্ণিত খাদ্যশিকলটি একটি শিকারজীবী খাদ্যশিকল।
(b) পরজীবী খাদ্যশিকল (Parasitic food chain):
পরজীবী উদ্ভিদ ও প্রাণী অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের চেয়ে বড় আকারের পোষকদেহ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি পরজীবীর উপর আরেক ধরনের ক্ষুদ্রতর পরজীবী তার খাদ্যের জন্য নির্ভরশীল হয়। এ ক্ষেত্রে খাদ্যশিকলের প্রথম ধাপে সবসময় সবুজ উদ্ভিদ না-ও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে শিকলটি অসম্পূর্ণ থাকে, যেমন:
মানুষ → মশা → ডেঙ্গু ভাইরাস।
উল্লেখ্য, এখানে মানবদেহের রক্ত শোষণকারী স্ত্রী এডিস মশা নিজে সেই রক্ত থেকে পুষ্টি লাভ করে না, কিন্তু তার গর্ভস্থ ডিমগুলোর বিকাশে কাজে লাগায়।
(c) মৃতজীবী খাদ্যশিকল (Saprophytic food chain):
জীবের মৃতদেহ থেকে শুরু হয়ে যদি কোনো খাদ্যশৃঙ্খল একাধিক খাদ্যস্তরে বিন্যস্ত হয়, তবে সেরূপ শিকলকে বলা হয় মৃতজীবী খাদ্য শিকল। যেমন:
মৃতদেহ → ছত্রাক → কেঁচো।
বলা বাহুল্য, এই খাদ্যশিকলগুলো অসম্পূর্ণ এবং এ ধরনের শিকল বাস্তুতন্ত্রের যাবতীয় মিথস্ক্রিয়া বা আন্তঃসম্পর্কের অংশমাত্র তৈরি করে। পরজীবী ও মৃতজীবী খাদ্যশিকল সব সময়ই অসম্পূর্ণ থাকে। কারণ এখানে কোনো উৎপাদক নেই। এই উভয় প্রকার খাদ্যশিকল তাদের কার্যকারিতা বজায় রখার জন্য শিকারজীবী খাদ্যশিকলের প্রথম এক বা একাধিক স্তরের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যশিকল উৎপাদক সবুজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার কার্যকারিতার উপর প্রতিষ্ঠিত।