Skip to content

 

গবাদি পশুর জাত উন্নয়নঃ (৫টি) গবাদিপশুর জাত উন্নয়নের উদ্দেশ্য (২টি) গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন পদ্ধতি।

গবাদি পশুর জাত উন্নয়নঃ (৫টি) গবাদিপশুর জাত উন্নয়নের উদ্দেশ্য (২টি) গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন পদ্ধতি।

গবাদি পশুর জাত উন্নয়নঃ

◾ বাংলাদেশের দেশী জাতের যে সব গরু ও মহিষ আছে তা কোন বিশেষ জাত বা উন্নতজাতের পশু নয়। প্রাচীনকাল থেকেই এসব পশু এদেশে কৃষকের ঘরে পালিত হয়ে আসছে। এসব পশু হালচাষ ও গাড়ি টানার জন্য উপযোগী। তবে এদের তেমন কোন উৎপাদনশীল স্থায়ী বৈশিষ্ট্য নেই। তাই পর্যাপ্ত সুষম খাদ্য ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেও দেশী জাতের গরু থেকে ৩/৪ লিটারের অধিক দুধ পাওয়া যায় না।

◾ সাধারণ দেশী জাতের একটি গাভীর দৈহিক ওজন ১৫০-২০০ কেজি ও সদ্যপ্রসূত বাছুরের ওজন ৮-১০ কেজি হয়। সাধারণত দেশী গাভী দৈনিক ১-২ লিটার দুধ দেয়। আর দেশী একটি পূর্ণ বয়স্ক ষাঁড়ের ওজন হয় ২০০-২২৫ কেজি। সুতরাং জাত উন্নয়নের মাধ্যম দেশী গরুর দুধ ও মাংস উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

◾ সাধারণত কম উৎপাদনশীল দেশী জাতের অনুন্নত গাভীর সাথে অধিক উৎপাদনশীল বিদেশী জাতের (উন্নত) ষাঁড় বা সিমেন দিয়ে সংকরায়নের মাধ্যমে জাত উন্নয়ন করা হয়। এতে যে সংকর জাতের বাছুর জন্ম নেয় তা প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় দেশী গরু অপেক্ষা আকারে বড় হয় ফল দৈহিক ওজন বৃদ্ধিসহ মাংস উৎপাদন অধিক হয় এবং গাভীর দুধ উৎপাদন ১০-১৫ লিটার হয়ে থাকে।

(৫টি) গবাদিপশুর জাত উন্নয়নের উদ্দেশ্যঃ

বাংলাদেশে পশুসম্পদ জনগোষ্ঠির খাদ্যে প্রাণীজ প্রোটিন (দুধ, মাংস) সরবরাহ, কৃষি উন্নয়ন ও জৈব সার সরবরাহ, চামড়া রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পশু সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু আমাদের দেশে পশু সম্পদ উৎপাদনের বিপুল ঘাটতি রয়েছে। এই বিপুল ঘাটতি পূরণের জন্য দেশের পশু সম্পদ উন্নয়ন প্রয়োজন। প্রধানত দেশী অনুন্নত জাতের পশুকে সংকরায়নের মাধ্যমে পশুর উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দেশে পশুর উৎপাদিত দ্রব্যের ঘাটতি পূরণ করা যায়। গবাদিপশুর জাত উন্নয়নে প্রধানত নিম্নোক্ত উদ্দেশ্য সফল হবে।

(১) মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি :

আমাদের দেশের দেশী গবাদিপশুর আকার ছোট। প্রাপ্ত বয়স্ক একটি গরুর দৈহিক ওজন ১০০-১৫০ কেজি। সে কারণে দেশী গরুর মাংস উৎপাদন কম। তাই দেশী জাতের গাভীকে উন্নত বিদেশী জাতের ষাঁড় দিয়ে সংকরায়নের মাধ্যমে সৃষ্ট বাছুরের প্রাপ্ত বয়সে ৩৫০-৪০০ কেজি দৈহিক ওজন হবে। সংকর জাতের গরু দেশী গরু অপেক্ষা অনেক বড় হয়। সে কারণে একদিকে অধিক মাংস হয় অন্যদিকে চামড়াও বড় হয়। তাই দেশী গরুর সংকরায়নের মাধ্যমে দেশের মাংসের চাহিদা পূরণ ও চামড়া রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়।

(২) দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি :

সাধারণত একটি দেশী গাভী দৈনিক ১-২ লিটার দুধ দেয়। দেশী গাভীকে পর্যাপ্ত সুষম খাদ্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় পালন করলেও দৈনিক ৩ লিটারের অধিক দুধ উৎপাদন করতে পারে না। কারণ দেশী জাতের গাভী বংশগত ভাবেই নিম্নমানের। তাই দেশী গরুর সংকরায়নের প্রয়োজন। দেশী গাভীকে উন্নত বিদেশী জাতের ষাঁড় বা সিমেন দিয়ে সংকরায়নের মাধ্যমে যে বকন বাচ্চা হবে সেটি প্রাপ্ত বয়সে ১০-১৫ লিটার দুধ দিবে। তাই দেশী গরু সংকরায়নের মাধ্যমে দেশের দুধের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

(৩) খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি :

দেশী জাতের গাভীর দুধ উৎপাদন অতি অল্প হওয়ায় দেশী গাভী খামারে পালনে উপযোগী নয়। অর্থাৎ লাভজনক নয় । অধিক উৎপাদনশীল সংকর জাতের গাভী সহজলভ্য হলে পারিবারিক দুগ্ধ খামারে এমনকি বিত্তশালী ব্যক্তিবর্গ লাভজনকভাবে বড় আকারের ডেয়রী খামার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসবে। সুতরাং দেশী জাতের গবাদিপশুর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সংকরায়ন করা প্রয়োজন। এর ফলে একদিকে দেশে দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে বেকার জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান হবে।

(৪) কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি :

দেশী জাতের গবাদিপশুর সংকরায়ন করলে সংকর জাতের পশুর দুধ ও মাংস উৎপাদন এবং কর্মশক্তি বৃদ্ধি পাবে। ফলে গবাদিপশু পালন একটি লাভজনক শিল্পে পরিণত হবে। এতে দেশের বেকার যুবক যুবতীরা পশু পালনে আগ্রহী হবে। দেশের পশু সম্পদ উন্নতির মাধ্যমে একদিকে পশুজাত দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে বেকার জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাই সংকরায়নের মাধ্যমে বেকার জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান হলে একদিকে বেকারত্ব এবং অন্যদিকে দারিদ্র বিমোচন হবে।

(৫) গবাদিপশুর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি :

বাংলাদেশের কৃষি জমি চাষ আবাদ ও ভারবহন মূলত গবাদিপশুর দ্বারা করা হয়। গবাদিপশুর মলমূত্র কৃষি জমিতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করা হয়। তাই আমাদের দেশে ফসল উৎপাদন মূলত পশুর উপর নির্ভরশীল। সুতরাং কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত পশুর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সাধারণত এক জোড়া দেশী জাতের বলদ বছরে ৩-৪ একর জমি চাষ করতে পারে। কিন্তু সংকরায়িত এক জোড়া বলদ দিয়ে বছরে ৭-৮ একর জমি চাষ করা যায়।

(২টি) গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন পদ্ধতিঃ

দেশী জাতের গরম হওয়া বকন বা গাভীকে উন্নত দুধাল জতের (যেমন হলস্টিন, জার্সি, শাহিওয়াল, সিদ্ধি ইত্যাদি) ষাঁড় বা সিমেন দ্বারা প্রজনন ঘটিয়ে যে বাছুর জন্ম নেয় সেটাই সংকর জাতের বাছুর। সংকর বাছুর বকনা হলে প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় দেশী গাভী অপেক্ষা অনেক বেশি দুধ দেয়। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট উন্নত জাতের ষাঁড় দ্বারা ধারাবাহিকভাবে প্রজনন করালে উন্নত জাত বা ব্রীড সৃষ্টি করা যায়। এই পদ্ধতিকে সংকরায়ন পদ্ধতি বলে। সংকরায়নের জন্য প্রধানত দু পদ্ধতিতে প্রজনন করা যায় । যথা— ১। প্রাকৃতিক প্রজনন এবং ২। কৃত্রিম প্রজনন ।

(১) প্রাকৃতিক প্রজনন (Natural service) :

◾ উন্নত দুধাল জাতের ষাঁড় দিয়ে দেশী গরম হওয়া বকন বা গাভীকে সরাসরি পাল দেয়া বা প্রজনন করানো যায় । তবে সমগ্র বাংলাদেশে দেশী জাতের গবাদিপশু সংকরায়নের জন্য এত অধিক সংখ্যক উন্নত জাতের ষাঁড় সরবরাহ করা ব্যয়বহুল। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে বিদেশী উন্নত দুধাল জাতের ষাঁড় পালন করা হচ্ছে।

◾ সাধারণত গ্রাম অঞ্চলে গরম হওয়া বকন বা গাভীকে দেশী অনুন্নত ষাঁড় দিয়ে সরাসরি পাল দেয়া বা প্রজনন করানো হয়। ফলে দেশী অনুন্নত জাতের বাছুর জন্ম নেয়।

২। কৃত্রিম প্রজনন (Artificial insemination) :

◾ কৃত্রিম পদ্ধতিতে উৎপাদিত বাছুরের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ উন্নত জাতের (ষাঁড়ের) এবং শতকরা ৫০ ভাগ দেশী জাতের (গাভীর) গুণাগুণ বা বংশের বৈশিষ্ট্য থাকে। পর্যায়ক্রমে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে দেশী গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন করা সম্ভব।

◾ সাধারণত দেশী জাতের বকন ২-২.৫ বছর বয়সে প্রজননের উপযুক্ত হয়। তবে প্রথম গরম হওয়ার ২-৩ মাস পরে প্রজনন করানো ভালো। এতে গাভীর জীবন চক্রে অধিক বাচ্চা ও দুধ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়।

◾ উন্নত দুধাল জাতের ষাঁড় থেকে সিমেন সংগ্রহ করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে গরম হওয়া বকন বা গাভীর প্রজনন ঘটানোকে কৃত্রিম প্রজনন বলে।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!