● প্রাপ্ত বয়স্ক এ কৃমি দেখতে গোলাপী-লাল বর্ণের এবং আকার নাশপাতির মতো। ১৫ এমএম পর্যন্ত লম্বা হয়, যা রুমেন ও রেটিকুলামের দেয়ালে লেগে থাকে।
পাতাকৃমির কারণে গবাদি পশুর কি ক্ষতি হয়?
●অপ্রাপ্ত বয়স্ক কৃমি ১-৩ এমএম পর্যন্ত লম্বা হয়, যা ডিউডেনামে অবস্থান করে। ইলিয়ামের (ileal musosal) দেয়ালে কৃমি শোষক দ্বারা আটকিয়ে থাকার কারণে মারাত্মক অন্ত্রপ্রদাহ এবং রক্তপাত ঘটিয়ে থাকে।
পাতাকৃমি রোগের লক্ষণ কি?
●আক্রান্ত প্রাণীর ক্ষুধামন্দা, ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাস, পানিশূন্যতা, উদাসীনভাব, চলাফেরায় দুর্বলতা, মারাত্মক পাতলা পায়খানা দেখা দেয়।
● থুতলির নিচে পানি জমা হতে পারে। মিউকোজা ফ্যাকাশে দেখাবে।
● ছোট বাছুর ও ভেড়া আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে ও বিশেষ করে লক্ষণ দেখা দেয়ার ১৫-২০ দিন পর মারা যায়।
● প্রাপ্ত বয়স্ক কৃমি আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে।
● দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণের ক্ষেত্রে পশুর ওজন কমে যায়, রক্তশূন্যতা চামড়া শুকিয়ে যায়, উৎপাদন কমে যায়, পশুর থুতনির নিচে পানি জমা হয়। এভাবে রোগ ভোগের কিছু দিন পর আক্রান্ত পশুর মৃত্যু ঘটতে পারে অথবা ধীরে ধীরে সেরে ওঠতে পারে।
পাতাকৃমি রোগ নির্ণয় কিভাবে করতে হয়?
রোগ লক্ষণ ও অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পশুর মল পরীক্ষা করলে বড় আকারের পরিষ্কার, স্বচ্ছ, অপারকুলামযুক্ত ডিম দেখা যাবে। কিন্তু মারাত্মক আকারের ক্ষেত্রে মল পরীক্ষা করে ডিম নাও পাওয়া যেতে পারে। Fluid feces পরীক্ষা করলে অপ্রাপ্ত কৃমি পাওয়া যাবে। মৃত প্রাণীকে ময়নাতদন্ত করে রোগ নিশ্চিত হওয়া যায়।
কাদের এই পাতা কৃমি হয়?
● সব বয়সে গরু, ছাগল, ভেড়া এবং অন্য গবাদি পশু আক্রান্ত হয়। তবে ১ বছরের কম বয়সের প্রাণী কম আক্রান্ত হয়। ট্রপিক্যাল ও সাবট্রপিক্যাল দেশে এ কৃমি সংক্রমণ বেশি হয়। বাংলাদেশে প্রায় ৭০-৯০% গরুর দেহে পাকস্থলীর পাতাকৃমি পাওয়া যায়।
●বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রজাতির পাকস্থলীর পাতাকৃমি দ্বারা গবাদিপ্রাণি আক্রান্ত হয়ে থাকে। যেমনঃ Paramphistomes, Rumen fluckes, Conical fluckes।
● প্রাপ্ত বয়স্ক কৃমি স্পষ্টত তেমন রোগ লক্ষণ তৈরি করে না।
● খুব বেশি পরিমাণে কৃমির অবস্থান অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে। সাধারণত গরু বেশি আক্রান্ত হয়।
●মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার ৯০%। অতিরিক্ত মৃত্যুর হার দেখে এ রোগ নির্ণয় করা যায়। পাকস্থলীর পাতাকৃমি গ্রীষ্ম, শরৎ ও শীতকালের আগের সময়ে এই কৃমি আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। ওই সময়গুলোতে কৃমি দ্বারা ঘাস সংক্রামিত হয়ে থাকে।
পাতাকৃমি কোথা থেকে আসে ও কিভাবে জীবন চারণ করে?
● আক্রান্ত পশুর মলের সাথে কৃমির ডিম বেরিয়ে আসে। মাটিতে ডিম থেকে মিরাসিডিয়াম বের হয়। এ মিরাসিডিয়াম কয়েক প্রকার শামুকে প্রবেশ করে। শামুকের মধ্যে স্পোরোসিস্ট রেডিয়া এবং পরে সারকারিয়ায় পরিণত হয়। এ সারকারিয়ার সম্মুখে ও পেছনে একটি করে সাকার থাকায় একে এম্ফিস্টোমও বলে। এ সারকারিয়া শামুক থেকে বের হয়ে জলজ উদ্ভিদ, ঘাস ইত্যাদিতে লেগে যায় এবং মেটাসারকারিয়ায় পরিণত হয়।
● সংক্রামিত ঘাস খাওয়ার মাধ্যমে এ মেটাসারকারিয়া অন্ত্রে চলে যায় এবং সেখানে পুনরায় সারকারিয়া বের হয়। সারকারিয়া অন্ত্রের ক্ষুদ্রান্তে ৩-৫ সপ্তাহ অবস্থান করার পর রোটকুলাম হয়ে রুমেনে পৌঁছে ও সেখানেই স্থায়ীভাবে অবস্থান করে। ৭-১৪ সপ্তাহ বয়সে তারা ডিম পাড়ে।
পাতাকৃমি প্রতিরোধের উপায় কি?
1. নিচু জলা ভূমি থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং শামুক নিধনের ব্যবস্থা করতে হবে।
2. যেসব এলাকায় প্রতি বছর পাকস্থলীর কৃমি সংক্রমণ ঘটে, সে এলাকায় নিয়মিত চিকিৎসা দিতে হবে যাতে করে প্রাপ্ত বয়স্ক কৃমি ধ্বংস হয়ে যায়।
পাতাকৃমি রোগের চিকিৎসা বা ঔষধ কি?
ভেড়ার কৃমির ঔষধের নামঃ
ঔষধের নামঃ Niclosamid পরিমাণঃ ১০ mg/kg
ঔষধের নামঃ Bithional পরিমাণঃ ২৫ mg/kg
যা শুধুমাত্র ভেড়ার ক্ষেত্রে কার্যকর।
গরুর কৃমির ঔষধের নামঃ
ঔষধের নামঃ Resorantul পরিমাণঃ ৬৫ mg/kg
ঔষধের নামঃ Oxyclozanid পরিমাণঃ 14 mg/kg
যা গরুর কিকিৎসায় প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক কৃমিতে ৯০% কার্যকর।
এছাড়াও Carbontetrachlorid এবং Hexachlorlethane শুধু প্রাপ্ত বয়স্ক কৃমির বিরুদ্ধে কার্যকর।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত।