আজ আমরা আদর্শ গরুর খামার ব্যবস্থাপনা টপিকের উপরে ৩ টি বিষয়ে আলোচনা করব। সেগুলো হলো–
ক) খামারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
খ) খামারের আশেপাশের পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা।
গ) খামারের কম্পোস্ট ও কম্পোষ্টিং প্রক্রিয়া।
আমরা যখন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বড় গরু খামার করার চিন্তা করব, তবে অবশ্য নতুন গরুর খামারটিতে উক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে।
পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা
১) পরিবেশ ও সামাজিক সুরক্ষা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী এলাকায় ক্ষতিকর কর্মকান্ড থেকে পরিবেশ ও সমাজকে রক্ষা করা, অর্থাৎ বড় গরুর খামার এর সম্প্রসারণ কর্মকান্ডের ফলে যাতে পরিবেশ ও সমাজ ব্যবস্থ্যায় কোন প্রকার বিরূপ প্রভাব না ঘটে সে দিকে সচেতন থাকতে হবে।
২) তাই অত্র এলাকায় গরুর খামার সম্প্রসারণ কার্যক্রমে পরিবেশ ও সামাজিক বিরূপ প্রভাব হয় এ ধরণের কোন কার্যক্রম গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩) নতুন গরুর খামার করার ফলে সময় যাতে জীব বৈচিত্র্য হারিয়ে না যায় বা পরিবেশ দূষণের ফলে প্রাণির স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রেখে পরিকল্পনা নিতে হবে।
৪) প্রণির দেহে বিভিন্ন পথে রোগে-জীবনু প্রবেশ করতে পারে, যেমন- মুখ, নাক, পায়ুপথ, দুধের বাট, চামড়ার ক্ষতস্থ্যান, চোখ, ইত্যাদি। সাধারণত পরিবেশ সুরক্ষা না থাকলে এ সকল পথে রোগে-জীবনু সহজেই প্রবেশ করতে পারে। যেমন পরিবেশে বাতাস/পানি দুষিত থাকলে, রোগাক্রান্ত/মৃত প্রাণির যথাযথ ব্যবস্থ্যা না নিয়ে চলাচল/স্থ্যানান্তর করা হলে, প্রাণির পরিচর্যাকারী কোন রোগাক্রান্ত প্রাণির সংস্পর্শে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্যা না নিয়ে সুস্থ প্রাণির পরিচর্যা করলে, প্রাণিকে পঁচা/বাসি খাদ্য সরবরাহ করা হলে, হাট/বজারে অসুস্থ প্রাণি নিয়ে আসলে, ইত্যাদি। তাই পরিবেশ সুরক্ষায় এ সকল বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্যা নিতে হবে।
৫) প্রাণির রোগ মুক্তি ও পরিবেশ সুরক্ষায় মৃত প্রণি যত্রতত্র মাঠে ময়দানে বা ঝোপঝাড়ে না ফেলে মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে।
৬) বাজার/অন্য কোনভাবে ক্রয়কৃত প্রাণিকে বাড়িতে/খামারে এনে সরাসরি অন্য প্রাণির সঙ্গে রাখা যাবে না। প্রয়োজন বোধে উক্ত প্রণিকে ৭-২১ দিন পর্যন্ত পৃথকভাবে রেখে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে যদি নতুন প্রণির মধ্যে রোগের কোন লক্ষণ প্রকাশ না প্রায়, তখন বুঝতে হবে বাড়ির/খামারের অন্যান্য প্রাণির সাথে এই প্রণিকে একত্রে পালতে কোন সমস্যা নাই।
৭) প্রাণিকে সময়মত টিকা প্রদান ও কৃমিনাশক চিকিৎসার ব্যবস্থ্যা করতে হবে। নিজের খামারের প্রণিকে টিকা প্রদানের সাথে সাথে পার্শ্ববতী বাড়ি/খামারের প্রাণিকেও ঠিক একই প্রকারের টিকা প্রদানের ব্যবস্থ্যা করতে হবে।
৮) ছোয়াছে বা সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কল্পে জীবনিরাপত্তায় নিম্নে বর্ণিত কার্যক্রম গ্রহন করতে হবে :-
⮚ অসুস্থ প্রাণিকে পৃথকী করণ।
⮚ খামারে অভন্তরে বহিরাগতদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণকরণ।
⮚ একটি সেডে একই বয়সের ব্রীড এর পালন।
⮚ স্বাস্থ্যবিধান পদ্ধতি যথাযথভাবে পালন।
৯) প্রাণির বাসস্থ্যান/খামার/আঙ্গিনা দৈনিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে।
১০) প্রাণিকে প্রত্যহ পরিষ্কার পানি, টাটকা খাদ্য খাওয়াতে হবে।
১১) প্রাণির খাবার পাত্র ও পানির পাত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন করতে হবে।
১২) আর্সেনিক প্রবণ এলাকায় প্রাণিকে আর্সানিক মুক্ত পানি খাওয়ানোর বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ১৩. প্রণির উৎপাদিত পণ্য যেমন দুধ/মাংশ/ডিম এর গুণগত মান রক্ষায় সচেতন থাকতে হবে। ১৪. প্রাণির খাদ্য উপাদান ভেজালমুক্ত ও গুণগত মান হতে হবে।
১৫) প্রাণিকে সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
১৬) প্রাণির খামার স্থ্যাপনে লোকালয়/মানুষের বাসস্থ্যান থেকে একটু দূরে করতে হবে।
১৭) অতিরিক্ত শীত/গরম ও খড়া/বন্যা/প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় প্রাণি স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। এ সময়ে ঘাস চাষ কম হয় এবং প্রণির খাদ্য অপ্রতুল/দুষ্প্রাপ্য থাকে। অনেকে এ সময়ে প্রাণি বিক্রি করে পরবর্তীতে সামাজিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। তাই এ দিক বিবেচনায় রেখে অগাম প্র¯দতি হিসাবে সময়পোযুগী দ্রত বর্ধনশীল ঘাস চাষের ব্যবস্থ্যা নিতে হবে।
১৭) অতিরিক্ত শীত/গরম ও খড়া/বন্যা/প্রাকৃতিক দৃর্যোগের সময় প্রাণি স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্ নিতে হবে। এ সময়ে ঘাস চাষ কম হয় এবং পরণির খাদ্য অপ্রতুল/দষথপ্য থাকে। অনেকে এ সময়ে প্রাণি বিক্রি করে পরবীতে সামাজিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। তাই এ দিক বিবেচনায় রেখে অগাম প্রস্তুতি হিসাবে সময়পোষুগী দ্রুত বর্ধনশীল ঘাস চাষের ব্যবস্থা নিতে হবে।
পরিবেশ সুরক্ষায় খামারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
১) গবাদিপ্রাণি ও গরু-ছাগল ইত্যাদির সরবরাহকৃত খাদ্যের ৫০-৬০% মল ও মূত্র হিসাবে বেরিয়ে আসে যা আংশিক বা পরিপূর্ণভাবে নষ্ট বা অপচয় হওয়ার কারণে পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটে।
২) গরুর খামার ব্যবস্থাপনায় গবাদিপ্রাণিকে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ করায় রুমেন থেকে মিথেন উৎপাদন প্রায় ৩০% হাস পায় ও পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৩) প্রাণির রোগ মুক্তি ও পরিবেশ সুরক্ষায় মৃত প্রাণির চামড়া ছাড়ানো যাবে না। মৃত পশু-পাখী যত্রতত্র মাঠে ময়দানে বা ঝোপঝাড়ে না ফেলে মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে।
৪) প্রাণিকে নিয়মিত টিকা দিতে হবে।
৫) পরিবেশ সুরক্ষায় গোবর/বিষ্ঠা, মূত্র, প্রণি খাদ্যের উচ্ছিষ্ট ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ যথাযথভাবে ও সময়মত অপসারণ করলে পরিবেশ সুরক্ষিত হবে। একাজে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করা যেতে পারে।
৬) গোবর/বিষ্ঠা থেকে কম্পোষ্ট সার প্রদত্ত করা হলে একদিকে পরিবেশে দূর্গন্ধ দুর হয় ও অন্যদিকে উৎপাদিত কম্পোষ্ট সার কৃষিতে ব্যবহার করায় কৃষির উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়।
৭) বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে পরিচ্ছন্ন জ্বালানী উৎপাদন হওয়ায় দুষণমক্ত বায়ু ও স্বাস্বাস্থ্যকরপরিবেশ সৃষ্টি ও উন্নত মানের জৈব সার উৎপাদন হয়। তাই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট সামাজিক নিরাপত্তায় অবদান রাখছে।
৮) বর্জ্য সঠিকভাবে কম্পোষ্ট করা হলে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস মারা যায় ও প্রাণির রোগ নিয়ন্ত্রিত হয়।
কম্পোস্ট ও কম্পোষ্টিং প্রক্রিয়া
১) কম্পোস্ট হচ্ছে পচাঁ জৈব উপকরণের এমন একটি মিশণ্র যা উষ্ণ আর্দ্র পরিবেশে অনুজীব কর্তৃক প্রক্রিয়াজাত হয়ে উদ্ভিদের সরাসরি গ্রহন উপযোগী পুষ্টি উপকরণ সরবরাহ করে।
২) কম্পোষ্টিং হচ্ছে একটি নিয়ন্ত্রিত জৈবপচন প্রক্রিয়া, যা জৈব পদার্থকে স্থিতিশীলদ্রব্যে রূপান্তর করে।
৩) যে সকল অনুজীব পচনশীল পদার্থকে তাদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার কবে, সে সকল অনুজীবের উপর এ প্রক্রিয়া নির্ভরশীল।
৪) কম্পোষ্টিং প্রক্রিয়ায় বর্জ্যরে গন্ধ ও অন্যান্য বিরক্তিকর সমস্যা সম্বলিত পদার্থকে স্থিতিশীলগন্ধ ও রোগ জীবানু, মাছি ও অন্যান্য কীট পতঙ্গের প্রজননের অনপুযোগী পদার্থে রূপান্তরীত করে।
৫) একটি আদর্শ গরুর খামার ব্যবস্থাপনায় পশুর বিষ্টা ও আবর্জনার প্রকারভেদে কম্পোস্ট সার প্রস্তুত হওয়ার সময় ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে কম্পোস্ট সার হিসাবে তখনই উপযুক্ত হবে যখন তার রং গাড় বাদামী হবে, তাপ কমে আসবে এবং একটা পঁচা গন্ধ বের হবে।
প্রিয় খামারি ভায়েরা ”গরুর খামার ব্যবস্থাপনা” বিষয়ে আগের আলোচনাগুলো না পড়ে থাকলে সেগুলোও দেখে নিতে পারেন, ভবিষ্যতে ”গরুর খামার ব্যবস্থাপনা” টপিকে আরো দরকারি আলেঅচনা নিয়ে আমরা হাজির হবে। খামারিয়ান এর সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।